ডা. তনিমা নুসরাত জাবীন
প্রতিদিন দুই বেলা নিয়মিত ব্রাশ করি,কখনো মিস হয় না। তারপরও মুখে দুর্গন্ধ হয়, মাড়ি ফুলে যায়, রক্ত পড়ে অনেক - রোগীই এরকম অভিযোগ নিয়ে আসেন। শুধু তাই নয় নিয়মিত ব্রাশ করেন উপর থেকে কোনো গর্ত বা ক্যাভিটি দেখা যাচ্ছে না কিন্তু প্রচন্ড ব্যথা নিয়ে রোগী আসেন আমাদের কাছে। এক্সরে করলে দেখা যায় কোনো এক দাঁতের পাশ দিয়ে যে পাশে একটা অন্য দাঁতের সাথে লেগে থাকে সেখানে একটি গর্ত বা ক্যাভিটি তৈরি হয়েছে সেটা দাঁতের গভীরে স্নায়ুতে পৌঁছে ব্যথার সৃষ্টি করছে। এইসব সমস্যার শুরু দুই দাঁতের মাঝের জায়গা যেটাকে আমরা ইন্টারডেন্টাল স্পেস বলে থাকি। যতো ভালোভাবে ব্রাশ করুন না কেন ব্রাশের পক্ষে এই জায়গায় পৌঁছানো সম্ভব নয়। যার ফলে জায়গাটি অপরিষ্কার থেকে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করে। এখানেই আপনার বন্ধু হল ডেন্টাল ফ্লস। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে একবার করে ফ্লসিং আপনার টুথব্রাশ এর কার্যক্ষমতাকে আরো বাড়িয়ে তুলবে।
চোয়ালের হাঁড় এবং মাড়ির মধ্যে দাঁতের অবস্থান একটু বুঝিয়ে বলা যাক, দাঁতের দুইটি অংশঃ ক্রাউন এবং রুট/শিকড়। ক্রাউন হলো মাড়ি উপরে থাকা যে অংশটি আমরা সবাই দেখতে পারি। রুট অথবা শিকড় অংশটি চোয়ালের হাঁড়ের মাঝে অবস্থান করে এবং এই হাঁড় খুব শক্তভাবে মাড়ি দ্বারা আবৃত থাকে। এই মাড়ির খুব সামান্য কিছু অংশ(১-৩ মিঃমিঃ) সরাসরি দাঁতের ক্রাউনকে আবৃত করে থাকে, কিন্তু খুব শক্তভাবে নয়। যার ফলে এই জায়গাটিতে খুব সহজেই খাদ্যকণা আটকে থাকে ডেন্টাল প্লাক তৈরি করতে পারে। ব্রাশিংয়ের মাধ্যমে খুব সহজেই দাঁতের বাইরের এবং ভেতরের দিকের প্লাক সরানো সম্ভব কিন্তু দুই দাঁতের মাঝে সেই ইন্টারডেন্টাল স্পেস, সেখানে আটকে থাকা খাদ্যের ক্ষুদ্র কণা এবং প্লাক দূর করা সম্ভব নয়। এই ডেন্টাল প্লাক সময়ের সাথে শক্ত হয়ে টারটার বা ক্যালকুলাস তৈরি করে থাকে যা সাধারণত পাথর নামে পরিচিত। ক্যালকুলাসের কারণে মুখের দুর্গন্ধ হতে পারে এবং এটি ব্রাশিংয়ের মাধ্যমে দূর করা সম্ভব নয়। এটার জন্য ডেন্টাল সার্জনের শরণাপন্ন হতে হবে। ক্যালকুলাস না সরালে এর জীবাণু থেকে হতে পারে জিনজিভাইটিস বা মাড়ির প্রদাহ রোগ যেখানে মাড়ি কিছুটা ফুলে যায়, লাল বর্ণ ধারণ করে এবং ব্রাশিংয়ের সময় রক্ত পড়ে। জিঙ্গিভিটিস-এর চিকিৎসা সময় মতো না করা হলে জীবাণু আরো গভীরে প্রবেশ করে, ফলে দাঁতে ক্যাভিটি হতে পারে, আবার দাঁতকে ধরে রাখা হাঁড়ের মধ্যে প্রদাহ দেখা দিতে পারে ফলে হাঁড় ক্ষয় হয়ে দাঁত অকালে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
কীভাবে ফ্লসিং করবেনঃ ১৮ ইঞ্চির মতো ফ্লস নিয়ে তার দুই প্রান্ত হাতের মাধ্যমে আঙ্গুলে শক্ত করে পেঁচিয়ে নিতে হবে। মাঝের ১-২ ইঞ্চি ফ্লস দাঁতের ফাঁকে ঢোকানোর জন্য রাখতে হবে। এবার দুই হাতের তর্জনী এবং বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে ফ্লস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আস্তে করে দাঁতের ফাঁকে ঢুকিয়ে দাঁতের গঠন অনুযায়ী ফ্লসকে বাঁকা করে দাঁতের সাথে লাগিয়ে উপর নিচে অভিমুখে পরিষ্কার করতে হবে। পাশাপাশি অভিমুখে ফ্লসিং করলে মাড়িতে আঘাত লাগার সম্ভাবনা থাকতে পারে। এভাবে প্রতিটি দাঁতের ফাঁকে ফ্লসিং পুনরাবৃত্তি করতে হবে। ব্যবহৃত ফ্লসটি ফেলে দিতে হবে।
ফ্লসিং প্রক্রিয়াটি অনেকের জটিল মনে হতে পারে প্রশ্ন আসতে পারে। মাউথওয়াশ দুই দাঁতের মাঝে গিয়ে পরিষ্কার করতে পারে তাহলে তখন ফ্লসিং কেন? আসলে মাউথওয়াশ দাঁতের ফাঁকে গিয়ে জীবাণু দূর করে ঠিকই কিন্তু জীবাণু তৈরীর উৎস খাদ্যকণা, প্ল্যাক এগুলো দূর করার ক্ষমতা মাউথওয়াশের নেই। তাই মাউথওয়াশ ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক নয় বরং প্রতিদিন ফ্লসিং করা অপরিহার্য। আমরা সবাই এটা মানতে বাধ্য যে ডেন্টাল চিকিৎসা খরচ অনেক বেশি। আপনার দৈনন্দিন ৫ মিনিটের ফ্লসিং সেই খরচ অনেকটাই কমিয়ে দিতে পারে, বাকিটা আপনার সিদ্ধান্ত।
লেখক পরিচিতি
ডা. তনিমা নুসরাত জাবীন
ডেন্টাল সার্জন, ডেন্টোটাল- অ্যাডভান্স ডেন্টাল লাইফলাইন অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার।প্রভাষক, কনজারভেটিভ ডেন্টিস্ট্রি অ্যান্ড এনডোডন্টিকস, সাপোরো কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল
ড. বিজন কুমার শীল বিস্তারিত
বিপরীত স্রোত প্রতিবেদন বিস্তারিত
ডা. আহমদ মরতুজা চৌধুরী বিস্তারিত
যারিন মালিয়াত অদ্রিতা বিস্তারিত
মোহাম্মদ মাহমুদুজ্জামান বিস্তারিত
সাংবাদিক শফিক রেহমানের পুরো বক.. বিস্তারিত
উৎপাদিত মাছের প্রায় ১২ শতাংশ আ.. বিস্তারিত
বাতিলযোগ্য সাইবার নিরাপত্তা আই.. বিস্তারিত
বাংলাদেশ তখনো বিশ্ব ক্রিকেট অঙ.. বিস্তারিত