করোনা তুমি যাও : তোমার শিক্ষাটুকু মানুষ হতে আমাদের জন্য রেখে দাও
রাগিব উদ্দিন আহ্ম্মদ
বর্তমানে গোটা বিশ্ব কাঁপছে এক সামান্য ভাইরাসের কারণে। করোনা তার নাম, কোভিড-১৯ নামকরণের প্রেক্ষাপট ছিল, COVID-19 is a disease caused by a new strain of coronavirus. 'CO' stands for corona, 'VI' for virus, and 'D' for disease. Formerly, this disease was referred to as '2019 novel coronavirus' or '2019-nCoV.' এ RNA ভাইরাস মূলত স্তন্যপায়ী প্রাণী ও পাখিদের রোগের কারণ হয়ে থাকে। মানুষের বেলায় এটি শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ সৃষ্টি করে মৃদু থেকে মারাত্মক আকার ধারণ করে মৃত্যুও ঘটাতে পারে।
একজন পরিবেশ বিজ্ঞানী হিসাবে আমি করোনা ভাইরাসকে প্রকৃতির একটা পজেটিভ ও প্রয়োজনীয় (অবশ্যই মানুষের মৃত্যু, তা নিকট বা পরিজন হোক দেশি বিদেশি যারই হোক তা নিশ্চয়ই কাম্য নয় বরং দুঃখের। সকল মৃতদের শান্তিময় চিরনিদ্রা ও ধর্মানুযায়ী শ্রদ্ধা জানাই) বলেই মেনে নিচ্ছি। প্রকৃতির একটা বিশেষ অংশ মানুষ, কিস্তু তার আরো অনেক অংশীদার রয়েছে যাদের আগমনে মা পৃথিবীতে ঘটেছে আমরা মানুষদের আগমনের অনেক পরে। প্রকৃতি কেবল আমাদের চাহিদা মেটানো অফুরন্ত আধার নয়, এটা আরো অগণিত জীবের আবাস। এ বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সবকিছুই প্রতিনিয়ত পরিবর্তন ও পরির্বধনের মাধ্যমে তার গঠনের পক্রিয়া অব্যাহত রাখে। ১৩.৭ বিলিয়ন বছর আগে থেকে এ প্রক্রিয়া চলে আসছে, যা আমাদের পঞ্চইন্দ্রিয় দিয়ে এখনই অনুভব করা সম্ভব না। যার যার গতিপথ ও বেগ নির্ধারিত। সূর্য উদয় থেকে অস্ত যাওয়া দেখতে আমাদের বারো ঘণ্টা লেগে যায়। আমরা সন্ধ্যার আগে সমুদ্রের পাড়ে যখন সূর্যাস্তের ছবি তুলি তাকে ছবিতে স্থির মনে হলেও কয়েক মিনিটের ব্যবধানে আর তাকে দেখা যায় না। এই পৃথিবীর সূর্যটাকে একবার প্রদক্ষিণ করতে ৩৬৫ দিন ৬ ঘণ্টা সময় লাগে যা আমরা দেখতে পাই না কিন্তু ঋতুর পরিবর্তন ও সে অনুযায়ী তাপমাত্রার পরিবর্তন (আবহাওয়া) অনুভব করতে ঠিকই পারি।
প্রকৃতিতে সবকিছুই একটা নিয়মের মধ্যেই চলে, তার একটা ধারাবাহিকতা আছে। একে অপরের সাথে সর্ম্পকযুক্ত আর নির্ভরশীল সবাই একটা পরিমিত শৃঙ্খলিত জীবন চক্রে বাঁধা। পৃথিবীর ছোট ছোট পরিবর্তনগুলো আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়। কিন্তু সৌরজগতে নানান পরিবর্তন আমাদের চোখে দেখার নয় দূরত্ব আর ভিন্ন গতির জন্য। সেক্ষেত্রে মানুষ টেলিস্কোপের সাহায্য নেয়। ঋতুর পরিবর্তনের একটা গতি আছে, তেমনি পৃথিবীর আরো বড় বড় দাগে পরিবর্তন হচ্ছে যা সাধারণ মানুষের দৃষ্টিতে আসার কথা বা বিষয় নয়, যেমন বির্বতন। আজ থেকে ৪.৫ বিলিয়ন বছর আগে আমাদের সৌরজগতের (সূর্য নামের একটা নক্ষত্র আর তা থেকে ছিটকে পড়া কয়েকটা অংশ, গ্রহ যার একটা পৃথিবী, এখন পর্যন্ত জানা মতে একমাত্র গ্রহ যার মধ্যে প্রাণ বা জীবন আছে) সৃষ্টি। জ¦লন্ত সূর্যে থেকে ছিটকে পড়া পৃথিবীটাও ছিল একটা অগ্নিপিণ্ড ধীরে ধীরে তাপ বিকিরণের মাধ্যমে তাপ তাপমাত্রা কমতে থাকে। সূর্য থেকে তার দূরত্ব বাড়তে থাকে। এক সময় এ দূরত্ব আর অনুকূল তাপের কারণে পৃথিবীতে প্রাণের আবির্ভাব ঘটে। প্রথম প্রাণ ছিল সমুদ্রগর্ভে কোনো এক প্রকারের