English
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

প্রকাশঃ ২০২১-০৯-১৬ ১৫:১১:৪৩
আপডেটঃ ২০২৪-১১-২১ ১৩:৩৯:২৬


রবীন্দ্রনাথ ও আইনস্টাইন

রবীন্দ্রনাথ ও আইনস্টাইন


বজলুল করিম আকন্দ

পিতামহর্ষিদেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে কবি একবার বেড়াতে গিয়েছিলেন ডালহৌসির পাহাড়ে; সেখানে আকাশের গ্রহ-নক্ষত্র দেখতে দেখতে বিশ্বের বিচিত্র রূপ অল্প বয়সেই তাঁর চেতনাকে নাড়া দিয়েছিল বিজ্ঞান চেতনার চাপা উত্তেজনা ভাষা পেল বালক রবীন্দ্রনাথের জীবনের প্রথম প্রবন্ধে-বিষয়, তারামণ্ডলী মহাকাশ শুরু হলো সাহিত্যের সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞানের এক বিচিত্র অভিজ্ঞান এই দুই পথের পথিক কিন্তু বাঁধা বন্ধনহীন গ্রন্থিতে একই চেতনার জগতে সাহিত্যের রসস্রোতে বিজ্ঞানের স্বচ্ছন্দ গতি, আর বিজ্ঞানের বিচিত্র রহস্য আবিষ্কারের অদম্য উৎসাহ তাঁর সাহিত্যকে দিয়েছে এক দুর্লভ প্রাণশক্তি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ গীতিকার তাঁর সঙ্গীতে বাঙালি মনমানসের হাসি-কান্না, প্রেম-ভালোবাসা, দেশভক্তি, ঈশ্বরস্তুতি প্রকৃতি সবকিছু মূর্ত হয়ে উঠলেও তিনি সারাজীবন জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা বিষয়ের ওপর সমান নজর রেখেছিলেন রবীন্দ্রনাথের মহাবিস্ময় শুধু ভাবুক কৌতূহলী হিসেবে নয়, তা সত্যিকারের বিস্ময়, ‘আকাশ ভরা সূর্য তারা, বিশ্বভরা প্রাণ,/ তাহারি মাঝখানে আমি পেয়েছি মোর স্থান,/ বিস্ময়ে তাই জাগে আমার গান


 অ্যালবার্ট আইনস্টাইন, যিনি আপেক্ষিকতা তত্ত্বের জনক, তিনি সঙ্গীত বিজ্ঞানে তেমন কোনো পার্থক্য খুঁজে পেতেন না তিনি বলতেন, ‘ঈশ্বরের সৃষ্টজগতের মতোই সঙ্গীতও এক সুশৃঙ্খল ছন্দে আবদ্ধআইনস্টাইন বেহালায় মোজার্ট আর বিঠোফেনের সুর বাজাতেন এবং কোয়ান্টাম তত্ত্বের অন্যতম স্রষ্টা রিচার্ড ফাইনম্যান বাজাতেন বংগো

 

রবীন্দ্রনাথ অল্প বয়সেই জ্যোতির্বিজ্ঞানের সাথে পরিচিত হন যেমন, মায়ের আসরে এক আলোচনায় তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি প্রক্টরের গ্রন্থ হইতে গ্রহ-তারা সম্বন্ধে অল্প যে একটু জ্ঞান লাভ করেছিলাম তাহাও ...বিবৃত করিতে লাগিলাম’ (দৃষ্টান্তটিজীবনস্মৃতিথেকে নেয়া হয়েছে) প্রক্টর নামক যে বিজ্ঞানীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে তিনি হচ্ছেন ইংরেজ জ্যোতির্বিদ রিচার্ড অ্যানটনি প্রক্টর (১৮৩৭-১৮৮৮) তিনিহ্যান্ড বুক অফ দি স্টারস (১৮৬৬)’ গ্রন্থের প্রণেতা মনে হয়, রবীন্দ্রনাথ বাল্যকালে এই গ্রন্থখানাই পড়ে থাকবেন প্রথম বয়সেই বিজ্ঞানের বিষয় থেকে বিস্ময়বোধ তাঁর পরবর্তীকালের বিজ্ঞানপ্রিয়তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে এছাড়াও বাল্যকালেই সীতানাথ দত্তের মতো পণ্ডিত ব্যক্তির সাহচর্য তাঁর বিজ্ঞানের নানা জটিল বিষয় সহজ করে বোঝাবার কৌশল রবীন্দ্রনাথকে বিজ্ঞাননির্ভর হতে সচেষ্ট করেছিল

