ডা. আহমদ মরতুজা চৌধুরী
করোনার
জালে বদলে যাচ্ছে মানুষের জীবন
তবু কি খুলবে না মনের বাতায়ন?
সারা পৃথিবীব্যাপী বিপদ ধাবমান,
গাছপালা
সৃষ্টিকুল মৃতপ্রায় কম্পমান।
সৃষ্টিকুল বসেছে মহাসভায়। হে প্রভু! পৃথিবী এতো বিপদের মুখোমুখি হয় নি। পৃথিবী সাজানোর জন্য আল্লাহ আদমকে জ্ঞান বুদ্ধি স্বাধীনতা দিয়ে অভিষিক্ত করেছিলেন। হে প্রভু! তুমি তো জানো, সেই অভিষেকে সৃষ্টিকুলে কী আনন্দ ছড়িয়ে পড়লো!
হায় এ কী হলো, আদম সন্তানেরা দানবীয় খেলায় মেতে উঠলো! পৃথিবীর সব সম্পদ কয়েকজনের হাতে চলে গেল। লোভের মুলা ঝুলিয়ে দেনার জালে ক্রেডিট কার্ডের ফাঁদে ফেলে পৃথিবীর সব সম্পদ লুটে নিয়ে গেল। পৃথিবীর অর্ধেক সম্পদ কয়েকজনের হাতে। তারপর চলে যাবে পাঁচজনের হাতে। তারা পৃথিবী ভরিয়ে দিচ্ছে বিষে। গাছগাছালি অ্যামাজন সব শেষ। অক্সিজেন শেষ হয়ে যাচ্ছে দানবদের হাতে। হাতির দাঁতের জন্যে পশু হত্যার উৎসব। ঘরের ডেকোরেশনের জন্য বাঘ হরিণ মেরে সাফ! কাঠি দিয়ে ভাত খাবার জন্য লক্ষ লক্ষ গাছ সাফ! হীরক সোনা তেলের লোভে পাহাড় মরু ঝাঁঝরা! পুড়ে যাচ্ছে জনপদ! পাখির মতো মরছে শিশু নারী মানব! হে প্রভু! যদি মানুষ না থাকে, গাছপালা না থাকে, পশুপাখি না থাকে, কী হবে এ পৃথিবী দিয়ে!
চারদিকে
বারুদের গন্ধ। মেয়েদের উলঙ্গ করে ফেললো পশুর দল! ফ্যাশন শো করে যাতে শরীরের ভাঁজ দেখা যায়। কচি শিশু বলে, হি হি হি উলঙ্গ মেয়ে হেঁটে যায়।
রাসুল
(দ:) বলেন, এমন একদিন আসবে, যেদিন মানুষ এমন ভাবে কাপড় পরবে মনে হবে তারা উলঙ্গ হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
এখন কী উপায়? নাকি আমরা পশুরা পাছা তুলে ফ্যাশন শো করবো যাতে মানুষ অবাক হয়ে যায়। নাকি লুকিয়ে যাব মাটির নীচে লজ্জায়!
হে প্রভু! তুমি তো সবই জানো। জলে জমিনে পাতানো আণবিক বোমা! এক টিপে পৃথিবী বারুদ হয়ে যাবে। বাতাস ভরে যাবে আণবিক বিষ কণায়। শিশুদের গেমসের ফাঁদে ফেলে সন্ত্রাসী বানানো হচ্ছে। পাখির গাছে জিপিআরএস। ভ্যাকসিন দিয়ে মানুষের গায়ে যদি লেগে যায় ডিজিটাল চিপস, তাহলে মানুষ হবে রোবট। লোভী দানব সুইচ টিপে নাচাবে মানুষ। হে প্রভু! পৃথিবী কি হয়ে যাবে চাঁদের মতো গাছপালা পশুহীন প্রান্তর! হে প্রভু! তুমি কি পাঠাবে নুহের প্লাবন, আদ জাতি বিনাশকারী নিনাদ, বাতাসের কাঁপন, ওলটপালট করে দেওয়া ভূকম্পন!
