কানাডিয়ান
অভিনেতা কিয়ানু চার্লস রিভস
হলিউডে কিয়ানু রিভস নামে
ব্যাপক জনপ্রিয়। তিনি
একই সঙ্গে হলিউডের অন্যতম
বিনয়ী ও মানবিক
ব্যক্তি হিসাবেও পরিচিত এবং
অনেকের শ্রদ্ধার পাত্র।
মানুষের জন্য তার যে
আন্তরিকতা সেটা তিনি প্রমাণ
করেছেন তার বহুদিনের কর্মকা-
দিয়ে। যদিও
তিনি অনেকের মতো আত্মপ্রচার
পছন্দ করেন না, কিন্তু
হলিউডে দাতার তালিকায় তার
নাম নিঃসন্দেহে প্রথম দিকে।
এসব কারণে তাকে বলা
হয় হলিউডের ‘পারফেক্ট
জেন্টলম্যান’।
থ্রিলার
ও অ্যাকশন হিরো
হিসাবে কিয়ানু রিভস ‘দি
ম্যাট্রিক্স’, ‘দি ম্যাট্রিক্স রেভিউলুশন’,
‘দি ম্যাট্রিক্স রিলোডেড’, ‘স্পিড’, ‘পয়েন্ট ব্রেক’,
‘ম্যান অফ তাই চি’,
‘কনস্টেনটিন’, ‘৪৭ রোনিন’, ‘স্ট্রিট
কিং’, ‘চেইন রিয়েকশন’ কিংবা
হালের ‘জন উইক’ মুভি
সিরিজের অভিনেতা হিসাবে খ্যাতি
অর্জনের পাশাপাশি ‘লিটল বুদ্ধা’, ‘দি
ডেভিল অ্যাডভোকেট’, ‘এ ওয়াক
ইন দি ক্লাউড’-সহ আরো অনেক
মুভিতে অসাধারণ অভিনয় করেন।
প্রথম দেখাতে কিয়ানু রিভসকে
হলিউডের অন্যান্য বিলাসী অভিনেতাদের
মতো মনে হতে পারে। অনেক
মেধাবী তরুণ অভিনেতার ধ্যান
জ্ঞান হলো কীভাবে কিয়ানু
রিভসের মানের অভিনেতা হওয়া
যায়। হলিউডের
শীর্ষ ১০ ধনী অভিনেতার
তালিকায়ও তার নাম এসেছে। ১৯৯৫
সালে পিপল ম্যাগাজিনের জরিপে
তিনি বিশ্বের শীর্ষ
৫০ সুদর্শন ব্যক্তির
একজন হিসাবে বিবেচিত হন। কিন্তু
তার জীবনেও এসেছে একের
পর এক চ্যালেঞ্জ।
কিয়ানু রিভস জন্মেছেন ২
সেপ্টেম্বর ১৯৬৪ তারিখে, লেবাননের
বৈরুতে। তার
বাবা স্যামুয়েল নাওলিন রিভস ছিলেন
ভূতত্ত্ববিদ। তিনি
ছিলেন চায়নিজ-হাওয়াইয়ান বংশোদ্ভূত। কিয়ানু
রিভসের মা প্যাটরিসিয়া টেইলর
ছিলেন ইংরেজ শো-গার্ল। কিয়ানু
নামটি তার দেয়া।
এটি হাওয়াইয়ান শব্দ। এর
অর্থ ‘পাহাড়ের উপর দিয়ে
বয়ে যাওয়া ঠান্ডা বাতাস’। কিয়ানু
রিভসের তিন বছর বয়সে
তার বাবা মায়ের ডিভোর্স
হয়ে যায়। ১৯৯৪
সালে কিয়ানুর বাবা হাওয়াইয়ে
কোকেন বহনের দায়ে দশ
বছরের জন্য জেলবন্দি হন। কিয়ানু
তার মায়ের একাধিক বিয়ের
কারণে বিভিন্ন জায়গায় বসবাস
করেন। প্রথমে
তারা যান অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। সেখানে
তার মা একজন ফ্যাশন
ডিজাইনারের কাজ করেন।
তার সৎ বোন কিম
জন্ম নেয়ার পর তারা
নিউ ইয়র্কে আসেন।
এখানে তার মা আবার
বিয়ে করলে তারা পুরো
পরিবার কানাডার টরোন্টেতে চলে
