আবদুল্লাহ আল মোহন
১.
জ্ঞানগুরু সক্রেটিস বলেছিলেন শিক্ষক আসলে তার শিক্ষার্থীকে কিছু শেখাতে পারেন
না। কারণ শিক্ষার্থী সব আগে থেকেই জানে। সে শুধু জানে না যে সে জানে। শিক্ষকের
কাজ হচ্ছে সে যে আসলে জানে, সেটাই তাকে জানিয়ে দেওয়া। জানা যে বিষয় শিক্ষার্থীর
নিজের কাছেই অজানা বলে ভ্রম হয়, সেই ভ্রম ভাঙানোই শিক্ষকের মূল কাজ। তাকে
শুধু এমন একটা পরিবেশ বা প্রক্রিয়া তৈরি করে দিতে হয়,যাতে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই
তাদের ভেতরে থাকা বিষয়গুলো বের করে আনতে পারে। এর চেয়ে বেশি কিছু করতে গেলে
শিক্ষকের শ্রম তো পণ্ড হয়ই, শিক্ষার্থীর শেখার পথও দীর্ঘ ও দুর্গম হয়ে ওঠে।
নিজের শিক্ষকতার জীবনে গভীরভাবে অনুধাবন করি শিক্ষকের মূল কাজ শিক্ষার্থীর
জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা, প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে আলাদা করে চেনা,
ভালোবাসার পাশাপাশি অনুপ্রাণিত করতে পারা। এক অর্থে কঠিন কাজ। আর এই কঠিন
কাজগুলোই সহজভাবে করতে পারা অনুসরণীয়, অনুকরণযোগ্য শিক্ষকের অনন্য একটি
নাম, উজ্জ্বল উদাহরণ আমাদের রবি স্যার, প্রাতিষ্ঠানিক নাম শ্রী রবীন্দ্রনাথ
সরকার। জীবনে অনুপ্রেরণা জাগানো, স্মৃতিতে বিশাল জায়গা দখল করে থাকা প্রিয়
স্যারের জন্মদিনে তাঁর সাথে সাম্প্রতিক দীর্ঘ আলাপনের আলোকে স্যারের শিক্ষক
সত্তার সৃজনী প্রজ্ঞার জীবনাদর্শ খুঁজে দেখতে সচেষ্ট থাকবো।
২.
আমাদের প্রাণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধোবাখোলা করোনেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের
(নাটিয়াবাড়ী,পাবনা) পরম শ্রদ্ধার প্রিয় শিক্ষাগুরু রবি স্যার, রবীন্দ্রনাথ সরকার
স্যারের জন্মদিন আজ ২২ জুন। স্যারের ভাষ্যমতে, শিক্ষা সনদ অনুযায়ী ১৯৪২ সালের
আজকের দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। সঠিক জন্মদিন-তারিখ-সন আরো অনেকের
মতোই স্যারেরও অজানা। কারণ সে যুগে বিদ্যালয়ের কেরাণীরাই প্রাথমিক পর্যায়ে
ভর্তির সময় জন্ম তারিখ,সন মনমতো বসিয়ে দিতেই অভ্যস্থ ছিলেন বলেই তাঁদের
সময়কালে জন্মগ্রহণ করা অধিকাংশ মানুষের সঠিক জন্ম ঠিকুজি উদ্ধার করা জটিল
ব্যাপার। জন্মদিনে স্যারের সুস্থ-সুন্দর দীর্ঘায়ু কামনা করি। শুভ জন্মদিন স্যার।
৩.
