English
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

প্রকাশঃ ২০২৩-০৭-১১ ০৭:৪৭:১০
আপডেটঃ ২০২৪-১১-২০ ২২:৫৫:১২


“Osman Mia Was Here”

“Osman Mia Was Here”


রাশেদ জামান

 

২০১৫ তে আয়নাবাজি সিনেমার বেশ কিছুটা অংশের শুটিং হয়েছিলো কাশিমপুর কারাগারে। 

আউটডোর এবং ইনডোর মিলে শুট। এই কারাগারের মহাপরিচালক থেকে শুরু করে জেলার, অফিসার, কারা প্রহরী - সবার অপ্রত্যাশিত সহযোগিতায় মুগ্ধ হয়েছিলাম পুরো শুটিং ইউনিট এর আমরা সবাই। 

স্বতস্ফূর্ত সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলো সত্যিকারের কয়েদিরাও। এমনকি টপটেরর সেল (TT) এর অনেক বাসিন্দা, যারা আইন এর চোখে দেশের সবচাইতে কুখ্যাত আসামী, তাঁরাও কেউ দূরে দাড়িয়ে থাকেননি। তাঁদের অনেকেই  আমাদের ইউনিটের একাত্ম অংশ হয়ে গেলেন খুব সহজেই। অনেকে স্বতষ্ফূর্ত ভাবে ব্যাকগ্রাউন্ড আর্টিস্ট হিসেবেও অংশগ্রহণ করলেন। হঠাৎ একটা সিনেমার শুটিং খুব স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের একঘেয়ে কয়েদি জীবনে যথেষ্ট চাঞ্চল্য নিয়ে আসলো। 

বিশেষ করে চঞ্চল চৌধুরীর মতো তারকাকে বাস্তবে দেখতে পেয়ে তারা সবাই মহাখুশি। কেউ কেউ কপট অবিশ্বাস্যের হাসি মুখে তার সাথে হ্যান্ডশেকের জন্য হাত বাড়িয়ে দিলেন, দু একজন একটু সাহস করে বুকেও জড়িয়ে ধরলেন। 


প্রিজন ওয়ার্ডের ভেতরে তাদের বিছানার পিছনে ডানোর টিনের ডিব্বায় লুকানো মুড়ি চানাচুর দিয়ে আপ্যায়ন পর্যন্ত করাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন অনেকেই। 

শুরু থেকে বেশ আরামেই শুটিং চলছিলো। ৬৫/৬৬ বছর বয়সের সাদা দাড়িওয়ালা একজন প্রবীণ কয়েদি প্রথম দিনেই বুঝে গেলেন যে চঞ্চল চৌধুরী এই সিনেমার নায়ক এবং আমি হলাম তার ক্যামেরাম্যান। তিনি প্রথম দিন থেকে প্রতিদিন শুটিং এর পুরোটা সময় আশেপাশেই ঘোরাঘুরি করেন। 

এই বয়স্ক মুরুব্বীর ওপর দু একদিন পরই বেশ বিরক্ত হওয়া শুরু করলাম খুব তুচ্ছ একটা কারণে। তিনি সুযোগ পেলেই আমার কাছে এসে নানা কায়দায় আবদার করেন, “স্যার, আমার একটা আলাদা ছবি চঞ্চল ভাইয়ের সাথে তুইল্লা দেন। আপনার কাছে বাবা এইটা আমার বিশেষ অনুরোধ 

স্টিল ফটোগ্রাফারকে বললাম তার একটা ছবি চঞ্চল ভাইয়ের সাথে তুলে দিতে। কিন্তু তিনি শুধু একটা স্টিল ছবিতে সন্তুষ্ট হলেন না। প্রথমে আমি বুঝতেই পারলাম না তিনি আসলে কী চাইছেন। পরে বুঝলাম তিনি চাইছেন যে তাঁকে যেনো কোনো একটা উপায়ে চঞ্চল চৌধুরীর সাথে সিনেমার চলমান ছবিতে দেখা যায়। যদিও এই মুরুব্বীকে কিছু সিনে ব্যাকগ্রাউন্ডে ইতিমধ্যে রাখা হয়েছিল, কিন্তু তিনি এখন চাইছেন তাঁকে যেন আলাদা করে বিশেষ ভাবে দেখানো হয়।আলাদা একটা ছবিবলতে তিনি আস্ত একটা shot বোঝাতে চাইছেন

বোঝা গেল এই লোক যথেষ্ট বুদ্ধিমান মানুষ। ডিরেক্টরের মনিটরে ভিডিও রিপ্লে চালানোর সময় তিনি পিছন থেকে দেখেছেন যে ব্যাকগ্রাউন্ডেতিনি যে তিনিইসেটা এতো দূর থেকে কোনোভাবেই বোঝা যাওয়া সম্ভব না, এমন কী সিনেমার বড় পর্দায়ও না


