বিজয় মজুমদার
বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ক্রীড়া ইভেন্ট হচ্ছে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক যা মূলত অলিম্পিক নামে পরিচিত। সেই অলিম্পিককে ঘিরে এবার বাংলাদেশ একটা পদক অর্জনের স্বপ্ন দেখছিল ।২০২০ সালে জাপানের রাজধানী টোকিওতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই অলিম্পিকে প্রথম আঘাত হানে করোনা, যার ফলে এটি স্থগিত হয়ে যায়, আর বাংলাদেশের পদক অর্জনের এই স্বপ্নে এবার আঘাত হেনেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন আর্চারদের জন্য নির্ধারিত স্টেডিয়াম নিজেদের দখলে আনার মধ্যে দিয়ে।
বাংলাদেশের প্রথম গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে অংশগ্রহণ একটা ইতিহাস, ঠিক সেই রকম একটা ইতিহাস রচিত হবে যেদিন বাংলাদেশ অলিম্পিকে প্রথম কোনো পদক অর্জন করবে।
প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণই বড় কথা এই মোটো নিয়ে এতদিন বাংলাদেশ অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করে এসেছে। এতদিন পর্যন্ত বাংলাদেশ যতগুলো অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করেছে সবগুলো অর্জন ছিল অলিম্পিকে অংশগ্রহণকারীর রষ্ট্রের সংখ্যা বাড়ানো সৌজন্যে। ২০১৬ সালের রিও অলিম্পিক এর পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য সবকটির ক্ষেত্রে বাস্তবতা ছিল এই যে অলিম্পিক এ অংশ নেওয়ার মত যোগ্যতা বাংলাদেশের কোন খেলোয়াড় অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। তবুও বাংলাদেশ এর খেলোয়াড়েরা অলিম্পিকে অংশ নিতে পেরেছে ওয়াইল্ড কার্ড নামের এক বিশেষ সুযোগের সৌজন্যে। বলাই বাহুল্য যৌক্তিক কারণে এই কার্ডের সদ্ব্যবহার করতে পারেনি কেউ।
১৯০৪ সালের পর ২০১৬ সালে অলিম্পিকে গলফের অন্তর্ভুক্তি বাংলাদেশের ক্রীড়া ইতিহাসের পালকে প্রথম একটি অর্জন যুক্ত করে আর সেটা হচ্ছে আপন যোগ্যতায় বাংলাদেশের একজন খেলোয়াড় অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করতে সক্ষম হন, কোনো দয়া দাক্ষিণ্যে নয়। ২০১৬ সালে রিও ডি জেনেরো অলিম্পিকে ওয়াইল্ড কার্ড নয় সরাসরি মূল পর্বে অংশ নেন বাংলাদেশের গলফার মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান।
আন্তর্জাতিক গলফে অসাধারণ পারফর্ম করার কারণে গলফার মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান রিও ডিও জেনেরো অলিম্পিকে সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করেন। যদিও তিনি কোনো পদক অর্জন করতে পারেননি, কিন্তু এটাই ছিল অলিম্পিকে বাংলাদেশের প্রথম কোনো বড় অর্জন। যদিও এর আগে ওয়াইল্ড কার্ডের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া ও বড় হওয়া জিমন্যাস্ট কাজী শাইক সিজার এর মাধ্যমে ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকে বাংলাদেশের একটি পদক জয়ের আশা হতাশায় পরিণত হয়।
বাজফিড একটি ওয়েব পত্রিকা। এই পত্রিকা বিশ্বের জনসংখ্যা অধ্যুষিত দশটি দেশের তালিকা তৈরি করেছে যারা এখন পর্যন্ত অলিম্পিকে কোনো পদক অর্জন করতে পারেনি। সেই তালিকায় সবার শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশের নাম। কেন বাংলাদেশ অলিম্পিকে কোনো পদক অর্জন করতে পারেনি সেটার কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে বাংলাদেশ এর এক ক্রীড়া কর্মকর্তা উল্লেখ করেন “দারিদ্র এর মূল কারণ” যদিও বাংলাদেশের চেয়ে অনেক গরীব রাষ্ট্রের অনেক ক্রীড়াবিদ অলিম্পিকে সোনার পদক এনে দেশকে বিশ্বের বুকে তুলে ধরে আমাদের হতাশাকে আরো দীর্ঘায়িত করেছেন।
