বিপরীত স্রোত প্রতিবেদন
কোভিড-১৯ বা সহজ পরিচয়ে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে পরিচিতি জীবন অনেক ক্ষেত্রেই বদলে গিয়েছে। শিক্ষাঙ্গনও এর বাইরে নয়। সরকার পরিষ্কার ভাবেই জানিয়েছে করোনার প্রভাব না কমা পর্যন্ত কোনো স্কুল কলেজ বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে না। যেহেতু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ফিজিকাল ক্লাস করা এখন সম্ভব হচ্ছে না তাই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনলাইন ক্লাস শুরু হয়েছে। এখন অনলাইন ক্লাস একটি পরিচিত শব্দ হয়ে উঠেছে।
প্রথমে এই ব্যবস্থা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শুরু হলেও এখন তা প্লে গ্রুপ পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছে। তবে অনলাইনে ক্লাসের জন্য প্রযুক্তিগত এবং সেটা নিশ্চিত করতে অর্থনৈতিক সক্ষমতা প্রয়োজন। যার ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চল বা আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়াদের পক্ষে অনলাইন ক্লাস এখনো স্বপ্নের বিষয়। তাই সারা দেশ জুড়ে যে শিক্ষা কার্যক্রম এখন চলছে তাকে সার্বজনীন বলা না গেলেও অনেক ক্ষেত্রে ছাত্র শিক্ষকদের ব্যস্ত রাখার সুযোগ তৈরি হয়েছে। অনেকে কিছু ক্ষেত্রে ভবিষ্যতেও অনলাইন ক্লাস চালু রাখার কখা বলছেন।
অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ
এ
বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে শিক্ষাবিদ ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বিপরীত স্রোতকে বলেন,‘আমরা জানি যে, এটা একটা সাময়িক ব্যাপার। তাই এটাকে আমরা ততোটা গুরুত্ব দিয়ে নিচ্ছি না। যদি বলা হতো এভাবেই সব সময় ক্লাস করতে হবে তাহলে আমরা শ্বাসরূদ্ধকর অবস্থার মধ্যে পড়তাম। যেহেতু এখন আর কোনো পথ
নাই, সেদিক চিন্তা করলে আমরা এক
ধরনের রিলিফ ফিল করছি। আনন্দ লাগছে, ভালো লাগছে। যন্ত্রের অনেক দোষত্রুটি আছে ঠিকই, আবার যন্ত্রের কিছু সুবিধাও আছে। এটা একটা ভালো বিকল্প। ভবিষ্যতে অফিস মিটিং, কনফারেন্স বা এই ধরনের বিষয়গুলো এই পদ্ধতিতে হতে পারে।
তবে শিক্ষাক্ষেত্রে এই পদ্ধতি স্থায়ী ভাবে রাখা যাবে না। স্কুল কলেজ কোনো কোচিং সেন্টার বা প্রাইভেট টিউটরের বাড়ি নয়। এটা একটা বন্ধুত্বের জায়গা, উষ্ণতার জায়গা, আনন্দের জায়গা, স্বপ্নের জায়গা, খেলার জায়গা, অবকাশের জায়গা।
সেটাকে কখনো যন্ত্রের মধ্যে ঢোকানো উচিত নয়।’
অনলাইন ক্লাসের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং ইন্টারনেট প্রাপ্তির বিষয়টি। আর
দুটোর জন্যই প্রয়োজন অর্থনৈতিক সক্ষমতা। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় বা ইংরেজি মিডিয়াম স্কুল কলেজগুলো এক্ষেত্রে এগিয়ে গেলেও দেশের বড় অংশই এর আওতায় আসেনি। অথচ বাংলাদেশে দূরশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে বহু আগেই।
এ বিষয়ে ইতিহাস খুঁজতে গিয়ে বাংলাপিডিয়া থেকে জানা যায়, "১৯৫৭ সালে
শিক্ষা পুনর্গঠন কমিশন
পরীক্ষামূলক একটি
দূরশিক্ষণ স্কুল
স্থাপনের সুপারিশ
করে যার দ্বারা নিয়মিত শ্রেণিকক্ষে যেতে