সময় স্বল্পতা এবং শুটিং-এর চাপে এমনিতে সবাই ক্লান্ত - তার ওপর এই লোকের আজগুবী আবদার। ব্যাকগ্রাউন্ড আর্টিস্টদের নিয়ে সব সিনের শুটিং ইতিমধ্যেই শেষ। পরিচালক নিজে চাইলেও সিনেমার গল্পের কোথাও তাকে আলাদা করে দেখানোর আর কোনো সময় সুযোগ নাই - এই সহজ কথাগুলো দুয়েক কথায় তাকে বোঝানো গেল না কোনোমতেই।তিনি শুরু থেকেই নাছোড়বান্দা। শটের ফাঁকে সুযোগ পেলেই কানের কাছে এসে প্রায়ই ফিসফিস করে আবারো আঁকুতি করেন -“দেখেন না বাবা কিছু একটা করা যায় কিনা!

 

কী এক যন্ত্রণা! 

 

হঠাৎ একদিন ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেল। শুটিং ইউনিটের পরিচিত কায়দায় চিৎকার করে প্রবীণ লোকটাকে কাছে ডাকলাম। ভাবলাম অন্যভাবে লোকটাকে ডোজ দিইঃ 

: চাচা মিয়া ক্যামেরার কাছে আবার ঘুরঘুর করতেছেন কেন? আচ্ছা আমারে বলেন তো আপনার কয় বছরের জেল হইছে?

- বাবা, সবগুলা কেইস মিল্লা আমার সর্বমোট বিরানব্বই বছরের জেল হইছে

: ইয়া মাবুদ, বলেন কি? সত্যি ৯২ বছর? এও সম্ভব? তো কত বছর পার হইছে

- প্রায় পয়ত্রিশ

: এখন আপনার বয়স কতো?

- এই ধরেন ৬৫। 

 

৯২ বছর যে কোনো মানুষের জেল হতে পারে, সেটা শুনে আমি রীতিমতো হতভম্ব হয়ে গেলাম। এদিকে লাইটিং চলছে এর পরের সিনের জন্য। হাতে কিছুটা সময় আছে তখনও। আমি তাঁর কথার উত্তরে কী বলবো ঠিক বুঝতে পারছিলাম না

: চাচা, তার মানে আপনি জানেন যে এই কাশিমপুর জেলেই আপনার মৃত্যু হবে। মানে আপনি এখানেই মারা যাবেন। তাই না

তিনি আমার দিকে অপলক তাকিয়ে আছেন। অদ্ভূত কোনো কারণে চোখের ভেতর হতাশার বদলে নতুন আশার হাতছানি। ঠোঁটে হাল্কা হাসি। আর আমি এদিকে আমার মতো বলেই যাচ্ছি

: চাচা শোনেন, এই সিনেমায় আপনারে দেখা গেলেই কি, না দেখা গেলেইবা কি? আপনি নিজেইতো দেখতে পারবেন না কোনোদিন। 

- বাবা, আমার পরিবার তো আমারে দেখতে পাইবো

: কেন আপনার পরিবার আপনারে সামনা সামনি দেখতে আসে না? এই যে ঐখানে যেসাক্ষাত ঘরআছে, ওখানে আপনি পরিবারের সাথে মাসে মাসে দেখা করেন না?

 

আমি তার এরপরের উত্তরের জন্য একদমই প্রস্তুত ছিলাম না। সব মানুষের জীবনটাইতো আসল সিনেমা। তিনি আমাকে বললেন,

- বাবা, আমার পরিবার পোলাপানগোরে নিয়া শেষ আইছিল ২৬ বছর আগে। আমি তখন অন্য জেলখানায় ছিলাম। 

: বলেন কী? এই ২৬ বছর আপনারে কেউ দেখতে আসে নাই? হয়তো আসছিল, কিন্তু আপনি জানতে পারেন নাই। 

 

- এই কারনেইতো আপনার সাহায্য দরকার আমার। 

: কীভাবে? আমি আকাশ থেকে পড়লাম

- বাজান, আমি কোন জেলখানায় আছি আমার পরিবাররে চিঠি লিখ্যা সময় মতো জানাইতে পারি নাই তখন। ওরাও মনে হয় আমারে খুঁইজ্জ্যা পায় নাই। গত ছাব্বিশ বছর আমি প্রতিদিনই সাক্ষাত ঘরে গিয়া খোঁজ নিসি, সারাদিনই বইসা থাকসি। কেউ আসে নাই। আমিও জানি না আমার পরিবার, বাচ্চা-কাচ্চারা কোথায় আছে এখন। 

