English
ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

প্রকাশঃ ২০২০-০৭-৩১ ১০:২২:৪৬
আপডেটঃ ২০২৪-১১-২৩ ০৩:৫২:৪৫


পবিত্র কোরআনের আলোকে কোরবানির গুরুত্ব ও তাৎপর্য

পবিত্র কোরআনের আলোকে কোরবানির গুরুত্ব ও তাৎপর্য

. মোহাম্মদ নাজমুল হাসান আযহারী


ইসলাম ধর্মে গুরুত্বপূর্ন দুটি উৎসব হল ঈদুল ফিতর ঈদুল আযহা ঈদ মানে খুশি প্রতিটি ঈদই বয়ে আনে একজন মুমিনের অন্তরে আনন্দের হিল্লোল ধনী-গরিব, রাজা-প্রজা, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ছোট-বড় সকলের মাঝেই ঈদের ইমেজ ভেসে উঠে তবে বছরের ঈদ অন্যসব বছরের চেয়ে ব্যতিক্রম গোটা বিশ্ব করোনার করাল গ্রাসের স্বীকার একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই জানেন কখন ইতি টানবে বৈশ্বিক এই মহামারি প্রতিটি সেক্টরেই এর প্রভাব বিরাজমান প্রতিনিয়ত হাজারোও মানুষ চাকরিচূত্য হচ্ছে অর্থের অভাবে মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামের দিকে ছুটছে দুমুটো ভাতের জন্য অনেকে আত্মনিয়োগ করেছে তাদের নিজ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় এখন অনেকেই আর স্মরণে রাখছে না তাদের সামাজিক স্ট্যাটাস বা অবস্থানের কথা আমরা অনেকেই হয়তো পৃথিবী বিধ্বং সী দুটি যুদ্ধ, ৭১ এর আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধ, ৭৪ এর দুর্ভিক্ষ আমরা দেখিনি তবে আমরা ইতিহাসর পাতা থেকে অথবা বড়দের কাছ থেকে যা শুনেছি তা করোনার কারণে কিছুটা হলেও সেই প্রতিচ্ছবি অনুভব করছি ২০২০সালের করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এবং এর নেতিবাচক প্রভাবও আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় ফেলা আসা সেই দুর্বিষহ দিনগুলির কথা ছোট এক ভাইরাসের কাছে গোটা বিশ্ব আজ অসহায় পৃথিবীর বড় বড় পরাশক্তিও আজ ধরাশায়ী একবিংশ শতাব্দীতে বিজ্ঞানের উৎকর্ষ সাধন হাই টেকনোলজির ব্যবহারে কারো কারো মনে নাস্তিকতার বীজ অংকুরিত হতে লাগলো ভাবতে শুরু করলো আল্লাহ বলতে কিছু নেই সব কিছুই প্রকৃতির দান অথচ আজ সমগ্র পৃথিবী চোখে দেখা যায় না এমন এক অদৃশ্য ভাইরাসের কাছে কুপোকাত আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এই মরণঘা তী ভাইরাসের কবল থেকে হিফাযত করুন

 

মুসলমানদের দ্বিতীয় আনন্দের দিন হল ঈদুল আযহা প্রতি বছর আরবি জ্বিলহাজ্ব মাসের ১০ তারিখে উয্যাপিত হয়ঈদুল আযহা ইসলামের ইতিহাসে পবিত্র এই ঈদকে নিয়ে রয়েছে অনেক ইতিহাস  আল্লাহ তায়ালার প্রিয় বান্দা তাঁর রাসূল হযরত ইবরাহীম খালিলুল্লাহ (আঃ) এর স্মৃতিবিজড়িত এই উৎসব ইবরাহীম (আঃ) ছিলেন পাঁচজন বিশিষ্ট পয়গম্বরের মধ্য হতে একজন কোরআনের ভাষায় যাদেরকে বলা হয়উলুল আযমে মিনার রাসূল অর্থাৎ যে সকল রাসূলগণ (আঃ) দাওয়াতের কাজে অন্যান্য নবী রাসূলদের চেয়ে বেশি কষ্ট সহ্য করেছেন তাদেরকেই কোরআনেউলুল আযমবলা হয় পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াত সূরাতে ইবরাহীম (আঃ) সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে এমনকি কোরআনে একটি সূরাও নামকরণ করা হয়েছে তাঁর নাম অনুসারে যা সূরাইবরাহীমনামে পরিচিত মুসলমানরা যে কোরবানি করে থাকে তার মূল পটভূমি হল হযরত ইবরাহীম (আঃ) তাঁর প্রিয় সন্তান ইসমাইল (আঃ) কোরআনে উল্লেখিত বিভিন্ন আয়াতের দ্বারা কোরবানি এর সংশ্লিষ্ট বিষয় সমূহ সংক্ষেপে আলোকপাত করা হলো

