ডা.
আতাউর রহমান
[সুস্থ ও তারুণ্যদীপ্ত দেহ-মনের জন্যে বহুলাংশে প্রয়োজন একটি জোরদার ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা। আর এই দেহ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তুলতে চাই আমাদের সচেতন প্রচেষ্টা। দৈনন্দিন জীবনঅভ্যাসে নিতান্তই ছোট ছোট কিছু পদক্ষেপ আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে করে তুলতে পারে অধিকতর কার্যকরী। তেমনই কিছু করণীয় ধারাবাহিকভাবে উপস্থাপন করা হবে স্বাস্থ্যবিষয়ক এই রচনায়।]
পর্ব: ০৪
১০. কাঁচায় তাজা উপকার, বাঁচিয়ে তুলবে আধমরাদের!
ওরে নবীন, ওরে আমার কাঁচা, ... আধমরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা। শিরোনামের ‘কাঁচা’আর কবিগুরুর এই কবিতার ‘কাঁচা’এক নয় যদিও, তবু বলতেই হয়—কাঁচা কিন্তু সত্যিই বাঁচিয়ে তুলতে পারে রোগ-যন্ত্রণায় কাতর আধমরাদেরও! কাঁচা খাবারের কথা বলছি। সেটা কেমন?
সারাদিনে আপনি যা খান, তাতে রান্নাকৃত খাবারের পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে দিন। কারণ রান্না করা খাবার বিশেষত অতি রান্নাকৃত বা অতি সেদ্ধকৃত খাবার (ওভার-কুকড) খাদ্যের মধ্যে দেহ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্যে যে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলো থাকে, সেগুলোর ক্ষতি করে। তাই যেসব খাবার বিশেষত ফল ও সবজি রান্না না করে কাঁচা খাওয়া সম্ভব, সেগুলো কাঁচাই খান। একটু একটু শুরু করুন এ হিতকরি অভ্যাসটি।
পৃথিবীজুড়ে পুষ্টিবিজ্ঞানীরা এখন এসব খাবারকে অভিহিত করছেন ‘লাইভ ফুড’নামে। তাদের মতে, প্রতিটি প্রাকৃতিক খাবার (শাক, সবজি, ফলমূল ইত্যাদি) যেন আমাদের পরিপাকতন্ত্র ভালোভাবে হজম করতে পারে সেজন্যে প্রয়োজনীয় এনজাইম বা পাচকরস এসব খাবারের মধ্যেই থাকে। রান্না বিশেষত উচ্চ তাপে রান্নার সময় এসব খাদ্যে থাকা সংশ্লিষ্ট এনজাইমগুলো প্রায় পুরোপুরিই তাদের কার্যকারিতা হারায়, যার ফলে সেই খাবারটিকে সহজপাচ্য করে তুলতে শরীরকে কিছু অতিরিক্ত কষ্ট সইতে হয়। শুধু এটুকুই নয়, উচ্চ তাপে ও অতি রান্নায় অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয় এসব খাবারের মধ্যে থাকা শরীরের জন্যে দারুণ উপকারি বিভিন্ন ভিটামিন, মিনারেল, ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট ইত্যাদি।
অবশ্য তার মানে এই নয় যে, রান্না করা খাবার একেবারেই খাওয়া যাবে না। কিছু কিছু খাবার যেমন : মাছ মাংস ডিম ইত্যাদি ভালোমতো রান্না করে খাওয়া বাঞ্চনীয়। এগুলো বিনা রান্নায় অর্থাৎ কাঁচা খাওয়াটা শরীরের জন্যে বিপজ্জনক হতে পারে।
তাই আপনার দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় রান্না করা খাবার আর কাঁচা খাবারের পরিমাণে একটা ভারসাম্য নিয়ে আসুন। পরিমাণটা হতে পারে আধাআধি। আবার যা রান্না করে খাওয়া হচ্ছে তা-ও যেন হয় অল্প আঁচে রান্না, সময় কিছু বেশি লাগে তো লাগুক। আর রান্নার কথা যখন উঠলই তো জানিয়ে রাখা ভালো, রান্নাপাত্র হিসেবে অ্যালুমিনিয়াম সামগ্রী এড়িয়ে চলুন, কারণ তা আপনার শরীরের ওপর বিষ-বোঝা বাড়ায়। পথ্যবিদরা বলেন, সবজি রান্নায় আদর্শ পন্থা হলো, তা ভাপে সেদ্ধ করে নেয়া।
অতএব, প্রতিবেলার খাবার মেন্যুতে কাঁচা কিছু আইটেম রাখুন। মূল খাবারের শুরুতেই ওটা খান। যেমন: সকালের নাশতায় একটা আপেল বা দেশি কোনো ফল যেমন: পেয়ারা, গাব, সফেদা, বড়ই, জাম, জামরুল ইত্যাদি। দুপুর ও রাতের খাবারের আগে শসা, গাজর, টমেটো, মিষ্টি আলু, বিট এমনকি খেতে পারেন কাঁচা পেঁপে, মূলা, বাধাকপি, ঢেঁড়শ ইত্যাদি (অবশ্যই ভালোমতো ধুয়ে)। উল্লেখ্য, এসিডিটির সমস্যায় ভুগলে রাতে শসা বর্জনীয়।
