English
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

প্রকাশঃ ২০২০-০৭-১৬ ০৩:০৩:১১
আপডেটঃ ২০২৪-১১-২০ ১৭:৪৬:২২


টেকসই উন্নয়নে গ্রিন বিল্ডিং

টেকসই উন্নয়নে গ্রিন বিল্ডিং

গোলাম রহমান


আমরা প্রাকৃতিক পরিবেশে বসবাস করি তার মধ্যে নবায়নযোগ্য অনবায়নযোগ্য সম্পদ রয়েছে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে প্রাকৃতিক সম্পদ দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার করতে হবে যাতে উন্নয়ন টেকসই হয় আমাদের দেশে বিশুদ্ধ পানির অভাব, রোগ বালাইয়ের বিস্তার,অপুষ্টি এবং জলবায়ু পরিবর্তন অন্যতম চারপাশের মাটি,পানি, বাতাস পরিবেশের অংশ প্রতিনিয়ত জেনে বা না জেনে পরিবেশের আমরা ক্ষতি করে চলছি পাশাপাশি নবায়নযোগ্য নয় এমন জ্বালানি (ফসিল ফুয়েল) শেষ করে ফেলছি অনবায়নযোগ্য বলতে  ফসিল ফুয়েল (প্রাকৃতিক তেল গ্যাস পুড়ে যে জ্বালানি তাকেই ফসিল ফুয়েল বলে যেমন: বিদ্যুৎ উৎপাদন), গাছ পালা কেটে সাবাড় করে ফেলছি সুপেয় পানির আধার শেষ হয়ে যাচ্ছে দিনে দিনে চারপাশের জলাশয় নষ্ট এবং দূষিত হয়ে যাচ্ছে যার ফলে নানা রকম রোগ বালাইয়ের বিস্তার ঘটছে তার মধ্যে ডেঙ্গু,ম্যালেরিয়া,ফাইলেরিয়া অন্যতম 

পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠে যতো পানি আছে তার মাত্র .৮০ ভাগ সুপেয় (পোর্টেবল ওয়াটার) আরো . ভাগ সুপেয় পানি আছে যা মেরু অঞ্চলে বরফ হিসেবে জমাট বাধা অবস্থায় আছে  পৃথিবীতে মোট সম্পদ নির্দিষ্ট পরিমাণ তা বাড়ছেও না কমছেও না, শুধুমাত্র রূপ পরিবর্তন হচ্ছে অতিরিক্ত ব্যবহার এবং অতিমাত্রায় অত্যাচারের ফলে দিনে দিনে প্রাকৃতিক সম্পদ সংকুচিত হয়ে আসছে জৈববৈচিত্র (Biodiversity) ধ্বংস হয়ে গেছে, Eco System আর আগের মতো নেই নির্বিচারে প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারের ফলে দূষণের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে ঢাকা শহর দূষণের মাত্রা এখনো দিল্লি বা সাংহাইয়ের মতো হয় নি তবে এখানকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গিয়েছে ঢাকার বায়ু সর্বাধিক দূষিত পানিতে দূষণের মাত্রা সহনীয় পর্যায়ের চেয়ে অনেক বেশি শিল্পকারখানা থেকে বর্জ্য নিঃসরণের ফলে পানি, মাটি এবং দূষিত হচ্ছে শ্বাসপ্রশ্বাস জনিত রোগে আক্রান্তের হার আগের তুলনায় অনেক বেশি



গ্রিন হাউজ গ্যাস গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বৈশ্বিক উষ্ণতা

গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বৈশ্বিক উষ্ণতা শব্দটির সাথে আমরা কমবেশি পরিচিত সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো আসে, কিছু অংশ প্রতিফলিত হয়ে ফিরে যায়, কিছুটা পৃথিবী কর্তৃক শোষিত হয় ভূপৃষ্ঠে আলো শোষিত হয়ে ফলস্বরূপ তাপ উৎপাদন করে anybody when absorb radiation emit heat. আমরা যে আলো দেখি সেটা ক্ষুদ্র তরঙ্গ আর উৎপাদন করে দীর্ঘ তরঙ্গ (লং ওয়েভ ইনফ্রারেড রেডিয়েশন) এই দীর্ঘ তরঙ্গ অধিকাংশই আবার মহাশূন্যে ফিরে যায় যে অংশ যেতে পারে না সেটাই গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর জন্য দায়ী কেন যেতে পারে না?

