ড. মোহাম্মদ নাজমুল হাসান আযহারী
আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদতের জন্য। পৃথিবীর সকল মাখলূককে করেছেন তাদের অধীনস্ত এবং আজ্ঞাবহ। আদি পিতা আদম (আ:)-কে সৃষ্টির পরে আল্লাহ তায়ালা সকল ফেরশতাদেরকে নির্দেশ দেন তারা যেন আদমকে সিজদা করেন। তাদের এই সিজদা ছিল সম্মানের ও তাজিমের। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এরপর আমি ফেরেশতাদের বললাম, তোমরা আদমকে সিজদা করো। তখন ইবলিস ছাড়া সবাই তাকে সিজদা করলো।’ (সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত ৩৪)। অন্য এক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন যে, “নিশ্চয়ই আমি আদমসন্তানকে মর্যাদা দান করেছি। আমি তাদেরকে জলে স্থলে চলাচলের বাহন দিয়েছি, দিয়েছি উত্তম জীবনোপকরণ। আমার অনেক সৃষ্টির ওপর তাদেরকে শ্রেষ্ঠত¦ দিয়েছি।” (সূরা আল-ইসরা, আয়াত ৭০)। কোরআনের
এই আয়াতের দ্বারা যে বিষয়টি স্পষ্ট তা হলো আল্লাহ প্রদত্ত সম্মান। যে আসনে আল্লাহ তায়ালা একমাত্র মানব জাতিকেই অধিষ্টিত করেছেন। আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে মানব জাতিকে পাঠিয়ে বাতলে দিয়েছেন দুটি পথ। একটি হল সিরাতুল মুস্তাকিম বা সরল পথ অন্যটি হল বক্র পথ। মানব জাতিকে সঠিক পথের দিশারি দিতে যুগে যুগে আল্লাহ তায়ালা পাঠিয়েছেন অসংখ্য নবী- রাসূল। তারা সমগ্র মানব জাতিকে আহ্বান করেছেন এক আল্লাহর দাসত্বের দিকে। জানিয়ে দিয়েছেন কোনটি হক আর কোনটি বাতিল। যারা নবী রাসূলের আহবানে সাড়া দিয়েছেন তাঁরা মুমিন আর যারা দেননি তারা কাফের হিসেবে পরিগণিত হয়। বিভিন্ন যুগে আল্লাহ তায়ালা কাফেরদেরকে তাদের অবাধ্যতা, জুলুম, নির্যাতন ও অহংকারের জন্য বিভিন্ন ধরনের শাস্তি দিয়েছেন। অন্যদিকে আল্লাহ তায়ালা মুমিনদেরকেও কখনও তাদের কৃতকর্ম, কখনও বা তাদের ঈমানের পরীক্ষার নিমিত্তে দিতে পারেন বিভিন্ন রকমের মুসিবত বা শাস্তি। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা মক্কার কাফেরদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘অতীতে তোমাদের মতো বহুদলকে আমি ধ্বংস করেছি। তাদের এই পরিণতি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার মতো কেউ নেই কি?” (সূরা আল-কামার, আয়াত ৫১)। অপরদিকে আল্লাহ মুমিন বা বিশ্বাসীদেরকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘নিশ্চয়ই
আমি তোমাদেরকে ভয়, ক্ষুধা, জানমাল ও শষ্য বিনষ্ট করে পরীক্ষা করবো। তবে এ বিপদের মধ্যে যারা ধৈর্যধারণ করবে তাদেরকে সুসংবাদ দাও।’ (সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত ১৫৫)। অপর এক আয়াতে আল্লাহ আরো স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘মানুষ কি মনে করে যে, ’আমরা ঈমান এনেছি’ এ কথা বললেই তাদের ছেড়ে দেয়া হবে? তাদের কি কোনো পরীক্ষা নেয়া হবে না?’ (সূরা আল-আনকাবুত, আয়াত ৩)।