ভাইরাস। ভাইরাস হলো বাহিরে প্রটিন (অ্যামাইনো এসিড) এবং ভেতরে কিছু জেনেটিক্যাল উপাদান যা কেবল অন্য কোনো জীবনের দেহে প্রজনন ঘটাতে পারে। বিষয়টিকে জটিল করে দিচ্ছে সৃষ্টির শুরুতে অন্য কোনো প্রাণী তো ছিল না। তখন দীর্ঘ সময় নিয়ে ভাইরাস সৃষ্টি হতো আর বিস্তার করার আগেই ধ্বংস হয়ে যেতো। এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে। এরই এক সময় অন্য প্রাণী সৃষ্টি হয় কালের বিবর্তে এবং তখন ভাইরাস সুযোগ পেয়ে যায় তার প্রজননের আর বিবর্তনের ধারায় একেক প্রজাতির প্রাণে ভিন্ন ভিন্ন ভাইরাসের আর্বিভাব হয়। এখনো ভাইরাসের জীবন অন্যান্য প্রাণীদের কোষের ওপর নির্ভরশীল। বেঁচে থাকার জন্য এর বাইরের প্রোটিন (RNA) অন্যান্য প্রাণীদের প্রোটিন সংগ্রহ করে বাঁচার সময়কে দীর্ঘ করার চেষ্টা চালায়। এক ভাইরাস বিভিন্ন প্রাণীদের দেহে বিভিন্ন রকমের আচরণ করে। কিছু (অল্প) ভাইরাস আছে যা মানব দেহের আরএনএ-এর ওপর নির্ভরশীল করোনার কয়েকটি ভাইরাস তাদেরই এক সত্বা। এডেনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক নাইজেল ব্রাউন-এর মতে ভাইরাস কোনো জীবিত সত্বা নয়। এক ক্ষণস্থায়ী জীবন বলে মত প্রকাশ করেন ডেভিড ভেলা, একই দেশের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক। ভাইরাসের বেঁচে থাকা ও প্রজননের জন্য অন্য প্রাণীর দেহের প্রোটিনের প্রয়োজন, তাই সে যখন প্রথম প্রাণী হিসেবে আবির্ভূত হয় তখন অন্য প্রাণীর অস্তিত্ব ছিল না। কিন্তু দেখা গেল ও প্রমাণ করা গেল যে, এক ভাইরাস আরেক ভাইরাসকে নির্ভর করেই প্রাথমিক অভিযোজনের কাজ সেরে নেয়। তারপর বিবর্তনের দীর্ঘ পথচলায় বহুকোষী প্রাণীর আর্বিভাব হলে সে সমস্যার অবসান ঘটে। এখন ভাইরাস বিভিন্ন প্রাণী ও মানুষের দেহকে ব্যবহার করে তার প্রজননের কাজ সেরে নেয়। করোনা এমন একটা ভাইরাস যা মানুষের দেহে প্রবেশ করে প্রজননের কাজ করতে মানুষকে নানান ভাবে অসুস্থ কওে তোলে অনান্য ভাইরাসের মতো।
মানুষের আগমনের পর প্রকৃতির ভারসাম্যের তারতম্য উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গেছে। সৃষ্টির শুরু থেকে মানবজাতিকে নানান দুর্যোগের মুখোমুখি হতে হয়েছে যার বেশির ভাগই মানব সৃষ্ট। বড় দাগে বলা চলে যেমন রাশিয়ার চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যূৎ কেন্দ্রের বিস্ফোরণ (এপ্রিল ২৬, ১৯৮৬. কনিবার, স্থানীয় সময় ১:২৩:৪০) যার বিক্রিয়ায় গোটা বিশ্ব খাদ্যচক্রে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে। এমনকী আমাদের দেশের শিশুখাদ্যে (বিশেষ করে গুড়োদুধের মাধ্যমে) ক্ষতিগ্রস্থ হতে হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ তো হরহামেশা লেগেই আছে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভৌগোলিক ভাবে বিশ্বখ্যাত। এরই মধ্যে বয়ে গেল ঘূর্ণিঝড় আমফান, আইলা, মহাসেন, সিডর। যুদ্ধবিধ্বস্ততার নজির বিশ্বব্যাপী। রিফিউজি সমস্যার আমরাও শিকার। রোহিঙ্গা নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কিন্তু করোনা এমন এক দুর্যোগ যা চায়নার উহানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্থানীয় অফিসে ডিসেম্বর ৩১ তারিখে নিমোনিয়ার আক্রান্তের খবর দেয়া হয়। এটাকে জানুয়ারি ৩০, ২০২০ সালে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে। ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২০-এ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একে কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস নামকরণ করা হয়। উহান থেকে সে ভাইরাস দ্রুত বিশ্ব ব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে ফলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাকে প্যানডেমিক বা বিশ্ব ব্যাপী স্বাস্থ্য সমস্যা ঘোষণা করে।
ভাইরাসের সংক্রামণের ধরন
করোনা ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়, ড্রপলেটের মাধ্যমে। ড্রপলেট হলো আমাদের হাঁচি, কাশি, সর্দির সাথে ভাইরাস মিশ্রিত ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র জলকণা। যা আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে নিঃশ্রিত হয়ে নিকটবর্তী মানুষের দেহে প্রবেশ করে চোখ, নাক বা মুখের সাহায্যে। এটা খাবার বা পানিবাহিত কোনো রোগ নয়। মশা বা অন্য কোনো প্রাণীর কামড়ে সংক্রামিত হয় না। সে জন্যই কম করে তিন ফিট নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে মানুষকে শুরু থেকেই চলাচল বা সাবধনতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে মাস্ক বা নাক মুখ ঢেকে রাখার জন্য মুখোশ ব্যবহারের নির্দেশনা দেয়া হয় যাতে তার শরীর থেকে ড্রপলেট অন্যদের সংক্রামিত করতে না পারে। বিষয়টি এতোটাই সাধারণ আর সীমিত থাকতে পারতো যদি বিশ্ববাসী শুরুতেই এ দুটি নির্দেশনা মেনে চলতো। কিন্তু তা হয়ে উঠেনি। চীনের উত্তরের প্রদেশ উবের রাজধানী উহানের ভাইরোলজি পরীক্ষাগার থেকে সংক্রামণ শুরু হলে (ডিসেম্বর ২০১৯) প্রাথমিক ধারণা করা হয় এটি বাদুর বা প্যাঙ্গোলিন নামক এক পিপিলিকাভূক প্রাণী থেকে সে সংক্রামণ ঘটে। উল্লেখ্য যে চায়নার খোলা বাজারে এ জাতীয় বন্যপ্রাণী খাদ্য হিসাবে জীবিত বিক্রি হয়। চায়না তাৎক্ষণিক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়, যাতে করে ভাইরাস ছড়িয়ে না পড়তে পারে এবং উহানের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে অবহিত করে। বিশ্বর এখন যোগাযোগ ব্যবস্থা (বিমান নির্ভর) উন্নতিই গোটা বিশ্বের জন্য বড় হুমকি যা নিয়ন্ত্রণহীন। স্বল্প সময়েই উহান থেকে বিমানে করে অনেক মানুষ এ রোগ বহনকারী হয়ে সুদূর আমেরিকা ও ইওরোপ চলে যায় খুব অল্প সময়েই, দ্রুত এ রোগ ছড়িয়ে পড়ে মহামারীর আকার ধারণ করে।
ভাইরাসের লক্ষণ
প্রথম পর্যায়ে সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা, জ¦র হলো এ রোগের লক্ষণ, যা যে কোনো ভাইরাসের সাধারণ লক্ষণ। দিন চারেকে এ লক্ষণ নিয়ে রোগী গায়ে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে উপনিত হন, ক্রমান্বয়ে ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট বাড়তে বাড়তে আট দশদিনের মাথায় ৫% রোগী তৃতীয় বা চূড়ান্ত পর্যায়ে যেতে পারেন তখন তার বাড়তি অক্সিজেনের প্রয়োজন হতে পারে এবং শেষ পর্যায়ে তাকে ICU সহায়তা বা লাইফ সাপোর্টে নিতে হয়। সময় মতো সঠিক চিকিৎসা না পেলেই রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। গোটা বিশ্ব এরই মধ্যে নিজ নিজ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পর্কে তাদের