 

রবীন্দ্রনাথ বিশ্বের অনেক জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছেন, ইংল্যান্ডে যান মাত্র সতেরো বছর বয়সে জার্মানিতে যান দুবার-১৯২৬ ১৯৩০ সালে যে দুবার আইনস্টাইনের সঙ্গে তাঁর দেখা, সেখানে দুই নোবেলজয়ী বিজ্ঞানের নানা বিষয়ে কথোপকথনে মেতে উঠেন কথোপকথনের প্রতিপাদ্য বিষয় হয়ে উঠেছিল কোয়ান্টাম তত্ত্ব কোয়ান্টাম তত্ত্বের মূল সূত্রটি হলো- কোনো পদ্ধতির একটি মাত্র ইতিহাস থাকে না, এর থাকে অনেকগুলো সম্ভাব্য ইতিহাস আইনস্টাইন কোয়ান্টাম তত্ত্বের এরূপ ব্যাখ্যা পুরোপুরি মেনে নিতে পারেননি কোনো দিন যদিও রবীন্দ্রনাথ বস্তুবাদী কিংবা ভাববাদী কোনো দর্শনেই নিজেকে স্পষ্টভাবে যুক্ত করেননি কখনও, তবে তাঁর চিন্তা-চেতনা চিরায়ত বিজ্ঞানের ধ্যানধারণার চেয়ে কোয়ান্টাম তত্ত্বের ব্যাখ্যার অনুরূপ বলে মনে হয়- যখন তিনি বলেন, ‘আমারি চেতনার রঙে পান্না হল সবুজ, / চুনি উঠল রাঙ্গা হয়ে/ ----- গোলাপের দিকে চেয়ে বললুমসুন্দর’ - সুন্দর হল সেকবি বলে উঠলেন, ‘ব্রহ্মা- যেন মাকড়সার জাল, মন হল মাকড়সা, কারণ মন যেমন একক, তেমনই বহু

 

দুজন দুই পথের অনুসারী হয়েও একে অপরের পরিপূরক হয়ে উঠেছিলেন যেমন, ওই সাক্ষাতের পর সাংবাদিকরা রবীন্দ্রনাথকে প্রশ্ন করেছিলেন, আপনি আইনস্টাইনকে কেমন দেখলেন, উত্তরে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন: ‘আমার একজন কবির সাথে দেখা হলোআর আইনস্টাইনকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেছিলেন: ‘আমি একজন বিজ্ঞানীর সাথে কথা বলেছি- কবির সাথে নয়’ (তথ্যটি অমিয় চক্রবর্তীসাম্প্রতিকগ্রন্থ থেকে নেয়া হয়েছে)

 

বিজ্ঞানীরা বলেন, মহাবিশ্বে রয়েছে ভর শক্তির খেলা (ভর হলো বস্তুর মোট পরিমাণ) মহাবিশ্বের তাবৎ বস্তু মাত্র কয়েকটি কণা আর কতগুলো বলের ক্রিয়ার উপহার এজন্য রয়েছে দুটি তত্ত্ব কণাদের জন্য কোয়ান্টাম তত্ত্ব আর বৃহৎ ভর যেমন গ্রহ, নক্ষত্র ছায়াপথের জন্য আপেক্ষিকতার তত্ত্ব অর্থাৎ এই মহাবিশ্বের আচরণ বুঝতে কাজে লাগে যে তত্ত্ব, তা হলো আপেক্ষিকতা অন্যদিকে পরমাণুর বিক্রিয়া ব্যাখ্যা করে যে তত্ত্ব, তার নাম কোয়ান্টাম তত্ত্ব দুটি তত্ত্বই, বলা বাহুল্য, বেশ বিচিত্র যেমন আপেক্ষিকতা অনুযায়ী কোনো বস্তুর ভর বাড়ে বা কমে তার গতিবেগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তেমনি কোয়ান্টাম তত্ত্ব অনুযায়ী কোনো একটা কণা যন্ত্রে ধরা পড়ার আগে অনেক কণা হিসেবে থাকে অথচ যন্ত্র যখন তাকে শনাক্ত করে ফেলে তখন তা ফের একটা হয়ে যায় রকম ভূতুড়ে ব্যাপারের জন্যই হয়তো আইনস্টাইন মানতে চাইতেন না কোয়ান্টাম তত্ত্বের কিছু কিছু ব্যাখ্যা যদিও তিনি ১৯২১ সালে আলোর ফটোইলেকট্রিক এফেক্ট-এর ব্যাখ্যার জন্য নোবেল পুরস্কার লাভ করেন মহাবিশ্বে রকম দুটি নিয়ম কেন? সবকিছুর জন্য একটাই নিয়ম চালু নয় কেন? তাহলে ওই দুটি তত্ত্ব কি একমাত্র কোনো তত্ত্বের দুরকম চেহারা? তা যদি হয় তবে সেই সার্বিক তত্ত্ব, আপেক্ষিকতা আর কোয়ান্টাম তত্ত্বের মিলনে যার জন্ম, তা মিলবে কী করে? বলা বাহুল্য, একটি সার্বিক ঐক্যবদ্ধ তত্ত্ব আবিষ্কারের চেষ্টা বিজ্ঞানীরা করে যাচ্ছেন অনেককাল সফল হননি কেউই এখনও পর্যন্ত আইনস্টাইনের অন্তিম ইচ্ছা ছিল একটি একীভূত ক্ষেত্র তত্ত্ব কিন্তু তাঁর -ইচ্ছা পূরণ হয়নি

