সাবেরা মমতাজ মুনিয়া
আশাপূর্ণা দেবীর কালজয়ী তিনটি উপন্যাস 'প্রথম প্রতিশ্রুতি', 'সুবর্ণলতা', 'বকুল কথা'। তিন প্রজন্মের তিন নারীর সংগ্রামের কাহিনী। আত্মজয় আর আত্মপ্রকাশের সংগ্রাম।
এটা সেই সময়ের কাহিনী যখন মেয়ে মানে ছিল ঘরে সাজিয়ে রাখার পুতুল। তার বই পড়তে নেই, শাস্ত্র জানতে নেই, ঘর থেকে দু পা বাইরে রাখতে নেই। আর কোনো বিষয়ে মত প্রকাশ তো কল্পনার বাইরে। ভুল করেও নিজের মনের একটা কথা যদি মুখ ফসকে বলে ফেলে, তবে তার নরকবাস শিরোধার্য।
এমন সময়েই জন্মেছিলেন সত্যবতী, সুবর্ণলতা কিংবা বকুলের মতো গুটিকয়েক নারী। যারা চাইতেন নিজের চিন্তাভাবনাগুলো প্রকাশ করতে। 'মেয়েছেলে' না হয়ে মানুষের মতো বাঁচতে। তাদের প্রত্যেকের প্রতিবাদের ধরন ছিল ভিন্ন।
সত্যবতী ছিলেন বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন। যার ব্যক্তিত্বের কাছে সংসার সন্তান স্বামী সবকিছুই হার মেনেছিল। সে পেরেছিল কারণ তার পেছনে ঢাল হয়ে ছিলেন তার বাবা।
সুবর্ণর মেয়ে বকুল। বকুলের প্রতিবাদের ভাষা ছিল নিরব। মা-ঠাকুমার মতো জোর গলায় দাদাদের বিরুদ্ধে সে কথা বলতে পারতো না। তার লেখনীই ছিল নিজেকে প্রকাশের মাধ্যম। বকুলের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পেছনে ছিল তার মায়ের সাহস আর ত্যাগ। তবে এই তিন ক্যারেক্টরের ভেতর আমার সবচেয়ে পছন্দের সুবর্ণলতা। কারণ তার সংগ্রামটা ছিল পুরোপুরি একার।
সত্যবতীকন্যা সুবর্ণ। জেদি, মুক্তমনা, ডানা ঝাপটানো খাঁচায় বন্দি এক মুক্তিকামী পাখি। মাত্র ন'বছর বয়সে ভীষণরকম গোড়া এক পরিবারে বিয়ে হয়েও তার সন্তানদের সে নিজের মতো মানুষ করতে আমরণ যুদ্ধ করে গেছে। সংসার তাকে কোনোদিন বোঝেনি। তার নিজের ছেলেমেয়েও না। শেষ অবধি একমাত্র বকুল পেরেছিল মায়ের স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিতে। মায়ের কষ্ট সে বুঝেছিল।
উপন্যাসের মূল চরিত্রে নিজেকে কল্পনা করা বোধহয় পাঠকের সহজাত। তবে সুবর্ণলতার মাঝে আমি বারবার আমার মা-কেই খুঁজে পাই। কী ভীষণ বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব, স্বাধীনচেতা, মুক্তমনা, মিথ্যা আর ভুলের বিরুদ্ধে দৃঢ়তাবদ্ধ আর দায়িত্বের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাশীল। ঠিক সুবর্ণের মতোই আমার মাকেও লড়তে দেখেছি প্রতি মুহুর্তে। নিজের অস্তিত্বের জন্য, আমাদের জন্য। মায়ের প্রতিটা কথায় আমি মুগ্ধ হই। মায়ের এই দৃঢ়, সাহসী রূপটাই তাকে আমার চোখে বিশেষ করে তোলে। মায়ের জেদ সবার চোখে ভীষণ অবাধ্য। আমার কাছে এই জেদটাই এক বাধ্য অস্ত্র। বকুলের মতো আমারও মনে হয়, মা বুঝি কোনো রূপকথার রাজ্যের ঘুমন্ত রাজকন্যা। যার অনেক কিছু করার ছিল, বলার ছিল। শুধু সোনার কাঠি ছুঁইয়ে ঘুমটা ভাঙাতে পারলেই সে বিশ্বজয় করে ফিরে আসতো নিশ্চই।
প্রতি মুহুর্তে মা'কে যেন আমি নতুনভাবে আবিষ্কার করি। আর ভাবি, ইশ! যদি মায়ের মতো হতে পারতাম!
লেখক পরিচিতি:
সাবেরা মমতাজ মুনিয়া
শিক্ষার্থী, ইকনমিক্স বিভাগ,
ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি
ড. বিজন কুমার শীল বিস্তারিত
বিপরীত স্রোত প্রতিবেদন বিস্তারিত
ডা. আহমদ মরতুজা চৌধুরী বিস্তারিত
যারিন মালিয়াত অদ্রিতা বিস্তারিত
মোহাম্মদ মাহমুদুজ্জামান বিস্তারিত
উৎপাদিত মাছের প্রায় ১২ শতাংশ আ.. বিস্তারিত
বাতিলযোগ্য সাইবার নিরাপত্তা আই.. বিস্তারিত
বাংলাদেশ তখনো বিশ্ব ক্রিকেট অঙ.. বিস্তারিত
ব্রেদিং আউট বার্ডেন নামে কর্ম.. বিস্তারিত