দুর্বলতা, অপর্যাপ্ততা ও চিকিৎসা সাফল্যের অগ্রগতির নমুনা বুঝে গেছে তা ইওরোপ, আমেরিকা বা যে কোনো উন্নত দেশের দাবিদার আর সকল অহংবোধকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে, বাংলাদেশ তার ব্যতিক্রম। আমেরিকার মতন দেশে (বিশেষ করে নিউ ইয়র্কে) করোনা তাণ্ডব চালালো সেখানে এতো মানুষ হয়তো বা মারা যেতেন না যদি তাদের গোঁয়ার আর পাগলাটে প্রেসিডেন্ট শুরুতেই করোনাকে রাজনীতিকরণ না করতেন। তিনি শুরুতেই এর নামকরণ করেন চীনা ভাইরাস, তিনি মাস্ক ব্যবহার করবেন না ঘোষণা দিলেন, সরকারি ভুলে মাস্ক, গ্লাভস, ভেন্টিলেটর ডাক্তাদের নাগালে পৌঁছায়নি, মেডিকেল সাপোর্ট নিয়ে সংকট দেখা দেয় বিশ্বের এই উন্নত দেশে, প্রাথমিক সময় ক্ষেপণের ফলে রোগ দ্রুত বিস্তার লাভ করে আর নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। অনেক দেরিতে পরীক্ষা শুরু করে, এই লেখার সময় পর্যন্ত দেখতে দেখতে আমেরিকায় আক্রান্ত আর মৃতের সংখ্যা বিশ্বের সব দেশের রের্কড ছাড়িয়ে গেল (১২৫,৭৬৮)। এর মধ্যেই মৃত্যু হয়েছে কানাডা (৮,৫৮২), স্পেন (২৮,৩৪৩), ইটালি (৩৪,৭৩৮), ফ্রান্স (২৯,৮৬১), জার্মানি (৮,৯৬৮), ইন্ডিয়া (১৬,০৯৫), পাকিস্তান (৪,২৪৫), তুরস্ক (৫,০৮২), সউদি আরব (১,৫৫১), ব্রাজিল (৫৭,৬২০), রাশিয়া (৯,১৬৬), ইংল্যান্ড (৪৩,৬৩৪) এবং বাংলাদেশে (১,৭৩৮)। এই লেখার সময় জুন ২৯, ২০২০ (১০:৫০ জি. এম. টি.) বিশে^ মোট আক্রান্ত: ১০,২৭২,০২৮, মোট মৃত্যু: ৫০৪,৯৫২, মোট সুস্থ হয়েছেন: ৫,৫৭৩,৪৩২ জন। একই সময়ে বাংলাদেশে: মোট আক্রান্ত: ১৪১,৮০১, মোট মৃত্যু: ১,৭৮৩, মোট সুস্থ হয়েছেন: ৫৭,৭৮০জন।
ভাইরাসের বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট
আমাদের দেশে এমনই একটা সময় এ ভাইরাসের সংবাদ আসে যখন জাতির পিতার জন্মশত বার্ষিকীর বর্ষব্যাপী অনুষ্ঠানের কার্যত্রম নিয়েই ব্যস্ত ছিল অনেকেই, ২০২০ সালের শুরু থেকেই। যদিও বা বিশ্বের ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসেই এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়েছিল। আমরা তা আমলেই নিই নি, আমাদের সে চিন্তাই ছিল না। তিন মাস তিন সপ্তাহ আগে, মার্চ ০৮, ২০২০ প্রথম করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়।
Institute of Epidemiology, Disease Control and Research (IEDCR)শুরু থেকেই এ সংস্থা ভাইরাসের, পরীক্ষা, পর্যবেক্ষণ, ও সংবাদ জানিয়ে আসছিল। ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বিবেচনায় ও World Health Organization (WHO) এর নির্দেশ ও নির্দেশিকা অনুযায়ী মার্চ ২২ বাংলাদেশে ১০ দিনের ছুটি ঘোষণা করে পরে তা মে মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। ফেব্রুয়ারির ১ তারিখে চীনের উহান থেকে ৩১২ জন বাংলাদেশি দেশে আসলে তাদের আশকোনা হাজি ক্যাম্পে ১৪ দিনের জন্য রাখা হয়। মার্চ মাসের ৮ তারিখে ইটালি ফেরত তিনজন বাংলাদেশির মধ্যে করোনার উপসর্গের প্রাদুর্ভাবের বিবেচনায় সরকার জাতির পিতার জন্মশত বার্ষিকীর আয়োজন সীমিত করার নির্দেশ দেন। মার্চের ১৮ তারিখে ঢাকার মিরপুরে ৭০ বছরের এক বৃদ্ধ প্রথম মারা যান, তখন দেশে ৫১ জন আক্রান্ত বলে পরীক্ষায় ধরা পড়ে। সরকার লকডাউন ঘোষণায় ছুটি শব্দ ব্যবহার করায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ায় মানুষ এ ভাইরাসের ভয়াবহতা উপলবদ্ধি করতে না পেরে কক্সবাজারসহ দেশের সব পর্যটন কেন্দ্রে দলে দলে ছুটে যান, ভিড় করেন। সামাজিক বা দৈহিক দূরত্ব না বোঝায় ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ভেঙ্গে পড়ে গোটা চিকিৎসা ব্যবস্থা। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলাদলি আর মতবিরোধ বাড়তেই থাকে। এর মধ্যে এক মারাত্মক আত্মঘাতী এবং সরকারের সাথে কোনো সমঝোতা না রেখেই একক সিদ্ধান্তে বিজিএমইএ সভাপতি এক ঘোষণা দিলেন এবং ফোনে গার্মেন্টস শ্রমিকদের মেসেজ পাঠানো হলো চাকরি বাঁচাতে ও বেতন নিতে সবাই যার যার কর্মক্ষেত্রে ফিরে আসতে বলেন। খুব কঠিন এবং অমানবিক ভাষায় তিনি এ ঘোষণা দিলে ছয়-সাত লক্ষ মানুষ পায়ে হেঁটে ( কেউ কেউ দু’শত কিলোমিটার) ঢাকায় চলে আসলেন। সেটা ছিল এক অমানবিক ও ভুল সিদ্ধান্ত, তখন সরকারি ভাবে গাড়ি ও সকল যানবাহন বন্ধ। অমানুষিক কষ্ট করে এসেও তারা বেতন পেলেন না। বাস্তবতা হলো যে মানুষগুলো গ্রামে চলে গিয়েছিল তারা কেউই সেখানে না খেয়ে মারা যেতো না। এরা কিছুদিন নানান বিক্ষোভ করে এক পর্যায়ে কষ্ট করে রমজান মাস কাটিয়ে দিল। একই সময় শ্রীলংকা ১৬ই মার্চ এক কার্যকর আর বিখ্যাত পদক্ষেপ নিয়ে দারুণ সফলতা পায়। এরপর এলো ঈদ। মানুষ যে যেভাবে পারে গ্রামে ফিরে গেল আবারো দশ লক্ষ মানুষ শহর থেকে ভাইরাস নিয়ে ছড়িয়ে গেল সারা দেশ। চার থেকে সাতদিনের মাথায় সে মানুষের বেশিরভাগ ঢাকা, চট্টগ্রাম, অনান্য শহরে আবার ফিরে আসলো। এর মধ্যে শুরু হলো লকডাউনের খেলা। একবার উঠায় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে, কলকারখানা বিশেষ করে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিকে চালু রাখতে। সপ্তাহ না যেতেই হু হু করে আক্রান্ত আর রোগীর সংখ্যার বৃদ্ধি দেখে আবার সবকিছু বন্ধ। আবার ব্যবসায়ীদের চাপে গার্মেস্টসের অর্ডারের (বিলিয়ন ডলারের) রক্ষার জন্য খুলে দেয়া হলো কলকারখানা আবারো বাড়তে থাকে ভাইরাসের আক্রান্তের হার আর শুরু হলো মৃত্যুর মিছিল। জীবন না জীবিকা এই প্রশ্নে দূরত্ব বাড়তে থাকে সরকার আর জনগণের। চিকিৎসা নিরাপত্তার সামগ্রীর কৃত্রিম অভাব সৃষ্টি করে একদল অসাধু মানুষরূপী লোভী, এদের মধ্যে ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় গুন্ডা বদমাশ আর সুবিধাভোগী সিন্ডিকেট তৈরির ফলে নিবেদিত প্রাণ ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যসেবা দানকারীরা অকাতরে মারা যেতে থাকে। মৃত্যুর মিছিলের আরেক বড় সংখ্যা পুলিশ আর অনান্য বাহিনীর সদস্যরা যারা সরকারি নির্দেশে লকডাউন আর সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে আর যানবাহন ও মানুষের চলাচল নিরাপদ করতে নিজেদের অনিরাপদ করে মৃত্যুর সারিতে নাম লেখান। এর মাঝে বড় ভাইরাস হয়ে দেখা দিলো সরকারি সাহায্যের চাল, টাকা, অন্যান্য রিলিফ সামগ্রীর চুরি। মে মাসেই ভাইরাস, সিদ্ধান্তহীনতা, সমন্বয়হীনতা, চিরাচরিত সরকারের সমালোচনা ও দুর্নীতির ফলে দেশের অবস্থান উপরে উঠতেই লাগলো, এরই মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গ্রাম্য মারামারি, একজন পীরের জানাজায় লক্ষাধিক মুরিদের সমাগম বিশ্ব দরবারে আমাদের অনেক ছোট করে দিল।
