বিজয়
মজুমদার
বাংলাদেশ এর ফুটবল মানে আবাহনী ও মোহামেডন; (যেহেতু আবাহনী নামের আরেকটি দল এখন বাংলাদেশের ফুটবলে খেলে যাচ্ছে, তাই এখন পড়তে হবে ঢাকা আবাহনী ও ঢাকা মোহামেডান) আপনি যদি এই বাস্তবতায় বাস করেন তাহলে আপনি বাংলাদেশের ফুটবলে অতীতের ছায়ায় বেঁচে আছেন। একটা সময় বাংলাদেশের ফুটবল মানে ছিল দুই পরাশক্তির লড়াই। লীগ কিংবা যে কোনো কাপের ফাইনাল এক সময় এই দুটি দল ছাড়া হতো না।
পাতাকা টানানো, পাড়ায় পাড়ায় মারামারি, দর্শকের মধ্যে হাঙ্গামা, এমন কী খুনোখুনি পর্যন্ত ছিল দুই দলের খেলার একটা অনিবার্য অংশ। বাংলাদেশের রাজনীতি, ধর্ম এমন কী সমাজ বাস্তবতা বিশেষে বহু বিভক্তি দেখা গেলেও ফুটবলে জাতি আসলে তিনটি ভাগে বিভক্ত ছিল। আবাহনী, মোহামেডান এবং তৃতীয় শক্তি।
স্বাধীন বাংলাদেশে আবাহনীর উত্থান এক সময়কার সবচেয়ে সফল ও ঐতিহ্যবাহী ক্লাব মোহামেডানের জন্য এক যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বীর সৃষ্টি করে। সেটা এতটাই তীব্র হয়ে উঠে যে বাংলাদেশের ফুটবল সমাজ এতে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একটা দীর্ঘ সময় এই দুই প্রধানের লড়াই কেবল মাঠে নয় মাঠের বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। মাঝে মাঝে বিজেএমসি বা ব্রাদার্স কিংবা মুক্তিযোদ্ধার মতো দল ধুমকেতুর মতো উদয় হয়ে তৃতীয় শক্তি হিসেবে থেকে গেছে।
সে যুগ হয়েছে পুরানো
যারা বাংলাদেশের ফুটবল মানে আবাহনী ও মোহামেডানের দ্বৈরথ ভাবেন তাদের জন্য একটা ধাঁধা হতে পারে শেষ কবে বাংলাদেশ ফুটবলে এই দুটি দল ফাইনালে পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছিল। স্মৃতি হাতড়াতে গিয়ে যদি স্মৃতি আপনাকে কোনো সাহায্য না করে তাহলে সেটি আপনার দোষ নয়। কারণ দুটি দল কোনো একটি ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল ঠিক এক যুগ আগে, ২০০৯ সালে। ফেডারেশন কাপের এই ফাইনাল গোলশূন্য ড্র হয়। মোহামেডান ট্রাইব্রেকারে আবাহনীকে পরাজিত করে শিরোপা অর্জন করে। ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডান ২০১৩ সালে সুপার কাপ জয় করার পর আর এখন পর্যন্ত আর কোনো শিরোপা জয় করেনি। তবে সেই তুলনায় প্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী এখনো শিরোপা জয়ী দল হিসেবে নিজেদের নাম খাতায় ধরে রেখেছে। দুই বছর আগে ঢাকা আবাহনী অবশ্য লীগ এবং ফেডারেশন কাপ দুটোই জয় করেছিল।
কিন্তু করোনার কারণে একটি বছর বাংলাদেশ ফুটবল স্থবির হয়ে পড়ে, তার আগের বছরে ফেডারেশন এবং লীগ কাপ দুটোই জয় করে বসুন্ধরা কিংস। করোনার দুর্যোগ কাটিয়ে বাংলাদেশের ফুটবল এ বছর আবার মাঠে গড়িয়েছে। মৌসুমের প্রথম শিরোপা ফেডারেশন কাপ জিতে নিয়েছে গতবারের চ্যাম্পিয়ন এবং ফুটবলে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করা বসুন্ধরা কিংস। তবে গতবারের মতো এবার ফাইনালে তার প্রতিপক্ষ কোনো ঐতিহ্যবাহী দল ছিল না, ছিল নবাগত এক দল। আর যদি আপনি ভেবে থাকেন গতবছর ঐতিহ্যবাহী ঢাকা আবাহনী কিংবা ঢাকা মোহামেডানকে হারিয়ে বসুন্ধরা শিরোপা জয়ের খাতা খুলেছিল তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন, গতবার তারা হারিয়েছিল রহমতগঞ্জ ফ্রেন্ড সোসাইটিকে। আর এবার তারা ফাইনালে ১-০ গোলে হারালো তাদেরই মতো ফুটবলে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করা সাইফ স্পোর্টিংকে।
ক্যাটেগরিঃ খেলাধুলা,