পারেনা অথচ শিক্ষালাভে আগ্রহী
এমন শিক্ষার্থীদের শিক্ষা
দেওয়া যায়। এরপর থেকে বিভিন্ন দূরশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের
সৃষ্টি হতে থাকে। শিক্ষা অধিদপ্তর দূরশিক্ষণের
ভিত্তি স্থাপনের উদ্দেশ্যে
২০০ রেডিও সেট বিতরণ করে। ১৯৬২ সালে প্রথম একটি অডিও-ভিডিও কোষ এবং পরবর্তীকালে অডিও-ভিডিও
শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপন
করা হয়। ১৯৮০ সালে পাইলট প্রকল্প হিসেবে একটি বিদ্যালয় সম্প্রচার
অনুষ্ঠান চালু
করা হয়। ১৯৮৩ সালে এ দুটি দূরশিক্ষণ শিক্ষাকেন্দ্রকে
একীভূত করে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট
অফ এডুকেশন মিডিয়া অ্যান্ড টেকনোলজি গঠন
করা হয়। ১৯৮৫ সালে স্থাপিত হয় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট
অফ ডিসট্যান্স এডুকেশন
বা বাইড । পরবর্তীকালে ন্যাশনাল
ইনস্টিটিউট অফ
এডুকেশন মিডিয়া অ্যান্ড টেকনোলজি এবং
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট
অফ ডিসট্যান্স এডুকেশন
একীভূত হয় এবং শিক্ষা কার্যক্রম চলতে
থাকে। অডিও-ভিডিও উপকরণ তৈরি ও বিতরণ ছাড়াও বাইড দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতে
বি.এড কর্মসূচি চালু
করে। এ সময় মিল্টন কিন্সে বৃটিশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের
আদলে একটি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
স্থাপনের চিন্তাভাবনা
শুরু হয়।...১৯৯২
সালে সংসদে একটি আইন পাসের মাধ্যমে বাংলাদেশ ওপেন
ইউনিভার্সিটি বা
উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়
(বাউবি) প্রতিষ্ঠা লাভ
করে।"
দুঃখজনক বিষয় হলো, কোভিডের সময় সবচেয়ে কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে সবার প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার দায়িত্ব ছিল প্রায় তিন দশক হয়ে যাওয়া ওপেন ইউনিভার্সিটির। সেটা শুধু প্রযুক্তিগত সুবিধা নয় তাদের পরামর্শও এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারতো। কেননা তারা পুরোপুরি বাংলাদেশের সংস্কৃতির মধ্যেই গড়ে উঠেছে। কিন্তু তারা এখানে অভিভাবকের ভূমিকায় থাকা তো দূরে থাক, মনে হয় যেন করোনার ভয়ে আতংকিত হয়ে দীর্ঘ কোয়ারেন্টিনে আছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে বাংলাদেশ ওপেন ইউনিভার্সিটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক দুঃখপ্রকাশ করে বলেন, ‘অনলাইনে ক্লাস নেয়ার কোনো ধরনের প্রস্ততি ওপেন ইউনিভার্সিটির ছিল না। মার্চে যে শিক্ষাবর্ষের ক্লাস শুরু হওয়ার কথা তা শুরু হয় ১৭ জুলাই। আমাদের বলা হয় অনলাইনে ক্লাস নিতে হবে। আমরা তখন সোশাল মিডিয়া ব্যবহার করে ক্লাসের প্রস্ততি নিই। এটা শুধু অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএসসি, এইচএসসি, ডিগ্রি পাস-সহ আরো যেসব কার্যক্রমে লাখ লাখ শিক্ষার্থী জড়িত আছে তাদের কোনো ক্লাস হচ্ছে না। টিভিতে কিছু প্রোগ্রাম হয়, তাতে কোনো সুফল আসছে বলে মনে হয় না। তারা কিন্তু পুরোপুরি ক্লাসের বাইরে থেকে যাচ্ছে। অবকাঠামোগত সমস্যা এবং আরো নানা কারণে অনলাইন ক্লাসগুলোতে উপস্থিতি তিন ভাগের এক ভাগও হয় না। কারণ তাদের আগে থেকে তৈরি করা হয় নি। তারা বিষয়টি সম্পর্কে কোনো ধারণাই রাখে না। আর অনলাইন ক্লাস নিলেও অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার কোনো নিয়ম ইউনিভার্সিটির নেই। এটা করতে হলে অনেক ধাপ পার হতে হবে।’
