English
ঢাকা, রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

প্রকাশঃ ২০২১-১০-০১ ১৩:২৯:৫৪
আপডেটঃ ২০২৪-০৯-০৬ ২০:০৬:০৬


ই-কমার্স প্রতারণা থেকে বাঁচুন

ই-কমার্স প্রতারণা থেকে বাঁচুন


শহীদ আল বোখারী মহাজাতক

 

সেপ্টেম্বর মাসে মিডিয়ার আলোচনার একটা প্রধান বিষয় ছিল -কমার্সের নামে প্রতারণা লক্ষ লক্ষ মানুষ কীভাবে প্রতারিত হয়েছে তার হরেকরকম কাহিনী বিচিত্র কাহিনী উঠে এসেছে মিডিয়ার পাতায় মিডিয়ার বক্তব্যে

আমরা বার বার সাধারণ মানুষকে সতর্ক করার চেষ্টা করেছি যে ভার্চুয়াল ভাইরাস ভার্চুয়াল প্রতারণা ডিজিটাল প্রতারণা যে কত বহুরূপী হতে পারে চোখ কান খোলা না রাখলে আপনি নিজেও তার খুব নির্মম শিকার হতে পারেন

ইভ্যালি নিয়ে এখন অনেকেই সরব কিন্তু আমরা প্রথম থেকেই তার পণ্য কিনলে ১০০% ক্যাশব্যাক ১৫০% ক্যাশব্যাক কথা যখন প্রথম শুনেছি আমরা ঘরোয়াভাবে আমাদের পরিবারের সদস্যদের সতর্ক করে দিয়েছি

আমরা প্রথম আমাদের সাদাকায়নের আলোচনায় এক বছর আগে ৩১শে জুলাই ২০২০ সালে ইভ্যালি নিয়ে মানুষকে অত্যন্ত সতর্ক করে দিয়েছিলাম এবং আমরা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছিলাম

 

 

আসলে তদন্ত হতে হতে শোকজ নোটিশ পাঠাতে পাঠাতে এক মন্ত্রণালয় থেকে আরেক মন্ত্রণালয়ে চিঠি যেতে যেতে ব্যবস্থা এবং তারপর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে করতে লক্ষ লক্ষ মানুষ সর্বস্বান্ত হয়েছে

অবশ্য প্রতারণা করে মানুষের টাকা লোপাট করার যুগ শুধু যে এই ডিজিটাল যুগের সূচনাতেই হয়েছে তা নয় সবসময়ই কিছু প্রতারক নানাভাবেই নানা ছলেবলে কৌশলে প্রতারণা করে এসছে

এবং এই শতকের প্রথম সঙ্ঘবদ্ধ প্রতারণা শুরু হয় ১৯৯৮ সালে জিজিএন নামে একটি প্রতিষ্ঠান মানুষকে এমএলএম- নামে প্রতারিত করতে শুরু করে সেইসময়ই আমরা আমাদের পরিবারের সদস্যদের এমএলএম সম্পর্কে সতর্ক করেছিলাম

জিজিএনের পরে এলো আইটিসিএল (ইসলামিক ট্রেড এন্ড কমার্স লিমিটেড) তারা সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুরাগকে ব্যবহার করে হাজার হাজার মানুষের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে লোপাট করে

তারপর যুবক ডেসটিনি ইউনি পে টু ইউ এবং এর সাথে ২৬৬টি সমবায় সমিতি লক্ষ লক্ষ মানুষের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে

ডেসটিনির যখন রমরমা অবস্থা সমাজে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আনুকুল্য পেয়ে যখন তারা তরতর করে মানুষের টাকা আত্মসাৎ করছে তরতর করে মানুষের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তখনও আমরা নিঃশঙ্কচিত্তে তাদের প্রতারণার ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছিলাম

ইউনি পে টু ইউ- ব্যাপারেও আমাদের একই বক্তব্য ছিল আমরা আমাদের পরিবারের সদস্যদের বলিষ্ঠভাবে সতর্ক করেছিলাম এরপরে শুরু হলো সাম্প্রতিক -কমার্স যুগ গত পাঁচ বছরের এবং ইভ্যালি -অরেঞ্জ ধামাকা শপিং আরো কত নামে কতকিছু

আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রেই সতর্ক করেছিলাম আমরা প্রত্যেককে বলেছিলাম যে প্রতিটি ক্ষেত্রেই নিজেদের বিচার বুদ্ধি বিচার বুদ্ধি প্রয়োগ করতে হবে পরম করুণাময় যে জ্ঞান যে মস্তিষ্ক আমাদের দিয়েছেন যে-কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার আগে এই মস্তিষ্ককে ঠান্ডা মাথায় কাজে লাগাতে হবে বিচার বিবেচনা করে কাজ করতে হবে


প্রতারণা করা নিঃসন্দেহে অপরাধ 

কিন্তু প্রতারিত হওয়া অসম্মানের!