মনে রাখবার মতোন প্রিয় প্রয়াত কিংবা জীবিত মানুষদের অনুসন্ধানে নিরন্তর
প্রয়াসী আমি খুঁজে বেড়াই তাঁদের প্রাণিত বাণী কিংবা সৎসঙ্গ। সেই প্রত্যাশার প্রবল
টানেই চলতি বছরের এপ্রিলে (২০২৩) পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলায় ছুটে গিয়েছিলাম
আমার দীক্ষাগুরুদের অন্যতম একজন রবি স্যারের কাছে, মাতৃসম প্রিয় কাকীমার
স্নেহাশিষ ধন্য হতে। জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেড়িয়ে তিনি দুই ছেলের পরিবারের
সাথে সময় কাটাচ্ছেন আনন্দ-বেদনাকে নিত্য সঙ্গী করে। কারণ তাঁর তিন কন্যা
সন্তান বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। অবিভক্ত পিতৃত্বের অকৃত্রিম টান তাই দুই
বাংলায় ছড়িয়ে গিয়ে জড়িয়ে থাকে আশা-হতাশার যৌথসমাহারে। রবি স্যারের সাথে আমার
সর্বশেষ দেখা হয়েছিলো ২০১০ সালের ডিসেম্বরে আমাদের নাটিয়াবাড়ী হাইস্কুলের
স্মৃতিময় শতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে। আমার সম্পাদনায় প্রকাশিত শতবার্ষিকী সংকলনের
ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন, সেকথাও স্মরণ করিয়ে দিলেন আমার প্রকাশিত কয়েকটি
বই
স্যারকে প্রীতি উপহারদানকালে। স্কুলের ছাত্র জীবনেই আমার সম্পাদনায় লিটল
ম্যাগাজিন ‘বনলতা’ প্রকাশের নানা স্মৃতিচারণাও করলেন স্যার। আমার শিক্ষা ও
শিক্ষকতা জীবনের অনেক বিষয়ে আমার অভিজ্ঞতার আলোকে ধারণা পেতে প্রশ্নের
পর
প্রশ্ন উপস্থাপন করেন। স্মরণ করেন আমাদের ব্যাচের সতীর্থদের কথাও-
আরিফ, বিপ্লব, পলাশ, জব্দুল, মুকুল, রোজীনা, শহীদ, রতনদের অনেকের কথাও।
স্যারের সাথে আলাপনে বুঝতে কষ্ট হয় না আমরা হয়ত আমাদের অনেক শিক্ষককে
ভুলে গেছি, কিন্তু শিক্ষক তার প্রিয় ছাত্রকে কখনো ভোলেন না। তিনি আদর্শ ছাত্রের
দৃষ্টান্ত দিয়ে কথা বলেন। তাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার গৌরবের কথাও বলেন।
৪.
আমরা কেউই অস্বীকার করি না, মানুষের জীবনে পিতা-মাতার সাথে আরেকজন
গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হচ্ছেন শিক্ষক। এই তিনজনের সাথে কারো তুলনা চলে না।
আমাদের পাবনার বৃহত্তর নগরবাড়ী এলাকায় মো.আব্দুর রহমান মিঞা স্যারের পরেই
ইংরেজির মেধাবী শিক্ষক হিসেবে সকল অভিভাবকের কাছে সম্মানিত ছিলেন তিনি। ‘হেড
স্যার’ মো.আব্দুর রহমান মিঞাকে ‘মেন্টর’ হিসেবে আজো মানেন রবি স্যার। এমন
সকৃতজ্ঞ ব্যক্তিত্ব আমি কমই দেখতে পেয়েছি জীবনে। আমরা ছাত্র জীবনে রবি
স্যারকে পেয়েছি সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে। রবি স্যার আমাদের নাটিয়াবাড়ী
হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে ১৯৯৪ সালের ১০ মার্চ থেকে ২০০৫ সালের ২৭
জুলাই পর্যন্ত অত্যন্ত সুনাম ও দক্ষতার সাথে গুরুদায়িত্ব পালন করেন।
শ্রেণিকক্ষের শিক্ষক হিসেবে তিনি শিক্ষার্থীর মনে জ্ঞানের আলো জ্বালাতে
আন্তরিক প্রয়াসী ছিলেন, বেশ কঠোরও ছিলেন,শাসন করতেন বটে তবে মূর্তিমান
আতংক হয়ে ওঠেননি কখনো। তাঁদের শাসন,বেত্রাঘাত ছিলো স্বাভাবিক জীবনাচারণের
অংশ এবং অবশ্যই শিক্ষার্থীর মঙ্গলকর ভবিষৎ প্রত্যাশায়। সেই সাথে স্বীকার
করতেই হবে প্রিয় শিক্ষকদের উদ্দীপনাময় জীবন, আশার আলোতে ভরা নতুন নতুন
স্বপ্ন ও ঝলমলে উৎসাহ আমাদের নিরন্তর প্রাণিত করেছে। মানুষ হিসেবে
শিক্ষার্থীকে বড় করে তোলার, যথার্থভাবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টাকে খাটো করে দেখি
কী
করে ? সমুন্নত মূল্যবোধের সেই ভালোবাসার আলো জ্বালানো প্রবল ইচ্ছাশক্তির
শিক্ষকগণ আজ বিরলপ্রজ হয়ে উঠেছেন, অস্বীকার করি কী করে নিজের অভিজ্ঞতায় ?