অনলাইনের ক্লাস নেয়ার বিষয়টি অধিকাংশের জন্যই নতুন অভিজ্ঞতা। কোন মাধ্যম ব্যবহার করে এটি করা সহজ হবে এটা ঠিক করতেও অনেক সময় পার হয়ে গিয়েছে। এ বিষয়ে বিপরীত স্রোতের সঙ্গে কথা বলেন মালিবাগে অবস্থিত সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের ক্যামব্রিজ কারিকুলাম ভিত্তিক ইংলিশ মিডিয়াম সেকশনের ভাইস প্রিন্সিপাল শাহনাজ বেগম। তিনি বলেন, ‘টিচারদের ট্রেনিংয়ের বিষয়ে প্রথমে আমি নিজে বোঝার চেষ্টা করেছি। তারপর আমাদের আইটি টিমকে দিয়ে একটি ভিডিও বানিয়েছি যেন সব
শিক্ষকরা বুঝতে পারেন কোনটার পর কোন কাজটা করতে হবে। এরপর তারা প্রতি চারজন করে গ্রুপ করে প্র্যাকটিস করেছেন। তারা নিজেরা কখনো শিক্ষকের ভূমিকায় আবার কখনো স্টুডেন্টের ভূমিকায় ছিলেন।
কারো সমস্যা হলে পরে সেটা নিয়ে আলাপ করে সমাধান করেছেন।’
ফিজিকাল ক্লাসের তুলনায় অনলাইন ক্লাসকে কীভাবে দেখছেন এ প্রশ্নের উত্তরে শাহনাজ বেগম বলেন,‘প্রথম কথা হচ্ছে, অনলাইনের ক্লাসকে ফিজিকাল ক্লাসের সঙ্গে তুলনা করার সুযোগ নেই। ফিজিকাল ক্লাসে এক
সঙ্গে সব স্টুডেন্টদের এক্সপ্রেশন দেখা যায়।
আই কনটাক্ট হয়। সামনা সামনি কথা বলা আর ফোনে কথা বলা এক হয় না। এখানে ব্যাপারটা শুধু সিলেবাস কমপ্লিট করার বিষয় নয়। পাশাপাশি টিচার ও
স্টুডেন্টদের মধ্যে আরো কিছু বিষয় থাকে।
সেখানে তারা এথিকস শেখে, এটিকেট শেখে, তারা একটা আচরণ করবে সেটার অ্যাকশন রিঅ্যাকশন অনেক কিছু আছে। বাচ্চদের সেন্স ডেভেলপ করার এবং নতুন কোনো জ্ঞান দেয়ার অনেক সুযোগ থাকে।
সেটা অনলাইনে হয়
না । এ কারণে পুরো রুটিন আমরা ফলো করতে পারছি না। টানা অনেকগুলো ক্লাস অনলাইনে বাচ্চারা করতে পারে না,
করানো উচিতও নয়।
আমরা ক্লাসের সংখ্যা কমিয়ে এনেছি।
দ্বিতীয়ত করোনা হঠাৎ আসা একটি পরিস্থিতি। এর
জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম না। বাইরে যে কোর্সগুলো অনলাইনে সাজানো হয় সেগুলো যিনি করাচ্ছেন বা যিনি করছেন তারা আগে থেকেই জানেন কোর্সটি অনলাইনে হবে। এগুলো সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের জন্য হয়ে থাকে।
ছোটদের জন্য নয়। এছাড়া সব স্কুলে টিচাররা ট্রেইনড ছিলেন না। আবার এমন এক পরিস্থিতি যে সময় সহযোগিতার জন্য কেউ কারো সাথে দেখা করতেও পারছেন না।’
স্কুলগুলো ফিজিকাল ক্লাস না নিয়েও পুরো বেতন নিচ্ছে বা টিউশন ফির জন্য চাপ দিচ্ছে এমন অভিযোগ রযেছে অভিভাবকদের পক্ষ থেকে। এই প্রশ্নের
উত্তরে শাহনাজ বেগম বলেন, ‘আমাদের খরচ কিন্তু কমছে না। শিক্ষকরা কর্মরত আছেন। কখন আবার পুরোপুরি ক্লাস শুরু হয় তা বলা যাচ্ছে না।
তাদের বেতন, স্কুল কলেজের বাড়ি ভাড়াসহ সব খরচই আছে। শুধু ইলেকট্রিসিটির বিল কিছুটা কমেছে।
কিন্তু বাড়তি কিছু খরচ আছে। টেকনিকাল খরচ বেড়েছে।