যান এবং সেখানকার নাগরিকত্ব
গ্রহণ করেন। পারিবারিক
অস্থিরতার কারণে কিয়ানু এবং
তার সৎবোনেরা বড় হন
বেবি সিটার কিংবা নানা
নানির কাছে। কিয়ানু
চারটি স্কুলে পড়াশোনা করেন। যার
মধ্যে টরোন্টো স্কুল ফর
দি পারফরমিং আর্টস
ছিল।
বিভিন্ন জায়গায় অনেকগুলো স্কুলে পড়ায় কিয়ানুর সঙ্গে কারো গভীর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠেনি। এর মধ্যে জটিল ডিসলেক্সিয়া রোগ তার পড়াশোনাকে আরো ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই রোগে চোখের ওপর মনের নিয়ন্ত্রণ থাকে না। ফলে বই পড়া কঠিন হয়ে পড়ে। চোখ বইয়ের পাতার শব্দ সঠিক ভাবে দেখতে পারে না। শব্দের গঠন অনুসারে চোখ বাক্যকে অনুসরণ করতে পারে না। এই রোগ কিয়ানু রিভসকে অনেক যন্ত্রণা দিলেও এই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে আপ্রাণ চেষ্টা করেন। তিনি শেক্সপিয়ার থেকে শুরু করে ওয়ার্ল্ড ক্লাসিকসের অনেক বই পড়েন। তিনি এখনো নিয়মিত বই পড়েন।
১৭ বছর বয়সে তিনি কলেজ ড্রপ আউট হন এবং মুভিকে ক্যারিয়ার হিসাবে বেছে নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এর আগে অবশ্য তিনি মঞ্চ, টিভি ও বিজ্ঞাপনে অংশ নিয়ে নিজের স্বপ্নকে বড় করে তোলার কাজ শুরু করে দেন। ‘রিভার এজ’ তার প্রথম অভিনীত মুভি। যা ১৯৮৬ সালে মুক্তি পায়।
হলিউডের
অভিনয় জীবনে এসে তিনি
পরিচিত হন রিভার ফনিক্সের
সঙ্গে। অভিনেতা
রিভার ফনেক্সকে সেই সময়ের
সবচেয়ে প্রতিভাবান অভিনেতা মনে করা
হতো। তার
অভিনীত ‘স্ট্যান্ড বাই মি’, ‘রিভার
এজ’ মুভিগুলো ব্যাপক ভাবে
প্রশংসিত হয়। ফনেক্সের
সঙ্গে কিয়ানুর সত্যিকারের বন্ধুত্ব
গড়ে ওঠে।
ফনেক্স এবং কিয়ানু রিভস
‘আই লাভ ইউ টু
ডেথ’ মুভিতে এক সঙ্গে
অভিনয় করার সময় থেকেই
তারা একে অপরের সবচেয়ে
ভালো বন্ধুতে পরিণত হন। তাদের
সম্পর্ক এতো বেশি গভীর
ছিল যে যখন কিয়ানু
রিভস ‘মাই ওন প্রাইভেট
আইডাহো’ মুভির স্ক্রিপ্ট দেখেন
তখন তিনি এর একটি
চরিত্রের সঙ্গে তার বন্ধু
ফনেক্সের এতো বেশি মিল
পান যে তাকে রাজি
করাতে দীর্ঘ পথ মোটর
সাইকেল চালিয়ে বন্ধুর কাছে
হাজির হন।
তাকে নিজের ভাইয়ের মতোই
মনে করতেন কিয়ানু।
ফনেক্স নানা ধনের মাদকে
অভ্যস্ত হয়ে পড়েন।
হিরোইন, কোকেইন, ভেলিয়াম সব
এক সঙ্গে গ্রহণ
করতেন তিনি। যা
মাত্র ২৩ বছর বয়সে
১৯৯৩ সালে ফনেক্সের মৃত্যুর
কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