আর
তখনই মেঘের ফাঁকে রবির কিরণ উজ্জ্বলতর হয় আমার মনের আকাশে। কারণ
অশীতিপর তরুণ রবি স্যার উচ্চারণ করতে দ্বিধা করেন না কবিগুরু রবির চরণ, ‘কী
পাইনি তার হিসাব মেলাতে / মন মোর নহে রাজি’।
৫.
রবি স্যার কেবল আমার শিক্ষকই ছিলেন না, তিনি এবং তাঁর পরিবার আমাদেরও
পরিবার হয়ে উঠেছিলো সবসময়ের জন্য। কারণ আমরা ছিলাম শৈশবের স্বর্গরাজ্য
রাজনারায়ণপুর গ্রামের একই পাড়ার নিকট বাসিন্দা। ফলে পারিবারিক মূল্যবোধের
জীবন চর্চায় আমাদের প্রতিটি বাড়িই ছিলো প্রতিটি সদস্যের আপন পরিবারের বর্ধিত
অংশ। ধর্ম-বর্ণের বিভেদ ভুলে সবসময় নিজেদেরকে পরস্পরের অংশ হিসেবে মনে
করার শিক্ষাই আমরা পেয়েছি। সেই টানেই তো ছুটে গিয়েছিলাম প্রিয় শিক্ষাগুরুর
পদধূলি গ্রহণ করতে,আমার মায়ের পরম আপনজন কাকীমার স্নেহাশিষ পরশ পেতে
মালদার গাজলে,তাঁদের বর্তমান আবাসস্থলে। স্যারের দুই ছেলে ও তিন মেয়ে। দুই
ছেলেই আমার আপনজন, বয়সেও আমার চেয়ে সামান্য ছোট- বড়জন ‘জীবন’ এবং
ছোটজন ‘কৃষ্ণ’ ছিলো আমার সবচেয়ে বেশি কাছের স্বজন, দুষ্টুমির নিত্য ও
চিত্তসঙ্গী। প্রায় দুই যুগ পর আমাদের দেখা হলো। দু’ভাই বাবার আদর্শে পেশাগত
জীবনে শিক্ষক এবং তাদের জীবনসঙ্গীরাও শিক্ষতার মহান পেশাতেই নিবেদিত। জীবন
আজ
ড.জীবন কুমার সরকার,দলিত সাহিত্য গবেষক হিসেবে দুই বাংলাতেই সুনাম অর্জন
করেছে,পিএইচডি করেছে কবি শামসুর রাহমানকে নিয়ে। অনেকগুলো মূল্যবান গ্রন্থের
জনক হিসেবে প্রিয় জীবন চিন্তনসখা হিসেবে আরো আপনজন হয়ে উঠেছে আমার।
কৃষ্ণ আর তার ‘অর্ধেক আকাশ’ জীবনসঙ্গী এবং তাদের একমাত্র দুষ্টু-মিষ্টি ছেলের
আনন্দসঙ্গ আমার ছুটে যাওয়াকে সার্থক করে তোলে। স্মৃতির অতীতে ফিরে ফিরে যাই
আমি সকলের আনন্দ আশ্রমের ক্ষণিকের অতিথি হয়ে। স্বর্গলোভ না থাকলেও
স্বর্গের কাছাকাছি চলে গিয়েছিলাম সেদিন স্যার-কাকীমা-জীবন-কৃষ্ণদের সাথে কাটানো
পুরোটা সময়। তবে আমাদের দু’পরিবারের স্বজনদের প্রয়াণজনিত বিপর্যয়ের
দু:সংবাদে বিষণ্ণতার মেঘ বেদনার বৃষ্টিপাতও ঘটায়। স্যারের এক জামাতার অকাল
প্রয়াণ আর আমার আব্বা এবং ছোটবোনের স্বামীর আকস্মিক মৃত্যুশোক আমাদের
গভীরভাবে ছুঁয়ে যায়। আমার যাওয়ার খবর জেনে স্যার ও কাকীমা দুপুরবেলা থেকেই
অপেক্ষায় পায়চারি করতে থাকেন। কিন্তু গাড়ির যান্ত্রিক ত্রুটি সারিয়ে পৌঁছাতে বেলা
চলে যায় বলে অনেকটা সময় তাঁদের সান্নিধ্য থেকে দূরে থাকার কষ্ট আজো বুকে
বেদনা জাগায়। বহু প্রত্যাশার সম্মিলনের আনন্দমেলা সকলের হৃদয়কে গভীরভাবে নাড়া
দেয়। আজো সেই অনুভব তীব্রভাবে জাগ্রত, সরব। সকলের অকৃত্রিম আন্তরিকতায়
আমার সাধনসঙ্গী শান্তা ম্যাডাম বিমুগ্ধ না হয়ে পারে না।
৬.