কিছু গ্যাস যেমন: জলীয় বাষ্প,কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন সিএফসি (ক্লোরো ফ্লোরো কার্বন) এই গ্যাস সমূহ তাপকে ধারণ করে,আটকে রাখে এবং ভূপৃষ্ঠ গরম হতে ভূমিকা পালন করে এজন্য আমরা এই গ্যাসগুলোকে   গ্রিন হাউজ গ্যাস বলে থাকি গ্রিন হাউজ যেমন কৃত্রিম ভাবে তাপ ধরে রাখে এই গ্যাস সমূহ একই কাজ করে ভূপৃষ্ঠকে উত্তপ্ত করতে ভূমিকা রাখে কার্বন ডাই অক্সাইড প্রাকৃতিক ভাবে (আগ্নেয়গিরির উদ্গীরণ, প্রাণিদের নিঃশ্বাসের ফলে সৃষ্ট) এবং গাছপালা পোড়ানোর মধ্য দিয়ে উৎপন্ন হয় মিথেন - কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস, তেল পোড়ানোর মধ্য দিয়ে মিথেন উৎপন্ন হয় জৈব আবর্জনা ভূমিতে ফেলে রাখলে পচে মিথেন গ্যাস সৃষ্টি হয় এছাড়া গরুর হজম প্রক্রিয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মিথেন তৈরি হয় মিথেন কার্বন ডাই অক্সাইডের চেয়ে ২৮ গুণ বেশি তাপ ধরে রাখে নাইট্রাস অক্সাইড জৈব জ্বালানি পোড়ানোর ফলে এবং মাটি চাষাবাদের ফলে উৎপন্ন হয় এটা কার্বন ডাই অক্সাইডের তুলনায় ৩০০ গুণ বেশি তাপ ধরে রাখতে পারে

মানবসৃষ্ট কারণের মধ্য অন্যতম রেফ্রিজারেশনে সিএফসি ব্যবহার এবং অগ্নিনির্বাপণে হ্যালোন গ্যাস ব্যাবহার অন্যতম এছাড়াও সিমেন্ট উৎপাদন এবং বাঙ্কার ফুয়েল পরিবহন অন্যতম


 গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর ফলাফল

বিরূপ আবহাওয়া (হঠাৎ ঘূর্ণিঝড়,শুষ্কতা,বনে আগুন, প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের সূচনা) সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি (মেরুর বরফ গলে, জলীয় বাষ্পের কারণে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি,৫০ সে.মি. বৃদ্ধি পেলে পৃথিবীর অধিকাংশ শহর তলিয়ে যাবে, বিজ্ঞানীরা আশংকা করছেন এরকম চলতে থাকলে,একবিংশ শতাব্দীতে সমুদ্রের উচ্চতা -৮৮ সে.মি. বৃদ্ধি পেতে পারে)  জৈববৈচিত্র ধ্বংস (আগামী ৩০ বছরে ২৫% স্তন্যপায়ী এবং ১২% পাখির প্রজাতি পৃথিবী থেকে চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যাবে)  কৃষির ক্ষতি (শীতল এলাকা,কানাডার উত্তরাঞ্চল হয়ত লাভবান হবে,তবে অনেক এলাকা শুষ্ক হয়ে মরুভূমি হয়ে যেতে পারে) রোগবালাইয়ের বিস্তার ( ডেঙ্গু,ইয়েলো ফিভার, এনসেফালিটিস সহ নানা রোগের প্রাদুর্ভাব হতে পারে) যুদ্ধ এবং বিবাদের সূত্রপাত: তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হবে সুপেয় পানির দখল নিয়ে কারণ ক্রমাগত (ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগ,অ্যাকুয়াফেয়ার অর্থাৎ ভূগর্ভের সুপেয় পানির আধার) নষ্ট করে ফেলার ফলাফল সুপেয় পানির তীব্র অভাব দেখা দিতে পারে এই মুহূর্তে আফ্রিকার অনেক দেশে সুপেয় পানির তীব্র সংকট রয়েছে


আমাদের করণীয় কী?

কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা (প্রাকৃতিক বন রক্ষা এবং গাছ লাগানো) 

গ্রিন হাউজ গ্যাস উৎপাদনের পরিমাণ কমানো (মানব সৃষ্ট) 

 

সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট বা টেকসই উন্নয়ন

পরবর্তী বংশধরদের সুরক্ষা দিয়ে যে উন্নয়ন তাকেই সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট বলা যায় প্রাকৃতিক সম্পদের সৃষ্ট ব্যবহার,অপচয় না করা, নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে নজর দেয়া,ফসিল ফুয়েল বা জৈব জ্বালানির উপর নির্ভরশীলতা কমানো মানব শরীর প্রকৃতির জন্য ক্ষতিকারক উপাদান (সিএফসি, হ্যালোন, ফরমালডিহাইড) না ব্যবহার করা পানি ব্যবহারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, বৃষ্টির পানিকে ভূগর্ভে প্রবেশের আগে প্রক্রিয়াজাত করে ব্যবহার করা (Infiltration, rain water harvest, rain water use as drinking water after some treatment)


 গ্রিন বিল্ডিং

গ্রিন বিল্ডিং বা গ্রিন ডেভেলপমেন্ট হলো, কম বিদ্যুৎ কম পানি কম বর্জ্য উৎপাদন এমনভাবে ভবনের নকশা এবং নির্মাণ করা হবে যাতে সাধারণ ভবনের চেয়ে কম জ্বালানি লাগে, পানির সর্বোচ্চ ব্যবহার হয় এবং সবচেয়ে কম বর্জ্য উৎপাদন করে সর্বোচ্চ দিনের আলো পায় এবং প্রতিটি বর্গ ইঞ্চি জায়গায় পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের নিশ্চয়তা থাকে যারা ভবনে অবস্থান করে কাজ করবেন তাদের সুস্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং দুর্ঘটনা কম হবে ভবন তৈরি করতে আমরা যেন স্থানীয় কোড অনুসরণ করি (আমাদের জন্য বিএনবিসি) খোলা জায়গা যেটুকু রাখার কথা সেটুকু যেন রাখি জলাশয় বা কৃষি জমিতে বিল্ডিং না করা চারপাশে নাগরিক সুবিধা আছে এমন যায়গায় স্থাপনা করা যাতে নাগরিক সুবিধার জন্যে গাড়ির তেল পুড়িয়ে অনেক দূর যেতে না হয়

নির্মাণের সময় যেন আশপাশের পরিবেশ জৈববৈচিত্রের কোনো ক্ষতি না করি আমরা যেন সবচেয়ে কম যানবাহন ব্যবহার করি ব্যবহার করলেও কার পুলিং (অর্থাৎ শেয়ার করে গাড়ি ব্যবহার করি) যেসব ক্লিনিং উপাদান ব্যবহার করি তা যেন ক্ষতিকর কেমিক্যাল মুক্ত হয় সেজন্যগ্রিন ক্লিনিংপ্রোডাক্ট ব্যবহার করি পানি পুনঃপ্রক্রিয়া (রিসাইক্লিং করে) ব্যবহার করতে পারি যেমন হাত ধোয়ার কাপড় কাচার পানি সামান্য পরিশোধন করে তা আবার টয়লেটের ফ্লাশে দিয়ে দিতে পারি যেসব কাঁচামাল ব্যবহার করব তা যেন কম প্যাকেজিং দিয়ে আমদানি করি সামর্থ্য অনুযায়ী আমাদের মোট চাহিদার %-১০% বা বেশি সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করি দিনের আলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার করা হয় যাতে কৃত্রিম আলোর কম ব্যবহার করতে হয় এছাড়া ডিমার বা ডে লাইট সেন্সর ব্যবহার করা হয় যাতে যখন দিনের আলো কমে যাবে তখন কৃত্রিম আলো যেন বাড়তে থাকে