 

ইতিমধ্যে আমার মন কেমন জানি হয়ে গেল। আমি শুটিং এর তাড়া ভুলে গেলাম। তীব্র নি:সঙ্গতার তাড়া খাওয়া মানুষটার দিকে তাকিয়ে রইলাম বাকি কথা শোনার জন্য। তিনি বলতে লাগলেন

- অহন আপনারা যদি আমারে চঞ্চল স্যারের লগে দেখায় দেন, তাইলে আমি শিওর - আমার ছেলেমেয়েরা এই সিনেমা দেইখা জানতে পারবো আমি এখন কোথায় আছি। আপনার চাচিতো সিনেমা দেখার লাইগ্যা পাগল আছিলো

 

বৃদ্ধের চেহারা কিশোরদের মতো নতুন কোন উপায়ে সবাইকে চমকে দেবার ফন্দি খুঁজে পাবার আনন্দে উদ্ভাসিত। তিনি কথা থামাচ্ছেন না

- পোলা মাইয়্যারাতো ২৬ বছর পর আর ছোট নাই। আমারতো নিশ্চয়ই নাতি নাতনিও আছে। আপনাগো সিনেমাটা বাইর হইলেই ইনশাল্লাহ সবাই আমারে খুইজ্জা পাইবো। 

দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে ওনাকে বললাম, “দেখি পরিচালকের সাথে কথা বলে কী করতে পারি। আপনাকে সময় হলে ডাক দিবো। আশেপাশে থাইকেন

বৃদ্ধজ্বি, আইচ্ছাবলে এক গাল প্রশস্ত হাসি দিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলেন ফুট ফরমায়েস খেটে কীভাবে শুটিংয়ে সাহায্য করে ইউনিটের সবার মন জয় করা যায় তা নিয়ে। তার বেশ আশ্বস্ত হয়ে যাওয়া চেহারায়, “যাক, কাজ হয়ে গেছেটাইপ আত্মবিশ্বাস দেখতে পেলাম। 

 

মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজের (বোর্ডিং স্কুল) সাড়ে ছয় বছর জীবনে, একবার মাত্র পরিবহন হরতালের দিন তখন নিজেদের গাড়ি না থাকার কারণে আমার বাবা-মা প্যারেন্টস্ ডে তে আমাকে দেখতে আসতে পারেন নাই। প্রায় সব ক্যাডেটরা চারদিকে তাদের বাবা-মা পরিবারের সাথে হাসাহাসি করে কথা বলছে, ভরপুর খাবার খাচ্ছে। আমি দূরে এক কোনায় দাড়িয়ে লুকিয়ে কাঁদছি। এর পরে কী জানি কোনো অভিমানে গলার কাছে কী জানি একটা জিনিস বহুদিন আমার স্বাভাবিক নি:শ্বাসকে আটকে রেখেছিল। 

কিশোর ছিলাম বলে গলার কাছের জিনিসটা এক সময়ে তারুণ্যের জোরে ঢোক গিলে স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিলাম। তাহলেপ্রায় শিশুএই বৃদ্ধ লোকটা কি গলার ভিতরে অভিমানের শক্ত দলাটা কে গত ২৬ বছর ধরে বয়ে বেড়াচ্ছেন?  এই একটা প্রশ্ন আমার মাথায় তীক্ষ্ণ যন্ত্রণা হয়ে ঘুরতে থাকলো। 

 

আমি এই প্রথম তাকে দূর থেকে লক্ষ করা শুরু করলাম। শুটিংয়ে দুপুরের আমাদের সাথে ভাত খেতে বললাম। জেলের গৎ বাঁধা একই লাল মোটা চালের ভাত খাওয়া বৃদ্ধ এই কয়েদি শুটিংয়ের পরিস্কার সাদা চিকন চালের ভাত দেখে বাচ্চাদের মতো খুশি হয়ে গেলেন প্রথমে। 

কিন্তু কিছুক্ষন পরেই দেখলাম তিনি নিজ প্লেট থেকে ভাত ছড়িয়ে পাখিদের খাওয়াতে শুরু করলেন। বুঝলাম এটা তার নিয়মিত অভ্যাস। অবস্থা দেখে মনে হলো কাশিমপুর কারাগারের গাছ এবং উঁচু প্রাচীরের ফুটোগুলোতে তার মতোই লুকিয়ে থাকা প্রায় সব পাখি এই বৃদ্ধের খুব পরিচিত। তিনি বিড়বিড় করে ওদের সাথে দেখি কথাও বলছিলেন। আমার কিন্তু একবারও মনে হলো না তিনি কোনো ধরনের পাগল টাইপের মানুষ। 

