বিজয় মজুমদার
২০১৯ সালে বিশ্ব জানতে পারে আমাদের পৃথিবী এক কঠিন মহামারী দ্বারা আক্রান্ত হতে যাচ্ছে। মারাত্মক ছোঁয়াচে এই রোগ তখনও চীনের গণ্ডি পেরোয়নি। কিন্তু রোগটাকে কেবল চীনের রোগ হিসেবে গণ্য করে বাকি বিশ্ব সেটাকে নিজ নিজ দেশে সহজে প্রবেশ করতে দেয়। । যদিও তখন এই রোগ করোনা ভাইরাস হিসেবে পরিচিত ছিল কিন্তু এর বর্তমান নাম কোভিড-১৯ টি এসেছে ২০১৯ সালে এই ভাইরাসকে চিহ্নিত করা ও সেটির সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার কারণে। কোভিড-১৯ এর এ রকম রকেট গতিতে ছড়িয়ে পড়ার পেছনে ক্রীড়ার এক বড় ভূমিকা আছে। কারণ করোনার এই রকেট গতিতে ছড়িয়ে পরার ঘটনাকে দারুণভাবে সাহায্য করে ক্রীড়াঙ্গন। বিশেষ করে ইওরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্র সে সময় ফুটবল এবং শীতকালীন ইভেন্টের বিভিন্ন ক্রীড়ায় দর্শক সমাগম কেবল খেলার মাঠে বা ইওরোপ আমেরিকা নয়, সারা বিশ্বে করোনা ছড়িয়ে দিয়েছিল।
সামাজিক দূরত্ব ঘুচিয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন
চীন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য যখন কোভিড-১৯ এর আচরণ পর্যবেক্ষণ করছিল তখন উন্নত বিশ্ব দূর থেকে ঘটনার পর্যবেক্ষণ করছিল। আর তৃতীয় বিশ্ব তখন অনেকটা সমাজতান্ত্রিক মতবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েছিল। তারা ভাবছিল কোভিড-১৯ হচ্ছে উন্নত বিশ্বের বা ধনতান্ত্রিক সমাজের এক রোগ যা গরীব দেশের মেহনতি মানুষকে আক্রান্ত করতে পারবে না।
কোভিড -১৯ এর ক্রমশ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করার সাথে সাথে উন্নত বিশ্ব যদিও কোভিড-১৯ সংক্রান্ত সতর্কতা অবলম্বন করে কিন্তু সেটি ছিল ভ্রমণ সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা। আচরণের কারণে এবং বহুমাত্রিক গবেষণা, পরস্পর বিপরীত তথ্যের কারণে ক্রীড়াঙ্গনে নিয়ম মেনে চলার বিষয়ে বিশ্বের প্রায় সব দেশের সরকার নিদারুণ উদাসীনতা অবলম্বন করে। একই সাথে কোভিড -১৯ এর লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু জটিলতাও স্টেডিয়ামকেগুলো কোভিড -১৯ বিস্তার এর ক্ষেত্রভূমিতে পরিণত করে। ফুটবল ইওরোপের জনপ্রিয় খেলা আর ইওরোপের লীগে অ্যান্টার্কটিকা ব্যতীত বিশ্বের সব মহাদেশের খেলোয়াড় খেলে থাকে।
ইওরোপের বিভিন্ন ফুটবল লীগের সবচেয়ে উত্তেজনাকর মৌসুমে কোভিড -১৯ অনেকটা লুকিয়ে থেকে হামলা চালায়। এর পর যখন ইওরোপ আমেরিকায় এটি প্রাণঘাতী মহামারী আকারে আত্মপ্রকাশ করে তখন ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রের টনক নড়ে। কোভিড -১৯ এর কারণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম ইউরোপ এর ক্রীড়াজগতে নেমে আসে স্থবিরতা।
যখন কোভিড-১৯ এর সময় ক্রীড়াঙ্গন সচল ছিল, তখন খেলোয়াড় এর চেয়ে দর্শকেরা এর দ্বারা বেশি আক্রান্ত হয় এবং মৃত্যুবরণ করে। কারণ শারীরিক ভাবে খেলোয়াড় অনেক শক্তিশালী হয়। তারপরেও ক্রীড়াঙ্গন কোভিড-১৯ আক্রান্ত খেলোয়াড়দের মৃত্যু প্রত্যক্ষ করে।
তোরা যে যা বলিস ভাই মোদের লীগ শিরোপা চাই
