English
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

প্রকাশঃ ২০২৩-০৯-০৭ ১১:৩৩:২০
আপডেটঃ ২০২৪-১১-২১ ১৪:৪৪:২৪


আক্কু-মনিকার আরেক যুদ্ধ

আক্কু-মনিকার আরেক যুদ্ধ

মোহাম্মদ মাহমুদুজ্জামান


নেপালের পোখারা শহর থেকে প্রায় ৫০ মিনিটের ড্রাইভ খাঁড়া পাহাড়ি রাস্তা পাহাড়ের কোল ঘেঁষে এঁকেবেঁকে পথ উঠে গিয়েছে উপরে মেঘ এসে যেন ছুঁয়ে যাবে আলতো করে! বিকেলের মিষ্টি আলোয় অনেক নিচে পোখারা শহর দেখা যায় লোকালয় কম গাড়ি এই পথে তেমন একটা আসে না তাই গাড়ি দেখে শিশুদের মধ্যে পথ থেকে সরে দাঁড়নোর প্রবণতাও কম সতর্ক হয়ে গাড়ি চালাতে হয় গুগল ম্যাপও কখনো কখনো কাজ করে না! চোখ খুঁজে বেড়ায় কোথাও ছোট হলুদ অ্যারো-সাইন আছে কি না তাতে লেখা- জিসিসি রিসোর্ট জিসিসি মানে গ্লোবাল সিটিজেনস ফর কনসিয়েন্স নামে রিসোর্ট হলেও এটি একটি রিট্রিট সেন্টার। যা পুরোপুরি পরিবেশ বান্ধব শারীরিক মানসিক ডি-টক্স করার আদর্শ জায়গা জায়গাটি হলো দেউমাদি, কালিকা, পোখারা, নেপাল



গ্লোবাল সিটিজেনস ফর কনসিয়েন্স-জিসিসি  রিট্রিট সেন্টার/ছবি: সংগ্রহ

পোখারার অপূর্ব সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশে `স্মল ইজ বিউটিফুল’, `লেস ইজ মোর’ স্লোগান নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে জিসিসি রিট্রিটের দায়িত্বশীল দীপেন্দ্র গিরি নেপালি কায়দায় স্বাগত জানিয়ে নিয়ে যান বাঁশ কাঠ পাথরে তৈরি ছোট রেস্টুরেন্টে সেখানে বসে পাহাড়ের দৃশ্য যে কারো মন বদলে দেবে পোখারা ভ্যালি থেকে ,০০০ ফিট উঁচুতে হিমালয়ের কোল জুড়ে অন্নপূর্ণা শৃঙ্ঘ যেন জিসিসিকে আগলে রেখেছে!

হঠাৎ গাছের ফাঁক দিয়ে একজনের পনিটেইল চোখে পড়ে এই পনিটেইল ঝুলিয়ে কখনো তিনি গুলশান অ্যাভিনিউ, কখনো সেগুনবাগিচায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর কিংবা কখনো জল্লাদখানা বধ্যভূমিতে দৌড়ের মতো হেঁটে বেড়িয়েছেন মানুষটির নাম হোসেন আখতার চৌধুরী তবে সবার কাছে তিনি আক্কু চৌধুরী নামেই পরিচিত জিসিসি- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের পরিচয় লিখেছেন-ডিরেক্টর অপারেশন অ্যান্ড ড্রিমার।‘



পোখারায় নিজ প্রতিকৃতির সামনে আক্কু চৌধুরী/ ছবি: এবিএম সিদ্দীকুল আলম


.

আক্কু চৌধুরী একজন সিরিয়াল উদ্যোক্তা আউট অফ দি বক্স’ চিন্তা করার জন্য তিনি পরিচিত বাংলাদেশের ফুড ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক নতুন বিষয় তিনি পরিচিত করেছেন তবে তার সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি বাংলাদেশ এবং মুক্তিযুদ্ধকে তিনি লালন করেন আন্তরিকভাবে মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে তিনি কখনো ব্যবসা করেন নি, বরং তার নিজের ব্যবসার জায়গায় মুক্তিযুদ্ধকে তুলে ধরেছেন সাধ্যমতো কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দরজায় `রাজাকারের প্রবেশ নিষেধ’ লেখার মতো সাহস তিনিই প্রথম দেখিয়েছেন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ফুড চেইন যেমন তিনি দাঁড় করিয়েছেন তেমনি প্রয়োজনে `চায়ের দোকান’ দিতে পারবেন বলেও জানাতে দ্বিধা করেন নি

