বজলুল করিম আকন্দ
দুনিয়া কাঁপানো দুটি ধাঁধা। বলা বাহুল্য, দুটি ধাঁধাই খুব বিচিত্র। একটি অতি বৃহৎ ও অন্যটি অতি ক্ষুদ্রের জগৎ নিয়ে ধাঁধা। অতি ক্ষুদ্রের জন্য কণাবাদী বলবিদ্যা এবং অতি বৃহৎ-এর জন্য আপেক্ষিকতা তত্ত্ব ভালো কাজ করে।
আইনস্টাইনের যমজ ধাঁধা
আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিকতার সূত্র অনুযায়ী কোনো বস্তু যদি গতিশীল হয় তখন ধীর হয়ে যায় তার ঘড়ি। তবে দৈনন্দিন জীবনে এসব পরিবর্তন আমরা টের পাই না। শুধু আলোর গতির কাছাকাছি (আলোর গতি প্রতি সেকেন্ডে এক লক্ষ ছিয়াশি হাজার মাইল) গতিতেই এটা টের পাওয়া যায়। সময় ধীর হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি সবধরনের ঘড়ির ক্ষেত্রেই এক, এমন কি আমাদের প্রাণিজ ঘড়ির জন্যও।
এবার দেখা যাক যমজ ভাইদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি কী দাঁড়ায়। আমরা ধরে নিই জারিফ ও জায়ান ওরা দুজন যমজ ভাই। ওদের উভয়েরই বয়স ২০ বছর। জারিফ তার যমজ ভাই জায়ানকে পৃথিবী পৃষ্ঠে রেখে একটি উচ্চ গতিসম্পন্ন রকেটে চড়ে প্রায় আলোর গতির কাছাকাছি গতিতে মহাকাশ ভ্রমণে বের হলো। এভাবে সে দীর্ঘ ছয় বছর সেখানে ভ্রমণ করে জায়ানের কাছে পৃথিবীতে ফিরে এল। ইতিমধ্যে তার বয়স যেখানে ২০ থেকে বেড়ে ২৬ হয়েছে সেখানে তার যমজ ভাই জায়ানের ২০ থেকে বেড়ে হবে ৮০ বছর, একেবারে থুত্থুড়ে বুড়ো। অর্থাৎ মহাকাশ ভ্রমণের সময় জারিফের বয়স যেখানে ৬ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে সেখানে পৃথিবীতে থেকে যাওয়া তার যমজ ভাই জায়ানের বেড়েছে ৬০ বছর। যদিও আলোর গতির কাছাকাছি গতিতে ভ্রমণ করা প্রায় অসম্ভব তবে একনাগারে ৬ বছর মহাকাশে ভ্রমণ সম্ভব হতেও পারে। কারণ, কিছুদিন আগেও রাশিয়ার নভোচারী ওলেগ কোনোনেনকো একনাগারে প্রায় ৩ বছর মহাকাশে থাকার রেকর্ড করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন।
যমজ ভাইদের বিষয়টি অবিশ্বাস্য মনে হলেও বাস্তবে তা সত্যি। কারণ, ইতিমধ্যে চলন্ত অবস্থায় সময় ধীর হওয়ার ব্যাপারটি বিভিন্ন পরীক্ষা-নীরিক্ষায় সঠিক বলে প্রমাণিত হয়েছে। আজ থেকে প্রায় ৬০ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগানে একদল বিজ্ঞানী দুটি অ্যাটনিক ক্লক নিয়ে পরীক্ষা চালান। একটি রাখা হয় অ্যারোপ্লেনে ও অন্যটি এয়ারপোর্টে। পরে দুটি ঘড়ির সময় মিলিয়ে দেখা যায়, অ্যারোপ্লেনে রাখা ঘড়ির সময় ধীরে চলেছে। এখন অবশ্য আরও বাস্তব প্রমাণ পাওয়া যায়। কৃত্রিম উপগ্রহের ঘড়ি পৃথিবীর ঘড়ির চেয়ে ধীরগতিতে চলে। তাই হিসাব ঠিক রাখার জন্য সংশোধন করে নিতে হয়।
শ্রোডিঙ্গারের বিড়াল ধাঁধা
