সংবাদকর্মীগণ সবার মনে
কথা তুলে ধরেন। মানুষের অনুভূতি, তাদের ভালো লাগা মন্দ লাগা সব। কিন্তু
সাংবাদিকরাও যে মানুষ এবং তাদেরও যে অনুভূতি আছে –এ কথা শোনার বা জানতে চাওয়ার
আগ্রহ খুব কমই দেখা যায়। কোনো দুঃসহ ঘটনা দেখে সাংবাদিকের হৃদয়ও যে কেঁপে ওঠে,
তিনিও যে নির্যাতিত হতে পারেন কিংবা তারও যে মানসিক ট্রমায় রাতের পর রাত ঘুমহীন
কাটতে পারে- এ বিষয়গুলো অজানাই থেকে যায়। কারণ একজন সাংবাদিক নিজের সব কষ্ট
বেদনাকে আড়াল করেই সাধারণ মানুষের জীবনকে তুলে ধরার চেষ্টা করেন। ছুটে চলেন একের
পর এক অ্যাসাইনমেন্ট কভার করতে।
সাম্প্রতিক সময়ে জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের দিনগুলোতে ছবি ও সংবাদ সংগ্রহে অগ্রভাগে থাকা সাংবাদিকদের অনেকেই গুরুতর ট্রমা ও পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারসহ নানান মানসিক স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন। নিজেদের অজান্তেই মানসিক চাপ বয়ে বেড়ানো এমন সাংবাদিকদের মানসিক চাপ মোকাবিলা করে সুস্থ চিন্তা ও সাংবাদিকতার মতো গুরত্বপূর্ণ দায়িত্বপালনে সাহায্য করার লক্ষ্যেই ‘ব্রেদিং আউট বার্ডেন’ বা ‘ভারমুক্তি'র নিঃশ্বাস’ নামে একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ শনিবার মিরপুরের
শেওড়াপাড়ায় কাউন্টার ফটোর ক্যাম্পাসে কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়। দুই ভাগে অনুষ্ঠিত এ কর্মশালা পরিচালনা করেন ‘মনের বন্ধু’র মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। কাউন্টার ফটো আয়োজিত ও বিজেআইএম-এর সমন্বয়ে পরিচালিত কর্মশালাটি আয়োজনে সহযোগিতা করেছে ইন্টারনিউজ নেটওয়ার্ক। দিনব্যাপী এই কর্মশালায় অন্তত ৫০ জন সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন যারা সরাসরি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংবাদ সংগ্রহ করেছিলেন।
এই আয়োজনে সংবাদ সংগ্রহ করতে
গিয়ে সাংবাদিকগণ তাদের অনেক না বলা কথা, পারিবারিক অনুভূতি, ব্যক্তিগত উপলব্ধি খোলামেলা
ভাবে তুলে ধরেন। কেউ কেউ কথা বলতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন।
কর্মশালাটির অন্যতম উদ্যোক্তা
রয়টার্সের সাংবাদিক ও বিজেআইএম-এর আহ্বায়ক স্যাম জাহান বলেন, ‘আমাদের সাংবাদিকদের অনেকেই মানসিক স্বাস্থ্য পরিচর্যার গুরুত্ব বা পিটিএসডি দীর্ঘদিন ধরে বহন করলে কী সমস্যা হতে পারে তা বুঝতে পারে না। কর্মশালাটি সাংবাদিকদের মানসিক চাপ লাঘবে খুবই প্রয়োজনীয় ছিল। আমরা ভবিষ্যতে আমাদের সহকর্মীদের জন্য এ ধরণের আরো সেশন আয়োজনের চেষ্টা করব।’
মূল সেশনটি পরিচালনা করেন কাজী
রুমানা হক। অনুষ্ঠানে কিছু ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করান ইকবাল হোসেন। যাতে করে অংশগ্রহণকারীগণ
রিলাক্স বোধ করেন। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে নানা দিক তুলে ধরেন রণতি চক্রবর্তী।
কাউন্টার ফটোর অধ্যক্ষ সাইফুল হক অমি তার নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া
দুঃখময় ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, আমরা যখন কাজ করতে যাই তখন সহিংসতা, অত্যাচার ও মানুষের প্রতি অমানবিক কাজের সামনে পড়তে হয়। এতে করে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি
আমরা উপলব্ধি করতে পারি না এমন ঘটনাও আমাদের মনে আঘাত করে।যা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। তাই প্রয়োজন পরিস্থিতিকে মেনে
নিয়ে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব সহকারে নেওয়া।’
ইন্টারনিউজ নেটওয়ার্কের বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ শামীম আরা শিউলী বলেন, ‘আমরা এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগের অংশ হতে চেয়েছিলাম। কারণ তা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করি। আমরা অনেকেই সংবাদমাধ্যমে ভয়াবহতার খবর ও ছবি দেখে মর্মাহত হয়েছি। হয়তো কল্পনাও করতে পারব না, যারা সরাসরি মাঠে কাজ করেছেন তাদের জন্য তা কতটা কঠিন ছিল। আমি আশা করি, এই কাউন্সেলিং সেশন অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকদের মানসিক চাপ কিছুটাও লাঘব করবে।’
মনের বন্ধু-র প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও তৌহিদা শিরোপা বলেন, ‘এই মুহূর্তে প্রত্যেকেরই আরো মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা প্রয়োজন। বিশেষ করে সাংবাদিকদের। মনের বন্ধু সবসময় তাদের জন্য নির্ভরতার জায়গা হিসেবে থাকবে।’
কর্মশালায় নানা বয়সের সাংবাদিকগণ
অংশ নেন। ঢাকায় প্রবল বৃষ্টি থাকলেও তারা আগ্রহ নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন। কর্মশালার পাশাপাশি
পারস্পরিক আড্ডা আয়োজনকে আনন্দময় করে তোলে।
বি.এস
ডেস্ক
ক্যাটেগরিঃ মিডিয়া ,