Lockdown, Social Isolation, WHO- এর টেস্ট, টেস্ট আর টেস্ট ফরমুলাকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ধারা ম্লান করে দিল। লকডাইনের সুইচ অফ আর অন চলতেই থাকলো। করোনায় আক্রান্ত, মৃত ব্যক্তির শেষকৃত্যানুষ্ঠান নিয়ে নানান জটিলতা চলেছে। কিছু সামাজিক সংগঠন আর যুব উদ্যোগ না হলে তা নিয়ে আরো বিভ্রান্তির অবকাশ ছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য গণস্বাস্থের র্যাপিড টেস্টিং কিট নিয়ে খেলা, ডাক্তার ফেরদৌস খন্দকারকে নিয়ে ঘটনা- মানুষের আস্থার জায়গাটা একেবারেই লেজেগোবরে হয়ে উঠলো যা সবার জন্যই লজ্জাজনক আর চিকিৎসা বিভ্রাট।
পরিবর্তনের বিভিন্ন দিক
যদি ধরে নিই এটা একটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, ঘুর্ণিঝড়, সাইক্লোন, ভূমিকম্প আর সুনামির মতোই কিছু। মহামারী মানুষ প্রত্যক্ষ করছে সেই আদিকাল থেকেই। স্মরণকালের উল্লেখ্য মহামারী হচ্ছে প্রথম প্লেগ যা Plague of Justinian, the Byzantine Empire নামেই পরিচিত যা ৫৪১ এবং ৫৪২ হয়েছিল। দ্বিতীয় প্লেগ হয় ১৩৪৭-১৩৫১ যা ইতিহাসে Black Death নামে পরিচিত, যাতে (ইউরেশিয়া, উত্তর আফ্রিকা, ইউরোপের ৭৫ থেকে ২০০ মিলিয়ন মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। তৃতীয় প্লেগ যা সেই চায়নার উহান থেকেই ছড়িয়েছিল চীন ও ভারতবর্ষে ১৮৫৫ সালে।WHO, World Health Organization-এর মতে তখন কেবল ভারতবর্ষেই ১০ মিলিয়ন মানুষ মারা যায়। যেটা ১৯৬০ সাল পর্যন্ত ছিল এর প্রাদুর্ভাব। যে কোনো প্রকৃতিক দুর্যোগের পর বা সময়ে নানান প্রাকৃতিক পরিবর্তন হয়। প্রকৃতি তার নিজের প্রয়োজনেই তা পূরণ করে নেয় পর্যাপ্ত সময় নিয়ে। মনে করি এটা উল্লেখ করা অসমচীন হবে না, চার্লস ডারউইন তার বির্বতনবাদে উল্লেখ করেছিলেন প্রাকৃতিক পরিবর্তনে সে টিকে যায় না যার শক্তি বেশি, সে টিকে যায় না যার বুদ্ধি বেশি, সেই টিকে যে পরিবর্তনের সাথে নিজকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। এই খাপ খাইয়ে নিতে পারাকেই অভিযোজন বা Adaptation বলে।
ভাইরাস নিয়ে রাজনীতি
করোনার এবারকার জন্মলগ্নেই রাজনীতির শিকারে পরিণত হয়। দুর্ভাগা চায়নার উহান থেকে প্রথম যাত্রাই চলে যায় আমেরিকায়, তাও আবার সেনাবাহিনীর ঘাড়ে চড়ে। ব্যাস আমেরিকার প্রেসিডেস্ট নামকরণ করলেন চীনা ভাইরাস। চীন উত্তরে জানালো উহানে ভাইরাস শনাক্তের আগেই আমেরিকায় ৩৭,০০০ মানুষ মারা যায় যে অজানা রোগে সেটাই ছিল করোনার প্রথম সংস্করণ। চীনা কমিউনিষ্ট পার্টি গ্লোবাল টাইমস -এ বিবৃতি দিলো। বাস শুরু হলো চিকিৎসার বদলে রাজনৈতিক কাবাডি খেলা। দোষারোপ এখন আরেক বিশ^ময় ভাইরাস, যা হয়ে উঠলো মানবজাতির জন্য আরো বড় কলংকের উপাখ্যান। পেন্টাগন ১৭টি দলে ২৮০ জন এথলিট পাঠায় অক্টোবর ২০১৯, চায়নার দাবি সেই সেনাসদস্যদের অনেকেই ভাইরাসের বহনকারী ছিলেন। বিষয়টি অমিমাংসিত থেকেই যায় কারণ কে করে কার চিন্তা। সবাই যার যার দেশের রোগীদের ধাক্কা সামাল দিতেই হিমশিম খেতে শুরু করে। বাংলাদেশেও সে চর্চা চলছে ভাইরাস আক্রমণের শুরু থেকে আজ অবদি। সরকারি দল বনাম বিএনপি আবার সরকার বনাম জনগণ কেউ কাউকে সামান্য ছাড় দিচ্ছেন না। আলোচনার চেয়ে সমালোচনায় মুখর বিভিন্ন মিডিয়া, তার মধ্যে সোশাল মিডিয়া সবচেয়ে