English
ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

প্রকাশঃ ২০২১-১০-০১ ১৫:০১:৪৪
আপডেটঃ ২০২৪-১২-০১ ০৯:৩৮:৪১


কোভিড -১৯ মহামারীতে মমতাময় নারায়ণগঞ্জ প্রকল্পের কার্যক্রম

কোভিড -১৯ মহামারীতে মমতাময় নারায়ণগঞ্জ প্রকল্পের কার্যক্রম


মোঃ জুলহাস উদ্দিন

 শফিকুজ্জামান সৈকত

বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে মমতাময় সমাজ গড়ে তোলার জন্য একটি প্রকল্প পরিচালিত হচ্ছে যা 'মমতাময় নারায়ণগঞ্জ' নামে পরিচিত। এই প্রকল্পের লক্ষ্য হলো নারায়ণগঞ্জ শহরে একটি সমাজভিত্তিক প্যালিয়েটিভ কেয়ার সেবার মডেল তৈরি করা যা নিরাময়অযোগ্য এবং জীবন সীমিতকারী রোগে আক্রান্ত রোগীদের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক এবং আত্মিক দুঃখদুর্দশা কষ্টগুলো দূর করে জীবনের মান উন্নয়ন করে থাকে। 'মমতাময় নারায়ণগঞ্জ' প্রকল্পটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বি এস এম এম ইউ), ওয়ার্ল্ডওয়াইড হসপিস প্যালিয়েটিভ কেয়ার অ্যালায়েন্স (ডব্লিউ এইচ পি সি ) এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (এন সি সি) এর সহযোগিতায় কমিউনিটিতে প্যালিয়েটিভ কেয়ার সার্ভিসের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। প্রকল্পটি গত বছর যাবত ডাক্তার, নার্স, প্যালিয়েটিভ কেয়ার সহকারী এবং স্বেচ্ছাসেবকদের দ্বারা প্রদত্ত বিনামূল্যে গৃহভিত্তিক সেবা প্রদান করে আসছে এবং প্রান্তিক রোগীদের জন্য বিনামূল্যে ঔষধ এবং খাদ্যসামগ্রী প্রদান করে যাচ্ছে

বর্তমানে আমরা কোভিড-১৯ মহামারী নামক একটি বৈশ্বিক সমস্যার সম্মুখীন। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশের কাছেও কোভিড-১৯ মহামারী সম্পূর্ণ নতুন একটি ঘটনা। সর্বত্র ছিল অনিশ্চয়তা, নিরাপত্তাহীনতা এবং ভয়। কীভাবে এই মহামারী থেকে পরিপূর্ণভাবে নিস্তার পাওয়া সম্ভব সেটা নিয়ে এখনো পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে নানারকম গবেষণা চলছে। এমতাবস্থায়, নারায়ণগঞ্জে গৃহভিত্তিক প্যালিয়েটিভ কেয়ার সেবা সচল রাখাও ছিল অনেক বড় একটি চ্যালেঞ্জ

কোভিড -১৯ মহামারীর শুরু থেকেই নারায়ণগঞ্জ জেলাকেহটস্পটহিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং কোভিড -১৯ পরীক্ষার মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে রোগী শনাক্ত করা হয়। গত দেড় বছর ধরে সময়ে সময়ে বেশ কয়েকটি লকডাউন 'মমতাময় নারায়ণগঞ্জ' দলের জন্য কাজ এবং গৃহভিত্তিক প্যালিয়েটিভ কেয়ার সেবা প্রদান বেশ অসম্ভব করে তুলেছে। তারপরেও, তারা তাদের পরিষেবা বন্ধ করেনি। বরং সেই সময়ে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপের মতো প্রযুক্তি কার্যকরভাবে ব্যবহার করেছে। টেলি পরামর্শের মাধ্যমে রোগীর যত্ন দেওয়া হয়েছিল। খাদ্য সামগ্রী এবং ঔষধ রোগীদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। যখনই লকডাউন শিথিল করা হয়েছিল 'মমতাময় নারায়ণগঞ্জ' দল স্বাস্থ্যবিধি মেনে গৃহসেবা অব্যাহত রেখেছিল এবং এটি এখনও চলমান রয়েছে