অতিপারমাণবিক পর্যায়ে বস্তুর আচরণ নিয়ে ১৯২৫-১৯২৭ সালের দিকে নিলস বোর, হাইজেনবার্গ, ম্যাক্স বোর্ন ও অন্যান্যরা মিলে একটি তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করেন, যা সে সময় বিজ্ঞান জগতে কোপেনহেগেন ব্যাখ্যা হিসেবে পরিচিতি পায়। অতিপারমাণবিক কণা কী? পরমাণুর চেয়েও ক্ষুদ্রতর কণিকাকে পদার্থবিজ্ঞানে অতিপারমাণবিক কণা বলা হয়। যেমন, ইলেক্ট্রন, ফোটন এবং মিওন হলো অতিপারমাণবিক কণার উদাহরণ। কোপেনহেগেন ব্যাখ্যা কী? কোপেনহেগেন ব্যাখ্যা অনুযায়ী কোনো একটি কণা যন্ত্রে ধরা পড়ার আগে অনেক কণা হিসেবে থাকে অথচ যন্ত্র যখন তাকে শনাক্ত করে ফেলে তখন তা ফের একটা হয়ে যায়। এ রকম অদ্ভুতুড়ে ব্যাপারের জন্যই হয়তো আইনস্টাইন মানতে চাইতেন না কণাবাদী বলবিদ্যার কিছু কিছু ব্যাখ্যা। তাই তিনি বলেছিলেন, ঈশ্বর এ বিশ্ব নিয়ে পাশা খেলেন না। সে সময় তার মতো আরও অনেকেই তত্ত্বটি মেনে নিতে পারেননি। তাই তখন বিষয়টি নিয়ে বিজ্ঞানী মহলে অনেক যুক্তি ও পাল্টা যুক্তির ঝড় বইতে শুরু করে। সে সময় অস্ট্রিয়ার তাত্বিক পদার্থবিদ এরভিন শ্রোডিঙ্গার এগিয়ে আসেন। ১৯৩৫ সালে তিনি একটি কল্পিত বিড়াল নিয়ে তাঁর একটি পরীক্ষার কথা আইনস্টাইনকে জানান, যেখানে কিছু সময় পূর্বের একটি দৈব ঘটনার ওপর নির্ভর করে বিড়ালটি একইসাথে জীবিত এবং মৃত উভয়ই হতে পারে। এটি এমন একটি পরীক্ষা যা কোয়ান্টাম উপরিপাতন (কোয়ান্টাম সুপার পজিশন) হিসেবে পরিচিত, যা একটি দৈব অতিপারমাণবিক ঘটনার সাথে সংযুক্ত হওয়ার কারণে ঘটতেও পারে আবার নাও ঘটতে পারে।
একটি বিড়াল কি একইসাথে জীবিত
এবং মৃত উভয়ই হতে পারে?
সম্পূর্ণভাবে আবদ্ধ একটি বাক্সে পরীক্ষার জন্য একটি বিড়াল, একটি বিষপূর্ণ ফ্লাস্ক এবং গাইগার কাউন্টারের সাথে যুক্ত একটি তেজস্ক্রিয় পদার্থের উৎস আছে। এখানে বিড়ালটির ভাগ্য অনিশ্চিত। কারণ, বাক্সে রক্ষিত তেজস্ক্রিয় বস্তু থেকে তেজস্ক্রিয়া শুরু হলেই গাইগার কাউন্টার তা শনাক্ত করবে এবং এর সাথে যুক্ত হাতুড়িটি বিষপূর্ণ ফ্লাস্কটিকে আঘাত করবে, আর তাতে বিষক্রিয়ায় বিড়ালটি মারা পড়বে, অন্যথায় নয়। কণাবাদী বলবিদ্যার কোপেনহেগেন ব্যাখ্যা অনুযায়ী কিছু সময় পর দেখা যাবে বিড়ালটি যুগপৎ জীবিত এবং মৃত। তবে কেউ যদি বাক্সের ভেতরে তাকায় দেখবে বিড়ালটি হয় জীবিত নয় মৃত, কিন্তু একইসাথে জীবিত ও মৃত নয়।
লেখক পরিচিতি:
বজলুল করিম আকন্দ
অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ, ঢাকা।
ড. বিজন কুমার শীল বিস্তারিত
বিপরীত স্রোত প্রতিবেদন বিস্তারিত
ডা. আহমদ মরতুজা চৌধুরী বিস্তারিত
যারিন মালিয়াত অদ্রিতা বিস্তারিত
মোহাম্মদ মাহমুদুজ্জামান বিস্তারিত
উৎপাদিত মাছের প্রায় ১২ শতাংশ আ.. বিস্তারিত
বাতিলযোগ্য সাইবার নিরাপত্তা আই.. বিস্তারিত
বাংলাদেশ তখনো বিশ্ব ক্রিকেট অঙ.. বিস্তারিত
ব্রেদিং আউট বার্ডেন নামে কর্ম.. বিস্তারিত