উপরের আয়াত দুটি থেকে এই কথা প্রতীয়মান হয় যে, মুমিনদেরকেও আল্লাহ বিভিন্ন ধরনের বালা-মুসিবত দ্বারা পরীক্ষা করেন। বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রাদূর্ভাবও একধরনের মুসিবত যা হয়তো কারো জন্য আজাব আবার কারো জন্য ঈমানি পরীক্ষা হিসেবে এসেছে। পৃথিবীতে এই ধরনের মহামারি নতুন কিছু নয় বরং ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যাবে যে, বিভিন্ন যুগেও বিশ্বে অনেক রকমের মহামারি দেখা দিয়েছিল। পবিত্র কোরআনে রয়েছে এর জলন্ত প্রমাণ।
মহামারি দেখা দিলে ইসলামের দৃষ্টিতে করণীয়:
ইস্তিগফার বা ক্ষমা চাওয়া: মহামারি দেখা দিলে একজন মুমিনের সর্বপ্রথম কাজ হলো আল্লাহ তায়ালার কাছে তাওবা ইস্তিগফার করা। অর্থাৎ নিজের গুনাহের কথা স্মরণ করে আল্লাহ নিকট ক্ষমা চাওয়া। কেননা পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে শাস্তি দেবেন না এমন অবস্থায় যখন তারা ক্ষমাপ্রার্থনা করবে।’ (সূরা আল আনফাল, আয়াত ৩৩)। ধৈর্যধারণ ও বেশি বেশি নফল নামাজের দ্বারা আল্লাহ তায়ালার কাছে সাহায্য চাওয়া। আল্লাহ বলেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ তোমরা ধৈর্য ও নামাজের দ্বারা (আল্লাহ নিকট) সাহায্য চাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন”। (সূরা আল- বাকারাহ, আয়াত ১৫৩)।
স্থান ত্যাগ না করা: কোনো স্থানে মহামারি দেখা দিলে আর সেখানে না যাওয়া। আর সেখানে অবস্থান করলে সেই জায়গা থেকে প্রস্থান না করা। বোখারী শরিফের হাদীস, রাসূল সালল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ”যদি তোমরা শুনতে পাও যে, কোনো জনপদে প্লেগ বা অনুরূপ মহামারির প্রাদুর্ভাব দেখা গিয়েছে তবে তোমরা সেখানে যাবে না। আর যদি তোমরা যে জনপদে অবস্থান করছো সেই স্থানে তার প্রাদুর্ভাব ঘটে তবে সেখান থেকে তোমরা বের হবে না” (সহীহ আল - বোখারি ৫/২১৬৩)।
রোগীর সেবা করা: ইসলামের দৃষ্টিতে একজন মুসলমানের ওপর আরেক মুসলমানের অনেক দায়িত্ব বা কর্তব্য রয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো, কোনো এক মুসলিম ভাই অসুস্থ হলে অন্যজনের দায়িত্ব হলো তার খোঁজ খবর নেয়া। করোনা ভাইরাসের কারণে দূরত্ব বজায় রেখে হলেও যদি সম্ভব হয় তবে দেখতে যাওয়া ও তার সেবা যত্ন করা।
সহায়তার হাতকে বাড়িয়ে দেয়া: আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে এবং রাসূল সালল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক হাদিসে দানের প্রতি মানুষকে উৎসাহিত করেছেন। বিশেষ করে বর্তমান বিশ্বেও এই সংকটময় সময়ে এর কোনো বিকল্প নেই। পবিত্র কোরআনে আছে “তোমরা ভালো কাজে ও তাকওয়া বা খোদাভীতি অর্জনে একে ওপরকে সাহায্য করো” (সূরা আল-আনআম, আয়াত ২)।