তার এই অদম্য মানসিকতা নিয়েই তিনি নেপালের গ্রাম এলাকায় গড়ে তুলছেন কার্বনমুক্ত, প্রাকৃতিক রিট্রিট সেন্টার; যেখানে নানা রকমের মানুষ আসতে পারেন সার্বক্ষণিক সঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন স্ত্রী মনিকা চৌধুরীকে ঢাকার কর্পোরেট জগতের ব্যস্ত অভ্যস্ত এই নারী সব ছেড়ে পোখারার এমন এক গ্রামে গিয়ে ছয় বছর ধরে তিলে তিলে গড়ে তুলছেন তাদের সেন্টারটি যেখানে সবকিছুই প্রাকৃতিক নিজে কফি গাছ লাগিয়ে সেই কফি খাওয়াচ্ছেন অতিথিদের ধান বুনে চাল তৈরি করছেন প্রকৃতিকে ঠিক রেখে  ‘ক্লাইমেট অ্যাকশন নাও মাইন্ড সেট নিয়ে এই ইকো রিসোর্ট তৈরি করা হয়েছে যার পুরোটাই স্থানীয় উপকরণ, টেকনোলজি, কর্মী এবং ক্র্যাফট ব্যবহার করা হয়েছে স্থানীয় ঐতিহ্যকে ভাবনায় রাখা হয়েছে তৈরির সময় বারো জন অতিথি এখানে চমৎকার ভাবে থাকার সুযোগ পাবেন তবে এটি একদিনে তৈরি হয় নি ২০১৫ সালে প্রথম উদ্যোগ নেয়া হয় এবং ২০১৭ সালে জিসিসি যাত্রা শুরু করে

আক্কু চৌধুরী-মনিকা চৌধুরীকে যারা আগে দেখেছেন তাদের জন্য এটি ফেইরি টেল বা রূপকথা মনে হতে পারে! প্রতিবেলায় যারা পোশাক পরিবর্তন করতেন তারা দিনের পর দিন একই পোশাক পরছেন! গত ছয় বছরে কয়েকবার সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য বাংলাদেশে আসা ছাড়া তারা আর কোথাও যান নি এমনকি পেখারা শহরেও তারা মাসে একবার যান বাজার করতে বাইরে থেকে গাড়ি নিয়ে না গেলে এই এলাকায় কোনো যানবাহন পাওয়া যায় না প্রথম দিকে দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে কাঁধে মাল বহন করেছেন তারা দুজন



কর্পোরেট জীবন ফেলে পোখারায় নির্জন গ্রামে প্রশান্তি খুঁজে পেয়েছেন মনিকা চৌধুরী /

ছবি: এবিএম সিদ্দীকুল আলম


আক্কু-মনিকার আরেক যুদ্ধ এটি শূন্য থেকে শুরু করতে হয়েছে সব ঢাকায় ,০০০ স্কয়ার ফিটের বাড়ি ফেলে শুরুতে একটি ছোট ঘর, তীব্র শীতে অস্থির হয়ে পড়েছেন কখনো পানির সংকটও তীব্র কখনো এমন গিয়েছে সপ্তাহ পার হয়ে গিয়েছে, পানির অভাবে গোসল করা হয় নি করোনায় ব্যবসার অবস্থা ছিল খুবই খারাপ এক সময় যারা দিনে হাজার হাজার টাকা অবলীলায় খরচ করেছেন তাদের জন্য ৫০০ নেপালি রুপি খরচ করাও কঠিন হয়ে পড়ে কাজের লোক পাওয়া ভারি সমস্যা বোল্ডার বা বড় পাথর ভেঙ্গে দশটি ইঁট গাঁথতেই একজন শ্রমিকের একদিন চলে গিয়েছে কিন্তু তারপরও তারা দমে যান নি পুরো রিট্রিট সেন্টারে কোনো দেয়াল নেই আক্কু চৌধুরী সচেতনভাবেই এটি করেছেন তিনি বিশ্বা করেন সব মানুষের মিলনকেন্দ্রে কোনো দেয়াল থাকতে পারে না পারস্পরিক সহাবস্থানের নীতি নিয়েছেন তারা কারণে চরম খাবারের কষ্টের মধ্যেও প্রতিবেশী নেপালি পরিবার যদি ২৫০ গ্রাম মুরগিও রান্না করেন সেখান থেকে তাদেরকে অংশ দেন


আক্কু মনিকা চৌধুরীর উদ্যোগে ঢাকা থেকে ,১০০ কিলোমিটার দূরে পোখারার পাহাড়ের বুকে শোনা যায় হাছন রাজার গান, লোকে বলে, বলে রে ঘরবাড়ি ভালা না আমার আক্কু চৌধুরী নিজেও গলা মেলান, ভালা করি ঘর বানায়া, হায় রে কয় দিন থাকমু আর, আয়না দিয়া চাইয়া দেখি পাকনা চুল আমার/ ছবি: সংগ্রহ