রবি স্যার নানা কারণে আমার জীবনে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছেন।
নাটিয়াবাড়ী হাইস্কুলোর আলোকিত শিক্ষক পরিবারের গর্বিত সদস্য হিসেবে রহমান
স্যার, রবি স্যার,সেলিম স্যার, মোহন স্যার,ফজলু স্যারদের কথা উল্লেখ করতেই হয়।
বহুভাবে তাঁরা শিক্ষার্থীর জীবনকে স্পর্শ করেছেন, সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে সক্রিয়
ভূমিকা রেখেছেন। অর্থাভাবে ভাঙ্গা বেড়ার এমন একটি গ্রামীণ উচ্চ বিদ্যালয়ের
‘অসচ্ছল’ কিন্তু মূল্যবোধের উচ্চতায়, জীবন চেতনায় ধনী শিক্ষকমণ্ডলীর দেখা এখন
প্রায় পাওয়া যাবে বলে আশা করি না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থবিত্ত ও
অবকাঠামো দৃশ্যমানভাবে বেড়েছে কিন্তু মানসিকভাবে শিক্ষানুরাগী শিক্ষকের অভাব
প্রকটভাবে বেড়েছে। এখন সর্বত্র চাকুরিজীবির দেখা মেলে,নিবেদিতপ্রাণ এই সকল
শিক্ষকদের সংখ্যালঘুতা হতাশা বৃদ্ধি করে চলছে ক্রমাগত। এমনতর ভাবনায় রবি
স্যারের সাথে তাঁর জীবন ও শিক্ষকতা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনায় উঠে আসে বহুমাত্রিক
বিষয়।
৭.
নিজেও একজন শিক্ষক হিসেবে গভীরভাবে অনুধাবন করি, শিক্ষক যদি মানুষ গড়ার
কারিগর হন তবে তাঁকে শুধু জ্ঞানের আধার নয়; একজন যথার্থ মানুষও হতে হবে। যে
মানুষের মধ্যে সততা ও ন্যায়নিষ্ঠতা নেই, তিনি বিশ্ববরেণ্য পণ্ডিত হলেও মানুষ
গড়ার মোহন কারিগর হতে পারেন না। রবি স্যারের ব্যক্তিত্বে পাণ্ডিত্য ও বিনয়ের
সংমিশ্রণ দেখা মেলে। আমাদের বিদ্বৎ সমাজে পণ্ডিতম্মন্য ব্যক্তিত্বের ভিড়ে তিনি
আমার কাছে উজ্জ্বল এক ব্যতিক্রম। আমাদের সংসারে জ্ঞান, বিনয়, ন্যায়নিষ্ঠতা
ও
কর্তব্যকর্মে দক্ষতার অপূর্ব সংমিশ্রণে সমৃদ্ধ ব্যক্তিত্ব বিরল। কিন্তু তাঁর
সম্পর্কে আমার যতটুকু জানার সুযোগ হয়েছে, এর ভিত্তিতে যথেষ্ট প্রতীতি নিয়ে
বলতে পারি, তিনি হলেন এমনই একজন বিরল ব্যক্তিত্ব। সুতরাং তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা
জানানোর এই বিরল সুযোগ গ্রহণ করতে পেরে আমি গর্ব বোধ করছি।
৮.