 

আজ থেকে প্রায় তেরশত সত্তর কোটি বছর আগে অতিউত্তপ্ত অতিঘণ এক শক্তিপুঞ্জে প্রচ- বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে মহাবিশ্বের উৎপত্তি হয়েছিল বলে মনে করা হয় একে বলা হয় মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব মহাবিশ্বের জন্ম ব্যাখ্যায় বহুকাল আগে থেকেই গৃহীত হয়েছে এই তত্ত্ব যারপর থেকে ওই বিস্ফোরণের ধাক্কায় ক্রমাগত ফুলেফেঁপে বড় হচ্ছে মহাবিশ্ব অর্থাৎ শুরুতে পুঞ্জিভুত শক্তিপুঞ্জে বিস্ফোরণের ফলে তা একটি স্ফীতিশীল বেলুনের মতো ক্রমেই প্রসারিত হয়ে চলেছে বস্তু এবং শক্তি বলতে আজ আমরা যা বুঝি, তখন তার কোনো অস্তিত্বই ছিল না বলা বাহুল্য, প্রসারণের সাথে সাথে মহাবিশ্ব ক্রমে শীতল হতে থাকে এভাবেই বস্তু বল চতুষ্টয় (মহাকার্ষ, বিদ্যুৎ-চুম্বকত্ব, দুর্বল সবল নিউক্লিয় বল) সৃষ্টি হয়েছে বস্তু ক্রমে জমাট বেঁধে গ্রহ-নক্ষত্র-ছায়াপথ সৃষ্টি হয়েছে এবং একপর্যায়ে জীবজগৎ মানুষের আবির্ভাব সম্ভব হয়েছে স্থান-কালের যাত্রাও মহাবিস্ফোরণ থেকে শুরু এর পূর্বের ইতিহাস বিজ্ঞানীদের জানা নেই তবু বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টা থেমে নেই যেমনটি, জেনেভায় অবস্থিত সার্ন (ইউরোপিয়ান কাউন্সিল ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ)-এর মূল উদ্দেশ্য হলো মহাবিশ্বের সবচেয়ে আদি মৌলিক কণা কোয়ার্ক গ্লুওনের বিচিত্র খেলা আবিষ্কার করা (কোয়ার্ক গ্লুওন মিলে প্রোটন নিওট্রন তৈরি হয়) সম্প্রতি সার্নে ঈশ্বর কণা বা ভরদানকারী হিগ্স বোসন কণা বিজ্ঞানীরা শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন এটি শনাক্তকরণই শেষ কিছু নয়, তাই আরও ব্যাপক গবেষণা চলছে সেখানে এতে মহাবিশ্ব সৃষ্টির আদি অবস্থা জানা যাবে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন যেমন, মহাবিশ্বের মোট ভর শক্তির মাত্র শতকরা পাঁচভাগ (%) বস্তু পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা হদিস করতে সক্ষম হয়েছেন বলা বাহুল্য, এখনও বেশিরভাগ বস্তু শক্তি কৃষ্ণবস্তু কৃষ্ণশক্তি হিসেবে অমীমাংসিত রয়েছে