প্রাকৃতিক, আর্থিক, সামাজিক নানা প্রতিবন্ধকতার পরও যে কথাটি দুজনের মুখে এসেছে তা হলো, শান্তি চারপাশের পরিবেশকে অন্নপূর্ণা পাহাড় চূড়া যেন নিজে দেখে শুনে রাখে ঘরের জানালা খুলে হিমালয়ের অপূর্ব দৃশ্য দেখে মন ভালো হয়ে যায় একেক ঋতুতে একেক রূপ নেয় পোখারা এই প্রশান্তির খোঁজে অনেককেই অস্থির হতে দেখা যায় তারা জানান, যতো কিছু ঘটুক তাতে তাদের রাতের ঘুমের কোনো সমস্যা হয় না! ছোটই সুন্দর -কথাগুলো এই দম্পতি সহজেই প্রচার করছেন এই রিট্রিটে (www.retreatgcc.com) যারা বেড়াতে যান, অসাধারণ প্রশান্তি নিয়ে বাড়ি ফেরেন

 

.

আক্কু চৌধুরীর মা হোসনে আরা মাক্কি এবং বাবা সাবের আহমেদ চৌধুরী তার বাবা চট্টগ্রামের পরিচিত এক পরিবারে সন্তান ঢাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে মিটফোর্ড হসপিটাল, এখনকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হসপিটালে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ বছর ১৯৫২ সালের ২৩ অক্টোবর আক্কু চৌধুরী জন্মগ্রহণ করেন আক্কু চৌধুরী ছেলেবেলা থেকেই ডানপিটে খ্যাপাটে ছিলেন চট্টগ্রামে কনভেন্ট স্কুল, ঢাকার ধানমণ্ডির এলিয়র মিডল ইংলিশ স্কুল এবং আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়াশোনা করেন তখনকার দিনে এটি ছিল মিলিটারি স্কুলের মতো ক্লাসে মাত্র তিনজন বাঙালি ছাত্র ছিলেন, বাকি সব অবাঙালি মিলিটারি ব্যবসায়ীদের ছেলেমেয়ে আর তখন ব্যবসায়ী মানেই অবাঙালি

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ম্যাট্রিক পাশ করে কলেজে ভর্তি হন ১৮ বছর বয়স ২০০৯ সালে ইতিহাস ভিত্তিক পত্রিকা রুটসে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আক্কু চৌধুরী তার মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি বর্ণনা করেন এভাবে, ২৫ মার্চ রাতে আমরা নাখালপাড়া থেকে পালিয়ে চলে যাই পরীবাগের এক আত্মীয়ের বাসায় আমাদের পাশেই ছিল পিপল পত্রিকার অফিস আমরা দেখেছি সেটা সারা রাত ধরে পুড়েছে সারারাত আমরা গোলাগুলি, মানুষের চিৎকারের মধ্য দিয়ে পার করি চারিদিকে শুধু সাউন্ড অফ ফায়ার অ্যান্ড সাউন্ড অফ কিলিং এরপর কারফিউ শেষ হওয়ার পর যখন বের হলাম, দেখলাম শহরের কী ভয়াবহ অবস্থা! পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে দাঁড়ালো আমরা বুঝে গেলাম আমাদের কী করতে হবে

অসহযোগ আন্দোলনের সময় থেকে আমরা সবসময় মিটিং, মিছিল করাতাম আমরা জানতাম আমাদের যুদ্ধে যেতে হবে মুক্তিযোদ্ধা শহীদ রুমী আমাদের সিনিয়র বন্ধু ছিলেন রুমী আদমজীর ছাত্র ছিলেন আমাদের কয়েকজনকে নিয়ে তিনি একটি গ্রুপ করেছিলেন আমরা সবসময় আলোচনা করতাম কী হতে পারে, কী না হতে পারে, আমাদের কী করা উচিত

২৫ মার্চের সেই রাতের পর আমরা জেনে যাই বাংলাদেশ হয়ে গিয়েছে আর এটা যদি পাকিস্তানিরা বিরোধিতা করে, আমাদের পাল্টা জবাব দিতে হবে মূলত ওই রাতের পরই আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা যুদ্ধে যাবো ২৫ মার্চের পর আমরা পরীবাগের বাসা থেকে ঢাকার পাশে একটি গ্রামে চলে যাই সেখান থেকে প্রতিদিন ঢাকায় এসে খবরাখবর নিতাম এরপর জুন মাসে আমি আমার আরেক বন্ধু আরিফ দুজনে মিলে প্রথমে যাই আগরতলায় এরপর আমরা কলকাতায় চলে গেলাম সেখানে গিয়ে আমরা যোগ দেই বাংলাদেশ ইনফরমেশন ব্যাংক- এর অফিস ছিল নেতাজি সুভাষ বোসের বাড়ির নিচতলায় আমাদের দায়িত্ব ছিল নিউজপেপারের প্রকাশিত খবরগুলোর তথ্য সংগ্রহ করা নিউজপেপারে যত খবর বের হতো আমরা তা সংগ্রহ করে রাখতাম যেমন যশোর নিয়ে কোনো পত্রিকায় লেখা হয়েছে, আমরা সেগুলো কেটে এক জায়গায় পেস্টিং করতাম যাতে করে কেউ যদি যশোর সম্পর্কে কোনো তথ্য চান, সঙ্গে সঙ্গে পেয়ে যান অনেকটা আর্কাইভ-এর মতো তখন তো কম্পিউটার ছিল না, সব কিছু হাতে করতে হতো এরই মাঝে এক সপ্তাহ আমরা ট্রেনিং নিয়েছিলাম মেজর হুদার কাছে নভেম্বরে সেক্টর - আমাদেরকে যুদ্ধের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় সেক্টর- ছিল বরিশাল অঞ্চলের দিকে আমাদের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর জলিল আমি সাতক্ষীরা, খুলনা এলাকায় যুদ্ধ করেছি ডিসেম্বর আমরা সাতক্ষীরা মুক্ত করি