নির্মাণের সময় যেন টেকসই মালামাল ব্যবহার করি, যেমন ছাদে ইন্সুলিশন দেয়া, ছাদে হাই এসআরআই পেইন্ট দেয়া, বাগান করা, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ইলেক্ট্রনিক পণ্য ব্যবহার করা যেমন, এলইডি বালব, সার্ভো মোটর ইত্যাদি সিএফসি মুক্ত এয়ার কন্ডিশন ব্যবহার সাধারণ ক্লে ব্রিকের চেয়ে সিরামিক বা ব্লক ব্যাবহার করতে পারি কারণ ক্লে ব্রিকের জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে উর্বর মাটি (টপ সয়েল) ব্যবহার করা হয়ে থাকে আর ক্লে ব্রিক পোড়াতে গাছ পালা বা কয়লা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে দুটোই পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর লো ভিওসি পেইন্ট, সিল্যান্ট,এ্যাডেসিভ ব্যবহার করা হয় যাতে বিল্ডিংয়ে যারা অবস্থান করে তাদের স্বাস্থ্যের সমস্যা না হয়


বাংলাদেশে গ্রিন বিল্ডিংয়ের চিত্র 

বাংলাদেশে পর্যন্ত ৬০১টি বিল্ডিং লিড সার্টিফিকেশনের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছে তার মধ্য ৯২টি বিল্ডিং সার্টিফিকেট পেয়েছে প্ল্যাটিনাম সনদ পেয়েছে ২২টি বিল্ডিং,গোল্ড সনদ পেয়েছে ৫৮টি বিল্ডিং,সিলভার পেয়েছে ১০টি বিল্ডিং এবং শুধু সার্টিফিকেট পেয়েছে ২টি বিল্ডিং মোট ১৩,৫৮,০০০ বর্গফিট জায়গা সনদপ্রাপ্তি হয়েছে বাকি বিল্ডিংসমূহ এখন নির্মাণাধীন প্ল্যাটিনাম সনদ প্রাপ্ত ভবনসমূহ জেনেসিস ওয়াশিং, রেমি হোল্ডিংস লিমিটেড, আর জিন্স প্রোডিউসার লিমিটেড,কানিজ ফ্যাশনস লিমিটেড,এসকিউ সেন্ট্রাল,ইকো টেস্ক লিমিটেড, সিটিস্কেপ টাওয়ার,কলম্বিয়া ওয়াশিং,তারাসিমা এ্যাপারেলস লিমিটেড,এসকিউ বিরিচিনা লিমিটেড, এসকিউ কোলবাঙ্ক লিমিটেড,এসকিউ সেলসিয়াস-, এনভয় টেক্সটাইল লিমিটেড, পামি ফ্যাশন লিমিটেড, ভিন্টেজ ডেনিম স্টুডিও, বিজিআই-ডিজাইনার ফ্যাশন লিমিটেড, ইউএইচএম লিমিটেড, গ্রিন টেক্সটাইল লিমিটেড ইত্যাদি

 



ক্যাটেগরিঃ কৃষি ও প্রকৃতি,


গোলাম রহমান

গ্রিন বিল্ডিং কনসালটেন্ট, অনুবাদক



বৈশাখে ইলিশ নয়

বৈশাখে ইলিশ নয়

উৎপাদিত মাছের প্রায় ১২ শতাংশ আ.. বিস্তারিত

সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি

সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি

বাতিলযোগ্য সাইবার নিরাপত্তা আই.. বিস্তারিত

সাকিব: বিতর্ক যার সঙ্গী

সাকিব: বিতর্ক যার সঙ্গী

বাংলাদেশ তখনো বিশ্ব ক্রিকেট অঙ.. বিস্তারিত