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা: ইসলাম সর্বদা মানব জাতিকে কল্যাণের দিকে চালিত করে। এ কারণে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে যা করতে বলেছেন তা পালন করা আর যা থেকে নিষেধ করেছেন তা থেকে বেঁচে থাকা। বিজ্ঞানের যতো বেশি উৎকর্ষ সাধিত হবে ততো বেশি মানুষ অবগত হবে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ পালনের উপকারিতা সম্পর্কে। আল্লাহ তায়ালা বলেন ‘তোমরা নিজেদের হাতকে ধ্বংসের দিতে ঠেলে দিও না” (সূরা আল-বাকারাহ)। অর্থাৎ যে কাজ আমাদের জন্য ক্ষতিকর এমন সকল ধরনের কাজ থেকে নিজেকে রক্ষা করা। করোনা ভাইরাসের সংক্রামণ রোধে যে সকল বিধি নিষেধ নির্ধারণ করা হয়েছে তা সঠিক ভাবে মান্য করা। যেমন মাস্ক পরা, বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হওয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় চলা, সর্বদা হাত-মুখ ভালো ভাবে সাবান দিয়ে ধোয়া, জনসমাগণ এড়িয়ে চলা ইত্যাদি।
রোগের প্রতিষেধক বা ঔষধ বের করার চেষ্টা করা: চিকিৎসক,
গবেষকসহ অন্যান্য যারা রয়েছেন তাদের দায়িত্ব হতো মরণঘাতী এই ভাইরাসের ভ্যাকসিন, ঔষধ অথবা যা প্রয়োজন তা বের করার চেষ্টা করা। হাদিসে আছে যে, রাসূল সালল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তায়ালা যখন কোনো রোগ দেন তখন তিনি তার প্রতিষেধকও দিয়ে দেন” (সহীহ আল- বোখারী, হাদিস ৫৬৭৮)। যদিও প্রতিষেধক প্রাথমিকভাবে মানুষের মাঝে সুপ্ত থাকে। তাই আমাদের কাজ হলো তা খুঁজে বের করা। যার জন্য প্রয়োজন সঠিকভাবে গবেষণা করা এবং সার্বিক সবধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
বিপদ - আপদ থেকে শিক্ষা নেয়া: আরবিতে একটি প্রবাদ আছে যে, ‘ফেলুল হাকিমি লা য়াখলু আনিল হিকমাহ’ অর্থাৎ মহাবিজ্ঞের কোনো কাজ প্রজ্ঞা শূন্য নয়। বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের মধ্যে আল্লাহ তায়ালা গোটা মানব জাতির জন্য রেখেছেন অনেক শিক্ষা। রয়েছে অনেক ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক যা অস্বীকারের কোনো সুযোগ নেই। এই ভাইরাসের বিস্তারে ফুটে উঠেছে আমাদের পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্টীয় এমনকী আর্ন্তজাতিক ব্যবস্থাপনার দুর্বল দিকগুলি। যা থেকে মানুষ শিক্ষাগ্রহণ করে পাকাপোক্ত করবে তাদের প্রতি সেক্টরের অবকাঠামো। মহামারিতে বেড়েছে মানুষের সামাজিক বন্ধন। একে অপরের জন্য প্রসারিত করছে তাদের সাহায্যের হাতকে।
পরিশেষে যে কথা না বললেই নয় যে, করোনা ভাইরাসের এহেন পরিস্থিতিতে আমাদের উচিত বেশি বেশি আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করা। মেনে চলা বাতলে দেয়া স্বাস্থ্যবিধি এবং সাধ্য মতো এগিয়ে আসা মানবতার খেদমতে।
শিক্ষক,লেখক ও গবেষক। মিশরের আল আজহার ইউনিভার্সিটি থেকে অনার্স এবং মালয়শিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেছেন।
শিক্ষক,লেখক ও গবেষক। মিশরের আল আযহার ইউনিভার্সিটি থেকে অনার্স এবং মালয়শিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেছেন।
ড. বিজন কুমার শীল বিস্তারিত
বিপরীত স্রোত প্রতিবেদন বিস্তারিত
ডা. আহমদ মরতুজা চৌধুরী বিস্তারিত
যারিন মালিয়াত অদ্রিতা বিস্তারিত
মোহাম্মদ মাহমুদুজ্জামান বিস্তারিত
উৎপাদিত মাছের প্রায় ১২ শতাংশ আ.. বিস্তারিত
বাতিলযোগ্য সাইবার নিরাপত্তা আই.. বিস্তারিত
বাংলাদেশ তখনো বিশ্ব ক্রিকেট অঙ.. বিস্তারিত
ব্রেদিং আউট বার্ডেন নামে কর্ম.. বিস্তারিত