২০১৬ সালের পর ২০২০ সালের অলিম্পিক বাংলাদেশের জন্য এক দারুণ আশার সংবাদ বয়ে এনেছিল। দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশের কোনো খেলোয়াড় সরাসরি অলিম্পিকের মূল পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। আর তিনি হচ্ছেন রোমান সানা। বাংলাদেশের এই আর্চার বা তীরন্দাজ জুন ২০১৯ এ আন্তর্জাতিক আর্চারি প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে তাঁর প্রতিপক্ষকে ৬-২ গেমে পরাজিত করে টোকিও অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন। ফাইনালে রোমান সানার প্রতিপক্ষ কিন্তু খুব সাধারণ কেউ ছিলেন না, তিনি ছিলেন দুবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ কোরিয়ার কিম উ জিন।
তবে করোনার কারণে অলিম্পিক স্থগিত হয়ে যাওয়ায় আমরা যখন অপেক্ষায় আছি আমাদের এই ক্রীড়াবিদ অলিম্পিকে কেমন ফলাফল করে, সেই অপেক্ষার আগেই আর্চারদের প্রশিক্ষণ ভেনু টঙ্গীর আহসানউল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়াম এর দখল নিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। এখন সেখানে অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের খেলা। আর আর্চারদের নিজেদের প্রশিক্ষণ চালিয়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে যে দিন গুলোতে খেলা থাকবে না সেইদিন গুলোর জন্য।
সম্ভাবনার সাফল্যে আঘাত নয়
২০১৯ সালের সাউথ এশিয়ান বা এসএ গেমস অনুষ্ঠিত হয় নেপালে। এই প্রতিযোগিতায় সাতটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৯টি স্বর্ণ পদক অর্জনের মাধ্যমে পঞ্চম স্থান অধিকার করে। বাংলাদেশের এই ১৯টি পদকের ১০ এসেছিল আর্চারির মাধ্যমে। উল্লেখ্য গেমসে আর্চারির ১০টি সোনার ১০টি পেয়েছিল বাংলাদেশের আর্চাররা। ২০০১ সালে আর্চারি ফেডারেশন গঠনের পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আর্চারি বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করছে। বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করার মাত্র ১৯ বছরের মধ্যে আর্চারি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ৩৭টি স্বর্ণ পদক অর্জন করেছে। বলা যায় প্রায় কোনো প্রকার পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই আর্চারি এই সাফল্য অর্জন করে।
রোমান সানার অলিম্পিকে খেলার যোগ্যতা অর্জনের সাথে সাথে সিটি গ্রুপ আর্চারির পৃষ্ঠপোষকতায় এগিয়ে আসে। আর্চাররা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নিজেদের সেরাটা প্রদানের জন্য, আর আমাদের উৎসাহ ও প্রেরণা তাদের সেরাটা প্রদানের শক্তি জোগাবে । কিন্তু আমরা করছি ঠিক তার উল্টোটা। ফুটবল বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। আমরা চাই বাংলাদেশ এর ফুটবল এগিয়ে যাক, কিন্তু অন্য কোনো খেলার জন্য ক্ষতির কারণ না হয়েই।
এর আগেও ঢাকা স্টেডিয়াম নিয়ে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এর মধ্যে সংঘাত দেখা দেয়। সেই সংঘাত কারো জন্যই ভালো হয়নি। ঢাকা স্টেডিয়াম ফুটবল ফেডারেশন বরাদ্দ পাওয়ার পরেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ ফুটবল খুব বেশি এগুতে পারেনি। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড প্রমাণ করেছে স্টেডিয়াম নয়, সঠিক পরিকল্পনা একটি খেলাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সামনে অনেক বিকল্প ভেনু রয়েছে। কিন্তু আর্চারির জন্য কোনো বিকল্প ভেনু নেই, বিশেষ করে অলিম্পিক এর জন্য প্রস্তুতি যখন চূড়ান্ত পর্যায়। যদি আর্চাররা অলিম্পিকে বাংলাদেশকে একটি পদক এনে দিতে পারে তবে সেটা কেবল আর্চার কিংবা একজন ব্যক্তির নয়, হবে সমগ্র বাংলাদেশের অর্জন এবং অলিম্পিকে পদক না পাওয়ার তালিকায় শীর্ষে থাকা বাংলাদেশের নাম চিরতরে তালিকা থেকে মুছে যাবে।
লেখক, বিজ্ঞাপনকর্মী ও সমাজকর্মী
ড. বিজন কুমার শীল বিস্তারিত
বিপরীত স্রোত প্রতিবেদন বিস্তারিত
ডা. আহমদ মরতুজা চৌধুরী বিস্তারিত
যারিন মালিয়াত অদ্রিতা বিস্তারিত
মোহাম্মদ মাহমুদুজ্জামান বিস্তারিত
উৎপাদিত মাছের প্রায় ১২ শতাংশ আ.. বিস্তারিত
বাতিলযোগ্য সাইবার নিরাপত্তা আই.. বিস্তারিত
বাংলাদেশ তখনো বিশ্ব ক্রিকেট অঙ.. বিস্তারিত
ব্রেদিং আউট বার্ডেন নামে কর্ম.. বিস্তারিত