তৎপর। সোশাল মিডিয়ায় যারা দেশে থেকে কিছু বলছেন তা সরকার বিশেষ ব্যবস্থায় মনিটারিং করে, বিশেষ আইনে শাস্তির ব্যবস্থা যতোটা না করছেন তার চেয়ে মানুষের মাঝে এক বাড়তি আতংকের সৃষ্টি করছে। একে তো করোনা আতংক তার ওপর বাক স্বাধীনতার দোহাই তুলে নানান বিতর্কের অবতারণা হচ্ছে, এমন কী তার প্রভাব জাতীয় সংসদ পর্যন্ত বিস্তার লাভ করছে। আবার একদল সাংবাদিক দেশত্যাগ করে বিদেশে বসে স্বগর্বে সরকার আর তার ব্যর্থতা নিয়ে বিনা দ্বিধায় লেকচার ঝাড়ছেন। দেশের টিভি চ্যানেলে টকশোজীবীরা ভালো একটা মওকা পেয়েছেন। কেউ বসে নেই, কিন্তু কাজের কাজ যারা করছেন সেই ডাক্তার, নার্স, সেবাদানকারীরা অকাতরে মরছেন আর বিনা ঢাল তলোয়াল (চিকিৎসা ও নিরাপত্তা সামগ্রী) বিহীন নিধিরাম সর্দারের মতন তাদের অবস্থান। আরেক পুলিশ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন লকডাউন আর অবিবেচক মানুষদের নিয়ন্ত্রণে বাগে আনতে নিজেরাই বেশি বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন আর মারাও যাচ্ছেন। সবচেয়ে লজ্জাজনকের মধ্যে চুরি, ডাকাতি, সব ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যাচ্ছে, খুন, ধর্ষণ, এমনকি রিলিফের চাল চুরি, টাকা আত্মসাৎ করছেন।
ভাইরাসের পরিবেশগত পরিবর্তন
এই একটি ব্যাপারে একজন পরিবেশ বিজ্ঞানী হিসাবে আমি খুশি। অবশ্যই আর একজন মানুষের প্রাণ যাক এটা আমি চাই না কারণ, আমিও একজন মানুষ। কিন্তু ভাইরাস আমার বিচারে ভালো দুটি দিক উন্মোচণ করেছে।
এক. এটা একটা মহাবিপদ সংকেত গোটা মানবজাতির জন্য। ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বান বন্যা আমাদের দেশে বেশি এর ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থানের কারণে। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত বিশ্লেষণে এগুলো প্রকৃতির প্রতি আমাদের সীমাহীন অত্যাচারের প্রতিশোধ। প্রকৃতির ওপর বিগত অর্ধশতাব্দী মানবজাতি অনেক বেশি বাড়াবাড়ি করেছে। প্রকৃতি সুনামি আর বড় বড় ভূকম্পন দিয়ে আমাদের অনেক সংকেত দিয়েছে, আমরা তা বুঝেও না বোঝার ভান করেছি। আর তাই এবার প্রকৃতি ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র এক ভাইরাস দিয়ে আমাদের যেন শেষ সংকেত দিচ্ছে।
দুই. বিগত তিন মাস তিন সপ্তাহে গোটা বিশ্বের আকাশ ছিল প্রায় বিমান মুক্ত, বাতাসে না ছিল যানবাহনের ধোঁয়া, না ছিল কলকারখানার ধোঁয়া। চীনেই ৩৭% বায়ুদূষণ কমে গেছে। অনেক জলাশয় দূষণমুক্ত, সমুদ্র সৈকতগুলো পর্যটনের কোলাহল না থাকায় বিচিত্র সব দৃশ্যের অবতারণা হচ্ছে বিভিন্ন দেশে বনের পশুরা বড় বড় নগরীতে অবাধে বিচরণ করছে। আমাদের কক্সবাজারের বেলাভূমির খুব কাছাকাছি ডলফিনরা ঘোরাঘুরি করছে যা আমি কেবল আমার ছোটবেলায় ১৯৬৬ সালে প্রত্যক্ষ করেছিলাম। এরা আমাদের বোঝাতে চাইছে কীভাবে আমরা তাদের আবাস দখলে নিয়ে প্রকৃতিকে কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার করে আজ বলছি এটাই সভ্যতা। এ তথাকথিত সভ্যতা গড়তে আমরা সব সময়ই অসভ্য আচরণ করেছি। পারবো কি আমরা এ থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের সত্যিকারের বিচক্ষণ প্রাণী বলে প্রমাণ করতে নাকি আরো অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে মানব প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটাতে অনৈতিক হবো।