 



মহাবিস্ফোরণ থেকে মহাবিশ্ব সৃষ্টি এর প্রসারণ সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়:

 

জ্যোতির্ময় জটাজাল      কোটি সূর্য প্রভাসম

দিগি¦দিকে পড়িল ছড়ায়ে

মহান ললাটে তাঁর      অযুত তড়িৎ স্ফূর্তি

অবিরাম লাগিল খেলিতে

 

১৯০৫ সালে আইনস্টাইনের বয়স যখন মাত্র ২৬ বছর, তখন বার্নের পেটেন্ট অফিসে পেটেন্ট এক্সামিনার হিসেবে কর্মরত অবস্থায়চলন্ত বস্তুর তড়িৎগতিবিদ্যা প্রসঙ্গেতিনি একটি অনন্য গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন সেখানে তিনি একটি সাধারণ ধারণা প্রকাশ করলেন, সমস্ত ভৌত বিধি বিশেষ করে আলোর দ্রুতি সব একই গতিতে ধাবমান পর্যবেক্ষকদের কাছে একভাবে প্রকাশিত হবে এই ধারণা, পরে দেখা গেল, আমাদের স্থান কাল বিষয়ক ধ্যানধারণায় একটি বিপ্লবের দাবি রাখে আইনস্টাইন এটির নাম দিলেন বিশেষ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব পরবর্তী এগারো বছরে আইনস্টাইন একটি নতুন মহাকর্ষ তত্ত্ব গড়ে তুললেন, এটির নাম দিলেন সাধারণ আপেক্ষিকতা বিশেষ আপেক্ষিকতার কয়েকটি দিক সহজেই বোঝা সম্ভব যেমন, স্থির অবস্থায় কোনো বস্তুর যে ভর থাকে গতিশীল হলে সে ভর যায় বেড়ে অপরদিকে ঘড়ি স্থির থাকলে যে সময় দেয়, সেটি গতিশীল হলে তার চেয়ে কম সময় দিবে এগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে দৈনন্দিন জীবনে এসব পরিবর্তন আমরা টের পাই না কারণ, দৈনন্দিন জীবনে আমরা যেসব গতির সঙ্গে পরিচিত তা আলোর গতির (আলোর গতি প্রতি সেকেন্ডে এক লক্ষ ছিয়াশি হাজার মাইল) চেয়ে অনেক কম আলোর গতির কাছাকাছি গতিতেই এসব পরিবর্তন লক্ষ্য করা সম্ভব তাই আপেক্ষিকতার এসব পরিবর্তন আমাদের অভিজ্ঞতায় ধরা পড়ে না রবীন্দ্রনাথ আপেক্ষিকতার এসব বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা শুধু যে বুঝতে চেষ্টা করেছেন তাই নয়, তিনি তাঁর নায়ক-নায়িকার কথোপকথনেও তা জুড়ে দিয়েছেন যেমন, ‘শেষের কবিতা’- লাবণ্য বলছে, ‘সহজ নয় সময় লাগবেআর অমিত বলছে, ‘সময়টা সকলের সমান লাগা উচিত নয় একঘড়ি বলে কোনো পদার্থ নেই, ট্যাঁকঘড়ি আছে, ট্যাঁক আনুসারে তার চাল আইনস্টাইনের তাই মতঅমিত চরিত্রের ¯স্রষ্টা রবীন্দ্রনাথ শুধু যে আপেক্ষিকতার বৈজ্ঞানিক দিকটা বোঝার চেষ্টা করেছেন তা নয়, এর দার্শনিক তাৎপর্য অর্থাৎ ভর শক্তির সমতুল্যতা, স্থান কালের একত্রীকরণ ইত্যাদি তাঁকে মুগ্ধ করেছে

 