১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে খুলনা- সাতক্ষীরার সহযোদ্ধাদের সাথে স্টেনগান হাতে আক্কু চৌধুরী, ডানে টুলে বসা / ছবি: সংগ্রহ


১৯৭১ সালে আক্কু চৌধুরীর পুরো পরিবার ছিল দেশের বাইরে তার নিজেরও ভিসা হয়ে গিয়েছিল সুইজারল্যান্ডে থাকা মায়ের কাছে আমেরিকায় পড়তে যাওয়ার বদলে যুদ্ধে যাওয়া- অনুমতি চাইলেন মা যুদ্ধে যাওয়ার অনুমতি দেন পাশাপাশি আশাবাদী মা ছেলেকে জানিয়ে দেন লেখাপড়াটা কিন্তু শেষ করতে হবে ইংরেজিতে কথা বলার কারণে আক্কু চৌধুরীকে অনেকে বিদেশি ভাবতেন তবে মুক্তিযুদ্ধের সময় শ্রমিক কৃষক সবার সাথে মিলেমিশে তাদের প্রিয়জনে পরিণত হন তিনি তার প্রায়ই মনে পড়ে যুদ্ধের সময় যখন খাবার পেতেন তখন পোকাযুক্ত মোটা চালের ভাত বাতি নিভিয়ে খেয়ে ফেলতেন যেন পোকা দেখতে না হয় খাবারের ছোট পাথর পড়লে পানি দিয়ে সব গিলে খেয়ে ফেলতেন

যুদ্ধ জয়ের অনুভূতি নিয়ে আক্কু চৌধুরী বলেন, ১৬ ডিসেম্বর যখন দেশ স্বাধীন হলো তখনও যুদ্ধ চলছিল নদীর পাড়ে ছিলাম আমরা, ওপাড়ে ছিল পাকিস্তানি আর্মিরা সামনাসামনি যুদ্ধ চলছে, যুদ্ধের মাঝেই রেডিওতে আমরা শুনতে পেলাম বিজয়ের খবর আসলে আমরা যে স্বাধীন হবো, সেটা নিয়ে কোনো সন্দেহ ছিল না-কিন্তু সেই স্বাধীনতা দেখার সৌভাগ্য আমার কি হবে? - এমন প্রশ্ন মনে ছিল প্রতিটি মুহূর্ত ছিল অনিশ্চয়তায় ভরা হয় আমি মারবো অথবা আমি মরবো- ছাড়া কোনো পথ ছিল না স্বাভাবিকভাবে বিজয়ের কথা শোনার পর খুবই ভালো লেগেছিল

আক্কু চৌধুরী কখনো মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট গ্রহণ করেন নি তিনি মনে করেন দেশের প্রয়োজনে মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়েছেন সার্টিফিকেটের জন্য নয়

 

.

মুক্তিযুদ্ধ শেষ করে স্বাধীন বাংলাদেশের পাসপোর্ট গ্রহণ করেন আক্কু চৌধুরী বাইরের অনেক সুযোগ পেয়েও এখনো সবুজ পাসপোর্টই তিনি ব্যবহার করেন বিষয়ে ২০০৯ সালে আক্কু চৌধুরীর বক্তব্য, আমেরিকান পাসপোর্ট আমাকে দিলেও আমি নেব না আমি জানি ভিসার জন্য আমাকে লাইনে দাঁড়াতে হবে, ইমিগ্রেশনে অনেক প্রবলেম হবে, তারপরও আমি কখনো অন্য দেশের পাসপোর্ট নেব না দরকার হলে দেশের বাইরে যাওয়া ছেড়ে দেব কিন্তু আমি আমার নাগরিকত্ব ছাড়বো না

