বিজয় মজুমদার
ভারতে জাতীয় নির্বাচনে দুটি নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। একটি হলো রাজ্যসভা, অন্যটি হচ্ছে বিধানসভা। ভারতের কেন্দ্রে কে ক্ষমতায় আসবেন সেটি নির্ধারণ করে রাজ্যসভা, আর বিধানসভা নির্বাচন নির্ধারণ করে দেয় দেশটির রাজ্য বা
প্রদেশে কে ক্ষমতায় বসবে সেই বিষয়টি। সম্প্রতি করোনায় বিপর্যস্ত ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। রাজ্যগুলো হচ্ছে আসাম, তামিলনাড়ু, কেরালা, ও একদা পন্ডিচেরি নামে পরিচিত পুদুচেরি
ও পশ্চিমবঙ্গে।
তবে পুদুচেরি রাজ্য নয়, কেন্দ্র শাসিত এক অঞ্চল। এর মধ্যে কয়েক-দফায় অনুষ্ঠিত এই নির্বাচন ভারতে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করে। বিশেষ করে মাদ্রাজ হাইকোর্ট ভারতে দ্বিতীয় দফা করোনার ঢেউ-এর জন্য এই বিধানসভা নির্বাচনকে দায়ী করে। এমন কী হাইকোর্ট মন্তব্য করেন যে নির্বাচন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানুষ হত্যার অভিযোগ এনে এফআইআর দায়ী করা উচিত। যদি চারটি রাজ্যের এই নির্বাচন রাজ্যগুলোর জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ ছিল কিন্তু বাংলাদেশের মতো সারা ভারতও এবারের বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের ফলাফলের দিকে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে ছিল। এর কারণ হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় ছিল তৃণমূল কংগ্রেস, যে দলের প্রধান মমতা ব্যানার্জি
ওরফে দিদি
নামে পরিচিত
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে কেন্দ্রের শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টির প্রবল বিরোধিতা ভারতের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়ের একটি।
রাজ্যে নির্বাচন কেন্দ্রে উদ্বেগ
এ বছর যে চারটি রাজ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তার মধ্যে আসাম , তামিলনাড়ুতে ও কেন্দ্র শাসিত পুদুচেরিতে বিজেপি ও বিজেপি জোট ছিল ক্ষমতায়। অন্যদিকে পশ্চিম বঙ্গে তৃণমূল ও কেরালায় কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া (মার্কসিষ্ট) নামে পরিচিত সিপিআই শাসন
ভার সামলাচ্ছিল।
এবারের
বিধান সভা নির্বাচনের ফল কেন্দ্রের জন্য বেশ অস্বস্তির সৃষ্টি করেছে কারণ আসাম ও পুদুচেরি ছাড়া বাকি তিনটি রাজ্যে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপির বিরোধী দলের বিজয়বার্তা ঘোষণা করেছে।
ভারতে বিগত রাজ্যসভা নির্বাচনে বিজেপির বিশাল বিজয়-এর পর দলটি বিধানসভায় নিজেদের শক্তি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছিল। আসাম, তামিলনাড়ু ও পুদুচেরিতে নিজেদের দল ক্ষমতায় আছে এই বাস্তবতায় তারা এবার পশ্চিমবঙ্গ দখলের পরিকল্পনা আঁটে। এবারের পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে তাই বিজেপি বেশ আটঘাট বেঁধে প্রচারণা চালিয়েছিল। নির্বাচনী
প্রচারণায় বিজেপি
ঘোষণা করে
যে এবার
তারাই পশ্চিমবঙ্গে
বিপুল আসনে
বিজয়ী হতে
যাচ্ছে।
নির্বাচনের বিজয়ীরা
প্রাথমিক ফল অনুসারে বাংলাদেশের সীমান্তের অন্যতম এক রাজ্য আসামে দ্বিতীয়বারের মতো বিজেপি বিজয়ী হয়েছে।