 

আচ্ছা, পাখিদের সাথে তার এতো সখ্যতার কারণ কী? পাখিরা কি এই বৃদ্ধের বন্দীত্বের কষ্ট আদৌ বোঝে? একদমই বোঝার কথা না। ওদের চোখে জেলখানার উঁচু প্রাচীরতো কেবলমাত্র- মানুষের তৈরি আরেকটা অপ্রয়োজনীয় দেয়াল। 

দিন শুটিং শেষে বাড়ি ফেরার পথে মাইক্রোবাসের ভেতরে - আমাকে ক্লান্তির চেয়েও বেশি কাবু করে দিল ওসমান চাচার জন্য এক অজানা বিষণ্ণতা। 

 

জ্বী, ওনার নাম ওসমান মিয়া। কী কারণে তার ৯২ বছর জেল হয়েছে, সেটা আমার একবারও জানতে ইচ্ছা করে নাই। কারণ আমার প্রায়ই মনে হয় একটা বয়সের পর - লোভ, অন্যায় কামনা, বাসনা, মোহ, প্রতিহিংসা- সব ধরনের পাপ একটা মানুষের শরীর ছেড়ে কোথায় জানি পালিয়ে যায়। প্রকৃতির নিয়মে নির্মোহ যেই মানুষটার জীবনের হালখাতায় হিসাব মেলানোর আর কোনো হিসাব বাকি থাকে না একটা সময়ের পর, সেই মানুষটার চোখের দিকে তাকালেই বোঝা যায়- যে দ্যুতিহীন এক জোড়া চোখ আর কোনো দূরদিগন্ত দেখতে পায় না। চায়ও না। ভীষণ ক্লান্তিতে শেষ পর্যন্ত কাবু, অসহায় একটা বৃদ্ধের বহুকাল আগে ফেলে আসা অন্ধকার অতীত জেনে আমার কী লাভ হবে? বিষন্নতা তাতে শুধু বাড়বে। আমিতো নিশ্চিত - ওসমান চাচা আর সবকটা শিশুর মতোই নিষ্পাপ হয়ে এসেছিলেন এই পৃথিবীতে। 

এসব আবোল তাবোল ভাবতে ভাবতে ভয়ঙ্কর নি:সঙ্গ, কিন্তু সংসার পাগল, ভালোবাসার কাঙ্গাল একজন খুনী বৃদ্ধের জন্য- আমার ভেতর কখন কী করে অকারণে যেন বাঁধ ভাঙ্গা মায়া তৈরি হয়ে গেল। 

 

জেলখানার ফ্লোরে পাতা তার বিছানার পাশে একটা ছেঁড়া খাতার উপরে ওনার নাম লেখা দেখেছিলাম - মোহাম্মদ ওসমান মিয়া। তিনি কোনোমতে লিখতে পারেন। পাতায় পাতায় নানারকম সুরা এবং তাদের তরজমা লিখে রেখেছেন। হাতের লেখা ক্লাস থ্রি এর বাচ্চাদের মতো। একটা পাতায় কাজী নজরুলেরত্রিভূবনের প্রিয় মুহম্মদগানটাও আছে। এটা হয়তো তার প্রিয় গান, যা তিনি গুণগুণ করে বেসুরা গলায় কখনো কখনো গানও হয়তো। ঠিকমতো এসব কিছুই জানার সময় ছিল না তখন শুটিং-এর তাড়ায়। 

তারপরও এই মানুষটাকে আরেকটু গভীরভাবে জানতে ইচ্ছা করলো। বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে বুঝতে পারলাম - ২৬ বছর আগে ওসমান মিয়ার পরিবার ইচ্ছা করেই খুব সম্ভবত তাকে ভুলে যাবার সিদ্বান্ত নিয়ে নিয়েছিলো। জেলখানার কারা অফিসারদেরকে জিজ্ঞেস করে জেনেছিলাম তিনি বরাবর কাশিমপুরেই ছিলেন। মাঝে সাঝে হয়তো অন্য বিল্ডিং এর ভিন্ন ওয়ার্ডে ওনাকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। সম্পূর্ণ অন্য জেলার অন্য জেলখানায় ট্রান্সফার করানোর ঘটনাটা বৃদ্ধের শুধুমাত্র কল্পনা। পরিবারের কেউ তাকে খুঁজে পাচ্ছে না - এটা তার বেঁচে থাকার জন্য প্রচন্ড প্রয়োজনীয়বিভ্রমছাড়া আর কিছু না। 