যখনই আপনি প্রতারিত হচ্ছেন তখনই বোঝা যাচ্ছে যে আপনি আপনার সহজাত বিচারবুদ্ধি ব্যবহার করেন নাই আপনি প্রলুব্ধ হয়েছেন এবং লোভে প্রলুব্ধ হয়ে দ্রুত বড়লোক হওয়ার জন্যে হওয়ার জন্যে দৌড় দিয়েছেন এবং দ্রুত পাওয়ার আশায় প্রলুব্ধ হয়ে যারা দৌড় দেয় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চিৎপটাং হওয়াটাই তাদের ভাগ্যে জোটে


ঘটনা : বেতনে অভ্যস্ত কর্মকর্তা তার ব্যবসার বুদ্ধি!

আসলে কতরকম ঘটনা যে বেরিয়ে এসছে ইভ্যালি নিয়ে বা -কমার্স প্রতিষ্ঠান নিয়ে বা -অরেঞ্জ নিয়ে
সরকারের একজন অবসর প্রাপ্ত কর্মকর্তা পেনশনের টাকা থেকে ২৫,০০০০০ লাখ টাকা তুলে ইভ্যালির সাইক্লোন অফারে ২০টি বাইক অর্ডার করেছিলেন গত জুলাইয়ে এই অফারটি বন্ধ হয়ে যাবার পর দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো বাইকগুলো বুঝে পান নি এই কর্মকর্তা

এখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে তার ইনভয়েসের কাগজ পত্র দিয়ে অনুরোধ করেছেন বাইকের দরকার নেই তাকে যেন আসল টাকাটা তুলে দেয়া হয়

আসলে এই কর্মকর্তা ব্যবসা বোঝেন না মায়া লাগে আহারে বেচারা! কর্মজীবনে হয়তো তিনি ফাইল চালাচালিতেই অভ্যস্ত ছিলেন কিন্তু এখন চাকরি নাই কোনো মন্ত্রণালয়ে ইনভয়েসের কাগজ পত্র দিয়ে যে আসল টাকাটা তুলে আনা সম্ভব নয় এটা তিনি বোঝেন না


যখন ইভ্যালির সাইক্লোন অফার চলছিল যেখানে একটি বাইকের ৪০/৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেয়া হচ্ছিল কর্মকর্তার ভাবনা ছিল অফারের বাইকগুলো নিয়ে বাইরে বিক্রি করে কিছু বাড়তি আয় করবেন

আসলে সরকারি কর্মকর্তা সবসময় মাস শেষে বেতন পেয়ে অভ্যস্ত ব্যবসার রহস্য বোঝাটা তার হয়তো বুদ্ধির বাইরে

 

ঘটনা : এক ব্যবসায়ীর বুদ্ধির অপকৌশলের ফলাফল...

কিন্তু একজন ব্যবসায়ী কীভাবে এই ভুল করতে পারেন! একজন পুরোনো ঢাকার ব্যবসায়ী তিনি বড় ছাড়ে -কমার্স প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পণ্য কিনে আবার বিক্রি করতেন এই রি-সেলিং বা পুনর্বিক্রি ব্যবসায় সর্বশেষ বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছিল দুই কোটি টাকা যা এখন আর ফেরত পাচ্ছেন না তিনি

তিনি পাঁচটি -কমার্স প্রতিষ্ঠানে পণ্য কিনতে টাকা জমা দিয়েছিলেন এর মধ্যে দুটির মালিক প্রতারণার মামলায় কারাগারে একটির মালিক বিদেশে পালিয়ে গেছেন দুটি টাকা ফেরত দিচ্ছে না

তিনি এক সাংবাদিককে বলেন যে, আমি এখন নিঃস্ব টাকা ফেরত না পেলে আমার পরিবারের কী হবে সেই দুশ্চিন্তায় দুই মাস ধরে রাতে ঘুমাতে পারি না