উত্তর চাই। সুনশান নীরবতা। সবাই প্রভুর দয়ার আশায় অপেক্ষমান।
এলো শুভক্ষণ। মুকুটের বেশে ভাইরাসের আগমন।
দানবের
থেমে গেল উল্মফন।
মেকি সভ্যতার কুৎসিত চেহারা
দেখা যায় বিলক্ষণ।
যাচাই বাছাই হবে
মানবতার
কতটুকু রয়ে গেল বন্ধন।
কেউ হয়ে যাবে পশুর মতন
আর কেউ হবে পবিত্র ফেরেশতার চেয়েও দামি রতন।
সন্তর্পনে
এলো করোনা। চীনের উহানে কয়েক শত রঙিন মুকুট নিয়ে নামলো। প্রথমে ঢুকলো নাকে, তারপর বংশ বিস্তার। উপসর্গ সামান্য কাশি। কতো শক্তিশালী। আল্লাহর অদৃশ্য বাহিনীর একটি। আরএনএ ভাইরাস। সে একাই যথেষ্ট। আর কোনো ব্যাক্টেরিয়ার সাহায্য লাগে না। ফুসফুসে বিস্তার ঘটায়। টের পাবার আগে ছড়িয়ে যায়। ফুসফুসের কোষগুলি চুপসে দেয়। ফুসফুসের বেলুন চুপসে যায়। অক্সিজেনের আদান প্রদান কমে যায়। দম বন্ধ হয়ে যায়। আর যদি রক্ত জমাট বাঁধা শুরু হয় তাহলে রক্ষা নাই। রক্তের প্রবাহ বন্ধ হয়ে বিবিধ অঙ্গ অবশ হয়ে যায়। যার শরীরে ডায়াবেটিস কিডনির অসুখ হার্টের অসুখ তার জটিলতা বাড়ে। আইসিইউর দরকার হয়। এতো আইসিইউ মানুষ পাবে কোথায়। যারা অক্সিজেন পায় না তারা মারা যায়। উহানের ঘরে মানুষের লাশ। বিশ্বনেতারা বল্লেন ‘চীনা ভাইরাস’। কিচ্ছু হবে না। চীনা থেকে ফ্লাইট চলবে না। ভাইরাস কি আটকানো যায়?
এক চীনা পর্যটক ইটালির হাসপাতালে করোনা নিয়ে ঢুকলো। হাসপাতালে করোনা ছড়ালো। আর যায় কই। শহরে শত মানুষের শরীরে করোনা। পরদিন ফুটবল ম্যাচ। লক্ষ মানুষের গাদাগাদি। বনফায়ারের মতো করোনা ছড়ালো। পরদিন স্পেনে উইমেন ডে র্যালি। ইটালি থেকে লাখ লাখ নারী স্পেনে। হাতে হাত ধরে ভাইরাসের বিস্তার। শুরু হলো লাশের মিছিল। ঘরে ঘরে বেওয়ারিশ লাশ। যারা বুড়ো, তাদের জন্য হাসপাতালের দুয়ার বন্ধ। যারা মরবে তাদের জন্য অক্সিজেন খরচ করে কী লাভ। ইউরোপীয় সমাজ যে কতো অমানবিক তা বিশ্ববাবাসী দেখলো। যে বুড়ো সারাজীবন দেশের সেবা দিলো, সে কুকুরের চেয়ে খারাপ দশায় পড়ে রইলো। গণকবরে গাদাগাদি মানুষ। করোনা ঠেকানো গেল না। সে ঢুকলো রাজার প্রাসাদে, ব্রিটেনের রাণীর প্রাসাদে, চার্লসের শরীরে, প্রধানমন্ত্রীর শিরায়, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ফুসফুসে। সমুদ্রে ভাসমান বিমানবাহী জাহাজ রুজভেল্টের নাবিকের শরীরে। হই হই রই রই।
করোনা ঢুকে গেল আমেরিকায়। ঘরে ঘরে লাশ। ট্রাম্প হতাশ। বাংলাদেশ থেকে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেশ ছেড়ে পাড়ি দিলেন আমেরিকার স্বর্গে। তিনি আর স্ত্রী থাকেন এক ফ্লাটে। ছোট ভাই উপর তলায় সপরিবারে। বড় ভাই করোনা আক্রান্ত হয়ে সিঁড়িতে নামার সময় মারা গেলেন। স্ত্রী লাশ নিয়ে চার দিন দাফনের অপেক্ষায়। ছোট ভাই সিঁড়িতে নেমে লাশ দেখতে এলো না, পাছে করোনায় আক্রান্ত হয়ে যায়।