কোভিড -১৯ এ সারা বিশ্ব অজস্র মৃত্যু দেখার পর সারা বিশ্বে বেশির ভাগ রাষ্ট্রে সকল ধরনের সামাজিক যোগাযোগ বা মিলন বন্ধ হয়ে যায়। উহান-এর গ্রহণ করা কঠোর লক ডাউন নীতি অনুসারে অনেক দেশের সরকার সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। যার ফলে স্টেডিয়ামে তালা পড়ে। কিন্তু ইওরোপ, আমেরিকা কিংবা অন্যান্য দেশের ফুটবল ক্লাবগুলো লীগ শিরোপার দাবি জানাতে শুরু করে। ২০২০ সালের প্রথম দিকে মহামারীর মৃত্যুর ভয়াবহতা ক্লাব সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের মানবিক হতে বাধ্য করেছিল, কিন্তু গ্রীষ্মকালে কোভিড-১৯ এর প্রভাব কমে আসার সাথে সাথে ক্রীড়াঙ্গন চালু করার দাবি জোরালো হতে থাকে, বিশেষ করে স্থগিত হয়ে যাওয়া ফুটবল লীগ, আর চালু না করলেও শিরোপার দাবি জোরালো হতে থাকে লীগ-এ।
২০১৯-২০ এ ইপিএল ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ এমন এক সময় স্থগিত হয়ে যায়, যখন লীগ শেষ হতে ঢের বাকি। সে সময় শিরোপা দৌড়ে এগিয়ে থাকা লিভারপুল ফুটবল ক্লাব-এর হাতে শিরোপা তুলে দিতে চাইছিল অনেকে। দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর লীগ শিরোপা বঞ্চিত লিভারপুলের জন্য অফুটবলিক (অমানবিক) হলেও লীগের নিয়ম তাতে বাঁধ সাধছিল। মজার ব্যাপার হচ্ছে তালিকায় দ্বিতীয় স্থালে থাকা ম্যানচেস্টার সিটির অনেক খেলোয়াড় কিন্তু শিরোপা লিভারপুলের হাতে তুলে দিতে ইচ্ছুক ছিল, এমন কী লীগ বাতিল হয়ে গেলেও। তবে সেটার আর প্রয়োজন পড়েনি। লীগের বাকি খেলাগুলো অনুষ্ঠিত হয় এবং শিরোপার শীর্ষে থেকে লিভারপুল ৩০ বছর পর আবার লীগ শিরোপা জয়ের গৌরব অর্জন করে। এই অর্জনে শুধু একটা বিষয়ের তারা অভাব বোধ করেছিল। সেটা হচ্ছে দর্শকের বাঁধ ভাঙ্গা গর্জন।
কোভিড -১৯ এর ফলে ক্রীড়া বিশ্ব এক নতুন বাস্তবতা সম্মুখীন হয়েছে। সেটি হচ্ছে দর্শক বিহীন ক্রীড়া। কারণ দর্শকের উপস্থিতি কোভিড -১৯ এর ছড়িয়ে পড়াকে ত্বরান্বিত করে। কিন্তু তারপরে ক্রীড়া বিশ্ব থেমে নেই। আবার সীমিত পরিসরে মাঠে খেলা ফিরে এসেছে। দর্শক শূন্য স্টেডিয়ামে খেলা চলছে। বিশ্বের ইতিহাসে এমন নজীর আর নেই। কারণ খেলার জন্য লাগে তিন ধরনের উপস্থিতি- খেলোয়াড়, ক্রীড়া ব্যবস্থাপক ও দর্শক। দর্শক বিহীন খেলা যেন লবণ বিহীন তরকারী। কিন্তু বাস্তব কারণে কোভিড -১৯ এ দর্শকেরা খেলার মাঠে গিয়ে খেলা দেখা থেকে বঞ্চিত হলেও, প্রচার মাধ্যম তাদের সেই সুযোগ করে দিয়েছে। মাঠে না গিয়েও সরাসরি খেলার মাঠের খেলা দেখতে পাবেন দর্শকেরা। এমন কি কোনো কোনো প্রচার মাধ্যম এই সব ভার্চুয়াল দর্শকের এক্সপ্রেশন পর্যন্ত ক্যামেরায় নিয়ে আসছে। কারণ প্রতিটি দলে আসলে দুই দল খেলোয়াড় থাকে একদল যারা মাঠের মধ্যে খেলে আরেক দল খেলে মাঠের বাইরে।
লেখক, বিজ্ঞাপনকর্মী ও সমাজকর্মী
ড. বিজন কুমার শীল বিস্তারিত
বিপরীত স্রোত প্রতিবেদন বিস্তারিত
ডা. আহমদ মরতুজা চৌধুরী বিস্তারিত
যারিন মালিয়াত অদ্রিতা বিস্তারিত
মোহাম্মদ মাহমুদুজ্জামান বিস্তারিত
উৎপাদিত মাছের প্রায় ১২ শতাংশ আ.. বিস্তারিত
বাতিলযোগ্য সাইবার নিরাপত্তা আই.. বিস্তারিত
বাংলাদেশ তখনো বিশ্ব ক্রিকেট অঙ.. বিস্তারিত
ব্রেদিং আউট বার্ডেন নামে কর্ম.. বিস্তারিত