 

কোরবানি হতে হবে শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালার জন্য

একজন মুমিনের প্রতিটি কাজ হতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোরবানি এর ব্যতিক্রম নয় পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতের দ্বারা আল্লাহ তায়ালা নিজেই এখলাসের সাথে কোরবানি করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন কোরআনের বাণী “ (হে নবী আপনি তাদেরকে) বলুন, আমার নামাজ, আমার কোরবানী, আমার জীবন, আমার মরণ সবকিছুই বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহরই জন্য”(সূরা আল-আনআম, আয়াত - ১৬২) অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা রাসূল (সাঃ) কে উদ্দেশ্য করে বলেনআপনি আপনার প্রতিপালকের জন্যই নামাজ আদায় করুন এবং তাঁর জন্যই কোরবানি দিন” (সূরা আল কাওসার, আয়াত - ) উপরে উল্লেখিত আয়াত দুটি অর্থের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়  যে, প্রথম আয়াতে অন্যদেরকে বলতে এবং দ্বিতীয় আয়াতে নিজেকে (রাসূল (সাঃ) কে) আল্লাহর জন্যই কোরবানি দিতে বলেছেন ইমাম ইবনে কাছির (রহঃ) দ্বিতীয় আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেনঃবিশুদ্ধ মত হলনাহারবলতে কোরবানি উদ্দেশ্য একারণে রাসূল (সাঃ) আগে ঈদের নামায আদায় করতেন তারপরে কোরবানি দিতেন” (তাফসিরে ইবনে কাছির, খন্ড - , পৃষ্ঠা - ৫০৩) হাদিসে এসেছে হযরত বারা ইবনে আযেব (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) ঈদুল আযহার দিন ঈদের নামাযান্তে আমাদের উদ্দ্যেশে ভাষণ দিলেন অতঃপর তিনি বলেনযে ব্যক্তি আমাদের ন্যায় (ঈদের) নামাজ আদায় করলো এবং আমাদের ন্যায় কোরবানি দিলো সেই সঠিক করলো আর যে (ঈদের) নামাজের পূর্বে কোরবানি করলো নিশ্চয়ই ইহা নামাজের পূর্বে তার জন্য কোরবানি নাই” (সহীহ আল-বোখারী, হাদীস - ৯০২) অর্থাৎ তার কোরবানি গ্রহণযোগ্য নয়


কোরবানি কবুল হওয়ার পূর্ব শর্ত তাকওয়া বা খোদাভীতি

আল্লাহ তায়ালার নিকট কোরবানি গ্রহণযোগ্য বা কবুল অন্যতম শর্ত হলো তাকওয়া তাকওয়া বা খোদাভীতি আল্লাহ তায়ালার তরফ থেকে লক্ষ্যণীয় তাকওয়ার সম্পর্ক বান্দার অন্তর সাথে বান্দার আমল বা কাজের সাথে আল্লাহ তায়ালা বলেননিশ্চয়ই কখনই (কোরবানি কৃত পশুর) মাংস বা রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না, পৌঁছায় শুধু তোমাদের নিষ্ঠাপূর্ণ খোদাভীতি” (সূরা হজ্ব, আয়াত - ৩৭) হাদিসে এসেছে হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেনঃনিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের চেহারা সম্পদের দিকে লক্ষ্য করেন না বরং তিনি তোমাদের কাজ অন্তরের দিকে লক্ষ্য করেন” (সূনানে ইবনে মাযাহ, হাদীস - ৪১৪৩)

 