হায়রে মানুষ! পয়সার উপর দিয়ে হেঁটে অমানুষ হয়ে গেল। কী দরকার ছিল জান কুরবান করে আমেরিকান হবার, স্বর্গ ভেবে নরকে পা রাখার! পাশের বাড়ির ভদ্রলোক হাসপাতালে মারা গেল। তার প্রিয় কুকুর সাতদিন না খেয়ে হাসপাতালের বারান্দায় মনিবের অপেক্ষায়! কিছু মানুষ যে কুকুরের চেয়ে খারাপ হতে পারে, তা করোনা দেখিয়ে দিল। কেন যে কিছু কিছু মানুষ কুকুরের চেয়ে অধম হয়ে যায়! নিউ ইয়র্কের রাস্তায় কুকুরের করুণ কান্নার হৃদয় দুমড়ানো আওয়াজ শোনা যায়। ফ্রয়েডের গলায় সাদা পুলিশ চাপ দিয়ে বর্ণবাদের বিষ ছড়ায়। কিছু সাদা পশুর হাতে মানুষ মারা যায়। হিংস্র হায়েনা লজ্জায় মাথা লুকায়।
বন্ধ হয়ে গেল বিমান বাহন কালো বিষের নি:সরণ
পৃথিবী
আবার শ্বাস নেবে কিছুক্ষণ
পাখিদের
শুরু হবে গুঞ্জরণ
প্রবাল
দ্বীপে মানুষের অত্যাচার থামবে কিছুক্ষণ
হাতিরা
দাঁত নিয়ে করবে বিচরণ
বাঘেরা
রাজার হালে কাটাবে জীবন
হরিণের চপলতায় জাগবে বনে শিহরণ।
করোনা ভাইরাসের পরশে বিমান চলাচল থেমে গেল। আমেরিকা ইউরোপের রাস্তায় কালো বিষ ছড়ানো গাড়ির বহর থেমে গেল। কার্বন নি:সরণ কমে গেল। গাছের পাতা জীবন ফিরে পেল। পাখির কলরব বেড়ে গেল। পশুরা হাফ ছেড়ে বাঁচল। প্রবাল দ্বীপে মানুষের উৎপাত থেমে গেল। মাছের জগতে শুরু হলো উৎসব। এভাবে চলবে কি জীবনের উৎসব! নাকি আবার লুন্ঠনকারীদের হাতে তছনছ হয়ে যাবে পৃথিবী সমুদ্রের হৃদয়! করোনা তো সর্তককারী ভাইরাস। নিয়ে এসেছিল জীবনের আশ্বাস। বুদ্ধিমানদের কি ভাবার সময় আসে নাই! পৃথিবী না বাঁচলে যে আমরা বাঁচবো না তা তো বুঝতে হবে। অনাগত শিশুর কাছে করি অঙ্গিকার, একটি সুন্দর পৃথিবী গড়ার।
বাংলার
প্রান্তে করোনার ভয়
প্রতিটি
মানুষের কাঁপে হৃদয়
লোভী পিচাশের দল নেমেছে নিশ্চয়
এবার জমি বাড়ি গাড়ি হবে এসে যাবে হাতের মুঠোয়
যারা ভালো তারা মানুষের পাশে রয়
মানুষের
জন্য বিলাবে হৃদয়
স্বার্থপরদের পাশে চলবে মানবতার জয়
হৃদয় যাদের আছে তারা জয়ী হবে নিশ্চয়।
বাংলার
ঘরে ঘরে করোনা ছড়িয়ে পড়লো। প্রতিটি মানুষকে যমদূত মনে হতে লাগলো। মধুপুরের এক বুড়ির জ্বর কাশ হল। সবাই মনে করলো বুড়ির করোনা হয়েছে। রাতের আঁধারে জংগলে ফেলে আসলো। ঘরের অবাধ্য বিড়ালকে মানুষ এভাবে ফেলে আসে না। করোনা আসবে যাবে, কিন্তু মানুষ কেন পশু হবে! মানুষ মারা যায় কলেরায়, গ্রাম উজাড় হয়ে যায়। কই, কখনো মাকে তো কেউ জঙ্গলে ফেলে নি! নিউমোনিয়ায় শিশু মারা যায়। জীবন আছে মরণ আছে, কিন্তু নিষ্ঠুরতা কেন থাকবে?