মুক্তিযুদ্ধের পর মায়ের কাছে সুইজারল্যান্ডের জেনেভাতে চলে যান তিনি তারপর ইংল্যান্ডে কিছুদিন পড়াশোনা করে পাড়ি জমান আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়াতে প্যাসিফিক স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা শেষে লস অ্যাঞ্জেলেসে প্রথমে একটি অ্যান্টিক সংগ্রহশালা এবং পরে একটি জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন ইওরোপে ঘুরে ১৯৮২ সালে বাংলাদেশে ফেরেন তিনি সাভারে বন্ধুর জমি লিজ নিয়ে কৃষিকাজ শুরু করেন পাসপোর্টে নিজের পেশা লেখেন কৃষক কৃষি পর্ব শেষ করে ১৯৮৪ সালে তিনি আধুনিক ফার্নিচার ডিজাইন প্রস্তুত করার কাজ শুরু করেন ক্রিয়েটিভ সেন্টার নামে প্রতিষ্ঠান তিনি বারো বছর চালান পাশাপাশি তিনি আবারো খাবারের ব্যবসায় মনোযোগ দেন ইটালিয়ান আইসক্রিম চেইন   ডলচেভিটা- আধুনিক শো রুম করে ঢাকায় মানুষকে আবাক করেন ১৯৮৮ সালে তিনি লা গ্যালারি নামে বনানীতে একটি আর্ট গ্যালারি খোলেন দুই দশক পর তার ছেলে সৃজন-এর উৎসাহে তিনি আবারো গ্যালারিটি নতুন ভাবে শুরু করেন সৃজন নিজেও একজন শিল্পী



২০০৯ সালে ট্রান্সকম ফুডের কর্পোরেট অফিসে মুক্তিযোদ্ধা পতাকার প্রতিকৃতির সামনে আক্কু চৌধুরী /ছবি: এম. জেড/ রুটস


আক্কু চৌধুরী প্রথম আলো, ডেইলি স্টারের মূল উদ্যোক্তা ব্যবসায়ী লতিফুর রহমানের ট্রান্সকম ফুডস লিমিটেডে প্রথমে এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এবং পরে ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ফুড চেইন পিজা হাট কেএফসি আক্কু চৌধুরীর নেতৃত্বেই ট্রান্সকম ফুডস বাংলাদেশে প্রসার ঘটায় এক পর্যায়ে প্রয়াত লতিফুর রহমানের অনেক অনুরোধের পরও সেই চাকরি ছেড়ে দেন আক্কু চৌধুরী তিনি পরিবেশ বান্ধব রিট্রিট সেন্টার তৈরির জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা, দক্ষিণপূর্ব কয়েকটি দেশ খুঁজে নেপালে স্ত্রী মনিকা চৌধুরীকে নিয়ে আপাতত থিতু হয়েছেন

 

.

আক্কু চৌধুরী যখন দেশে ফিরে আসেন তখন মুক্তিযুদ্ধের বিষয়টি অনেকটাই চাপা পড়ে যায় নব্বইয়ের দশকের শুরুতে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি উঠলে আক্কু চৌধুরী সেখানে সক্রিয় অংশ নেন জাহানারা ইমামের ছেলে শহীদ রুমী ছিলেন আক্কু চৌধুরীর একই স্কুলের সিনিয়র ছাত্র গ্রুপ লিডার মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে স্থায়ী কিছু করার চিন্তা তার মাথাতে সব সময় ছিল বিশেষ করে ডকুমেন্টশনের বিষয়টি মুক্তিযুদ্ধের প্রথম পর্যায়ে তিনি পত্রিকা সংগ্রহ করেছেন আবার আমেরিকাতে অ্যান্টিক সংগ্রহশালায় কাজ করার অভিজ্ঞতা তাকে আগ্রহী করে তুলেছে

কিছু একটা করার জন্য ১৯৯৪ সালে তিনি প্রথম আসাদুজ্জামান নূরের সাথে কথা বলা শুরু করেন আরো কয়েকজন সমমনাকে সাথে নিয়ে আক্কু চৌধুরীর মহাখালীর ডিওএইচএসের বাসায় ধারাবাহিক মিটিং চলতে থাকে এক পর্যায়ে একটি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠায় ডা. সারোয়ার আলীর প্রস্তাবে আলী যাকের, জিয়াউদ্দিন তারিক আলী, মফিদুল হক, রবিউল হুসাইন, আসাদুজ্জামান নূর, সারা যাকের আক্কু চৌধুরী তারা আট জন মিলিতভাবে সম্মতি প্রকাশ করেন এই আটজনই মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের উদ্যোক্তা তারা সবাই ট্রাস্ট্রি হিসেবে পরিচিত তাদের মধ্যে তিনজন মারা গিয়েছেন ট্রাস্টিদের মধ্যে একজন সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করেন আক্কু চৌধুরী দীর্ঘ সময় এই দায়িত্ব পালন করেছেন



সেগুনবাগিচায় প্রথম মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের উদ্বোধন হয় ১৯৯৬ সালে / ছবি: সংগ্রহ