স্মৃতিবিজড়িত কোরবানি

কোরবানি শব্দটি উচ্চারণ করলেই মনে পড়ে হযরত ইবরাহীম (আঃ) ইসমাঈল (আঃ) সেই ঘটনার কথা কেননা কোরবানির প্রচলিত যে আমল মূলত আমরা করছি তা সেই স্মৃতিরই পুনরাবৃত্তি আল্লাহ তায়ালা খুবই সংক্ষিপ্তাকারে তাঁর প্রিয় খলিলের ঘটনাটি তুলে ধরেছেন কোরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেনঃ ‘(ইবরাহীম (আঃ) দোয়া করলেন) হে আমার প্রতিপালক ! আমাকে সৎকর্মশীল সন্তান দান করুন অতঃপর আমি তাকে এক ধীরস্থির বুদ্ধিমান পুত্রের সুসংবাদ দিলাম ছেলে যখন পিতার কাজকর্মে অংশগ্রহন করার মতো হলো, তখন তিনি বললেন হে প্রিয় বৎস! আমি স্বপ্নে দেখিছি যে, সন্দেহীনভাবে আমি তোমাকে কোরবানি করছি এখন দেখ এই বিষয়ে তোমার কী মত?

 (ইসমাইল (আঃ) জবাবে) বললেন, হে আমার প্রিয় পিতা আপনি যা করতে আদিষ্ট হয়েছেন তা করুন অচিরেই আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন পিতাপুত্র উভয়ই নিজেদেরকে সমর্পিত করল এবং ইবরাহীম পুত্রকে (জবাই করার জন্য) শুইয়ে দিল তখন আমি তাকে বললাম, হে ইবরাহীম! তুমি তো স্বপ্নের আদেশ সত্যি সত্যি পালন করেছো এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদের পুরস্কৃত করি” (সূরা সাফফাত, আয়াত - ১০০-১০৫)

 

আল্লাহর নামে কোরবানি দেয়া গরিবের মাঝে মাংস বন্টন করা

কোরবানির পশু জবাই করার সময় আল্লাহ তায়ালার নামে যবেহ দেয়া পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা মুমিন বান্দাদেরকে তাঁর নাম নিয়ে যবেহ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন কোরবানীকৃত পশুর গোশত নিজেরা খাওয়া সাথে সাথে যারা অতিদরিদ্র মানুষের কাছে সাহায্যের জন্য হাত পাতে আর যারা হাত পাতে না উভয়কেই কে দান করা কোরআনের বাণী: “আর তিনি তাদেরকে জীবনোপকরণ হিসেবে যে গবাদি পশু দিয়েছেন, তা থেকে নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নামে জবাই কর অতঃপর তা থেকে তোমরা খাও এবং অতিশয় অভাবী দরিদ্রদেরও খাওয়াও” (সূরা আল- হজ্ব, আয়াত - ২৮) অপর এক আয়াতে এসেছেএবং উটকে তোমাদের জন্য আল্লাহর নিদর্শনগুলোর মধ্য হতে অন্যতম করেছি; তাতে রয়েছে তোমাদের কল্যাণ; তাই দাঁড়ানো অবস্থায় ওদের জবাইকালে আল্লাহর নাম নাও, যখন ওরা কাত হয়ে পড়ে তখন তা হতে খাও এবং অভাবের কারণে যে চায় এবং যে চায় না উভয়কেই খাওয়াও” (সূরা আল-হজ্ব, আয়াত - ৩৭)

পরিশেষে যে কথা না বললেই নয় যে, আল্লাহ তায়ালা যাদেরকে কোরবানি করার সার্মথ্য দিয়েছেন, তাদেরকে কোরবানি করার ক্ষেত্রে শরীয়তের অন্যান্য হুকুম আহকামের দিকে খেয়াল রাখতে হবে আর এটা কখনই কাম্য নয় যে, আমরা পেট ভরে কোরবানির মাংস খাব, আর আমাদের পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশীরা অভুক্ত থাকবেন

 

 


ক্যাটেগরিঃ ধর্ম,


ড. মোহাম্মদ নাজমুল হাসান আযহারী

শিক্ষক,লেখক ও গবেষক। মিশরের আল আযহার ইউনিভার্সিটি থেকে অনার্স এবং মালয়শিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেছেন।



বৈশাখে ইলিশ নয়

বৈশাখে ইলিশ নয়

উৎপাদিত মাছের প্রায় ১২ শতাংশ আ.. বিস্তারিত

সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি

সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি

বাতিলযোগ্য সাইবার নিরাপত্তা আই.. বিস্তারিত

সাকিব: বিতর্ক যার সঙ্গী

সাকিব: বিতর্ক যার সঙ্গী

বাংলাদেশ তখনো বিশ্ব ক্রিকেট অঙ.. বিস্তারিত