আমার ছেলের এক বছরের সিনিয়র সিলেট মেডিকেলে ইন্টার্নি করে। ঢাকায় করোনা আক্রান্ত। বনশ্রী মেসে থাকে। রুমমেট হাত বাড়ালো না। আপন বোন বললো আসতে পারবে না। ভাই আর্মিতে চাকরি করে। বললো চাকরির ঝামেলা হবে। বাবা জানালো শরীর বড্ড খারাপ। মা বললো তার শরীর আরোও খারাপ। মা-বাবা করোনা শুনে সটকে পড়লো! বারডেমের প্রফেসর হলি ফ্যামিলি আইসিইউতে মারা গেলেন। কেউ ফোন ধরে না। কানাডায় অধ্যয়নরত ছেলে বললো, যেভাবে পারেন লাশ দাফন করেন। বউ বললো, বেওয়ারিশ দাফন করেন। স্বেচ্ছাসেবীরা লাশ দাফন করলো। শিক্ষিত হলেই মানুষ হয় না। ছেলেকে ফুটানি করে কানাডায় পড়িয়ে কী লাভ যদি সে বাপ না চিনে। তার চেয়ে পাড়ায় একটা ফার্মেসি দিয়ে বসিয়ে দিলে বাবার পাশে হয়তো থাকতো। হয়তো বাবাকে সম্মানের সাথে দাফন করতো।
ঘরে ঘরে করোনার আক্রমণ
মাল কামানোর নেশায় মেতেছে দুষ্টজন
পয়সার ঢল নামে বানের মতন
দেশবিদেশে
বাড়ি হবে মনের মতন
বাংলার
মুখে হলো কালিমা লেপন
চোর বাটপাড়ের দেশ বলে বিদেশিরা করে আঙুলি হেলন
একটি ফুলের জন্যে যুদ্ধ করা বাংলার মান
লুটেরা
সন্তানদের হাতে হয়ে গেল ম্লান
কেমনে সইব মায়ের অপমান।
বাংলায়
করোনা আসলো। আতংক বাড়লো। দালালদের সিন্ডিকেট তৈরি হল। রোগীদের জন্য দরকার পিপিই, মাস্ক, অক্সিজেন, পিসিআর ল্যাব। শুরু হলো জিনিস কেনার ধুম। সবার কমিশন আগে ভাগে ঠিক। পনের টাকার মাস্ক পঞ্চাশ টাকা, দু’শ টাকার মাস্ক দু’হাজার টাকা। সব টাকা যাবে ডিজিটাল কায়দায়। আগে হরিলুট, তারপর কাম। অক্সিজেনের অভাবে রোগীদের হাহাকার। দাম বাড়ান হলো বারবার। ডাক্তার নার্স জানবাজি রেখে রোগীর সেবায়। নকলের ভুত চাপলো পিপিই সুরক্ষায়। চিকিৎসকরা কাত হলো করোনার থাবায়। জনগণ আতংকে কাতরায়। মানুষ মরলে কী আর আসে যায়। কিছু বঙ্গসন্তানের ডাকাতির হার বেড়ে যায়।
তড়িঘড়ি
করে দেওয়া হলো করোনা টেস্টের অনুমোদন। শুরু হলো ভুয়া সার্টিফিকেট বিতরণ। করোনা নিয়ে বাঙালি ঢুকে গেল ইটালি। হাসপাতালে ধরা খেল বাঙালি। ইটালির প্রধানমন্ত্রী বলে শেম অন বাংলাদেশ। সারা বিশ্ব জানলো, বাঙালি প্রতারক, করোনা বিস্তারক। ডাকাত সন্তানেরা বাংলার মুখে আলকাতরা মেখে দিলো। যে বাঙালি আইলার ঝড় ঠেকিয়ে দিলো, তার মুখে কেন কালিমা লেপন।
বর্গিরা
এসেছে। লুন্ঠন করেছে। বৃটিশ লুটে নিয়েছে বাংলা। তবু বাঙালি থামে নি। সব সংকটেই বুক পেতে রক্ষা করেছে বাংলার অধিকার। হায়! একি হলো! বাংলার মুখে অপমানের আলকাতরা। বাঘ ভালুক বড় হলে মায়ের পেট চিরে খায় না। কিছু বাঙালি বাংলার পেট চিরে নাড়িভুঁড়ি খাবার উৎসবে মেতে উঠলো। সিন্ডিকেট করে বলে বড় মজা। কানাডার বেগম পাড়ায় স্বর্গ কেনা হবে সোজা। ডিজিটাল যুগে বোতামের চাপে বাংলার টাকা চলে যাবে কানাডায়। দশ পুরুষের বুঝ হয়ে যাবে এক কথায়। সন্তানেরা ঘুমাবে পাহাড় ঘেরা প্রকৃতির বিছানায়। মেডিকেলে পড়ার সময় হাকালুকির হাঁস উল্টো করে কানে কানে বলতো সুস্বাদু পাখি ছেড়েছি সস্তায়। আজ মনে হয় বাংলা মাকে পাঁজাকোলা করে নিলামে তুলে বলছে, সস্তায় নিয়ে যান। মাটির নীচে গ্যাস খনিজ, সব নিয়ে যান। শুধু আমার বউজানের