শুরু হয় জাদুঘরের জন্য বাড়ি খোঁজার কাজ সেগুনবাগিচায় দীর্ঘদিন যে বাড়িতে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ছিল সে বাড়িটি ১৯৯৫ সালে ভাড়ার জন্য খুঁজে বের করেন আক্কু চৌধুরী ২২ মার্চ ১৯৯৬ সালে এক বৃষ্টিভেজা দিনে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের উদ্বোধন হয় প্রবল বৃষ্টিতে ভিজে আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে গানটির মধ্য দিয়ে উদ্যোক্তা অংশগ্রহণকারী একাকার হয়ে যান অনেকের চোখের পানি বৃষ্টির পানির সাথে মিশে যায়


বর্তমানে আগারগাঁওয়ে বিশাল পরিসরে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর/ ছবি: সংগ্রহ


মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হচ্ছে, ইতিহাসের স্মারক সংগ্রহ সংরক্ষণ করে যথাযথভাবে উপস্থাপন এর বিশেষ লক্ষ্য নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতার ইতিহাস বিষয়ে সচেতন করে তোলা, যার ফলে তারা মাতৃভূমির জন্য গর্ব দেশাত্ববোধে উদ্দীপ্ত হবে এবং উদার অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী হবে

প্রতিষ্ঠার পর থেকে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের পক্ষ থেকে একের পর এক উদ্যোগ নেয়া শুরু হয় নানা রকম আউটরিচ প্রোগ্রাম, ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর, জল্লাদখানা-সহ বিভিন্ন বধ্যভূমি খনন সংরক্ষণ, গণহত্যা বিষয়ক আইন প্রয়োগ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সমে¥লন, মুক্তি মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রামাণ্যচিত্র উৎসব, সাংবাদিকদের জন্য বজলুর রহমান স্মৃতি পদক, শান্তি সহনশীলতা বিষয়ক এশীয় তরুণদের ক্যাম্প, মুক্তির উৎসব, স্বেচ্ছাকর্মীদর নিয়ে টিম গঠনসহ নানা উদ্যোগ যা একে জনগণের জাদুঘরে পরিণত করে আক্কু চৌধুরী প্রতিটি ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন



১৯৯৯ সালে মিরপুরে জল্লাদখানা বধ্যভূমিতে খনন কাজে তদারকির পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সাথে সরাসরি অংশ নেন আক্কু চৌধুরী এই বধ্যভূমিতে মুক্তিযুদ্ধের সময়ের ৭০ জনের খুলি এবং ,৩৯২টি মানব হাড় উদ্ধার করা হয় / ছবি: সংগ্রহ


মিরপুরের সবচেয়ে বড় ভয়ংকর জল্লাদখানা বধ্যভূমি খননের জন্য নিজেই কয়েকজন কর্মী নিয়ে ছুটে গিয়েছিলেন পরে সেনাবাহিনীর সহযোগতিায় সেখানে অনেক মৃতদেহের খুলি হাড়সহ নানা চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায় আগারগাঁওয়ে বিশাল পরিসরে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠার সময় জায়গা পেতে চেষ্টা করা, আমেরিকার ইএমকে সেন্টারের সাথে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের যৌথ উদ্যোগ-সহ বহু কাজে আক্কু চৌধুরী ছিলেন সক্রিয় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নিয়ে তিনি বলেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের জাদুঘর করা হয়েছে যাতে করে নতুন প্রজন্ম আমাদের যুদ্ধ সম্পর্কে জানতে পারে মুক্তিযোদ্ধারা কীভাবে যুদ্ধ করেছিলেন, কীভাবে সাধারণ মানুষ নির্যাতিত হয়েছিলেন নতুন প্রজন্ম যদি আমাদের ইতিহাস সঠিকভাবে জানে, যদি সত্যিকার অর্থে তারা দেশকে নিয়ে ভাবে, উপলদ্ধি করেÑ তাহলে কোনো বাধাই আমাদের থামিয়ে রাখতে পারবে না


আমি বাংলাদেশের পতাকাকে ভালোবাসি’-আক্কু চৌধুরী/ /ছবি: সংগ্রহ

.

বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে আক্কু চৌধুরীর আবেগ চোখে পড়ার মতো তিনি সব সময়ই বলেন, তার প্রকৃত জন্ম ১৯৭১ সালে তিনি যেখানে কাজ করেছেন তা সেটা কর্পোরেট অফিস, আইসক্রিমের শো রুম হোক এমনকি নেপালেও তার রিট্রিট সেন্টারেও স্বাধীন বাংলার পতাকা শোভা পায় পতাকার প্রতি এতো ভালোবাসার কারণ জানতে চাইলে ১৪ বছর আগে তিনি বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধা যখন তার দেশকে ভালোবাসেন, তখনই তিনি তার জন্য যুদ্ধ করতে পারেন যারা আমাদের দেশের জন্য শহীদ হয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেনÑএরা সবাই আমাদের পতাকার জন্য জীবনকে উৎসর্গ করেছেন আমি বাংলাদেশের পতাকাকে ভালোবাসি আমি সবসময় চেষ্টা করি, যেখানে যাই না কেন, যেখানে থাকি না কেন আমাদের পতাকাকে সঙ্গে রাখতে বিদেশে যেখানে যান না কেন প্রত্যেকটি বাড়িতে পতাকা আছে, তারা সবাই তাদের দেশকে নিয়ে গর্ববোধ করেন আমেরিকা কী ছিল ২৫০ বছর আগে! পুরো দেশ মাস্তান, মাফিয়া, ডাকাতে ভরা ছিল কিন্তু ওরা সেটা জয় করেছে আর আমাদের দেশের বয়স সে তুলনায় অনেক কম এটা কিছুই না একটি দেশের জন্য স্বাধীনতার আগে আমরা কী ছিলাম! আমরা তা জয় করেছি তাই সবাই মিলে চেষ্টা করলে আমাদের দেশের সমস্যাগুলো অবশ্যই জয় করতে পারবো



আমি সবসময় চেষ্টা করি, যেখানে যাই না কেন, যেখানে থাকি না কেন আমাদের পতাকাকে সঙ্গে রাখতে’-আক্কু চৌধুরীছবি: সঞ্জয় কুমার রায়

 

.

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হচ্ছে দেশকে ভালোবাসা আমি আমার দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি আমি আমার দেশকে ভালোবাসি আমার দেশ গরীব হতে পারে, অনেক প্রবলেম রয়েছে কিন্তু আমরা তা জয় করার চেষ্টা করবো আমি বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি, সেজন্য গর্ববোধ করি আমি গর্ববোধ করি বাংলাদেশের একজন নাগরিক হতে পেরে

মুক্তিযোদ্ধা আক্কু চৌধুরীর মুখেই এমন কথা মানায়


কিন্তু তারপরও কিছু প্রশ্ন কারো কারো মনে ঘুরতে থাকে

তিনি কি একজন অভিমানী মুক্তিযোদ্ধা? প্রায় আট বছর ধরে বাংলাদেশের অনেকের কাছেই তার কোনো খবর নেই তিনি কি স্বেচ্ছা নির্বাসন বেছে নিয়েছেন?

তিনি যখন জাদুঘরের সদস্য সচিব ছিলেন তখন একের পর এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়ে সবাইকে একত্রিত করেছেন যে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠায় তার এতো আকুতি এখন তিনি কেন তার সাথে সম্পর্ক রাখছেন না?

মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী যখন সারা দেশে পালিত হচ্ছে, তখন তিনি দেশ থেকে অনেক দূরে স্ত্রীকে সঙ্গী করে কাঁধে বোঝা নিয়ে ছুটছেন নতুন যাত্রায় এটা কি তার চরিত্রের সাথে মানানসই চিত্র?

বাংলাদেশের যে তরুণ প্রজন্মের ব্যতিক্রমী কাজে তিনি সব সময় উৎসাহ দিয়েছেন, সেই বাংলাদেশ থেকে নেপালে যাওয়া কিছু তরুণ যখন তার সাথে দেখা করতে আগ্রহী হয় তখন কেন তাকে বিস্ময় ভরা কণ্ঠে বলতে হয়, রিয়েলি! হাউ ডু দে নো মি? আমার কথা তারা কীভাবে জানে?

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্য ট্রাস্টিদের সাথে তার মতদ্বৈততার বিষয়টি নিয়ে কিছু কথা প্রচলিত আছে এটা কি তার চলে যাওয়ার পেছনে কোনো ভূমিকা রেখেছে?

তার ঠোঁটকাটা স্বভাব এবং কৌশল করে কথা না বলা কি তাকে অনেকের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার কারণ?

তার অনেক উদ্যোগকে সহজভাবে কেউ কেউ নিতে পারেন নি প্রচলিত ধ্যান ধারণার বাইরে কিছু করা সব সময়ই কঠিন কিন্তু এমন অনেক কঠিন সময় তিনি পার করে এসেছেন

নাকি আরো কোনো গভীর বিষয়?


পোখারার নির্জন গ্রামে থেকেও যিনি হাছন রাজার গানের আয়োজন করেন,

যিনি এখনো মুক্তিযুদ্ধের কথা বলতে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন,

যিনি এখনো তার হাতে রঙ উঠে যাওয়া লাল-সবুজ ব্যান্ড পরেন,

যিনি নেপালের একটি গ্রামের ঘরের বেড়ায় বাংলাদেশের পতাকা জড়িয়ে রাখেন,

বাংলাদেশের মানুষদের কাছে পেলে এখনো যিনি গলা চড়িয়ে চিৎকার করে ওঠেন জয় মানুষ বলেÑ

তিনি কেন সব ছেড়ে গেলেন?