রাজ্যের ১২৬ টি আসনের মধ্যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানান্দ সোনোয়াল এর নেতৃত্বে বিজেপি জোট ৭৫টি আসনে বিজয়ী হয়ে আবার সরকার গড়তে যাচ্ছে। এখানে বিরোধী কংগ্রেস জোট আসন পেয়েছে ৫০টি। এবারের নির্বাচনে বিজেপি জোট গতবারের চেয়ে একটি আসন বেশি পেয়েছে, অন্যদিকে কংগ্রেস একটি আসন হারিয়েছে।
দক্ষিণের তামিলনাড়ু রাজ্যে এর আগে ক্ষমতায় ছিল বিজেপি জোটের মিত্র অল ইন্ডিয়া আন্না দ্রাবিড় মুনাত্রা কাজাঘাম বা এআইএডিএমকে। এর প্রধান
ও তামিলনাড়ুর
প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এডাপ্পাডি কারুপ্পা পালানিসোয়ামি। এবারের বিধানসভা
নির্বাচনে রাজ্যের ২৩৪টি আসনের মধ্যে বিজেপির মিত্র এই দলটি নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছে ৭৪ টি আসনে। অন্যদিকে বিরোধী দল দ্রাবিড় মুনাত্রা কাজাঘাম পেয়েছে ১৫৬টি আর। যার ফলে এটা নিশ্চিত হয়ে গেছে যে মুথুভেল করুণানিধি স্ট্যালিন বা এম কে স্ট্যালিন-এর নেতৃত্বে বিজেপি বিরোধী দল ডিএমকে এই রাজ্যে সরকার গড়তে যাচ্ছে।
তামিলনাড়ুর প্রতিবেশী রাজ্য কেরালায় ক্ষমতায় ছিল কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া আর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন পিনারাই বিজয়ন। ভারতে করোনা মোকাবেলায় যে রাজ্যটি সবচেয়ে সফলতা দেখিয়েছে সেটি হচ্ছে এই কেরালা। নির্বাচনেও বিজয়ন ও তার নির্বাচনী জোট এলডিএফ বা
লেফটিস্ট ডেমোক্রেটিক
অ্যালায়েন্স একই রকম সফলতা দেখিয়ে মোট ১৪০ টি আসনের মধ্যে ৯১টি আসন লাভ করেছে। এখানে বিরোধী
কংগ্রেস ও
তার মিত্র
জোট ইউডিএফ
(ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক
ফ্রন্ট) ৫০
টি আসন
লাভ করেছে। কেরালায় গত নির্বাচনে বিজেপি একটি আসন লাভ করলেও এবার তারা কোনো আসন পায়নি।
পুদুচেরিতে রাজ্যের ৩০ টি আসনের মধ্যে অল ইন্ডিয়া এন আর কংগ্রেস ও বিজেপি জোট ১৬টি আসন লাভ করেছে। ফলে তারাই সেখানে সরকার গড়তে যাচ্ছে।
তবে এবারের বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ ছিল সবার নজরে। যার কারণ বিজেপি এবার পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলকে পরাস্ত করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালায়। এবারের
এই নির্বাচনে রাজ্যের ২৯৪টি নির্বাচনী আসনের মধ্যে ২৯২টিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে জঙ্গিপুর এ সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী প্রদীপ নন্দী ও শমসেরগঞ্জ আসনে কংগ্রেস প্রার্থী রেজাউল হক করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলে নির্বাচন কমিশন এই দুটি কেন্দ্রে নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করে। তবে ২৯২ আসনের নির্বাচনে ঘোষিত ফল অনুসারে ২১৩ টি আসন জিতে ইতোমধ্যে অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গের প্রাথমিক ফল
অনুষ্ঠিত ২৯২টি কেন্দ্রের মধ্যে
তৃণমূল বিজয়ী হয়েছে ২১৩ টি আসনে
বিজেপি ৭৭টি আসনে বিজয়ী হয়েছে
এছাড়া কালিম্পং থেকে রুদেন সাদা লেপচা নামে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙর থেকে অল ইন্ডিয়া সেকুলার ফ্রন্টের (রাষ্ট্রীয় সেকুলার মজলিস পার্টি) এর মোহাম্মদ নওশাদ সিদ্দিকী বিজয়ী হয়েছে।