জন্য কানাডায় বাসস্থান বানান। ডাকাতের বউ কানাডায়। ল্যান্ডিং করে বেগম পাড়ায়। লেকের পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, স্বর্গ এসেছে হাতের মুঠায়। এবার লাল পাম্পকিন আর লাল গোলাপ দিয়ে সাজাব বাগান। মন ভরে যায়! হায়! এত লাল পাম্পকিন নয়, বাংলা মায়ের রক্ত। হায়! এতো লাল গোলাপ নয়, সন্তানের হাতে বিক্রি হওয়া মায়ের চোখের বহমান রক্ত। আর কত আর কতো, গর্জে উঠুক রাইফেল হাতিয়ার। মায়ের নাড়িভুঁড়ি খেয়ে বেড়ে উঠা কুলাঙ্গারের হবে বিচার। মাকে যে বিক্রি করলো, তার দিকে ছুঁড়ে মারো লক্ষ জনমের ধিক্কার! কালিমাখা মায়ের মুখ পরিস্কার করবো এই হউক অঙ্গিকার। প্রলয়ের তোড়ে ভাসিয়ে দেবো স্বার্থপরদের কারবার। হাজার অলির দেশে নামবে অসাম্প্রদায়িকতর জয়। আবার উঠবে গান পাখির কলরবে। আবার কিষাণ গান গেয়ে পথ মাড়াবে। আবার শিশুরা করবে জলকেলি মনের সৌরভে। আবার মাঝি ধরবে গান নদীর বাঁকে। নদীর বানের মতো নামবে মমতার ঢেউ বাংলার পথে প্রান্তরে। পৃথিবী চোখ তুলে বলবে এই দেখ স্বর্গ দেখা যায় বাংলার সীমানায়।
করোনা নিয়ে ফতোয়াবাজি
ফাঁস হয়ে গেল ভেলকিবাজি।
যুগে যুগে স্বার্থপররা ধর্মকে ব্যবহার করে ফতোয়াবাজি করে মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। নিজের আখের গুছিয়ে নিয়েছে আর ভক্তের দল তৈরি করেছে। যুগে যুগে মহামারী পৃথিবীতে এসেছে। ইনফ্লুয়েঞ্জা, প্লেগ, বসন্ত। গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হয়ে গেছে। মায়ের থেকে শুনেছি, তিনি যখন ছোট ছিলেন, কলেরা এলো আমার খালাকে নিয়ে গেল। বছর বছর কলেরা আসতো। কলেরা যখন আসে জাতপাত বিচার করে না। জেরুজালেমে প্লেগ বা মাউন এলো। সেখানে সেনাপতি তখন হযরত আবু উবায়দা। মদিনায় ফিরে গেলেন না তার সৈন্যদের ছেড়ে, থেকে গেলেন আর প্লেগে মারা গেলেন, শহীদ হলেন। একবারও বললেন না, মুসলমানদের প্লেগে ধরবে না। বাংলাদেশের ফতোয়াবাজ মুফতি ইউটিউবে ফতোয়া দিল তার সাথে করোনার কথা হয়েছে। করোনা বলেছে সে মুসলমানদের ধরবে না। প্রচুর লাইক পড়লো এই কথায় ফেসবুকে। যদি কেউ পাঁচ বছরের মেয়েকে কোমর দুলিয়ে ডান্স করিয়ে লিখে কাটরিনা কাইফ, তাহলে লাইক পড়বে। যাই হোক, মুফতির ফতোয়ার পর পর চট্টগ্রামের বড়োহুজুর করোনায় মারা গেলেন। এস আলম গ্রুপের পরিচালক মারা গেলেন। দুই ভাই একটি ভেন্টিলেটরের জন্য লাইন দিলেন। যিনি হাসপাতাল বানাতে পারতেন তিনি মারা গেলেন অক্সিজেনের অভাবে। শিল্পপতি নুরুল ইসলাম বাবুল করোনা হয়ে মারা গেলেন। দেখা গেল করোনা অপ্রতিরোধ্য, চোরা হামলায় দক্ষ। আমার বোন জামাইয়ের হার্ট কিডনির অসুখ। পুরো রমজান ঘরে। করোনা হানা দিল, মারা গেলেন। এই ভাইরাস কখন যে হানা দেয় টের পাওয়া যায় না। আমার ড্রাইভার এসে বলে, স্যার, আমাদের বাজারে সব দোকান খোলা। আমাদের তো করোনা ধরে না। রিক্সাওয়ালা দিনমজুর করোনার সাথে বসবাস করে করোনামুক্ত। আল্লাহ তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দিয়েছেন। কী আশ্চর্য, করোনা এতো শক্তিশালী কিন্তু সামান্য সাবান-পানির কাছে নিতান্ত অসহায়।