ভাইরাসের কারণে মানসিক পরিবর্তন
সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসছে আমাদের মস্তিষ্কে, মন মানসিকতা বদলাতে শুরু করেছে। মুদ্রার দুটো পিঠের মতন ভিন্ন ভিন্ন চেহারা বা আচরণ প্রকাশ পাচ্ছে। কোনো কোনো বাড়িওয়ালারা দয়া পরবশ হয়ে ভাড়াটিয়াদের বেকারত্বের বিবেচনায় ভাড়া মওকুফ করছেন বা কমিয়ে দিচ্ছেন। কয়েকজনের খবর এসেছে তারা আরো মানবিক। ভাড়াটিয়াদের প্রয়োজন মাফিক চাল, ডাল, খাদ্যসামগ্রী দিচ্ছেন। আবার এর উল্টোটা মারাত্মক অমানবিক। ভাড়াটিয়া ডাক্তার, নার্স বা হাসপাতালের সাথে যুক্ত থাকলে তাদের বাড়ি ছেড়ে যেতে বলছেন। অনেকে এই সুযোগে ভাড়া বাড়িয়ে দিচ্ছেন। আমি একজন বিজ্ঞানী হিসাবে নদ, নদী, পাহাড়, জঙ্গল, সাগর, পশুপাখি ছাড়াও মানুষের চিন্তা চেতনা বা আর্থ-সামাজিক অবস্থা অবলোকন করি।
ভাইরাসের কারণে
দৈনন্দিন
জীবনের
পরিবর্তন
যে কোনো প্রাকৃতিক পরিবর্তন অভিযোজন দাবি করে। এ অভিযোজনে প্রশ্ন আসবে চলমান ভাইরাস পরিস্থিতির অবসানের পর, কিন্তু এখনই বিশ^ময় জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন লক্ষ্যনীয়। তার প্রতিচ্ছবি আমাদের দেশেও বিকাশ লাভ করছে। যেমন অনলাইনে বিপণন বেড়ে গেছে, টাকার লেনদেন, অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনলাইনে ক্লাস চালাচ্ছে, অফিস যে টুকুই চলছে তাও নেট নির্ভর। এমনকী আমার নাতি প্লেগ্রুপে (সাড়ে চার বছর বয়সে) পড়ে চট্টগ্রামে প্রতিদিন এক ঘন্টা করে কম্পিউটারের সামনে বসে ক্লাস করছে। ভিডিও কনফারেন্সে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী তার কার্যক্রম চালু রেখেছেন। আমরা প্রতিদিন বাজারঘাট করার চিরাচরিত অভ্যাস বদলে নিতে বাধ্য হচ্ছি, দশ পনেরো দিন পরপর সেরে নিতে হচ্ছে। ছাপানো পত্রপত্রিকা যেন ডিজিটাল হয়ে যাবে, এই বিপরীত স্রোতে আমি এক দশকের বেশি সময় ধরে কলাম লিখছি আজ সেটাও অনলাইনে চলে এসেছে, এটি সাময়িক নাকি স্থায়ী তা বলতে পারছি না। বাসায় বাসায় আমাদের শ্রদ্বেয়া বেগম সাহেবেরা একদিন বুয়া বা গৃহকর্মী না আসলেই তুলকালাম বাধিয়ে দিতেন। আজ তারাই কষ্ট হলেও সবকিছু নিজেরাই সামলে নিচ্ছেন। উল্টো বুয়ারা আসার জন্য ফোন করছেন তাদের (অনেকেই) টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছেন মানবতার বিবেচনায়, কিন্তু বাসায় ‘না বাবা না’, আসবে তো করোনা নিয়ে! প্রতিদিন সকালে বিভিন্ন সদাই নিয়ে ভ্যানে করে আসছে মাছ, তরিতরকারি, ফল, ছাই লাগবো ছাই। আমিও বেইলি রোডের বাসার তিনতলা থেকে এটা বিশেষ (পুলি) ব্যবস্থা করে নিয়েছি, দড়ি দিয়ে একটা ব্যাগে হিসাব মতো টাকা দিচ্ছি আর নিচে ভ্যানওয়ালা ওজন মেপে সদাই দিচ্ছে আমি টেনে তুলে নিচ্ছি।
পরিবেশ বিজ্ঞানী, শিক্ষক, ফটোগ্রাফার, গভীর সাগরের ডুবুরি, ভাস্কর, চিত্রশিল্পী
ড. বিজন কুমার শীল বিস্তারিত
বিপরীত স্রোত প্রতিবেদন বিস্তারিত
ডা. আহমদ মরতুজা চৌধুরী বিস্তারিত
যারিন মালিয়াত অদ্রিতা বিস্তারিত
মোহাম্মদ মাহমুদুজ্জামান বিস্তারিত
উৎপাদিত মাছের প্রায় ১২ শতাংশ আ.. বিস্তারিত
বাতিলযোগ্য সাইবার নিরাপত্তা আই.. বিস্তারিত
বাংলাদেশ তখনো বিশ্ব ক্রিকেট অঙ.. বিস্তারিত
ব্রেদিং আউট বার্ডেন নামে কর্ম.. বিস্তারিত