বস্তুবাদী দর্শনের একনিষ্ঠ জ্ঞানানুরাগী হিসেবে অনেকটাই নির্মোহ জীবন যাপন
করে যাচ্ছেন তিনি। জীবনের মোহের কাছে পরাজিত না হলেও পারিবারিক প্রীতির
সেতুবন্ধনের নিকট নিজেকে সমর্পণ না করে পারেননি শেষ বেলায়। জীবনের আশিটির
অধিক বসন্ত পেরিয়ে তিনি আজো অসম্ভব রকম সজীব,চিন্তা-চেতনায় দারুণ আধুনিক
এবং জীবনাদর্শে গভীরভাবে যুক্তিবাদী। স্যারের সাথে কথা বলে তাঁর সৃজনী বচনে
বারংবার গভীরভাবে অনুধাবন করি বিজ্ঞান ছাড়া আধুনিক সভ্যতা সম্পূর্ণ অচল।
বর্তমান যুগের প্রতিটি মুহূর্তে ও পদক্ষেপে বিজ্ঞানের কাছ থেকে আমরা তথ্য
আহরণ করছি। এই বিজ্ঞানকে বাদ দিয়ে আজ আমাদের অস্তিত্বই কল্পনা করা যায়
না। অথচ আধুনিক প্রযুক্তি বিদ্যার যুগেও বিজ্ঞান মনস্কতা বৃহত্তর জনমনের কাছে
এখনও চরম অবহেলিত। বিজ্ঞানের ছাত্র-শিক্ষক হয়েও বিজ্ঞান চর্চায় আমাদের
আগ্রহ নেই। সে কারণেই আজ নতুন করে বিজ্ঞান মানসিকতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে
নানাবিধ পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। পঠন-পাঠ, স্কুল কলেজে বিজ্ঞানের
ক্ষেত্রকে নানাভাবে প্রসারিত করা দরকার। আমরা মাদ্রাসা শিক্ষার সংস্কারের কথা
বলি,পাঠ্যক্রম বিজ্ঞানসম্মত করার কথা বলি। কিন্তু বাস্তবতা হলো,কেবল
পাঠ্যক্রম বিজ্ঞাসম্মত হলেই বিজ্ঞানমনস্ক প্রজন্ম তৈরি করা সম্ভব না। জ্ঞান-
বিজ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেয়ার জন্য বিজ্ঞান পড়ানোর চেয়ে বিজ্ঞানমনস্ক এবং
যুক্তিবাদী শিক্ষক বেশি দরকার যিনি সত্যিকারের শিক্ষার আলোটা ছড়িয়ে দিবেন।
সুতরাং একটি বিজ্ঞানমনস্ক বা বিজ্ঞানসচেতন দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন সুদক্ষ নাগরিক
তথা জনসম্পদ তৈরির মাধ্যমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কৌশল খাটিয়ে শিক্ষা, জ্ঞান ও
প্রজ্ঞাসমৃদ্ধ একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারার মতো এক
সুসংগঠিত জাতি উপহার পাওয়া যেতে পারে।
৯.
বহুজনবাদী রবিশালের যোগেন মণ্ডল থেকে বাবাসাহেব আম্বেদকর, জৈববিবর্তনবাদ
থেকে ডারউইন, মহামতি মার্কস, সংশয়বাদ থেকে বস্তুবাদ কিছুই বাদ যায় না স্যারের
সাথে আমার আলাপনে, কথামালা আর শেষ হতে চায় না। কত বিষয় নিয়েই না আমরা
কথা বলি। স্যারের পাশে বসে শুনি জীবনের কথা, আশাবাদের চাষাবাদ চলে ভাব-অনুভব
বিনিময়ে। অল্পতে তুষ্ট জীবনের কথা বলেন তিনি। গুরু-শিষ্য সম্পর্কের সেতুবন্ধন
বিষয়ে আলোচনায় জানাতে ভোলেন না, মানুষ স্বাধীন হয়ে জন্মগ্রহণ করলেও পদে পদে
শৃঙ্খলার শিকলে বন্দি মানুষের জীবন। অসীম চাওয়ার রাজ্যে মানুষের পাওয়াগুলো
নিতান্তই আপেক্ষিক। চাওয়া-পাওয়ার চোরাবালিতে মরীচিকাময় স্বপ্নে বিভোর
মানুষগুলোর আকাঙ্ক্ষার যেন শেষ নেই। এ হিসাব এতটাই নির্মম ও নিষ্ঠুর যার
নির্মমতায় আপন-পর ঠাহর করাই মুশকিল হয়ে পড়ে। তৈরি হয় অবিশ্বাস, ভেঙে পড়ে
সংসার, ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে পড়ে বন্ধন,ভূলুণ্ঠিত হয় মানবতা। অতৃপ্ত আত্মা এতটাই
বেসামাল হয়ে পড়ে যে, মিথ্যে তৃপ্তির আস্বাদন লাভে ন্যূনতম সামাজিকতা দেখানোর
প্রয়োজনও বোধ করে না। কিন্তু সামাজিক বন্ধনের দৃঢ়তার ওপরই নির্ভর করে
আত্মার প্রশান্তি, বিষয়টি বেমালুম ভুলে যায়। অদৃশ্য এ বন্ধন নির্মাণে তাই
প্রয়োজন হয় গুরুর দীক্ষা,আবির্ভূত হয় শিষ্য। মূলত এই পৃথিবী একটি শিক্ষা
ক্ষেত্র,যেখানে শিখন-শেখানোর আবর্তে আবর্তিত হয় মানুষের জীবন। যদি বন্ধন
সুদৃঢ় হয় তাহলে শিক্ষা হয় স্বতঃস্ফূর্ত ও প্রাণবন্ত,অন্যথায় তা আকর্ষিত ও মূঢ়
হয়ে পড়ে। বিশ্বজোড়া পাঠশালাসদৃশ শিক্ষার এ ভুবনে গুরু-শিষ্য বলতে শিক্ষক ও
শিক্ষার্থী বোঝানো হলেও এর অর্থ ব্যাপক।
১০.