শরীরে করোনা সংক্রমণ
অজানা শংকায় ছন্দপতন
শুরু হল হৃদকম্পন
জীবনের
আয়ু জানি না আছে কতক্ষণ।
মঙ্গলবার
২৬ জুন খুসখুসে কাশি, সামান্য জ্বর, শ্বাস নিতে আমার কষ্ট। কাশ বাড়তে থাকলো। আইসোলেশনে চলে গেলাম। আইবারমেকটিন, ডক্সিক্যাপ খেলাম। শনিবার কভিড টেষ্ট জমা দিলাম। আসার পথে শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেল। হাসপাতালে বুকের এক্সরে করালাম। ফুসফুসে একটু ঝামেলা। অক্সিজেন সেচুরেশন ৯৬% , পালসের মাত্রা বেশি। পালস অক্সিমিটার কিনে আনলাম। শ্বাসকষ্ট বাড়ছে। আমার ছেলে সাফওয়ান মেডিকেল ফাইনাল ইয়ারে। তার বড় ভাইয়ের কাছে মেসেজ পাঠাল। সেচুরেশন কমে যাচ্ছে। উত্তর এলো, সেচুরেশন আর কমলে হাসপাতালে। বুধবার শ্বাসকষ্ট বাড়ল। কভিড পজিটিভ এলো। যাব কই। ছেলে বললো, মুগদা হাসপাতালের ডিরেক্টর ডাক্তার টিটো। কপাল ভালো, টিটো ফোন ধরলো। বললো, আপাতত ওয়ার্ড, পরে কেবিন। গিয়ে দেখি কেবিন বরাদ্দ। পাঁচ লিটার অক্সিজেন। রাতে একরামুল মেরপেন দিলেন। শুধু ঘাম। তিন দিন তিন রাত শুধু ঘাম। সাফওয়ান ঘাম মুছে দুই মিনিট পর পর। তার চোখে ঘুম নেই, নাকে গন্ধ নেই। এর মানে তার শরীরে কভিড। বড় ছেলে সাফওয়াত করোনামুক্ত। রাতে ঝুঁকি নিয়ে বাবার সেবায়, ভাইকে সাহায্যের চেষ্টায়। করোনার ঝুঁকি নিয়ে সারা রাত হাসপাতালে কাটায়। দু’জনে বাবার সেবায়। এ চিত্র কি ভোলা যায়! স্ত্রী করোনামুক্ত। বললো, সাহস হারাবে না। সেবিকারা পরিচিত। আস্তে আস্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে লাগলো। রবিবার থেকে অক্সিজেন লাগলো না। ঘাম কমে গেল, খাবার রুচি বাড়লো। রুমে হাঁটি, ঘুড়ি ওড়া দেখি। রেলের কন্টেইনারের উঠানামা দেখি। মনে হলো আল্লাহর রহমতে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছি। শনিবার ছুটি নিয়ে আইসোলেশনে বাসায় এলাম। আসার সময় রিপোর্ট এলো, আমি ও সাফওয়ান দু’জনই পজিটিভ।
করোনা ভাইরাস
গায়ে সেন্সার
এক হাতে অস্ত্র
অন্য হাতে মমতা মিটার।
করোনা ভাইরাস শত মুকুটের সাজে গলায় নামে। যার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমত কম তার ওপর হামলা চালায়। একে এক ফুসফুস হার্ট কিডনি লিভার অকেজো বানায়। অক্সিজেনের মাত্রা দেখে তার আঘাতের চাপ বোঝা যায়। তবে আল্লাহ তায়ালা তাকে আরো একটি মিটার উপহার দিয়েছেন। তা হলো মমতা মিটার। এ মিটার দিয়ে মানুষের মমতা মাপা যায়। ইস্পাতের যেমন শক্তি মাপা যায় তেমনি কারো জিগারে (কলিজায়) কতো অরিজিনাল মমতা আছে তা করোনার সময় বোঝা যায়। যে স্ত্রী স্বজন হাই হ্যালো বলে দামি উপহার নিয়ে ভালোবাসার বেসাতি করতো করোনার ঠেলায় তাদের খোলস পড়ে যায়। ভালোবাসা কতো জমা আছে তা পরিস্কার দেখা যায়।
স্ত্রী
বলে দূরে থাকতে হয়, করোনা যদি ধরে বাঁচব না নিশ্চয়। ছেলেমেয়ে বলে কেয়ার নিও, কাছে যেতে ভয়, করোনা সংক্রমণ ছড়াবে মনে হয়। পাঠাও-এ ফুড পাঠাচ্ছি, খাবার যেন অসুবিধা না হয়। হাজবেন্ড বলে আইসোলেশনে থাকো, মেডিসিন সাথে রাখো, ড্রাইভার আছে সারাক্ষণ নাই কোনো ভয়। মা বলে ছেলের করোনা ধরেছে, ডায়াবেটিসে বাধা আমার শরীরে করোনা যদি হয়। মায়ের জন্য সন্তানেরা আতংকে আছে, মায়ের যদি কিছু হয়। এমনি ভাবে করোনা সংক্রমণের সময় সবাই যখন বিবিধ অজুহাতে সটকে পড়ে তখন কিছু মানুষ নিখাদ ভালবাসা নিয়ে হাজির হয়। স্বজনদের সেবায় মমতা উজাড় করে দিতে বুক পেতে অগ্রসর হয়। তাদের দেখে মনে হয়, পৃথিবীতে কিছু মানুষ এখনো আছে নিশ্চয়।