এই -কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো যাদের কাছ থেকে পণ্য কেনে তাদের কাছ থেকে ব্যবসায়ীরা পণ্য কেনেন কিনে তারা বিক্রি বিক্রি করেন প্রত্যেক ব্যবসায়ী জানেন যে কোন পণ্য কতটা কিনলে কত পার্সেন্টেজ পাওয়া যায়

তো ব্যবসায়ী হওয়ার পরে একটি -কমার্স প্রতিষ্ঠান কীভাবে বড় ছাড়ে পণ্য বিক্রি করে এই চিন্তা তার মাথায় যদি না আসে তো এই দোষ কি কপালের? এই দোষ কি ভাগ্যের? না এই দোষ হচ্ছে নিজের ব্যবসায়িক বুদ্ধিটা ব্যবহার না করার কারণে?

 

 

আমি মন্ত্রী! আমারই যদি গরু না থাকে তাহলে কীভাবে হবে?- বাণিজ্যমন্ত্রী

-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রাহক প্রতারণার বিষয়টি বোঝাতে গিয়ে সাংবাদিকদের সামনে নিজের প্রতারিত হওয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তিনি সাংবাদিকদের জানালেন যে, গত বছর ঈদে গরু দেখে অনলাইনে অর্ডার দেয়ার পরও কাঙ্ক্ষিত গরুটি তিনি বুঝে পান নি

পরে অবশ্য অপেক্ষাকৃত কম দামের একটি গরু বুঝিয়ে দেয়া হয় সঙ্গে দেয়া হয় একটি ছাগল

তিনি বলেন, কোরবানির গরু ডিজিটাল হাটে বিক্রি করার কথা সেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী হিসেবে আমাকেও রাখা হয়েছিল অনুষ্ঠানে আমাকে একটা গরু দেখানো হলো দাম বলা হলো এক লাখ টাকা ভাবলাম একটা গরু কিনি

/৭দিন পর তারা আমাকে জানাল সেই গরু আর নেই তারপর অপেক্ষাকৃত কম দামের একটি গরু বুঝিয়ে দেয়া হয় সঙ্গে দেয়া হয় একটি ছাগল

তিনি সাংবাদিকদের সামনে প্রশ্ন রাখেন, আমি মন্ত্রী, আমারই যদি গরু না থাকে তাহলে কীভাবে হবে?

আসলে মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়! আপনি মন্ত্রী বলেই গরুর সাথে একটি ছাগল পেয়েছেন আপনি নিঃসন্দেহে ভাগ্যবান যদি মন্ত্রী না হতেন তাহলে সাধারণ ক্রেতার মতো অবস্থা আপনারও হতো কিনা সেটা ভবিতব্যই বলতে পারে

আসলে এই ডিজিটাল প্রতারণার জগতে একজন মন্ত্রীই যখন তার কাঙ্ক্ষিত জিনিস পান না তখন অনলাইন কেনাকাটায় -কমার্সে আপনার কতটুকু সতর্কতা দরকার এটা বোঝানোর জন্যে আর কোনো কথার প্রয়োজন আছে কি!

আসলে -কমার্সের নামে ডিজিটাল প্রতারণার ক্ষেত্রে শুধু ১১টি প্রতিষ্ঠানই নয় শুধু যাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে তারাই নয় এখানে এমএলএম পদ্ধতি যারাই ব্যবহার করছে তাদের ব্যাপারেও যথাযথ তদন্ত এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ

এবং এর মধ্যে রিং আইডি, গো ফাউন্ডার, অন প্যাসিভ আরো যত নামে প্রতিষ্ঠান আছে প্রতিটিরই এমএলএম তৎপরতা নিয়ে যথাযথ তদন্ত এবং কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ

 

প্রতারণার দায় কি  তারকাদেরও নয়!

আসলে প্রতারণার ক্ষেত্রে প্রতারক কোম্পানিগুলো যেরকম দায়ী একইভাবে যাদের কথা শুনে বা যাদের বক্তব্য দেখে মানুষ প্রলুব্ধ হয় তাদের কি কোনো দায় নেই? যারা ধরনের কোম্পানির পক্ষে শুভেচ্ছা দূত হন যারা তাদের বিজ্ঞাপনে অংশ নেন তাদেরকে কি দায়মুক্ত ভাবা যায়?