সময় যার সবচাইতে বড় শত্রু তার সাথে আরেকটু কথা বলে আর কোনো সন্দেহ থাকলো না যে - এই মনগড়া (আমি false বলতে একদম নারাজ) ন্যারেটিভটা তার বেঁচে থাকবার একমাত্র ভ্যাকসিন। এই সহজ সমীকরণটা আমার মতো তিনিও নিশ্চয় চাইলেই বুঝতে পারেন। কিন্তু যেচে বুঝতে চেয়ে নিজের কাছে স্বীকারোক্তিতে শেষ অবশিষ্ট স্বপ্নটুকু হারাবার মতো অবুঝ তিনি নন কারণ এই আশা জাগানিয়া স্বপ্নের ন্যারেটিভটা ছাড়া তাররুটিন বেঁচে থাকাতেপুরো বাকিটা জুড়ে বাকি থাকে শুধুমাত্র কুৎসিতনি:সঙ্গতা এটা তিনি পরিস্কার না বুঝলেওটেরঠিকই পান। 

বেশ কয়েকদিন location scouting এবং shooting করে আমিজেলখানাবিষয়টাকে বোঝার চেষ্টা করেছি। শুট চলাকালীন ড্রোন অপারেটর আমার অজান্তে কাশিমপুর জেলখানার বেশ কিছু শট bird’s eye view থেকে নিয়েছিলো, দেখতে সবুজ সুন্দর যেই শটগুলোর একটাও এডিটর সিনেমার বন্দীত্বের গল্পে কাজে লাগাতে পারেননি। কাশিমপুর জেলে বড়ো খেলার মাঠ, পুকুর, গাছে ঢাকা বাগান সবকিছু আছে। ড্রোন শটে এই জেলখানাটাকে একটা আরামের রিসোর্টের মতোই লাগে। এখানে কাউকে বাংলা সিনেমার মতো ২৪ ঘণ্টা শিকল পরিয়ে আটকে রেখে শারীরিক অত্যাচার করা হয় না। তিন বেলা সময়মতো খেতে দেয়া হয়। সারাক্ষণ cross ventilation হয় এমন লম্বা টানা রুমে নিজ নিজ বিছানায় ঘুমানোর সুযোগ দেয়া হয় (ফাঁসির আসামীদের সেল ছাড়া) দেশি বিদেশি সিনেমায় দেখা গরাদের থেকে বিস্তর ফারাক। তাহলে জেলখানা কি আসলে? জেলখানায়আটকেথাকাটা বিশাল বড় শাস্তি কেন? এই প্রশ্ন আমি নিজেকে বারবার জিজ্ঞেস করেছি। 

এর উত্তর বিস্তারিত লিখতে গেলে, লিখে শেষ করা আমার জন্য মুশকিল হবে। এক কথায় - জেলখানা হচ্ছে সেই জায়গা যেখানেআটকেথাকা সময়ের সামনেথমকেদাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা নাই। থমকে থাকা আটকানো সময়টাকে পার করার অসম্ভব কাজটাই জেলখানার সবচেয়ে বড় শাস্তি। মানুষের শরীর কোথাও দড়ি শিকল দিয়ে আটকানো না থাকলেও - আটকানো থাকে তার জীবনের সময়। সাথে স্বপ্ন। 

বিশেষ করে  Life in prison শাস্তিতে সব কিছু আছে, একদমই নাই কোনো স্বপ্ন, নাই কনো আলোর হাতছানি, নাই কোনো ভবিষ্যৎ- পুরোটাই শেষ অবধি থমকে থাকা বিভৎস বর্তমান। যে কোনো মানুষের জন্যবাধ্যতামূলক বেঁচে থাকাটা তখন একটা ডিউটির বোঝা (burden) মাত্র। হাসপাতালের চাপিয়ে দেয়া life support-এর বেঁচে থাকার বিস্বাদ। 

বুঝতে খুব বেশি বেগ পেতে হলো না - এই মনগড়া ন্যারেটিভটা ওসমান চাচা এতো যত্নের সাথে তৈরি করেছেন যে তিনি মনে প্রাণে শুধু তা বিশ্বাসই করেন না, এক গভীর ঘোরে স্বচোক্ষে তা দেখতেও পান। আমার কি দরকার তাঁর শেষ খড়কুটোর সত্যতা যাচাই করার? তাতে শেষ পর্যন্ত কার কি লাভ হবে

 