হাসপাতালে
আমার সেবায় সাফওয়ান। তার শরীরে করোনা। তবু আমার পাশে সর্বক্ষণ। সে বললো, কত সন্তান বাবাকে পায় না। অনেক সময় মা-বাবা বিছানায় পড়ে থাকে বছরের পর বছর। অনেক ছেলে বিদেশ থাকে। বাবার কাছে আসতে পারে না। বাবা-মা থাকে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। আমার জীবনে বাবাকে সেবা করার, বাবার ঋণ শোধ করার এসেছে, তা আমি হাত ছাড়া করতে দেবো না।
তিন চার দিন সেবা দিতে দিতে সে টায়ার্ড, শরীর নিস্তেজ, ঘুমানোর টাইম নাই। সে বললো, এটা আমার লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট। হয় তো এ উছিলায় আল্লাহ আমার জীবনের স্বর্ণ দুয়ার খুলে দেবেন। ছেলের মমতার স্বর্গীয় ধারাকে, তার মমতা ভরা স্পর্শকে আমার ঘাড়ের কাছে অনুভব করি।
তা বুকের মধ্য দিয়ে শান্তির ধারায় নেমে যায়। নি:স্বার্থ ভালোবাসার যে রঙ আছে তা টের পাওয়া যায়। বাবার জন্য ছেলের মমতা অবলোকনে ফেরেশতারা ডানা ঝাপটায়। বিশ্বাস দৃঢ় হলো, দুধ কলা দিয়ে ছেলে নামক জানোয়ার পুষি নাই, এ জন্যে মন ভরে উঠে কৃতজ্ঞতার চেতনায়। দু’চোখ ভিজে যায় অশ্রুধারায়। বড় ছেলে করোনা আক্রান্ত নয়, হাসপাতালে গেলে আক্রান্ত হতে পারে জেনেও সেবার জন্য হাত বাড়ায়। রাতে আমার বিছানার পাশে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিয়ে রাত কাটায়। ছোট ভাইকে বিশ্রামের সুযোগ দিয়ে জেগে রাত কাটায়। ছেলেরাও যে মেয়েদের মতো সেবা দিতে পারে তা দেখে মন ভরে যায়। মেডিকেলে আমার ছাত্রীকে দেখলাম, কেমন যেন ডুবে যাচ্ছে যন্ত্রণায় নীল জলের ঠিকানায়। আমিও দুখে কাতর হয়ে গেলাম। স্নেহের পরশ পেয়ে শুধু বললো, আমার বাবা দু’জন। একজন জন্মদাতা আর একজন আপনি মমতাদাতা। আমার মাথার ওপর আপনার যে করুণার ছাতা। রক্তের বাঁধন বিহীন মমতার বাঁধন। স্বর্গের জগতে ফেরেশতাদের শিহরণ। নিমু নামের সেই মেয়েটি ভালোবাসার ডালি নিয়ে এলো। খবর নিলো সর্বক্ষণ। যখন ষ্টেরয়েড শুরু করা হলো সাফওয়ানকে বললো, রিকভারি ড্রাগ শুরু হচ্ছে। এখন থেকে অক্সিজেনের চাহিদা কমবে আর শরীর ভালো হবে। আমার ড্রাইভার এমন সার্ভিস দিলো, মনে হল তার বাবার সেবা দিচ্ছে। আমার মা বসুন্ধরায়, বোনের বাসায়। সারারাত জায়নামাজে কান্নায়। শুধু বলে আমার ছেলেকে হে প্রভু ফিরিয়ে আনো সুস্থতায়। মায়ের দোয়ার চাপ অনুভব করি শরীরের কোণায়। স্বর্গের ফেরেশতা নেমে এসে সালাম জানায়। বলে, আদম পয়দা করায় মমতার বান দেখা যায়। আমার ছোট বোন সাজেদার স্বামী করোনায় মারা যাবার শোকে কাতর থেকেও ছেলে এহসানকে পাঠালো মামার সেবায়। ছোট বোন ডা. ফারিহা রাতের পর রাত পেরেশান ভাইয়ের নিরাময় কামনায়। যে মেয়েটি চেম্বারে কাজ করে তার স্বামী সিএনজি চালায়, দিন আনে দিন খায়। সে টাকা কর্জ করে