অফিসের প্রয়োজনে যাদের আসতে হচ্ছে তাদের স্যানিটাইজিংয়ের জন্য ব্যবস্থা রাখতে হচ্ছে।
সব বিষয়ে অনেক সতর্ক থাকা হচ্ছে।
এরপরও যেহেতু করোনা পরিস্থিতি সবার জন্যই চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে তাই অভিভাবকদের যতোটা সম্ভব ছাড় দেয়ার চেষ্টা করছি। আগে বাচ্চাদের দুটো ড্রেস ছিল। এবার তা একটি করে দেয়া হয়েছে।
যারা ড্রেস বানাতেন আমরা তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ। তাদের কিছুটা ক্ষতিপূরণ দিতে হচ্ছে।
অনেক স্টুডেন্টের টিউশন ফি তিন থেকে ছয়
মাস বকেয়া পড়েছে।
অনেকে আর আসেই নি। অভিভাবক যারা আসছেন তাদের একটি অংশ
কয়েক মাসের বকেয়া টিউশন ফি
পরিশোধ করাকে চাপ মনে করছেন।
অভিভাবকদের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে আমরা অনেকের টাকার একটা ভাগ কমিয়ে দিয়েছি।
এছাড়া আগস্ট মাস থেকে নতুন সেশনে যতোদিন ফিজিকাল ক্লাস শুরু না হবে ততোদিন শতকরা ১৫ ভাগ টিউশন ফি কম নেয়া হবে বলে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
মানারাত ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী মুসকান তাদের বনশ্রী আবাসিক এলাকার বাসায় বসে মায়ের মোবাইলে অনলাইনে ক্লাস করছে
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুধু অনলাইন ক্লাস নেয়া নয়। ছাত্রছাত্রীদের আগ্রহী করে তোলাও বড় চ্যালেঞ্জ। এ বিষয়ে মাস্টারমাইন্ড ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের বিজনেস বিষয়ের সিনিয়র টিচার মুস্তাকিম আহমেদ বলেন, ‘গত কয়েক মাসে অনলাইনে ক্লাস নিয়ে মিশ্র অভিজ্ঞতা হয়েছে। অনলাইন ক্লাসে পাওয়ার-পয়েন্ট স্লাইড, প্রাসঙ্গিক
ভিডিও ইত্যাদি বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ তৈরি করা যায়। ক্লাসের অভিজ্ঞতা আরও ভালো করার জন্য আমি প্রায়ই বিশ্ববিখ্যাত
পত্রিকাগুলোর দ্বারস্থ হই।এসব পত্রিকার অনলাইন এডিশনের বিভিন্ন খবর, প্রবন্ধ শিক্ষার্থীদের সাথে সরাসরি শেয়ার করা যায়। তবে বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে নামিদামি কোম্পানিদের
ব্যবসা কৌশলও বেড়েছে। তারা তাদের অ্যাপগুলোকে
সেভাবে সাজিয়েছে। ক্লাসের ১৫-১৯ বছর বয়সী ছেলেমেয়েরা
কিছুটা দুষ্টুমিপ্রবণ। এমনিতে তাদের থামাতে ফিজিকাল ক্লাসে মাঝে মাঝে বেগ পেতে হয়। অনলাইন ক্লাসে অবশ্য এই ঝামেলা নেই! চাইলেই সবাইকে চুপ বা মিউট করিয়ে রাখা যায়! ইন্টারনেটের এই যুগে এ ধরণের ক্লাস নেয়ার ঝক্কিও আছে।অনাকাঙ্ক্ষিত দর্শনার্থীরা
যারা আমাদের স্কুলের শিক্ষার্থী নয় তারা মাঝে মধ্যে ক্লাসে ঢুকে পড়তে চায়। তাই প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর পুরো নাম শিক্ষার্থী
তালিকার সাথে মিলিয়ে তারপর ক্লাস করার অনুমতি দিতে হয়। আরেকটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছি, যাদের প্রতিদিন ৬-৭টা ক্লাস থাকে সেইসব শিক্ষার্থীরা
শেষের দিকে আর মনোযোগ দিতে পারে না। এতো লম্বা সময় ধরে হেডফোন মাথায় দিয়ে, স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকা সবার জন্যই কঠিন।’