কিয়ানু রিভসের জন্য এটি
ছিল চরম এক আঘাত।
তবে ১৯৯৩ সালে তার জীবনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে। বিখ্যাত পরিচালক বার্নার্ডো বার্তোলুচি পরিচালিত ‘লিটল বুদ্ধা’ মুভিতে গৌতম বুদ্ধের চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে তিনি বুদ্ধ দ্বারা ভীষণ আলোড়িত হন এবং পরবর্তী সময়ে তার ওপর এর পরোক্ষ প্রভাব পড়ে। যা তার সংবেদনশীল মনকে আরো বেশি মানবিক করে তোলে। কিয়ানু রিভস বুদ্ধিস্ট নন কিন্তু অনেকে বিশ্বাস করেন তিনি বৌদ্ধ ধর্ম দ্বারা প্রভাবিত।
বৃটেনের প্রভাবশালী বিনোদন ম্যাগাজিন ‘এলে’ ১৯৯৪ সালে কিয়ানু রিভসের একটি ইন্টারভিউ ছাপে। সেখানে তিনি জানান, ‘ইনক্রেডিবল ব্যক্তিত্ব’ বার্নার্ডো বার্তোলুচি তাকে এসে লিটল বুদ্ধার কাহিনী বলেন এবং এর আধ্যাত্মিক দিক ও শিশুদের মুভিটি দেখার বিষয়ে জোর দেন। মুুভিটিতে কিয়ানু রিভস কাজ করতে রাজি হন। এই সময়টিকে তিনি বর্ণনা করেন এভাবে, “আমি লিটল বুদ্ধা মুভিতে কাজ করেছি ৮৫ দিন। এই সময়টা আমার জীবনের সেরা উপহার। মেডিটেশন মনের চোখ খুলে দেয়। আমার কাছে জীবন ছিল বিছানা থেকে জেগে ওঠা, জীবন কাটানো, ভালোবাসা, খাওয়া এবং ঘুমানো। কিন্তু এই বাইরেও সারা বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড রয়েছে, সে বিষয়ে আমার কোনো ধারণা ছিল না। একই সঙ্গে আমি ভ্রমণ করেছি নেপালসহ বিভিন্ন অসাধারণ স্থান।”
লিটল বুদ্ধা মুভিতে গৌতম বুদ্ধের চরিত্রে অভিনয়ের প্রভাব সারাজীবনের জন্য পড়ে কিয়ানু রিভসের ওপর
এ সময়ের প্রস্তুতি সম্পর্কে
তিনি বলেন, “আমি চরিত্রটিতে
নির্বাচিত হয়ে শুরু করি
বৌদ্ধ ধর্ম সম্পর্কে পড়াশোনা। এর
বাইরে কোনো উপন্যাস নয়,
গান শোনা নয়, টিভি
দেখা নয়।
একই সঙ্গে আমি কিছু
ইয়োগা করি।”
যুবরাজ সিদ্ধার্থ থেকে গৌতম বুদ্ধে
পরিণত হওয়া দেখাতে স্বাস্থ্যগত
পরিবর্তনও আনতে হয় কিয়ানু
রিভসকে। অল্প
খেয়ে তার শরীরের হাড়গুলো
দেখানোর প্রয়োজন পড়ে।
মুভিটি করার আগে কোনো
ধর্ম সম্পর্কেই তেমন গোছানো ধারণা
ছিল না কিয়ানু রিভসের। লিটল
বুদ্ধা মুভিতে অভিনয়ের পর
তার উপলব্ধি ছিল এমন,“আমার মনে হয়,
আমাদের দেহ ও মনে
এমন কিছু আছে যা
ধর্মকে খোঁজে। জীবনে
তিনটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হলো ধর্ম
বা আধ্যাত্মিকতা, রাজনীতি
এবং যোগ্য সঙ্গী খুঁজে
পাওয়া। এসবই
আমাদের ভেতরে আছে।
...”