খাবার পাঠায়। আমার স্ত্রীর বড় বোন ডায়াবেটিসের রোগী। করোনা হতে পারে জেনেও চলে এলেন ঢাকায় ছোটবোনের সেবায়। কতোজন যে মমতা বিকাশ করে পাঠাতে লাগলো। তা ডাউনলোড হলো। সিলেট কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের সীতাব আলী ভাই বললেন, দোয়া জারি আছে, দ্রুত সুস্থ হবেন। আমার চাচাত ভাই চাকরি নাই। সে খতম পড়ল। আমার ফুফাত ভাই ফুলতলির পীর সাহেবকে দিয়ে দোয়া পড়ালেন। আগে ছিলাম প্রফেসর। আর অসুখের পর আমি মানুষের ভালোবাসায় গড়া নতুন মানুষ। আমি যেন আবার জন্ম নিয়েছি সবার ভালোবাসায়। ধন্যবাদ করোনা ভাইরাস! তুমি টোকা না দিলে বুঝতাম না আমি কতো মানুষের আপনজন। কী করে বেড়ে যায় মমতার বাঁধন।
দুর্গম এলাকাতেও কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবীরা করোনা আক্রান্তদের দাফনে এগিয়ে এসেছেন
বাংলায়
করোনার ভয়ে মানুষ লাশ রেখে পালায়,
কোয়ান্টাম লাশের দায়িত্ব নিয়ে মমতা বিলায়।
বিশ্বব্যাপী আপনজন যখন করোনা আতংকে লাশের দায়িত্ব না নিয়ে পালাতে লাগলো, তখন কোয়ান্টাম লাশ দাফনের জন্য শহরে শহরে টিম গঠন করলো। সারাদেশে এখন পর্যন্ত কোয়ান্টামের স্বেচ্ছাসেবকরা ষোলশ'র বেশি দাফন কাজ সম্পন্ন করেছেন। করোনার মহামারিতে আমরা যেন অমানুষ না হয়ে যাই, এই হউক আমাদের অঙ্গীকার।
করোনার
শিক্ষা:
১। ভোগবাদী বিনোদন কেন্দ্রিক সভ্যতা মানুষকে অমানুষ বানায়। বিপদের সময় না এসে সরে যায়।
২। যদি মমতা দেন তাহলে প্রকৃতিতে জমা থাকবে, বিপদের সময় চেনা অচেনা মহল থেকে ভালোবাসা পাবেন।
৩। গাড়ি বাড়ি নয়, মমতার পুঁজি গড়ুন, শান্তি পাবেন।
৪। জীবন চেতনাকে শাণিত করুন। অহমের পথ থেকে সরে গিয়ে বিনয় ও সেবাব পথে হাঁটুন। জীবনের সময় বাকি থাকতেই মানুষের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেবার শপথ নিন। এন্ড্রু কিশোর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে জীবনবোধ শাণিত হলো এবং তিনি নতুন করে গাইলেন বিখ্যাত সেই গান, ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প। যা কিছু দেখার নাও দেখে নাও। যা কিছু বলার যাও বলে যাও। পাবে না সময় আর হয়তো।’
আমাদের
সবার হাতে সময় কম। তাই এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে মানুষের জন্যে কিছু করার এবং তা নি:স্বার্থভাবে।
চিকিৎসক, শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ। অধ্যাপক, প্যাডিয়েট্রিকস বিভাগ, ডা. এম আর খান চাইল্ড হসপিটাল অ্যান্ড ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথ, মিরপুর, ঢাকা। প্রকাশিত বই ১৩। যার দশটি বই শ্বাশ্বত চেতনা বিস্তারের লক্ষ্যে লেখা, বাকি তিনটি চিকিৎসা বিষয়ক একাডেমিক বই।
ড. বিজন কুমার শীল বিস্তারিত
বিপরীত স্রোত প্রতিবেদন বিস্তারিত
ডা. আহমদ মরতুজা চৌধুরী বিস্তারিত
যারিন মালিয়াত অদ্রিতা বিস্তারিত
মোহাম্মদ মাহমুদুজ্জামান বিস্তারিত
উৎপাদিত মাছের প্রায় ১২ শতাংশ আ.. বিস্তারিত
বাতিলযোগ্য সাইবার নিরাপত্তা আই.. বিস্তারিত
বাংলাদেশ তখনো বিশ্ব ক্রিকেট অঙ.. বিস্তারিত
ব্রেদিং আউট বার্ডেন নামে কর্ম.. বিস্তারিত