এবারের পশ্চিমবঙ্গের
বিধানসভা নির্বাচনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে ভারতের দুটি প্রাচীন রাজনৈতিক দল কংগ্রেস ও কমিউনিস্ট পার্টির কোনো আসন জিততে না পারা যার ফলে বিধানসভায় থাকছে না দুটি দলের কোনো প্রতিনিধি। এতে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি থেকে এই দুটি দলের নাম প্রায় মুছে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
দিদি হেরেছেন দিদি জিতেছেন
এবারের পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন বেশ কয়েকটি কারণে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আর
সেটি হচ্ছে
বিজেপির এবারের
লক্ষ্য ছিল
মমতা ব্যানার্জিকে
পরাজিত করা।
যুব কংগ্রেস ও কংগ্রেস-এর এক সময়কার গুরুত্বপূর্ণ নেত্রী মমতা ব্যানার্জী ১৯৯৭ সালে কংগ্রেস থেকে বের হয়ে এসে সর্ব ভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস গঠন করেন। মমতা ব্যানার্জী ২০০৭ সালে পূর্ব মেদিনীপুর-এর নন্দীগ্রামে একটি কেমিক্যাল ফ্যাক্টরি স্থাপনের বিরোধিতার মধ্যে দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে নিজের অবস্থান শক্ত করেন এবং ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে শাসকদল কমিউনিস্ট পার্টিকে পরাজিত করে তৃণমূল-এর নেত্রী হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।
২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে আবার বিজয়ী হয়ে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো মুখ্যমন্ত্রী হন। কিন্তু ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তাঁকে ভারতের কেন্দ্রীয় শাসক দল বিজেপির প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হয়।
বিজেপির বিজয়ের আশা, তৃণমূলের জবাব খেলা হবে
২০২১ এর পশ্চিমবঙ্গ বিধান সভা জয়ের জন্য বিজেপি সর্বশক্তি প্রয়োগ করে নির্বাচনী
প্রচারণার সময়
বলেছিল “এবার
দিদির পরাজয়
হবে”। আর তৃণমূল নেত্রী দিদি এর জবাবে বলেছিলেন “খেলা
হবে।“
বিজেপি এবার বাংলা দখলের জন্য কেন্দ্রের নেতাদের বাংলায় এনে হাজির করে। খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নির্বাচনের আগে বেশ কয়েকবার পশ্চিমবঙ্গ সফর করেন। এই নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদীর ২২ বার পশ্চিমবঙ্গ সফর করার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে তিনি মোট ১২ বার পশ্চিমবঙ্গ সফর করেন। এছাড়াও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অমিত শাহ, স্মৃতি ইরানী, বিজেপি নেতা জেপি নড্ডা ও আদিত্যনাথ যোগীর মতো অন্য প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীরা বিভিন্ন সময় বিজেপির
পক্ষে পশ্চিম বঙ্গে বিভিন্ন নির্বাচনী সভা ও প্রচারণা চালিয়েছিল।
নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন প্রশাসনে বেশ
কিছুটা রদবদল করে। মমতা ব্যানার্জির অভিযোগ ছিল এই নিয়ে। নির্বাচনের শুরু থেকে উভয় দল একে অন্যকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করতে থাকে। এছাড়াও উভয় দল একে অন্যের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সহিংসতার অভিযোগে আনে।
ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রীর মুখে বাংলা বচন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পশ্চিমবঙ্গের এক বাউলের বাসায় ভোজন ছিল নির্বাচনের মানুষের
মন জয়
করার বিজেপির
এক সরল কৌশল। এমন কী পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফর নিয়েও তৃণমূলের অভিযোগ ছিল যে বাংলাদেশে গিয়ে মাতুয়া সম্প্রদায়-এর
সাথে দেখা করার
নাম করে প্রধানমন্ত্রী কৌশলে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন।
নির্বাচনের ঠিক আগে রাষ্ট্রীয় সেকুলার পার্টি নামের এক রাজনৈতিক দলের জন্ম হয় যার নেতৃত্বে ছিলেন ফুরফুরা শরীফের পীর মোহাম্মদ আব্বাস সিদ্দিকী। এছাড়াও আসাদউদ্দিন ওয়াইসির অল ইন্ডিয়া মজলিসে ইত্তেহাদুল মুসলেমিন বা মীম নামে পরিচিত দলটিও পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে ৭জন প্রার্থী দাঁড় করায়। মমতা ব্যানার্জী যাদের বিজেপির বি টিম হিসেবে উল্লেখ করেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে এই দুটি দলের উদ্দেশ্য ছিল মমতার মুসলমান ভোটারদের মধ্যে বিভক্তির সৃষ্টি করা।
অন্যদিকে বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ দখলের পরিকল্পনার আরেকটি দিক ছিল তৃণমূল-এর কর্মীদের ভাগিয়ে বিজেপিতে নিয়ে আসা। নির্বাচনের অনেক আগে থেকে তৃণমূল কংগ্রেস-এর অনেক কর্মী বিজেপিতে যোগ দিলেও নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসতে থাকে ততই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া নেতানেত্রীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। নির্বাচনের আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একসময় ঘোষণা করেছিলেন যে তৃণমূল থেকে ৪০ জনের মতো বিধায়ক বিজেপিতে যোগ দিতে যাচ্ছেন এবং এদের অনেকে যোগ দেন।
এই সব
বিধায়ক ছাড়াও
আরো অনেক
সেলিব্রেটি এই
দলে যোগ
দেন, যাদের মধ্যে মহানায়ক মিঠুন চক্রবর্তীও রয়েছেন। অন্য
দল থেকে
নিজের দলে
নেতা নিয়ে
আসার একটি
খেলায় অন্তত
বিজেপি জিতেছে।
এবারের নির্বাচনে মমতা ব্যানার্জী নিজে তার
নিজের আসন নন্দীগ্রামে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া শুভেন্দু অধিকারীর কাছে পরাজিত হয়েছেন। কিন্তু দিদি
হেরে গেলেও সার্বিক ফল এসেছে তার
দল তৃণমূলের পক্ষে।
যার ফলে নির্বাচনে একদিকে দিদি যেমন হেরেছেন, তেমনি অন্যদিকে বিশাল এক জয় তিনি অর্জন করেছেন।
তৃণমূলের যেখানে জয়, সেখানেই বিজেপির পরাজয়
যদিও গত নির্বাচনের থেকে এবার বিজেপি ৭৪টি বেশী আসন লাভ করেছে কিন্তু তারপরেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা এই নির্বাচনের ফলকে বিজেপির পরাজয় হিসেবে দেখছে।
যদিও নির্বাচনের
আগে করা
বিভিন্ন সংবাদপত্রের বেশির ভাগ জরিপে দেখা যাচ্ছিলো দিদির জয় নিশ্চিত, কিন্তু বিজেপি এই সকল জরিপকে উড়িয়ে দিয়েছিল। এমনকি বিজেপির চাণক্য নামে পরিচিত ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ভোটের আগে বলেছিলেন যে বিজেপি নির্বাচনে ২০০ আসন লাভ করবে। কিন্তু খেলা শেষে দিদির বিজয় হয়েছে।