এরপর এই শিক্ষক আবেগময় কন্ঠে বলেন, ‘রক্ত মাংসের ছাত্র ছাত্রীদের সামনে শিক্ষক স্বয়ং দাঁড়িয়ে আছেন। জীবন বদলে দেয় এমন কিছু তিনি বলছেন আর তারা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছে..এই অপূর্ব দৃশ্যপটে খুব শীঘ্রই উপস্থিত হবার অপেক্ষায় আছি।’
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অনলাইনে ক্লাস নেয়ার বিষয়টি প্রথম আলোচিত হয়। অনলাইনে ক্লাস
নেয়ার
ক্ষেত্রে পাবলিক
ও প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলোর সুবিধা বা অসুবিধা নিয়ে
বিপরীত
স্রোত
কথা
বলে
ড. শাকিল আহম্মেদের সঙ্গে। তিনি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার
ও রাজনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং
পাশাপাশি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির পলিটিকাল সায়েন্স অ্যান্ড সোশিওলজি ডিপার্টমেন্টের খণ্ডকালীন শিক্ষক। শাকিল
আহম্মেদ বলেন,
‘এই
বিষয়টির তিনটি
দিক
আছে।
প্রথমত
প্রাতিষ্ঠানিক দিক।
যেটি
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দিয়ে
থাকে।
প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনায় পাবলিক
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এগিয়ে
আছে।
সরকার
করোনা
ভাইরাসের প্রকোপের কারণে
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ
ঘোষণার
আগে
থেকেই
নর্থ
সাউথ
ইউনিভার্সিটি এই
বিষয়ে
প্রস্তুতি নেয়
এবং
দ্রুত
উদ্যোগ
নিয়ে
পরবর্তীতে সেমিস্টার সমাপ্ত
করে।
নর্থ সাউথের আইটি
সক্ষমতা অনেক
ভালো
হওয়ায়
প্রযুক্তিগত কাজগুলো সহজ
হয়।
পাবলিক
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে সরকারি
নির্দেশনা ও ইউজিসির গাইডলাইন অনুসরণ করা হয়।
যেমন
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমে
সিদ্ধান্ত ছিল
অনলাইন
ক্লাস
না
করার।
এর
পেছনে
কারণ
ছিল
সব
ছাত্রছাত্রীর আর্থিক
সক্ষমতা। তাছাড়া
হাওর
থেকে
পাহাড়ি
অঞ্চল
অর্থাৎ
দেশের
প্রত্যন্ত অঞ্চলে
ছড়িয়ে
থাকা
ছাত্রছাত্রীদের সবার
পক্ষে
অনলাইনে ক্লাসে
অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হওয়ায়
সমতা
রাখা
সম্ভব
হবে
না।
কিন্তু
পরবর্তীতে তারা
সিদ্ধান্ত নেন
১২
জুলাই
২০২০
থেকে
অনলাইনে ক্লাস
নেয়ার।
নর্থ সাউথের সিদ্ধান্ত নেয়ার
পর
প্রায়
চার
মাস
পর
জাহাঙ্গীরনগরে অনলাইনে ক্লাস
নেয়ার
সিদ্ধান্ত নেয়া
হয়।
তবে
জাহাঙ্গীরনগরে অধিকাংশ শিক্ষকই বিষয়টি
উৎসাহের সঙ্গে
গ্রহণ
করেছেন। এখানে
অনেক
তরুণ
শিক্ষক
আছেন
এবং
আইটি
জ্ঞানে
সমৃদ্ধ
ছাত্রছাত্রী আছেন
যারা
আগ্রহের সাথে
বিষয়টি
গ্রহণ
করেন।
কিছু
শিক্ষকের মধ্যে
অনলাইন
ভীতি
কাজ
করলেও
কয়েকটি
বিভাগে 'অনলাইন
ক্লাস
অ্যাসিসটেন্স গ্রুপ'
তৈরি
করা
হয়েছে।
যার
মধ্যে
শিক্ষক
ও উৎসাহী ছাত্রছাত্রীরাও আছেন।
এখানে
অনেক
ছাত্রছাত্রী তাদের
শিক্ষকদের স্বতঃস্ফূর্ততার সঙ্গে
টেকনিকাল বিষয়গুলো শিখিয়ে
দিচ্ছে। এই
বিষয়টি
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েও হচ্ছে।
ছাত্রছাত্রীদের কাছ
থেকে
আমরা
অনেক
টেকনিকাল বিষয়
শিখছি।
দ্বিতীয় বিষয়টি
ছাত্রছাত্রীদেরকে ঘিরে।
যারা
ঢাকায়
থাকে
তাদের
জন্য
অনলাইনে অনেক
সুবিধা
আছে।
জেলা
শহরেও