এই কোভিড-১৯ মহামারীতে 'মমতাময় নারায়ণগঞ্জ' দলের সবচেয়ে বড় অর্জন হল তারা এখন তাদের নিজেদের শক্তি বুঝতে পারে, তারা এই সমাজে কতটা গুরুত্বপূর্ণ- সেটাও খুব সহজেই অনুধাবন করতে পারে। তারা এখন এই নতুন চ্যালেঞ্জকে সাদরে গ্রহণ করেছে। এমনকি কঠোর লকডাউন পরিস্থিতিতেও তারা তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম এবং সেবা অব্যহত রেখেছে। তবে এটা একদিনে সম্ভব হয়নি। এই বিষয়গুলোতে জ্ঞান লাভ করার জন্য তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করতে হয়েছিল। তারা এসব প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে এবং অনুশীলনের মাধ্যমে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে সক্ষম হয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হল সংক্রমণ প্রতিরোধ বিষয়ক জ্ঞানার্জন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালিয়েটিভ মেডিসিন বিভাগের সার্বিক তত্ত্বাবধানই ছিল তাদের এই সফলতার অন্যতম চাবিকাঠি

কোভিড-১৯ মহামারী থেকে 'মমতাময় নারায়ণগঞ্জ' দলের প্রাপ্তি অনেক বেশি। তারা শিখেছে কীভাবে গৃহসেবা ব্যাহত হলেও টেলিফোন সেবার মাধ্যমে রোগীদের সেবা দিতে হয় এবং পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে কিভাবে পরিষেবা চালু রাখা যায়। তারা অনলাইন সেশন করতে শিখেছে। যেহেতু এই পরিস্থিতিতে তাদের কোনফেস টু ফেসমিটিং করার সুযোগ নেই, তাই কীভাবে ফেসবুক এবং ইউটিউবের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে অনলাইনে নিজেদের কার্যক্রম প্রচার করা যায় তা শিখেছে। নিবন্ধিত স্বেচ্ছাসেবীরা লকডাউনের কারণে 'মমতাময় নারায়ণগঞ্জ' কেন্দ্রে যেতে পারেনি, কিন্তু অনলাইন পদ্ধতিতে নিবন্ধিত স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে যোগাযোগ অক্ষুন্ন রাখা সম্ভব হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তারা সোশ্যাল মিডিয়ার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পেরেছে। তারা খুব ভালোভাবেই শিখেছে কিভাবে রোগীদের যত্ন নিতে হয় এবং প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জাম পরিধান করে অফিসিয়াল কাজ চালিয়ে যেতে হয় এবং নিজেদের নিরাপদ রাখতে হয়। এই সময়ে তারা বুঝতে পেরেছে যে নিজেকে রক্ষা করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, কতটা আত্ম-যত্ন প্রয়োজন। তারা শিখেছে কিভাবে প্রযুক্তির সাহায্যে পরিবারের সদস্য প্রতিবেশীর সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব। কোভিড -১৯ মহামারী আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে যে বিলাসবহুল জীবনযাপনের চেয়ে বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য পানি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কাউকে সাহায্য করার পর আত্মতৃপ্তি কি তা এই দল পরিপূর্ণভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছে

 

 

 লেখক পরিচিতি:

মোঃ জুলহাস উদ্দিন

শফিকুজ্জামান সৈকত

সমাজকর্মী

 


ক্যাটেগরিঃ স্বাস্থ্য,


বৈশাখে ইলিশ নয়

বৈশাখে ইলিশ নয়

উৎপাদিত মাছের প্রায় ১২ শতাংশ আ.. বিস্তারিত

সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি

সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি

বাতিলযোগ্য সাইবার নিরাপত্তা আই.. বিস্তারিত

সাকিব: বিতর্ক যার সঙ্গী

সাকিব: বিতর্ক যার সঙ্গী

বাংলাদেশ তখনো বিশ্ব ক্রিকেট অঙ.. বিস্তারিত

আরো পড়ুন