দীর্ঘ তিন যুগের কারাবাসে প্রবীণ কয়েদি বহু কিছুরই খেই হারিয়ে ফেলেছেন। শুধু খেই হারাননি সময়ের। তার ছেঁড়া খাতার একটা পাতায় বড় করে লেখাওসমান মিয়ার কারাবাস নীচে কালো দাগ টানা। তার নীচে ছোট ছোট অসংখ্য দাগ কাটা। জিজ্ঞেস করে জেনেছি - তিনি নাকি প্রতি শুক্রবার জুম্মা নামাজের পর একটা একটা দাঁগ কেটে কয়টা জুম্মা এই জীবনে পড়লেন তার হিসাব রাখেন। এটা কি তার শুকরিয়ার ক্যালেন্ডার? না আল্লাহর দরবারে হাজিরার খাতা? এটাও জানার প্রয়োজন মনে করলাম না। থাক না কিছু ব্যাক্তিগত রহস্য অনাবৃত। 

 

২৬ বছর আগে বন্ধু-বান্ধব, পরিবার সবাই নিশ্চয়ই তাকে ভুলে যাবার সিদ্ধান্তই নিয়েছিলো। ৯২ বছরের সাজা পাওয়া একটা মানুষকে ভুলে গিয়ে মৃতের তালিকায় তুলে দেয়াটাইতো বেশি যুক্তিসঙ্গত হবার কথা অভাবী আঁধা পঙ্গু কোনো সংসারের জন্য। দুইটা সন্তানসহ একটা কিশোরী বধুর জীবনতো আর চাইলেও থেমে থাকতে পারতো না। ক্ষুধার পেট নিয়ে কয় রাত কাঁটানো যায় এই জগৎ সংসারে? এই সরল বিষয়টা সবাই বুঝলেও এতো বড় দাগী আসামী হয়েও ওসমান চাচা বুঝতে পারেন নাই আজ অবধি। আমি অবাক হয়ে আবিস্কার করলাম- বাকি পৃথিবীর চোখে সবচেয়ে নিষ্ঠুর এই মানুষটা বুকের ভেতর নিজের স্ত্রী সন্তানদের জন্য গভীর ভালোবাসাটা এখনো পুষে রেখেছেন দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে সযত্নে। 

পরিবারের সবাইকে কোনো একদিন আবার ফিরে পাবার অসম্ভব স্বপ্নটাই তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। তিনি এখনো তার গ্রামের মসজিদে আবার জুম্মা নামাজ পড়ার স্বপ্ন দেখেন। তিনি নাকি পুকুরে উল্টো হয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভেসে থাকতে পারেন। নাতিদেরকে সেই ভেলকি দেখানোর ইচ্ছাটা বড় হয়েই চলছে তার। 

 

এরপরের দিন শুটিংয়ের আগে একসাথে নাস্তা খাবার আহ্বান জানালাম চাচাকে। তিনি ভীষণ খুশি হলেন। তার আগের রাতে sandbag এর অফিসে শুয়ে ছিলাম। এক ফোটাও ঘুম আসেনি। সারারাত তার জীবনের গল্প মাথায় ঘুরপাক করেছে। আমার অবশ্য জানতে চাওয়া প্রশ্নগুলো তখনো শেষ হয় নাই:

 

: চাচা, মনে করেন আপনার পরিবার আপনার খোঁজ পেয়ে আপনাকে দেখতে আসলো। তারপর

তারপরও তো আপনি সারাজীবন এই জেলেই থাকবেন। পরিবারের কাছেতো আর ফিরে যেতে পারবেন না

কিছুক্ষণ চুপ থেকে তিনি বললেন (দীর্ঘশ্বাস ফেললেন কিনা আমি লক্ষ্ করতে ভুলে গেলাম)

- যেই অপরাধের লাইগা এতো লম্বা শাস্তি, সেই অপরাধ এর জন্য আমি পুরাপুরি দায়ী না। পরিস্থিতির কারণে হইয়া গেছে, আমার ইচ্ছায় হয় নাই। বয়স কম আছিল, মাথা গরম ছিল। আমি চাচা খারাপ মানুষ না। যাগোরে বিশ্বাস করছিলাম, তারা খালি আমারে ফাঁসায় দিছে। এইটা আল্লাহয় দেখছে। আমারে বিশ্বাস করেন

 

: চাচা, আমার বিশ্বাসে কী আসে যায়। আদালতো রায় দিয়েই দিসে। এখন তো আর উপায় নাই

ওসমান মিয়া আমার কথায় একদমই বিচলিত হলেন না। তিনি মনে হয় অনেকদিন তাঁর জমানো কথা কাউকে মন খুলে বলতে পারেন নি। তিনি না থেমে বলতে লাগলেন:

- বাবা, আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পইড়া আল্লাহ্ কাছে খালি ক্ষমা চাই। আপনি এই জেলখানায় সবাইরে জিগায় দেখতে পারেন - কেউ কোনদিন আমারে খারাপ কিছু করতে দেখে নাই। সবাই আমারে খুব সম্মান করে, আদর করে। তিনবেলা ঠিকঠাক খাইতে দেয়। 