আমার প্রথম যৌবনের আলো জ্বালানো বাতিঘর,শিক্ষাবিদ,চিন্তক রবি স্যার জীবন
গ্রন্থ থেকে পড়ে শোনান, বলতে থাকেন, পিতা-মাতা ও শিক্ষক যেমন জীবনকে
আলোকিত করেন,তদ্রুপ কর্মগুরু তার কর্মকৌশলের উষ্ণ পরশ বুলিয়ে সেই আলোকে
কাজে পরিণত করতে সাহায্য করেন। তাই গুরু ও শিষ্য উভয়কেই পদ-পদবির ঊর্ধ্বে
নিজেকে মানুষ ভাবতে হবে। পঁচিশ বছর থেকে শুরু হয়ে ষাট বছর পর্যন্ত এ পর্যায়
চলতে থাকে, কারণ ষাটের পর মানুষ নতুন করে আর কিছু শিখতে চায় না! এ ক্ষেত্রে
কর্মদাতা ও কর্মী বনে যাওয়া যতটা সহজ, কর্মগুরু ও যোগ্য শিষ্য হওয়া ততটাই
দুরূহ; এজন্য প্রয়োজন হয় নির্লোভ সম্পর্ক, দক্ষতা, নিষ্ঠা, বিশ্বাস ও দেশপ্রেম।
আমরা আমাদের এ সময়টাকে বলছি আধুনিক কাল। শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞানে
আমরা অনেক এগিয়ে। পৃথিবী জয় করে মানুষ এখন গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে। মহাবিশ্ব
থেকে অনন্ত মহাবিশ্বে আমাদের জ্ঞান। কত অভিনব আবিষ্কার প্রতিনিয়ত!
আমাদের সহজ জীবনযাত্রা, কত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, আরাম-আয়েশ! জীবনযাত্রার মান
কত
উন্নত! এ সবকিছু সম্ভব হয়েছে জ্ঞানচর্চার বদৌলতে।
১১.
মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে বিষয়ে আমার গবেষণা এবং প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ নিয়ে
স্যারের গভীর আগ্রহ প্রকাশ পেতে দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারি না। তিনি বলতে ভোলেন
না,আমাদের দরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অনুকূলে বৈষম্যমুক্ত একটা অগ্রসর
সমাজ। এ জন্য চাই যুক্তিনিষ্ঠ, বিজ্ঞানভিত্তিক চিন্তাচেতনার মানুষ তৈরির উপযোগী
শিক্ষা,বঙ্গবন্ধু যাকে বলেছেন বিকশিত মানুষ তৈরির শিক্ষা। যে শিক্ষা অন্ধভাবে
গুজবের পেছনে ছোটা মানুষ তৈরি করে; যে শিক্ষা বৈষম্যের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর যুক্তি
সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়; আমাদের সেই শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারে মন দেওয়া
প্রয়োজন। জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ, জন্মস্থান, অর্থনৈতিক অবস্থা নির্বিশেষে মানুষে
মানুষে বৈষম্য কমিয়ে একটি সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে আগামীর পৃথিবীতে টিকে থাকার
উপযোগী একটি শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলায় মনোযোগ ও সম্পদ বিনিয়োগকে এখন
অগ্রাধিকার ভিত্তিতেই বিবেচনা করতে হবে। শিক্ষার্জন ও এর বিতরণ একটি
ভিন্নতর মানসিক প্রক্রিয়া। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির, মন-মগজ-হৃদয়ের ত্রিবিধ সম্মিলনে
সম্পন্ন হয় পাঠগ্রহণ ও শিক্ষা বিতরণের মহৎ কর্ম। শিক্ষকতা শুধু একটি বৃত্তি বা
পেশা নয় বরং এটি একটি আরাধনা। আদর্শ ও নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষকের জ্ঞান ও গুণে
মুগ্ধ শিক্ষার্থী শিক্ষককে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করে। যথার্থ শিক্ষকের কাছ
থেকে দেশ আশা করতে পারে অসংখ্য প্রকৃত দেশপ্রেমিক,বিজ্ঞানমনস্ক আলোকিত
মানুষ। শিক্ষক সমাজ একটি দেশের সামগ্রিক অবকাঠামো গঠনের প্রধান হাতিয়ার।
সমাজে আলোকিত মানুষ গড়ে তুলতে একজন শিক্ষকের অবদান অনস্বীকার্য। আর
আলোকিত মানুষ তৈরি করার মাধ্যমেই কেবল গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন
প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতিমুক্ত দেশ গঠন সম্ভব।
১২.