কিছু
সুবিধা
থাকলেও
সে
সব
এলাকায়
এবং
গ্রামগুলোতে মাঝে মধ্যে বিদ্যুৎ থাকে
না।
ফলে
তাদের
জন্য
অসুবিধা হয়।
শিক্ষকরা মানবিকভাবে নিয়মের
শিথিলতা দেখিয়ে
যারা
একটু
পিছিয়ে
আছে
তাদের
সহায়তা
করেন।
কিন্তু
পড়াশোনার আগ্রহ
বা
বোঝার
বিষয়ে
তারা
প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির চেয়ে
কোনো
অংশেই
কম
নয়।
কাঠামোগত কিছু
সমস্যা
থাকলেও
ছাত্রছাত্রীরা অনলাইনের বিষয়ে
খুবই
আগ্রহী।
তৃতীয়
বিষয়টি
হলো,
অনলাইনে ক্লাস
নেয়ার
ক্ষেত্রে শিক্ষকের অংশগ্রহণ। এই
প্রসঙ্গে অনলাইনে ক্লাস
নেয়া
আর
বাস্তবে শারীরিক উপস্থিতিতে ক্লাস
কোনটা
বেশি
স্বচ্ছন্দ্য বোধ
করেন
এমন
প্রশ্নের উত্তরে
এই
শিক্ষক
জানান,
সরাসরি
ক্লাস
নেয়ার
মাঝে
একটি
ভাষা
আছে,
সেটা
আমরা
সব
শিক্ষকই উপভোগ
করি।
সেটা
যেমন
সত্য। আবার
অনলাইনে ক্লাস
নেয়াটা
আমাদের
জন্যও
একটি
নতুন
বিষয়।
এর
আগে
হয়তো
বন্ধুদের সঙ্গে
জুম,
গুগল
মিট,
স্কাইপেতে কথা
বলেছি।
এখন
অনলাইন
ক্লাসে
নতুন
করে
আনন্দ
খুঁজে
পাওয়ার
চেষ্টা
করছি।
প্রথম
হচ্ছে
আমার
সময়
বেঁচে
যায়।
যেমন
আমার
মগবাজারের বাসা
থেকে
জাহাঙ্গীরনগর কিংবা
নর্থ সাউথে শুধু
যেতে
আসতেই
স্বাভাবিক অবস্থায় তিন
চার
ঘণ্টা
লেগে
যায়।
তারপর
যাওয়ার
আগের
প্রস্তুতি এবং
ফিরে
আসার
পর
বাড়তি
বিশ্রামের বিষয়টি
আছে।
এখন
সব
মিলে
অন্তত
পাঁচ
ঘণ্টা
সময়
আমার
বেঁচে
যায়।
দ্বিতীয় বিষয়
হলো,
বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে
থাকা
ছাত্রছাত্রীদের দেখতে
পাই।
আমি
যখন
ক্লাস
নিই
তখন
অনেক
সময়
গরু,
ছাগল
বা
মোরগের
ডাক
শুনতে
পাই
যা
আমার
কাছে
ভালো
লাগে।
ক্লাসরুমে সবাই
সাধ্যমতো ফর্মালভাবে আসে।
কিন্তু
অনলাইনে ছাত্রছাত্রীরা অনেক
স্বাভাবিক থাকে।
বাংলাদেশের সবখানে
ছড়িয়ে
থাকায়
আমি
তাদের
পরিবেশ
সম্পর্কে আরো
ভালো
জানতে
পারছি।
অসুবিধা হচ্ছে,
প্রতি
মুহূর্তে সতর্ক
তাকতে
হয়।
কারণ
চোখের
সামনে
যতোটা
সচেতন
থাকতে
হয়,
তার
চেয়ে
অনেক
বেশি
থাকতে
হয়
ক্যামেরার সামনে।
এই
দুটো
মাধ্যমকে আমি
মঞ্চ
নাটক
আর
টিভি
নাটকের
সঙ্গে
তুলনা
করতে
পারি।
মঞ্চ
নাটকে
সরাসরি
অভিনয়
দেখা
যায়।
আবার
টিভিতে হুমায়ূন আহমেদের নাটক
আমরা
আনন্দ
নিয়ে
দেখেছি। এই
দুটো
মাধ্যমের ভাষা
আলাদা।
তাই
আমি
অনলাইনে আর
বাস্তবে শারীরিক উপস্থিতিতে ক্লাস
নেয়ার
দুটো
মাধ্যমকেই সমান
গুরুত্বপূর্ণ মনে
করি।’
বিপরীত স্রোতের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর অনুভূতি জানার চেষ্টা করা হয় অনলাইন ক্লাসের সুবিধা অসুবিধা নিয়ে। ইউনিভার্সিটি অফ লিবারেল আর্টস -ইউল্যাবের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া নওশিন বলেন, 'আমার মতে
অনলাইন
ক্লাসের সুবিধা-অসুবিধা দুটোই আছে। সুবিধার দিকগুলো
হচ্ছে,
বাসায়
বসে
ক্লাস
করতে
পারছি.
এর
ফলে জার্নি করতে হচ্ছে
না,
সময়
ও এনার্জি বেঁচে যাচ্ছে। ক্লাস করার
মাঝে
বা
আগে-পরে বাসার কাজ
গুলো
করে
নিতে
পারছি,
মা-বাবার অসুস্থতার সময়ে
তাঁদের
কাছে
থেকে
সময়
দিতে
পারছি
কিন্তু,
ফিজিকাল ক্লাস
করার
যেই
আনন্দ,
সেটা
থেকে
বঞ্চিত
হচ্ছি। বন্ধু-বান্ধবের সাথে
আড্ডা
দেয়া
ও নতুন মানুষের সাথে