প্রকৃতির বলচতুষ্টয়ের মধ্যে মহাকর্ষ দুর্বলতম বল, তবে এর প্রভাব মহাবিশ্বব্যাপী মহাকর্ষের আবিষ্কর্তা আইজ্যাক নিউটন বলেছিলেন, ওটা হলো দুটো বস্তুর মধ্যে আকর্ষণ নিউটনের ওই মত পাল্টে দিলেন অ্যালবার্ট আইনস্টাইন-বললেন, মহাকর্ষ হলো স্থান-কালের জ্যামিতির খেলা তিনি দেখিয়ে দিলেন, স্থান এবং কাল আলাদা জিনিস নয় স্থানের তিন মাত্রার মতোই কাল একটা মাত্রা (স্থান-কাল হলো গাণিতিক স্থান যার প্রতিটি বিন্দু স্থান কাল স্থানাঙ্ক দ্বারা সনাক্ত করা হয়) আইনস্টাইন ওটা প্রমাণ করার পর থেকে স্থান কালকে আর আলাদা করে দেখেন না বিজ্ঞানীরা, দুটো একাকার করে দেখেন স্থান-কাল হিসেবে এটি প্রমাণের পর আইনস্টাইন তাঁর সাধারণ আপেক্ষিকতায় দেখিয়ে দেন, মহাকর্ষ দুটো বস্তুর মধ্যে আকর্ষণ নয়, স্থান-কাল জ্যামিতির খেলা কী রকম? আইনস্টাইন বলেন, যে কোনো বস্তু তার চারপাশের স্থান-কালকে দুমড়ে-মুচড়ে দেয় যে বস্তু যত ভারী, তা তার চারপাশের স্থান-কালকে দুমড়েও দেয় তত বেশি আইনস্টাইনের এই ব্যাখ্যা অনুযায়ী, পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে সূর্যের টানের জন্য নয়, সূর্যের উপস্থিতিতে তার চারপাশের জায়গা দুমড়ে যায় বলে এই দোমড়ানো জায়গার মধ্য দিয়ে চলতে গিয়ে পৃথিবীর পথ ক্রমশ একটু-একটু করে বেঁকে যায় এটাকেই বলে জ্যামিতির খেলা অতিসম্প্রতি সাধারণ আপেক্ষিকতার ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী দূরবর্তী অতিকায় বৃহৎ দুটো কৃষ্ণগহ্বরের সংঘর্ষে সৃষ্ট মহাকর্ষীয় তরঙ্গ আমেরিকার লুইজিয়ানা ওয়াশিংটনে স্থাপিত লাইগো ডিটেক্টারে শনাক্ত হয়েছে তবে এটি শনাক্তকরণই চূড়ান্ত কিছু না, আরও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের কাজ চলছে সেখানে মহাকর্ষ সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর  ‘বিশ্ব পরিচয়গ্রন্থে বলেন, ‘অবশেষে আইস্টাইন দেখিয়ে দিলেন এটা একটা শক্তিই নয় বোঝার পক্ষে টানের ছবি সহজ ছিল কিন্তু যে নূতন জ্যামিতির সাহায্যে এই বাঁকা আকাশের ঝোঁক হিসেব করে জানা যায় সে জন লোকেরই বা আয়ত্তে আছে? যাইহোক ইংরেজিতে যাকে গ্র্যাভিটেশন বলে তাকে মহাকর্ষ না বলে ভরাবর্তন নাম দিলে গোল চুকে যায়

 

প্রকৃতির চূড়ান্তরূপ সন্ধানে আইনস্টাইন এবং রবীন্দ্রনাথ দুজনই সচেষ্ট ছিলেন সারাজীবন উত্তর কি জুটেছে ওদের কাছে? আইনস্টাইন বলেছিলেন, ‘ঈশ্বর বিশ্বব্রহ্মা- নিয়ে পাশা খেলে নাকিন্তু ঈশ্বর বিশ্বব্রহ্মা- নিয়ে পাশা খেলছে কি খেলছে না... আইস্টাইন রবীন্দ্রনাথের দর্শনের আলোকে তারও কোনো স্পষ্ট উত্তর মেলেনি আজও

 

 

 

লেখক পরিচিতি:

বজলুল করিম আকন্দ

অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী, বাংলাদেশ বিজ্ঞান শিল্প গবেষণা পরিষদ


ক্যাটেগরিঃ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি,


বৈশাখে ইলিশ নয়

বৈশাখে ইলিশ নয়

উৎপাদিত মাছের প্রায় ১২ শতাংশ আ.. বিস্তারিত

সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি

সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি

বাতিলযোগ্য সাইবার নিরাপত্তা আই.. বিস্তারিত

সাকিব: বিতর্ক যার সঙ্গী

সাকিব: বিতর্ক যার সঙ্গী

বাংলাদেশ তখনো বিশ্ব ক্রিকেট অঙ.. বিস্তারিত

আরো পড়ুন