২০১৬ সালে একটি নুডলস কোম্পানির বিজ্ঞাপন করার জন্যে ভারতের তিনজন খ্যাতনামা অভিনেতা অভিনেত্রী অমিতাভ বচ্চন প্রীতি জিনতা মাধুরী দীক্ষিত ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন তখন এই নুডলসে ক্ষতিকর রাসায়নিক পাওয়া গিয়েছিল বলে ভারতজুড়ে হইচই পড়ে যায়

ভারতের তদানীন্তন আইনমন্ত্রী তখন বিভ্রান্তিকর ভুয়া তথ্য বা দাবি করা পণ্য বা সেবার বিজ্ঞাপন বা সেগুলো অনুমোদনের ক্ষেত্রে অনুমোদনকারী তারকার ব্যক্তিগত দায় নির্ধারণ সাজার বিধান করে আইন প্রস্তাব করেন

সেই একই সময়ে চীনে আইন ছিল- কোনো তারকা কোনো পণ্যের বিজ্ঞাপন করতে চাইলে তাকে ব্যক্তিগতভাবে সেই পণ্য ব্যবহার করে এর গুণগত মান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে

ভারত বাংলাদেশে ভোক্তার স্বার্থ সুরক্ষা আইন রয়েছে তাতে বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপনে ভোক্তার ক্ষতির জন্যে জেল জরিমানার বিধান রয়েছে

কিন্তু আইনে বিজ্ঞাপনে অংশগ্রহণ পণ্য বা সেবা অনুমোদন অথবা সুপারিশের জন্যে তারকাদের ব্যক্তিগত দায় নির্ধারণ করা নেই

সম্ভবত একারণেই তারকারা কোনো যাচাইবাছাই ছাড়াই এই পণ্য বা কোম্পানিগুলোর কাজের প্রতিনিধিত্ব করতে রাজি হয়ে যান কিন্তু তারা যে নিজেদের ভাবমূর্তি এতে বিনষ্ট করেন সেটি খেয়াল করেন না

আসলে তাদের ওপরে তাদের ভক্তদের এক ধরনের আস্থা আছে অসচেতনতার জন্যে আস্থার অপব্যবহার হয়ে গেলে তাদের অবশ্যই সেজন্যে ভুল স্বীকার করা এবং ক্ষমা চাওয়া উচিৎ

আসলে দায় শুধু তারকাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় জাতীয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান যদি ধরনের প্রতারণামূলক ব্যবসায়িক উদ্যোগে ব্যবহৃত হয় তাহলে সেই জাতীয় প্রতিষ্ঠানের দায়ও কিন্তু কম নয়


সচেতন থাকা প্রয়োজন : প্রতারণায় কোনো আলেম যেন ব্যবহৃত না হন!

আসলে শুধু তারকা নন, শুধু জাতীয় প্রতিষ্ঠান নন, প্রতারণার ক্ষেত্রে কোনো আলেম যাতে ব্যবহৃত না হন সে ব্যাপারে তাদেরও সচেতন থাকা প্রয়োজন

সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে এহসান গ্রুপ নামে যে এমএলএম কোম্পানি গ্রাহকদের প্রতারিত করেছেন তাদের পক্ষে একজন জনপ্রিয় আলেম নাকি দীর্ঘদিন প্রচারণা চালিয়েছেন

তিনি নাকি বলেছেন- এহসান গ্রুপ নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না যদি সন্দেহ করো তাহলে তুমি মোনাফেক এহসান গ্রুপ নাকি বাংলাদেশ নয় গোটা জগতের জন্যে রহমতস্বরূপ

আসলে তিনি হয়তো নিজেও বোঝেন নি যে তিনি একটি প্রতারক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে একজন ইনফ্লুয়েন্সার বা প্রলুব্ধকারক হিসেবে কাজ করছেন

আসলে সাধারণ মানুষ আলেম সমাজকে সবসময়ই সম্মানের চোখে দেখেন অতএব তাদের যে-কেউ যে-কোনো কোম্পানি বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে যে-কোনো বক্তব্য দেয়ার আগে পুরো বিষয়টি আরো গভীরভাবে চিন্তা ভাবনা করে তারপরে মতামত ব্যক্ত করবেন এটাই সাধারণ মানুষ প্রত্যাশা করে


'শর্টকাটে পয়সাওয়ালা' এক সর্বগ্রাসী সামাজিক প্রবণতা!