পরিচিত হওয়া
হচ্ছে
না
| ক্লাস
করার
সময়েও
কিছু
সমস্যা
হয়,
যেমন মাইক অন করে টিচারকে প্রশ্ন
করা
অনেক
সময়
হয়ে
উঠে
না। অনলাইনে কেমন
জানি
অস্থিরতা বিরাজ
করে,
টিচারের কথা
এক
টানা
শুনতে
শুনতে
একঘেয়েমি হয়ে
যায়
যদিও
টিচাররা তাদের
সেরাটা
দেয়ার
চেষ্টা
করছেন। তাই
অনলাইন
ক্লাস
নিয়ে
আমার
দুই রকম অনুভূতি থাকলেও
নেতিবাচক অনুভূতিই বেশি
|’
তবে কিছুটা ভিন্নমত জানিয়ে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বায়োটেকনোলজির শিক্ষার্থী ফাতেমা তুয
যোহরা
বলেন, ‘অনলাইনে ক্লাস করার ফলে
আমার
যাতায়াত করতে
হচ্ছে
না,
এতে
করে
আমার
টাকাও বেঁচে যাচ্ছে আর জার্নির কারণে আমি
অসুস্থ
হচ্ছি
না
| আমার
সবসময় ওয়াইফাই, ল্যাপটপ আছে, তাই আমার
কোনো
আপত্তি
নেই
| যেহেতু
আমি
আগে
থেকেই
খুব
বেশি
একটা
মানুষের সাথে
মিশতাম
না,
তাই
এখনও
আমি
ফ্রেন্ডদের সাথে
আড্ডা
দেয়াটা
মিস
করছি
না
| আগে
টানা
ক্লাস
করতে
করতে
আমার
ক্ষুধা
লাগলেও
খেতে
পারতাম
না,
কিন্তু
এখন
ক্লাস
করতে
করতে
খেতে
পারি
| কিন্তু
আমি
ল্যাব
ক্লাস
করতে
পারছি
না
বাসায়
থেকে,
তাই
আমার
সব
ল্যাব
কোর্সগুলো জমে
যাচ্ছে
যার
কারণে
পরে আমি একটু
পিছিয়ে
পড়বো। থিওরি
আর
ল্যাব
ক্লাস
একসাথে
না
করতে
পারলে
থিওরিটাও বুঝতে
একটু
অসুবিধা হয়|’
ইউল্যাবের কমপিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র পূর্ণ আশিকুজ্জামান বলেন, ‘প্রত্যেকটা জিনিসেরই সুবিধা
এবং
অসুবিধা আছে,
অনলাইন
ক্লাসও
তার
ব্যতিক্রম কিছু
না।
সুবিধা
বলতে
গেলে,
ঢাকার
ব্যস্ত
রাস্তা
এবং
অসহ্যকর ট্রাফিক আর
প্রতিনিয়ত সহ্য
করতে
হয়
না
| আর
ক্লাসের মাঝে
সেই
দৈনন্দিন জীবনের
কথা
বলে
অমনোযোগী হওয়া
প্রায়
অসম্ভব। অসুবিধা বলতে
গেলে
অনেক,
বাসায়
থাকতে
থাকতে
মন
খিটখিটে হয়ে
যাচ্ছে,
বন্ধুদের সাথে
সেই
আড্ডাটা আর
দেয়া
হচ্ছে
না,
খেলাধুলা করা
হচ্ছে
না,
স্যাররা ক্লাসে
ঢোকার
আগে
বন্ধুদের সাথে
যে হাসি
তামাশা
করা
হতো
এখন
আর
তা
হচ্ছে
না।
নতুন
কারো
সাথে
বন্ধুত্বও করা
সম্ভব
হচ্ছে
না।
সেই
সবুজ
মাঠ
এবং
আমাদের
ক্যাম্পাসের লাল
বিল্ডিংয়ে কাটানো
সময়গুলো
মনে
করতে
করতেই
এখনকার
এই
অনলাইন
ক্লাস
কেটে
যায়
নির্বিঘ্নে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী দুলালী ইকবাল জানালেন,‘আমার
আসলে
অনলাইন
ক্লাস
করতে
ভালো
লাগে
না।
পিডিএফ
করে
ম্যাথ বুঝতে হয়, টিচাররাও বোর্ড-এ বেশি কমফোর্টেবল। গ্রাফস এবং অন্যান্য বিষয়ের
জন্য
বোর্ডই
ভালো। অনলাইন
ক্লাসের একটাই
সুবিধা
হলো,
বাসায়
বসে
আরাম
করে
ক্লাস
করা
যায়
|’
ইউল্যাবের বিবিএ বিভাগের শিক্ষার্থী সামিউল
হোসেন
জানান, ‘অনলাইন ক্লাসের কিছু
বেশ
ভালো
দিক
আছে,
আবার
খারাপ
দিক
আছে। প্রথমত,
বিবিএ ডিপার্টমেন্টের যে ম্যাথ কোর্সগুলো থাকে, তা অনলাইনে করা
খুবই
কঠিন। সবাই
প্রবলেম ফেস
করে। বাকি
সাবজেক্টগুলো বেশ
ভালো
ভাবেই
চলছে। টিচাররাও ভালো
ভাবে হ্যান্ডল করছেন সব। আর নেগেটিভ সাইড
বলতে
অনেক
সময়
ইন্টারনেট প্রবলেম হয়।
ইলেকট্রিসিটি চলে গেলে ওয়াইফাই অফ হয়ে যায়। এর
ফলে
পরীক্ষার সময়
বিরাট
সমস্যা
হয়।তাই মিক্সড ফিলিংস।’