ঢোক গিললেন, আকাশের দিকে তাকিয়ে এইবার দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। 

- বাজান, তারপরও আমার এইখানে দম নিতে কষ্ট হয়। আমারে ফাঁসি দিয়া মারেও না কর্তৃপক্ষ। বিশ্বাস করেন আমি খালি আপনার চাচির কাছে ফেরত যাইতে চাই। হেয় খুব ভালো মানুষ আছিল। আমি তারে একা বিপদে ফেইলা অনেক গুনাহ্ করছি। 

ওসমান চাচা আরো অনেক কথা বললেন। কে জানে এই বৃদ্ধ হয়তো Gladiator সিনেমার মতো প্রতি রাতে স্বপ্ন দেখেন - তার গ্রামে তার জন্য অপেক্ষায় থাকা স্ত্রীর কাছে ফিরে যাবার, যে তাকে আদর করে সাদা চিকন চালের গরম ভাত খেতে দেবেন। 

ওসমান চাচার দৃঢ় বিশ্বাস, আর কোনো কিছু না হলেও - এক সময় না এক সময় অন্তত মহামান্য রাষ্ট্রপতি তার প্রতি সদয় হয়ে এই নিষ্ঠুরনিজের মৃত্যুর জন্য একাকী অপেক্ষা এই শাস্তি থেকে তাকে পরিত্রান দিবেন। তখন তিনি যে করেই হোক ওনার বাপ-দাদার ভিটেবাড়িতে ফেরত যাবেন, তারভালা মানুষ কিশোরী স্ত্রীর’ কাছে, পরিবারের কাছে, তাঁর বাবা-মায়ের কবরের কাছে। 

 

আয়নাবাজি সিনেমার দুইমাস আগে আমার না বলে কয়ে বিশাল এক হার্ট অ্যাটাক হয়েছিলো। তাই বাধ্য হয়ে সিগেরেট ছেড়ে দিয়েছিলাম শুটিংয়ের সময়। 

ওসমান চাচার কথা তখনো শুনছিলাম, ততক্ষণে সেদিনকার মতো শুটিং প্যাকআপ হয়ে গেছে। স্বন্ধ্যা নামবে নামবে করছে। আর পারলাম না। চিফ অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর মাহফুজ ভাইয়ের কাছ থেকে সিগেরেট নিয়ে চাচাকে একটা দিয়ে নিজে আরেকটা ধরালাম। 

 

ততোক্ষণে আমাদের কথা ফুরিয়ে গেছে। চাচা বিড়বিড় করে মনে হয় কোনো সুরা পড়ছেন। সিগেরেটের স্বাদ আমাকে আর আগের মতো টানে না। ফেলে দিয়ে, চাচাকে জড়িয়ে ধরে বললাম, “ইনশাল্লাহ, আপনার মনের আশা খুব শিগগিরই পূরণ হবে। দোয়া রইলো।

 

বাড়ি যাবার পালা। ঢাকা নামের অপেক্ষাকৃত বড় জেলখানায় অ্যাপার্টমেন্ট নামক দমবন্ধ কংক্রিট ওয়ার্ডে ফেরার পালা। তার আগে আমরা অপেক্ষা করছি কাশিমপুর জেলের মূল গেইট দিয়ে বাইরে বেরুবার অনুমতির জন্য। ওসমান চাচা দিনশেষে যথারীতি তার প্রিজন ওয়ার্ডে ফেরত যাচ্ছেন। লকআপের ভেতর কয়েদিদের গুনতি শুরু হবে কিছুক্ষণ পর। গুনতি মিললেই আমাদের কে বাইরে বেরুতে দেয়া হবে। জেলখানার বড় লোহার গেটের ফাঁক দিয়ে দেখতে পাচ্ছি প্রোডাকশনের ক্লান্ত মাইক্রোবাস অপেক্ষমাণ। 

 

সত্যিই ভাবছি ওসমান চাচাকে লুকিয়ে আমাদের সাথে নিয়ে যাবার কোন উপায়ই কি নাই

নাহ- নাই। বাইরের যে জেলখানাটায় আমরা থাকি, সেখানকার বেশিরভাগ মানুষ কাশিমপুরের প্রাচীরগুলোর চেয়ে বহুগুণ উঁচু নিষ্ঠুর। 

আমি ওসমান চাচার এতো বড় ক্ষতি কি করে করি

শুটিং এর মাইক্রোবাসের জানালা দিয়ে আমি বাইরের অন্ধকারে তখন shawshank_redemption  সিনেমার বিখ্যাত “Brooks was here” সিনটা ভেসে উঠতে দেখলাম। আমি কি কাঁদছিলাম? মনে করতে পারছি না। 

 

আমি শুধু মনে মনে তীব্র প্রার্থনা করতে থাকলাম - ওসমান চাচা যেনো কোনদিনও এই কাশিমপুর থেকে ছাড়া না পান। এতো বছরের চেনা কাশিমপুর জেলখানাটাই হোক তাঁর শেষ Home. 