তার এই অভিজ্ঞতা নিজের
জীবনের অনেক চ্যালেঞ্জ সামলাতে
পরোক্ষ ভূমিকা রাখে তাতে
সন্দেহ নেই।
১৯৯৪ সালে অ্যাকশন মুভি
‘স্পিড’ মুক্তি পাওয়ার পর
তিনি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে
ওঠেন। ১৯৯৫
সালে ‘ডগস্টার’ নামে একটি
মিউজিক ব্যান্ডের সঙ্গে জড়িত হন। একটি
সামার টুরও তারা করেন। পরবর্তীতে
১৯৯৯ সালে তিনি আন্তর্জাতিক
স্টার হয়ে ওঠেন ‘ম্যাট্রিক্স’
মুভির নিও চরিত্রে অভিনয়ের
জন্য। নিও
চরিত্রটির জন্য প্রয়োজকদের পছন্দের
তালিকায় কিয়ানু রিভস ছাড়াও
আরো ছিলেন লিওনার্দো ডি
ক্যাপ্রিও, উইল স্মিথ ও
ব্র্যাড পিট। পরে
প্রযোজকরা কিয়ানু রিভসকে বেছে
নেন। ম্যাট্রিক্সে
অভিনয়ের প্রয়োজনে তিনি মার্শাল
আর্ট শেখেন।
১৯৯৮ সালে রিভস প্রেমে
পড়েন চলচ্চিত্রকর্মী ও অভিনেত্রী
জেনিফার সাইমের। তাদের
সম্পর্ক স্থায়ী রূপ নেয়
এবং এক সময়ে জেনিফারের
গর্ভে একটি কন্যা সন্তান
আসে। দু’জনে গভীর আগ্রহে
অপেক্ষা করলেও ২৪ ডিসেম্বর
১৯৯৯ তারিখে মেয়েটি যার
নাম তারা রেখেছিলেন দু’জনের নাম মিলিয়ে
আভা আর্চার সাইম রিভস,
সে মাতৃগর্ভেই মারা
যায়। এই
ধাক্কা যেতে না যেতেই
পরবর্তীতে জেনিফারের সঙ্গে কিয়ানুর সেপারেশন
হয়ে যায়। কিয়ানু
তারপরও চেষ্টা করতেন জেনিফারের
সঙ্গে যোগযোগ রাখতে।
বিচ্ছেদের মাত্র দেড় বছরের
মাথায় ২ এপ্রিল
২০০১ তারিখে মেরিলিস ম্যানসনের
বাড়ির পার্টি থেকে ফেরার
পথে এক দুঃখজনক সড়ক
দুর্ঘটনায় জেনিফার মারা যান
মাত্র ২৮ বছর বয়সে। এই
ঘটনা কিয়ানুর মনে গভীর
বেদনার জন্ম দেয়।
তবে কিয়ানু রিভসের জীবনের ঘটনা এখানেই শেষ নয়। তার ছোট বোন কিম যাকে তিনি খুব ভালোবাসতেন ও বন্ধুর মতো দেখতেন, সেই বোনটিও ২০০১ সালে মাত্র ৩৮ বছর বয়সে দীর্ঘদিন লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। বোনের মৃত্যুর পর কিয়ানু রিভস একটি ক্যানসার চ্যারিটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। সেখানে কোথাও তার নাম নেই। এর বাইরেও নানা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে তিনি জড়িত।
ম্যাট্রিক্স ট্রিলজি থেকে ১১৪ মিলিয়ন ডলার আয় করেন কিয়ানু রিভস
ম্যাট্রিক্স
ট্রিলজি মুভি ‘দি ম্যাট্রিক্স’,
‘দি ম্যাট্রিক্স রেভিউলুশন’ ও ‘দি ম্যাট্রিক্স
রিলোডেড’ থেকে ১১৪ মিলিয়ন
ডলার আয় করেন কিয়ানু
রিভস। এর
মধ্য থেকে প্রায় ৮০
মিলিয়ন ডলার বা বাংলাদেশি
সাড়ে ছয়শ কোটি টাকারও
বেশি ক্যান্সার আক্রান্তদের সেবায় দান করেন
যা তার এই
তিন মুভি বাবদ আয়ের
শতকরা ৭০ ভাগ।
কিয়ানু রিভস বলেন, “অর্থ
হচ্ছে আমার চিন্তার সবচেয়ে
শেষ বিষয়। আমি
যা আয় করেছি
তা দিয়ে আগামী
কয়েক শতাব্দী চলতে পারবো।”
এ কারণে ৩০০ মিলিয়ন
ডলারের মালিক হওয়ার পরও
তিনি বিনয়ী ও ভদ্র। অর্থের
বিষয়ে তার নিরাসক্তি অনেক
ঘটনার মধ্যেই দেখা গিয়েছে। বা
ক্যারিয়ারের পেছনে পাগলের মতো
ছুটতেও তাকে দেখা যায়
না। বরং
তিনি যে মুভিতে অভিনয়
করেছেন তার মান উন্নয়নে