আক্কু চৌধুরী কি হারিয়ে যাবেন আরো অনেক অভিমানী দেশপ্রেমিকের মতো!


প্রশ্ন করলে বিনয়ের সাথে এড়িয়ে যান তিনি কিন্তু প্রশ্নের উত্তর আমাদেরই খুঁজে বের করতে হবে

তাকে নিয়ে শেষ যে প্রশ্নটি মাথায় আসে, কোনোভাবে আক্কু চৌধুরীকে বাংলাদেশের কাজে ফিরিয়ে আনা যায় কি না?

আক্কু চৌধুরীর মতো মানুষের প্রয়োজন বাংলাদেশে কখনো শেষ বে না !

 

.

আক্কু চৌধুরী নিয়মিত মেডিটেশন করেন মুক্তিযুদ্ধের পর যে মানসিক ট্রমা তার মধ্যে কাজ করছিল তা থেকে বের হওয়ার জন্য তিনি অনেক চেষ্টা করেছেন মেডিটেশন তার সমাধান দিয়েছে তিনি মনে করেন তার মধ্যে যে কসমিক এনার্জি ফোর্স কাজ করছে তা- তাকে প্রাণবন্ত রাখছে নেপালকে পছন্দ করার এটাও একটা কারণ ৭১ বছর বয়সে এখনো তিনি প্রতি মুহূর্তে বেঁচে থাকাকে উপভোগ করেন প্রতি মুহূর্তে তিনি কিছু সৃষ্টি করতে চান কারণেই তিনি একজন ড্রিমার! মনিকা চৌধুরীর প্রতি কৃতজ্ঞতা কর্পোরেট জগতের তীব্র আকর্ষণ বিলাসী জীবন ফেলে স্বামীর পাশে থেকে স্বপ্নকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য

 

পোখারায় জিসিসি রিট্রিটে আক্কু চৌধুরীর সার্বক্ষণিক সঙ্গী স্ত্রী মনিকা চৌধুরী/ ছবি: এম. জেড


পোখারার বুকে সন্ধ্যা নামে পাহাড়ের উপর থেকে নিচের শহরের বাতিগুলো জোনাকি পোকার মতো মনে হয় এঁকেবেঁকে পাহাড়ি পথ নিচে নেমে গিয়েছে একজন ড্রিমার বা স্বপ্নদ্রষ্টার সংস্পর্শে এসে ড্রিমারদের নিয়ে একটি গানের প্রসঙ্গ চলে আসে

বিশ্বখ্যাত ব্যান্ড বিটলস ভেঙ্গে গেলে এর প্রধান ভোকালিস্ট বা গায়ক জন লেননের সাথে ব্যান্ডের অন্য সদস্যদের দূরত্ব বাড়তে থাকে দিন দিন তবে সময় লেননের সার্বক্ষণিক সঙ্গী ছিলেন তার জাপানিজ স্ত্রী ইয়োকো ওনো ব্যান্ড ছেড়ে লেনন মনোযোগী হন সোলো বা একক ক্যারিয়ার গঠনের তার সোলো ক্যারিয়ারের সবচেয়ে জনপ্রিয় গানটি হলো ইমাজিন গানটিকে বিশ শতকে সবচেয়ে গাওয়া ১০০ গানের অন্যতম ধরা হয় কাকতালীয় মনে হলেও গানটি লেখা রিলিজ করা হয় ১৯৭১ সালে!


গানটির কিছু কথা পাহাড়ের মুক্ত বাতাসে যেন ভাসতে থাকে:

Imagine no possessions
I wonder if you can
No need for greed or hunger
A brotherhood of man

Imagine all the people
Sharing all the world

You may say I'm a dreamer
But I'm not the only one
I hope someday you'll join us
And the world will live as one.

 

পোখারা, নেপাল থেকে ফিরে

 

প্রধান ছবি: এবিএম সিদ্দীকুল আলম


ক্যাটেগরিঃ প্রধান কলাম, জীবনধারা,


মোহাম্মদ মাহমুদুজ্জামান

সম্পাদক, বিপরীত স্রোত। সাংবাদিক ও গবেষক। অ্যাসোসিয়েট ফেলো, রয়াল হিস্টোরিকাল সোসাইটি।



বৈশাখে ইলিশ নয়

বৈশাখে ইলিশ নয়

উৎপাদিত মাছের প্রায় ১২ শতাংশ আ.. বিস্তারিত

সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি

সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি

বাতিলযোগ্য সাইবার নিরাপত্তা আই.. বিস্তারিত

সাকিব: বিতর্ক যার সঙ্গী

সাকিব: বিতর্ক যার সঙ্গী

বাংলাদেশ তখনো বিশ্ব ক্রিকেট অঙ.. বিস্তারিত

আরো পড়ুন