ফরহাদ
কবীর
২০০৭-এ আমি যায় যায় দিন এর স্পোর্টস ম্যাগাজিনে লিখতাম। সে সময় আমার বস ছিলেন মুজাহিদ ভাই। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ বনাম আয়ারল্যান্ডের ম্যাচে আমি লিখেছিলাম আয়ারল্যান্ড বাংলাদেশকে হারিয়ে দিতে পারে।
লেখাটা লিখতে গিয়ে অনেকবার কলম থেমে গেছে। কারণ বাংলাদেশের পরাজয় কোনদিন কাম্য নয়, কিন্তু আয়ারল্যান্ড তখন অনেক গোছানো ও দলীয় ক্রিকেট খেলে, বিপরীতে বাংলাদেশ তখন তরুণ তুর্কীদের ব্যাট ও বলে এগুচ্ছে, যারা পরিণত ক্রিকেটের চেয়ে আবেগময় ক্রিকেট দর্শনে বিশ্বাসী। ধারাবাহিকতার বড্ড অভাব ও অনেক বেশী ছটফটে ক্রিকেট ছিল বাংলাদেশের খেলা।
যখন লেখাটি প্রকাশ পায় তখন অনেকে প্রশ্ন তুলছিলেন। কিন্তু বাস্তবে বাংলাদেশ হেরে গিয়েছিল। সেই ম্যাচের আলোকে মুজাহিদ ভাই মিটিং রুমে ডেকে সাহসী এই লেখার জন্য অভিনন্দন জানিয়েছিলেন।
মুজাহিদ ভাই বলেছিলেন, বাংলাদেশ কখন ম্যাচটি হেরে গেছে জানেন? যখন সাকিব রান আউট হয়ে যায়। । সে সময় আমাদের হিরো আশরাফুল। কিন্তু মুজাহিদ ভাই আশরাফুলের খেলার ধরণ পছন্দ করতেন না। সে সময় তিনি বলতেন, ক্ষুরধার ক্রিকেট মস্তিষ্ক নিয়ে ছেলেটি ক্রিকেটে পা রেখেছে। দেখবেন একদিন এই ছেলেটি অনেক দূর যাবে।
বাংলাদেশ তখনো বিশ্ব ক্রিকেট অঙ্গনে অনেকটা ইমম্যাচিউর ও প্রব্লেম চাইল্ড হিসেবে পরিচিত। টেস্ট ও ওয়ানডে তে জয়ের চেয়ে পরাজয়ের পাল্লা ভারী। বিদেশের মাটিতে খেলতে গিয়ে বাংলাদেশকে নাস্তানাবুদ হতে হয়। ঠিক সে সময় বাংলাদেশে একজন সফল অলরাউন্ডার হিসেবে আবির্ভূত হন সাকিব আল হাসান।
বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে ক্রিকেটের কারণে বাংলাদেশর পতাকা উড়তে আমরা দেখি। আমরা দেখি মাঠে আবেগ আপ্লুত দর্শকের অশ্রুসিক্ত চোখ। আর সেই বাংলাদেশের ক্রিকেটের পোস্টারবয় ছিলেন সাকিব আল হাসান।
বিশ্ব ক্রিকেটের তিন ফরমেটে তিনি দাপটের সাথে খেলেছেন। তিন ফরমেটে তিনি নিজের শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরছেন ব্যাটে ও বলে সমান পারফরমেন্স করে তিনি তিন ফরমেটে নিজেকে শ্রেষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে প্রমাণ কইছেন, তিনি এতটা দীর্ঘ সময় অলরাউন্ডারের তালিকায় নিজের নাম ধরে রেখেছিলেন যে নির্দ্বিধায় বর্তমান সময়ের শ্রেষ্ঠ অলরাউন্ডার এবং সর্বকালের সেরা এক খেলোয়াড়।
সাকিবের সবচেয়ে বড় গুণ দৃঢ় মানসিকতা। বাংলাদেশে বিশ্বমানের অনেক খেলোয়াড় নিজেকে মেলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন শুধু এর অনুপস্থিতিতে। সেখানে সাকিব প্রতিটি সুযোগকে কাজে লাগিয়েছেন।
তাই বিশ্বের প্রায় সকল সেরা লীগে তিনি দাপটের সাথে খেলেছেন। অনেক শিরোপা জিতেছেন। অনেক পুরস্কার পেয়েছেন, বাংলাদেশকে প্রচুর ম্যাচ জিতিয়ে তিনি বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশী ম্যান অফ দ্যা ম্যাচের পুরস্কার লাভ করেছেন।
তাই বাংলাদেশের ক্রিকেটের তিনি এমন এক মুখচ্ছবিতে পরিণত হয়েছিলেন যাকে দেখার জন্য তাঁর এক পাকিস্তানি ভক্ত কাজ ফেলে মাঠে ছুটে এসেছিল।
সমালোচিত
সাকিব
যে কারণে তিনি প্রতিবাদী, সে কারণে তিনি বেয়াদব । যে কারণে বাংলাদেশে খেলোয়াড়দের অর্থকষ্টে কাটাতে হয় সে কারণে তিনি নিজের আর্থিক অবস্থা শক্তিশালী করতে গিয়ে অজস্র সমালোচনার মুখে পড়েন, আর যে কারণে বাংলাদেশে সবাই ক্ষমতাকে পেতে চায় সেই একই কারণে তিনি নিন্দিত হন।
হয়ত অর্থের ইমারত গড়ার কাজে সাকিব অনেক ক্ষেত্রে ঠিক লোককে বেছে নেননি। রাজনীতিতে যোগ দিয়ে তিনি সফলও হননি। বড্ড ভুল সময়ে তিনি রাজনীতির হাত ধরেছিলেন।
তবে ক্রিকেট বাংলাদেশের জয়ের অনেক অধ্যায় থেকে সাকিবের নামকে কেউ বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না।
বাংলাদেশে সাকিব ভক্ত ও সাকিব বিদ্বেষী কোন অভাব নেই, অভাব শুধু সাকিবের মানের খেলোয়াড়ের।
রাজনীতির চোরাগলিতে হারিয়ে গেলেও ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের অভাব বাংলাদেশ সবসময় অনুভব করতে থাকবে।
লেখক পরিচিতি: স্পোর্টস কলামিস্ট
ক্যাটেগরিঃ খেলাধুলা,