নিজের পকেটের অর্থ ব্যয়
করতে তিনি কখনোই পিছ
পা হন নি। যদিও
তিনি মুভির প্রযোজক ছিলেন
না। একই
সঙ্গে তিনি নিরীক্ষাধর্মী চরিত্রের
প্রতি অনেক বেশি আগ্রহী
হয়ে ওঠেন।
‘স্পিড’
মুভিটি ব্লক বাস্টার হিট
হওয়ার পর ‘স্পিড টু:
ক্রুজ কনট্রোল’ মুভির জন্য
তাকে অফার করা হয়। এই
মুভির জন্য তাকে এগারো
মিলিয়ন ডলার বা বাংলাদেশি
প্রায় নব্বই কোটি টাকা
পারিশ্রমিক দেয়ার প্রস্তাব করা
হয়েছিল। কিন্তু
তিনি বিনয়ের সঙ্গে এই
প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন।
চরিত্র নির্বাচন তার জন্য
খুব গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি
অ্যাকশনধর্মী ‘জন উইক’ মুভি
সিরিজে অভিনয় করার পেছনে
বড় কারণ মুভির
এই চরিত্রটি তার
স্ত্রীকে হারিয়েছে। যা
কিয়ানুর নিজ জীবনের সঙ্গে
মিলে যায়।
এক সময় হলিউডের দুই
সুপার স্টার রবার্ট ডি
নিরো এবং আল পাচিনোর
সঙ্গে ‘হিট’ মুভিতে অভিনয়ের
অফার পান কিয়ানু রিভস। কিন্তু
এর আগে কানাডার
উনিপেগ ম্যানিটোবা থিয়েটার সেন্টারে শেক্সপিয়ারের
‘হ্যামলেট’ নাটকে অভিনয়ের জন্য
কথা দেয়া থাকায় সেই
অফার ফিরিয়ে দেন তিনি। ‘হিট’
মুভির প্রস্তাবিত চরিত্রে পরে অভিনয়
করেন ভ্যাল কিমার।
মঞ্চ নাটকের জন্য এতো
বড় প্রস্তাব ফিরিয়ে
দেয়া অনেক অভিনেতার পক্ষেই
কঠিন কিন্তু কিয়ানু রিভস
তার কমিটমেন্টের ক্ষেত্রে কোনো ছাড়
দেন নি।
আবার যখন তিনি অনেক
অর্থ দাবি করতে পারতেন
সে সময় ‘দি
ডেভিলস অ্যাডভোকেট’ মুভিতে কমিয়ে এক
মিলিয়ন ডলার পারিশ্রমিক নেন। এতে
করে অর্থ বেঁচে যাওয়ায়
প্রযোজকরা আল পাচিনোর মতো
বড় অভিনয় শিল্পীকে
মুভিতে যোগ করতে পারেন। কিয়ানু
রিভস সচেতন ভাবে প্রয়োজকদের
অর্থ বাঁচিয়ে দেন এবং
আল পাচিনোর মতো
শিল্পী মুভিটিতে যোগ হওয়ায়
মুভির মান অনেক বেড়ে
যায়। যা
কিয়ানু রিভসের কারণেই সম্ভব
হয়েছে। একই
ঘটনা ঘটান তিনি ‘দি
রিপ্লেসমেন্ট’ মুভিতে। নিজের
পারিশ্রমিক কমিয়ে তিনি প্রযোজকদের
বিখ্যাত অভিনেতা জিন হ্যাকম্যানকে
মুভিতে অর্ন্তভুক্ত করার সুযোগ করে
দেন।
‘ম্যাট্রিক্স’ মুভি শুটিংয়ের সময় তিনি জানতে পারেন একজন সাপোর্টিং ক্রু খুব অর্থকষ্টে আছেন। তার ক্রিসমাস পালনও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে অর্থের অভাবে। কিয়ানু রিভস তাকে ২০ হাজার ডলার বা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ষোল লাখ টাকা ক্রিসমাসের উপহার হিসাবে দেন।
মোটর বাইক চালাতে
এবং
উপহার
দিতে
পছন্দ
করেন
কিয়ানু
রিভস
স্ট্যান্টম্যানদের
খুবই শ্রদ্ধা করেন কিয়ানু। ২০০৩
সালে তিনি ম্যাট্রিক্স রিলোলেড
মুভির বারো জন স্ট্যান্টম্যানের
জন্য ব্যয় বহুল বারোটি
‘হারলি ডেভিডসন’ মোটর বাইক
কিনে দেন, সেই সময়ই
যার একেকটির গড়ে দাম
পড়ে বাংলাদেশি প্রায় সাড়ে ছয়
লাখ টাকা। তিনি
মনে করেন এরাই হচ্ছেন
প্রকৃত স্টার। তাদের
জন্য এটি তার পক্ষ
থেকে- ‘বিগ থ্যাংক ইউ’। ভিজুয়াল
এফেক্ট কর্মীসহ সাপোর্টিং কর্মীদের
পেছনে বিভিন্ন সময় অন্তত