নিজের জীবন অভিজ্ঞতার কথা জানতে চাইলে স্যার অকপটে বলতে থাকেন, শিক্ষাদান
নিছক অর্থোপার্জনমূলক কোনো বৃত্তি নয় বরং তা একটি মহান ও বিশেষ ধরনের
পেশা। পেশা আর বৃত্তির ব্যবধান বিস্তর- এটা সবার জানা কথাই। শিক্ষকতা পেশাকে
পেশার মানদণ্ডে নিতে না পারলে শিক্ষা বিতরণ করা কিংবা সত্যিকার অর্থে একজন
আদর্শ শিক্ষক হয়ে ওঠা যারপরনাই মুশকিল। শিক্ষক কোনো কর্মকর্তা নন বরং
বিদ্যাদাতা। তাই তার কোনো নির্বাহী ক্ষমতার মনোবাসনা থাকা সমীচীন নয়। আদতে
শিক্ষাগুরুর সামাজিক অবস্থান ও মর্যাদা অন্য পেশাজীবীদের থেকে ভিন্নতর। এ কথা
বলা বাহুল্য যে,এখনকার সিংহভাগ অভিভাবক ফলাফলমুখী মনোভাবের অধিকারী।
যাদের আরোপিত প্রত্যাশার চাপে কোমলপ্রাণ শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিদারুণভাবে
পিষ্ট হয়। অনেক সময় শিশুদের যথাযথ সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া,অন্তঃপারস্পরিক
মিথষ্ক্রিয়ার পরিপক্বতা ও শৈশব উপভোগের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে হয়। বঞ্চিত
শৈশবের জোগান দিয়ে প্রকৃত শিখনের খেই হারিয়ে মানবিক গুণাবলি বিবর্জিত কোনো
সামাজিক একক দিয়ে ভবিষ্যৎ নির্মাণের অমূলক ভাবনাও থাকে অনেকের মধ্যে।
একজন মানব শিশুর প্রথম পাঠ হলো তার পরিবার। পরিবার থেকে অর্জিত শিক্ষা-
দীক্ষা,বোধ-বোধি, রীতি-নীতি, নৈতিকতা-আদর্শ ও সামগ্রিক জীবনচারণের প্রভাব
অনিবার্যভাবে শ্রেণিকক্ষে প্রতিফলিত হয়। আর এ প্রভাব হয়ে ওঠে বিস্তর ও
সুদূরপ্রসারী। ভালো নম্বর পাওয়া মানেই ভালো বিদ্যার্জন নয়। মৌলিকত্ব বিবর্জিত
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ওজনদার সিজিপিএ-নির্ভর সনদ প্রসব করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে
উচ্চশিক্ষার নিশ্চয়তা দিতে পারে না বলেই তাঁর অনুধাবন।
১৩.
শিক্ষকতা বিষয়ে আমাদের আলোচনা নানা মাত্রা পায়। শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং
শিক্ষকদের মানসিকতার গুরুত্ব নিয়ে আমি প্রশ্ন উপস্থাপন করলে স্যার বললেন,
কোনো জাতির মেধাবী যুবাদের যদি শিক্ষকতা পেশা আকর্ষণ না করে, তবে সে জাতির
কপালে সমূহ দুর্ভোগ আছে। সেজন্যে মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় সম্পৃক্ত করা এবং
দক্ষ-সৃষ্টিশীল শিক্ষকসমাজ তৈরির জন্য রাষ্ট্রযন্ত্রের তরফ থেকে শিক্ষক তৈরির
বিশেষ স্কিম থাকা উচিত। পাশাপাশি,এসব মেধাবী শিক্ষকের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার
বিধান ও মর্যাদার নিশ্চায়ন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের ওপর-ই বর্তায়।
অন্যথায়, মানহীন অদক্ষ শিখন কারিগরের দ্বারা সৃষ্টকর্মে উৎকৃষ্ট ফল প্রত্যাশা
অসম্ভব। এতে বরং শিগগির-ই গোটা জাতির ভাগ্যে শনির দশা লক্ষণীয় হয়ে উঠবে।
১৪.