এর মূল কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে দিদির ইমেজ। মমতা ব্যানার্জীকে সবসময় ভারতের রাজনীতিতে একজন শক্তিশালী নেত্রী হিসেবে দেখা হয়। বিজেপি দিদির বিপরীতে বাংলার এমন কাউকে তৈরি করতে পারেনি যিনি প্রকৃতপক্ষে দিদিকে রাজনীতির ময়দানে পরাস্ত করতে পারেন।
এর ফলে বিজেপিকে দিদির প্রতিপক্ষ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে দাঁড় করায়। এটিও কাজ করেনি বলেই বিশ্লেষকদের ধারণা। বরঞ্চ বাংলার মেয়ে বাংলার শাসক হবে এই ধারণা জোরালো হয়েছে। দিদি নিজেও এই ধারণাকে শক্তিশালী করেছেন নিজ রাজনৈতিক স্বার্থে। কারণ বিজেপি জিতলেও মূল কলকাঠি নাড়বে বাংলার বাইরের কেউ, এই বিষয়টি বাংলার কারো কারো কাছে ইগোর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
ভোটের আগে একদিকে বিজেপি তৃণমূলের সমালোচনা করেছে আবার অন্যদিকে তৃণমূল থেকে নেতা কর্মী ভাগিয়ে আনছে এটাও ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
এবারের নির্বাচনে টিকেট পাওয়ার আশায় তৃণমূল থেকে আসা নেতানেত্রীরা বিজেপির ত্যাগী নেতাদের জন্য এমন কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিল যার যন্ত্রণা টিকেট না পাওয়ার মধ্যে দিয়ে প্রকাশ হয়েছে। যারা দীর্ঘদিন ধরে বিজেপির রাজনীতির সাথে ছিল তাদের অনেকের পক্ষে উড়ে এসে জুড়ে বসাদের মেনে নেওয়া সম্ভব হয়নি।
একই সাথে এই বিষয়টি বিজেপির জন্য বেশ বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করে, কারণ এতে দলে “ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই ছোট সে তরী, তৃণমূলের নেতাতে যাচ্ছে ভরি” অবস্থার সৃষ্টি হয়। টিকেট-এর আশায় বিজেপিতে এসে টিকেট না পেয়ে যারা হতাশ হয়েছে তাদের কাছ থেকে বিজেপি তেমন সাহায্য পায়নি।
ক্ষমতায় এলে আসামের মতো পশ্চিমবঙ্গেও জাতীয় নাগরিক পঞ্জি ( ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেন) চালু করবে বলে বিজেপি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এখানে উল্লেখ্য
যে এনআরসি হচ্ছে নিজেকে ভারতের নাগরিক হিসেবে পরিচয় প্রদানের প্রমাণপত্র। ২০১৯ সালে আসামে এনআরসির হালনাগাদ করার ফলে সেখানে প্রায় ২০ লক্ষ নাগরিক নাগরিকত্ব হারায়, যাদের বেশির ভাগ হচ্ছে মুসলমান।
নাগরিকত্ব হারোনোর
তালিকায় আসামের
অনেক বাঙালিরও
নাম ছিল ।
এই ঘোষণার ফলে পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের মধ্যে এক আতঙ্ক তৈরি হয়। বিজেপির এই ঘোষণার পরেই মমতা ব্যানার্জী ঘোষণা দেন নির্বাচনে বিজয়ী হলে তিনি পশ্চিমবঙ্গে এনআরসির প্রয়োগ করতে দেবেন না। যার ফলে মুসলমানরা তৃণমূলের পেছনে একাট্টা হয়।
অন্যদিকে যে সমস্ত মুসলমান রাজনৈতিক দল পশ্চিমবঙ্গের নিজেদের প্রার্থী দিয়েছিল মুসলমানেরা তাদের বদলে তৃণমূলের প্রার্থীকে নিজেদের প্রার্থী হিসেবে ভোট দেয়।
“দিদি আমাদের একজন”
এই মনোভাবের
কারণে তিনি পশ্চিমবঙ্গের নারীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। যার ফলে প্রদেশের নারীদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ তৃণমূলের ভোট বাক্সে সিল দিয়ে তৃতীয়বারে মতো তৃণমূলকে বিজয়ী করেছে।