৫০ মিলিয়ন ডলার
ব্যয় করেন কিয়ানু রিভস।
শুধু অর্থ ব্যয় নয়,
মানবিক আচরণের জন্যও অনেকের
কাছে প্রিয় একজন মানুষ
তিনি।
২০০৩ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসে নিজের বাড়ি কেনার আগে পর্যন্ত কিয়ানু রিভস ভাড়া বাড়ি বা হোটেলে থাকতেন। হলিউডের অন্যান্য সুপার স্টারদের মতো তার কোনো বিশাল ম্যানসন নেই। এখনো কিয়ানু রিভসকে নিউ ইয়র্কের পথে হাঁটতে দেখা যায়। তিনি নিয়মিত সাবওয়েতে চড়েন। এমনকি সেখানে কোনো নারী যাত্রী সিট না পেলে তাদের তিনি নিজ সিট ছেড়ে বসতে দেন। তিনি সাধারণ জীবন কাটাতেই বেশি পছন্দ করেন। তার ভক্তরা যারা তাকে পথে দেখেন তাদের সঙ্গে খুব ভদ্র আচরণ করেন। তবে অনেক ভক্তই শ্রদ্ধার সঙ্গে দূর থেকে তাকে দেখেন। তাকে বিরক্ত করেন না।
এটি কোনো মুভির শুটিং নয়। বাস্তব জীবনেও সাবওয়েতে চলাচল করেন কিয়ানু রিভস
বিমান যাত্রায় সহযাত্রীদের সব
সময়ই সাহায্য করেন কিয়ানু
রিভস। একবার
বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে জরুরি
অবতরণ করতে হয়।
তিনি সে সময় সহযাত্রীদের
শুধু নামতেই সাহায্য করেন
নি, তাদের পাশে থেকেছেন। তাদের
প্রেরণা জুগিয়েছেন। একজন
ভিআইপি হিসাবে তাকে আলাদা
ভাবে বিমান বন্দরের বাইরে
নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব বাদ
দিয়ে তিনি সহযাত্রীদের সঙ্গে
একই বাসে চড়েন এবং
নানা রকম মজা করে
তাদের ভয়ংকর স্মৃতিটি ভুলিয়ে
রাখার চেষ্টা করেন।
আরেকবার
এক নারী নিজের
গাড়ি চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনায়
পড়েন। চলতি
পথে দেখা হওয়া সেই
নারীকে তার বাড়িতে পৌঁছে
দেন কিয়ানু রিভস এবং
সে জন্য তাকে
৫০ কিলোমিটার ভিন্ন
পথে ড্রাইভ করতে হয়
যা তার প্রয়োজন
ছিল না।
সেই নারী খুবই বিস্মিত
ও আনন্দিত হয়েছিলেন
তাকে সম্মানের সঙ্গে বাড়ি
পৌঁছে দেয়ায়। গৃহহীন
মানুষেরা কীভাবে থাকেন তা
জানতে তিনি তাদের সঙ্গে
গিয়ে পথে থাকেন।
জীবনকে সহজ করার জন্য যা প্রয়োজন কিয়ানু রিভস তাই করেন। কঠিন সময়কে তিনি শুধু চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নেন নি, তাকে তিনি গ্রহণ করেন জীবনের অংশ হিসেবে। এ বিষয়ে কিয়ানু রিভসের বক্তব্য, “আমাদের আজকের যে অবস্থান তা জীবনের অনেক কঠিন সংগ্রামের ভেতর দিয়ে তৈরি হয়েছে। কঠিন সময়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। কারণ এটিই আপনাকে ভেতর থেকে শক্তিমান করে তোলে।”
এম. জেড
সম্পাদক, বিপরীত স্রোত। সাংবাদিক ও গবেষক। অ্যাসোসিয়েট ফেলো, রয়াল হিস্টোরিকাল সোসাইটি।
ড. বিজন কুমার শীল বিস্তারিত
বিপরীত স্রোত প্রতিবেদন বিস্তারিত
ডা. আহমদ মরতুজা চৌধুরী বিস্তারিত
যারিন মালিয়াত অদ্রিতা বিস্তারিত
মোহাম্মদ মাহমুদুজ্জামান বিস্তারিত
উৎপাদিত মাছের প্রায় ১২ শতাংশ আ.. বিস্তারিত
বাতিলযোগ্য সাইবার নিরাপত্তা আই.. বিস্তারিত
বাংলাদেশ তখনো বিশ্ব ক্রিকেট অঙ.. বিস্তারিত
ব্রেদিং আউট বার্ডেন নামে কর্ম.. বিস্তারিত