একেবারে শিশুদের নিয়েও অনলাইন ক্লাস চলছে। শিশুরা তাদের অনুভূতি বলতে না পারলেও তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে শোনা যায় তেমন কিছু বিষয়।
গ্রামীণফোন কর্মকর্তা সাব্বির আহমেদ
তার
নিজের
প্রথম
স্কুলের কথা
মনে
করতে
গিয়ে
বলেন,
‘প্রথম
দিকের
কোনো
একদিন
এক
সহপাঠী
টিফিন
পিরিয়ডে আমার
বক্স
থেকে
নিয়ে
সেদ্ধ
ডিম
খেয়ে
ফেলেছিল।’
নিজের
এমন
স্মৃতি
থাকলেও
সাব্বির আহমেদের পৌনে
চার
বছরের
ছেলে
সাফির
আহমেদের ক্লাস
শুরু
হলো
ঘরে
বসে,
অনলাইনে। সাফির
বসুন্ধরা আবাসিক
এলাকার
প্লেপেন স্কুলে
ভর্তি
হয়েছে
প্লে
গ্রুপে। সাব্বির আহমেদ
জানান,
‘আমাদের
প্রথম
দেখার
বিষয়
ছিল
স্কুলটি যেন
বাসার
কাছে
হয়
এবং
সেখানে
যেন
খেলার
মাঠ
থাকে।
আমাদের
বাসায়
আর
কোনো
শিশু
নেই।
তাই
সাফির
যেন
আরো
অনেক
শিশুর
সঙ্গে
মিশে
খেলাধুলা করতে
পারে
সেই
চিন্তাতেই মূলত
স্কুলে
দেয়া।
কিন্তু
কোভিডের কারণে
সবকিছু
অনিশ্চিত হয়ে
পড়ে।
এক
পর্যায়ে স্কুল
থেকে
জানানো
হলো,
জুলাই
থেকে
অনলাইনে ক্লাস
শুরু
হবে।
এতে
দেখা
গেল
প্রায়
অর্ধেক
স্টুডেন্টই কমে
যায়।
পনের
জনের
মতো
স্টুডেন্ট নিয়ে
ক্লাস
শুরু
হয়।
আসলে 'স্কুল কী'- এই
ধারণাটাই সাফিরের নেই।
সে
টিভি
দেখে।
তাই
প্রথমদিকে দেখা
গেল
অনলাইন
ক্লাসকে টিভি
বা
ইউটিউবের মতো
কিছু
ভেবেছে। তারও
যে
পার্টিসিপেট করতে
হবে
সেটা
তাকে
বোঝাতে
সময়
লাগছে।
এখন
সপ্তাহে তিনদিন
দেড়
ঘণ্টা
করে
ক্লাস
হচ্ছে।
মাঝে
অবশ্য
ব্রেক
টাইম
থাকছে।’
পৌনে চার বছরের সাফিরের স্কুল জীবন শুরু হলো অনলাইনে
বসুন্ধরা আবাসিক
এলাকায়
সাফির
যে
স্কুলটি ভর্তি
হয়েছে
সেই
প্লেপেন স্কুলের সপ্তম
শ্রেণীর ছাত্রী
নামিরা
সামিন
তার
অনুভূতি জানিয়ে
বলে,
‘১২
মে
পর্যন্ত ক্লাস সিক্সে আমাদের শুধু
রিভিশন
ছিল
প্রতিদিন দুইঘণ্টা করে
। জুলাইয়ের ৫ তারিখে সেভেনের ক্লাস
শুরু
হয়।
অনলাইন
ক্লাস
যখন
শুরু
হয়
তখন
ভেবেছিলাম কিছু
না
হওয়ার
থেকে
এটি
ভালো।
অনেকদিন পর
বন্ধুদের দেখা
যাচ্ছে
এটলিস্ট! তবে
ক্লাস
সেভেনের ওঠার
পর
সব
নতুন
পড়া।
স্কুলের ক্লাসে
যেমন
টিচাররা বোর্ডে
লিখে
বুঝিয়ে
দেন,
কোনো
প্রশ্ন
থাকলে
আমরা
করতে
পারি।
অনলাইনে সেটা
ঠিক
আগের
মতো
হয়
না।
আবার
ফ্রেন্ডদের ভিডিওতে শুধু
দেখা
যাচ্ছে,
কথা
বলা
যাচ্ছে
না।
স্কুলে
আমাদের
একটি
ফুটবল
টিম
ছিল।
সবাই
মিলে
খেলতাম। সেটা
খুব
মিস
করি।
স্কুলের ক্লাসে
হোমওয়ার্ক পরদিন
দিলেও
হতো।
কিন্তু
এখন
অনলাইনে টাইম
দিয়ে
দেয়া
হয়।
ফলে
পড়াশোনার প্রেশার আগের
চেয়ে
বেশি।
আগে
ক্লাসে
কোনো
পরীক্ষা দিলে
পুরো
সময়টা
পেতাম
লেখার
জন্য
তারপর
সরাসরি
খাতা
জমা
দিতাম।
এখন
সময়
শেষ
হওয়ার
দশ
মিনিটি
আগে
পরীক্ষা শেষ
করে
ছবি
তুলে
তারপর
ইমেইল
করতে
হয়।
স্কুলে
গিয়ে
পড়াশোনার মজাই
আলাদা,
এটা
অনলাইনে একবারেই পাই
না।’
মম
ড. বিজন কুমার শীল বিস্তারিত
বিপরীত স্রোত প্রতিবেদন বিস্তারিত
ডা. আহমদ মরতুজা চৌধুরী বিস্তারিত
যারিন মালিয়াত অদ্রিতা বিস্তারিত
মোহাম্মদ মাহমুদুজ্জামান বিস্তারিত
উৎপাদিত মাছের প্রায় ১২ শতাংশ আ.. বিস্তারিত
বাতিলযোগ্য সাইবার নিরাপত্তা আই.. বিস্তারিত
বাংলাদেশ তখনো বিশ্ব ক্রিকেট অঙ.. বিস্তারিত
ব্রেদিং আউট বার্ডেন নামে কর্ম.. বিস্তারিত