দলের জয় ও দিদির ভবিষ্যৎ
দল জিতলেও দিদি হেরে গেছেন। এতে দলে দিদির অবস্থান কি পাল্টে যাবে? এখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন? এ রকম দুচারটা প্রশ্ন অনেকের মাথায় আসছে না তা নয়, ভোটযুদ্ধে সামান্য ব্যবধানে হেরে গেলেও মমতা
ব্যানার্জি নিজে এখনো এই ফল মেনে নেননি।
হেরে গেলেও দলে দিদির অবস্থানের বিন্দুমাত্র হেরফের হবে না। কারণ তৃণমূল মানে দিদি আর দিদি মানেই তৃণমূল। দলে দিদির কোনো বিকল্প নেই এবং দিদির নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করবে এমন কেউ নেই। ভারতের সংবিধান অনুসারে দিদির মুখ্যমন্ত্রী হতে বাঁধা নেই। তবে এর জন্য ছয়
মাসের মধ্যে দিদিকে কারো ছেড়ে দেওয়া কোনো একটি আসন থেকে উপনির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে।
যার হল জয়
নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র
মোদী অন্যদের
সাথে নির্বাচনে
বিজয়ী মমতা ব্যানার্জী, এম.কে স্ট্যালিন, ও পিনারাই বিজয়নকে তাদের বিজয়ের জন্য শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী খেলা শেষ হলো। নির্বাচনের
খেলায় কোনো
এক রাজনৈতিক
দল বিজয়ী হলেও আরেকবার প্রমাণিত হলো ভারতের নির্বাচনে সত্যিকারের বিজয়ী হলো ভারতের গণতন্ত্র।
এক নজরে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা
১৮৬১ সালে এই বিধানসভার জন্ম ইন্ডিয়ান কাউন্সিলস অ্যাক্ট থেকে।
১৮৬২ সালে গভর্নর জেনারেল প্রতিষ্ঠা করেন লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলি।
১২ জন সদস্য নিয়ে প্রথম এই অ্যাসেম্বলির অধিবেশন শুরু। তবে এরা জনতার নির্বাচিত ছিলেন না, ছিলেন বড়লাট মনোনীত।
১৯১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বেঙ্গল লেজিসলেটিভ কাউন্সিল।
১৯৩৬ সালে আইন অনুসারে বেঙ্গল এর সরকার প্রধানকে প্রাইম মিনিস্টার অফ বেঙ্গল হিসেবে অভিহিত করার নির্দেশ জারী করা হয়।
১৯৩৭ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস ৫৪, মুসলিম লীগ ৪০ এবং কৃষক প্রজা পার্টি ৩৫টি আসন পায়, তবে মুসলিম লীগ ও অন্যান্য স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থনে শেরে বাংলা এ, কে ফজলুল হক বাংলার প্রথম প্রাইম মিনিস্টার হন।
ভারত স্বাধীন হওয়ার পর ঢাকার ছেলে প্রফুল্ল চন্দ্র ঘোষ পশ্চিমবঙ্গের প্রথম প্রাইম মিনিস্টার হন। তবে ১৯৫১ সালে নির্বাচনের পর এই পদটির অস্তিত্ব বিলোপ করা হয়। এই নির্বাচনে জিতে পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হন বিধান
চন্দ্র রায়।
মমতা ব্যানার্জী হলেন পশ্চিমবঙ্গের অষ্টম মুখ্যমন্ত্রী, যিনি আগামী পাঁচ বছর পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছেন।
লেখক, বিজ্ঞাপনকর্মী ও সমাজকর্মী
ড. বিজন কুমার শীল বিস্তারিত
বিপরীত স্রোত প্রতিবেদন বিস্তারিত
ডা. আহমদ মরতুজা চৌধুরী বিস্তারিত
যারিন মালিয়াত অদ্রিতা বিস্তারিত
মোহাম্মদ মাহমুদুজ্জামান বিস্তারিত
উৎপাদিত মাছের প্রায় ১২ শতাংশ আ.. বিস্তারিত
বাতিলযোগ্য সাইবার নিরাপত্তা আই.. বিস্তারিত
বাংলাদেশ তখনো বিশ্ব ক্রিকেট অঙ.. বিস্তারিত
ব্রেদিং আউট বার্ডেন নামে কর্ম.. বিস্তারিত