আসলে প্রতারক তো প্রতারকই প্রলুব্ধকারক বা ইনফ্লুয়েন্সার বা প্রভাবক সে ব্যক্তি হোন তারকা হোন বা কোনো প্রতিষ্ঠান হোন তার দায় যেরকম কম নয়, একইভাবে যিনি লোভে পড়ে প্রতারিত হয়েছেন তার দায় কি কোনো অংশে কম?

আসলে এমএলএম কোম্পানিগুলো সে এনালগ কোম্পানি হোক বা ডিজিটাল কোম্পানি হোক -কমার্স হোক বা ধর্মের নামে হোক এদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে তারা যে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করতে পেরেছে এর কারণ আমাদের চারপাশের মানুষের নতুন প্রবণতা যে দ্রুত আমরা সবাই বড়লোক হতে চাই খুব অনায়াসে পরিশ্রম না করে মেহনত না করে সবকিছু পেতে চাওয়ার এক সর্বগ্রাসী সামাজিক প্রবণতা

যারা স্বল্পমূল্যে পণ্য কেনার জন্যে জাতীয় প্রতিষ্ঠানকে আগাম টাকা দিচ্ছেন তারা আসলে লোভের বশবর্তী হয়েই এই কাজটি করছেন তারা শর্টকাটে পয়সাওয়ালা হতে চাই পরিশ্রম করে স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার চেয়ে রাতারাতি রাতারাতি যেনতেন প্রকারে যেভাবে হোক কিছু পাওয়ার প্রবণতা অত্যন্ত প্রবল তা সে বৈধ হোক অবৈধ হোক, নৈতিক হোক নৈতিক হোক বা অনৈতিক হোক যে পথেই আসুক না কেন বড়লোক হতে চাই এবং এই বড়লোক হতে গিয়ে কেউ প্রথমেই সব হারাই কেউ বা পেয়ে হারাই

একজন কম্পিউটার অপারেটর দিন উপার্জন দেড়শ টাকা মালিক হয়ে গেছেন ৪৬০ কোটি টাকার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ড্রাইভার বিপুল সম্পদের মালিক হয়ে গেছেন কিছু সময়ের জন্যে কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের নিবাস হয়েছে জেলখানায়

 

শর্টকাটে যা পাবেন তা শর্টকাটেই চলে যাবে...

তো আসলে যা আপনি শর্টকাটে পাবেন সেটা শর্টকাটেই চলে যাবে সেটা কখনো আপনার স্থায়ী সুখ স্থায়ী সম্পদে রূপান্তরিত হবে না তা কখনো আপনার পরকালের কথা বাদ দেন, ইহকালীন জীবনেও শান্তি সুখের কারক হবে না

আমরা যত প্রলুব্ধ হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারব তত স্থায়ী সুখ স্থায়ী শান্তির পথে এগিয়ে যেতে পারব

 

 

 

কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের মাসিক সাদাকায়ন কার্যক্রমের মূল বক্তব্য হিসেবে ১ অক্টোবর ২০২১ শুক্রবার প্রচারিত। লেখকের অনুমতিক্রমে কিছুটা সংক্ষিপ্ত করে প্রকাশিত।

 

 

 লেখক পরিচিতি:

শহীদ আল বোখারী মহাজাতক

জীবন-যাপন বিজ্ঞানের শিক্ষক। দেশীয় সংস্কৃতি ও সামাজিক মূল্যবোধকে ভিত্তি করে বাংলাদেশে আধুনিক মেডিটেশন চর্চার প্রবর্তক। স্ব-উদ্ভাবিত এবং পরিচালিত কোয়ান্টাম মেথড কোর্সের ৪৭৫টি ব্যাচ পরিচালনার মাধ্যমে লাখো মানুষকে করেছেন আলোকিত, আত্মপ্রত্যয়ী, দেশপ্রেমী এবং ইতিবাচকতার অনুরণন ছড়িয়ে সমাজকে দেখিয়েছেন নতুন স্বপ্ন। বহুমুখী কাজ করে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে যে মানবিক সঙ্ঘ তিনি গড়ে তুলেছেন তার উদাহরণ শুধু দেশেই নয়, বিশ্বে বিরল। ‘কোয়ান্টাম মেথড’, ‘শুদ্ধাচার’-সহ অনেক জনপ্রিয় বইয়ের লেখক। ‘আল কোরআন বাংলা মর্মবাণী’, ‘হাদীস শরীফ বাংলা মর্মবাণী’ লেখকের গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

 

 



ক্যাটেগরিঃ প্রধান কলাম, জীবনধারা,