আনন্দময় শিক্ষা নিয়ে আমি প্রশ্ন উপস্থাপন করলে স্যার নিজস্ব মতামত তুলে
ধরলেন অনেকটা এভাবে, শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক তারা কি আলাদা কেউ? নাকি
পরস্পর পরস্পরের প্রতিপক্ষত্রয়ী? এ কথা মনে রাখতে হবে যে, পরস্পরের সম্মিলিত
প্রয়াসে শিখন-শিক্ষণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। শিক্ষায় এ ত্রিবিধ যোগ তাই
অপরিহার্য এবং অনিবার্য। শিক্ষা মানেই বহুমুখী একীভূত প্রচেষ্টা। এটা বাজারের
কোনো পণ্য নয় যে তা একতরফাভাবে কেবল পুঁজিপতির ব্যাগেই ভরা হবে! সুতরাং,
শিক্ষাদান ও শিক্ষাগ্রহণ হোক নিরন্তর আনন্দপূর্ণ। শিক্ষকতা পেশা হোক সম্মান,
মর্যাদা আর নিরাপত্তার প্রতীক। শিক্ষাগুরুর শির হোক সমুন্নত, হৃদয় হোক উন্মুক্ত,
বক্ষ হোক স্ফীত। তবেই আশা করা যায় যে, জাতি এতে সর্বাংশে উপকৃত হবে।
শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ সরকারের
সাথে সস্ত্রীক লেখক
১৫.
জীবনের জন্য সবচেয়ে জরুরি ‘কাণ্ডজ্ঞান’কে ধারণ করা সুশিক্ষিত যুক্তিবাদী ও
মানবিক মানুষ পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রকে আলোকিত করে। জ্ঞানের আলো, বিজ্ঞানের
আলো, মানবতার আলো, সাম্যের আলো, ভ্রাতৃত্বের আলো, ন্যায়ের আলো। এই সকল
আলোতে অন্ধকার দূর হয়। সমাজ সুন্দর হয়। আমরা হয়ে উঠি সামাজিক জীব। উচ্চতর
মানুষ দিয়েই শুধু অন্ধকারকে পরাজিত করা যায়। আমাদের আজ সেই সম্পন্ন মানুষ
চাই, উচ্চতর মূল্যবোধের মানুষ চাই বিপুল হারে। প্রকৃতির রাজ্যের সাথে মনুষ্য
সমাজের পার্থক্য গড়ে দেয় এই আলোর প্রদীপসম যুক্তিদবাদী মানুষেরা। সম্ভাবনাময়
শিক্ষার্থীর জীবনের দরোজা-জানালাগুলো চিহ্নিত করে আলো আসার ব্যবস্থা করে
যাচ্ছেন,অনাদি কাল থেকে যিনি এই প্রদীপ জ্বালিয়ে যাচ্ছেন তিনি হচ্ছেন শিক্ষক।
সমাজের বাতিঘর। জন্মদিনে আবারো পরম শ্রদ্ধার প্রিয় ব্যক্তিত্ব,সুশিক্ষক রবি
স্যারের আনন্দময় সুস্থ জীবন প্রত্যাশা করি। তাঁর জন্মদিনে সকল শিক্ষাগুরুকে
জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।
লেখক
পরিচিতি
আবদুল্লাহ আল মোহন
সহকারী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
ভাসানটেক সরকারি কলেজ, ঢাকা
২২
জুন ২০২৩
ড. বিজন কুমার শীল বিস্তারিত
বিপরীত স্রোত প্রতিবেদন বিস্তারিত
ডা. আহমদ মরতুজা চৌধুরী বিস্তারিত
যারিন মালিয়াত অদ্রিতা বিস্তারিত
মোহাম্মদ মাহমুদুজ্জামান বিস্তারিত
উৎপাদিত মাছের প্রায় ১২ শতাংশ আ.. বিস্তারিত
বাতিলযোগ্য সাইবার নিরাপত্তা আই.. বিস্তারিত
বাংলাদেশ তখনো বিশ্ব ক্রিকেট অঙ.. বিস্তারিত
ব্রেদিং আউট বার্ডেন নামে কর্ম.. বিস্তারিত