 

তিনি জানেনও না যে বাইরের অনেক বড় নিষ্ঠুর, ৩৫ বছরে একদম বদলে যাওয়া বিরাট কারাগারে কেউ তার জন্য আর অপেক্ষায় নাই। তিনি তাঁর কল্পনার মুক্ত (?)  পৃথিবীতে বড়ই নি:সঙ্গ একজন অনাকাঙ্খিত অপ্রয়োজনীয়  উটকোঝামেলা ছাড়া আর কিছু নন। কয়েদিতে গিজ গিজ করা কাশিমপুর জেলখানায় যেইনি:সঙ্গ মৃত্যুথেকে তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন গত প্রায় তিন যুগ- সেই নিষ্ঠুর একাকী প্রস্থানকেই Brooks এর মতো হয়তো আলিঙ্গন করতে হতে পারে নির্জন কোনো অজানা গ্রামে, ঝি ঝি ডাকা গভীর রাতের হাহাকার অন্ধকারে। 

 

আমি শুটিং মাইক্রোবাসের জানালা দিয়ে - পাল্লা দিয়ে ছুটে চলা অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে ভাবছি, ওসমান চাচার ছেঁড়া খাতায় লেখা জুন্মা নামাজের সব হাজিরা আর শুকরিয়ার হিসাব কি তখন তার গুনাহর খাতায় যোগ হয়ে যাবে পরকালের কারাগারে

 

 

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ

যারা ওসমান চাচার ছবি অথবা তাঁর সাথে দেখা করতে চেয়েছেন, তাঁদের কে বলছি- ওসমান চাচার ছবি চঞ্চল চৌধুরীর সাথে দু একটা তোলা হয়েছিলো। সেই ছবিগুলো আট বছর আগেই একটা hard drive কবর দেয়া হয়ে গেছে

কারণ- সব ঘটনার চুলচেরা বিশ্লেষণ দরকার নাই। সব রহস্যের  উৎঘাটন অপ্রয়োজনীয়। থাক না কিছুশোনা কথাআবৃত

থাকুক না ওসমান চাচাঅশনাক্তিত 

কারণ তার গল্প বেশি নাড়াতাড়া হলেই, দায়িত্বপ্রাপ্ত কতৃপক্ষ অস্বস্তিতে পড়ে হয়তো চাচাকে স্থানান্তরিত করতে বাধ্য হবেন অন্য কোনো জেলখানায়। 

হিসাব ঠিক থাকলে ওনার এখন বয়স ৭৩ হবার কথা। তিনি বাকিটা সময় থাকুক না আঁড়ালে, তার অবাস্তব স্বপ্ন নিয়ে অপেক্ষার৪৩ বছরের পরিচিত গণ্ডিতে।





শশাঙ্ক রিডেমশন মুভির ক্লিপ“Brooks was here”




ক্যাটেগরিঃ জীবনধারা, বিনোদন,
সাবক্যাটেগরিঃ সিনেমা,


রাশেদ জামান

সিনেমাটোগ্রাফার। আর্কিটেক্ট। আয়নাবাজি মুভির সিনেমাটোগ্রাফার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ী। টানা ছয় বছর কাজ করেছেন হলিউডের ইনডিপেন্ডেন্ট ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে। স্টিল ফটোগ্রাফার হিসেবে তার তোলাছবি ব্যবহৃত হয়েছে ২০০৬ সালে বিশ্বখ্যাত ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি প্রকাশিত ‘এ লিটল পিস’ পিকচার বুকের প্রচ্ছদে। আর্কিটেক্ট হিসেবে কাজ করেছেন ইস্তানবুল, কায়রো এবং লস অ্যাঞ্জেলেসে। আরো জানতে ভিজিট করুন : www.rashedzaman.com



বৈশাখে ইলিশ নয়

বৈশাখে ইলিশ নয়

উৎপাদিত মাছের প্রায় ১২ শতাংশ আ.. বিস্তারিত

সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি

সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি

বাতিলযোগ্য সাইবার নিরাপত্তা আই.. বিস্তারিত

সাকিব: বিতর্ক যার সঙ্গী

সাকিব: বিতর্ক যার সঙ্গী

বাংলাদেশ তখনো বিশ্ব ক্রিকেট অঙ.. বিস্তারিত

আরো পড়ুন