১১. ঝাঁঝালো বটে, তবে কদাচিৎ চলতে পারে :
নানা রকম মশলা সহযোগে রান্না করা তরকারি খেতে মন চায়? মন্দ নয়। মাসে দু-তিনবার চলতে পারে। এটি আপনার টেস্ট বাডগুলোকে তো বটেই, চাঙ্গা করে তুলবে আপনার ইমিউন সিস্টেমকেও। এভাবে প্রস্তুতকৃত খাবার বিভিন্ন রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে দেহে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তোলে বলে ধারণা করা হয়। সেইসাথে বিপাকক্রিয়াকে গতিশীল করে। ব্যথা উপশম, ওজন কমানো এবং অ্যালার্জি প্রতিরোধেও এর কিছু ভূমিকার প্রমাণ মিলেছে।
কিছু প্রাণীর ওপর গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যাপসাইসিন—মরিচ জাতীয় ফসলে যা ঝাঁঝালো ভাব সৃষ্টি করে—দেহে রোগের প্রকাশ ঘটার আগেই তাকে প্রতিহত করে। একটি গবেষণায় দুদল ইঁদুরের একদলের ওপর নিয়মিত নির্দিষ্ট পরিমাণে ক্যাপসাইসিন প্রয়োগ করা হলো। তিন সপ্তাহ পর দেখা গেল, অন্যদের তুলনায় ক্যাপসাইসিন প্রয়োগকৃত ইঁদুরদের দেহে অ্যান্টিবডি-উৎপাদনকারী কোষের সংখ্যা বেড়ে গেছে তিনগুণ! উল্লেখ্য, শরীরে অ্যান্টিবডির পরিমাণ যত বেশি, ঠান্ডা-সর্দি ও যে-কোনো সংক্রমণের ঝুঁকি তত কম। আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঝালযুক্ত অর্থাৎ ক্যাপসাইসিনসমৃদ্ধ খাবার দেহের টক্সিন বা বিষাণুগুলোকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করার মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে।
তাই একটু ঝাল-মশলাযুক্ত খাবার যারা পছন্দ করেন তারা মাঝেসাঝে একটু ওভাবে খেতেই পারেন। তবে অতিরিক্ত বা নিত্যদিন এসব খাওয়ার ব্যাপারে সাবধান। হিতে বিপরীত হতে পারে। এসিডিটি বা এ ধরনের সমস্যা রয়েছে যাদের, এ জাতীয় খাবার গ্রহণে সাবধাণতা অবলম্বন করা তাদের জন্যে ভালো।
১২. ঘোল : বুদ্ধিমানের খাবার, বোকাদের নয়!
টোল খায় ঘটি বাটি, দোল খায় খোকারা/ ঘাব্ড়িয়ে ঘোল খায় পদে পদে বোকারা। খাই খাই ছড়াটায় নেহাৎ ছন্দ মেলাতে গিয়ে ঘোলকে বোকাদের খাবার হিসেবে উল্লেখ করেছেন কবি-ছড়াকার সুকুমার রায়। বাস্তবতা অবশ্য পুরোপুরি ভিন্ন। কেউ বলেন ঘোল, কেউ বলেন মাঠা। নাম যা-ই হোক, উপকার কিন্তু এর যথেষ্ট। এটি শরীরে যোগায় তাৎক্ষণিক শক্তি। নিয়মিত খেলে ওজন কমে। ক্যালসিয়ামের সমৃদ্ধ উৎস এটি, ফলে বাড়ে হাড়ের ঘনত্ব। রক্তে এলডিএল কোলেস্টেরল কমানোর সক্ষমতা রয়েছে বলে হৃৎস্বাস্থ্যের জন্যেও এটি দারুণ উপকারি। সবমিলিয়ে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকেও করে পোক্ত।
শরীরে প্রদাহ-সম্ভাবনা কমায় ঘোল। পরিপাকতন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ ইনফ্লামেটরি বাওয়েল ডিজিজে ভুগছেন যারা, তাদের জন্যে এটি বিশেষ উপকারি পানীয়। ‘ল্যাকটোকাইনিন’নামে একটি বায়ো-অ্যাকটিভ পেপটাইড রয়েছে বলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এটি ভূমিকা রাখে। উচ্চ শক্তরাযুক্ত খাবার গ্রহণের আগে এটি খেলে রক্তের চিনি নিয়ন্ত্রণে এর কার্যকারিতার প্রমাণ পেয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে টাইপ টু ডায়াবেটিসেও এটি উপকারি।
শিশুদের একজিমা-অ্যালার্জির মতো ত্বকের রোগ প্রতিরোধে ঘোল সহায়ক। এছাড়াও অ্যালার্জিজনিত কারণে যারা দুধ পান করতে পারেন না, তারা এটি পান করতে পারেন স্বচ্ছন্দে। পেশি গঠনেও রয়েছে এর ভূমিকা। দৌড় বা ভারী ব্যায়ামের ধকল কাটাতেও এটি কার্যকর।
ঘোলে আছে বিভিন্ন ধরনের অ্যামাইনো এসিড, যার একটি হলো ‘সিস্টিন। এটি শরীরে প্রবেশের পর রূপ নেয় গ্লুটাথিয়নে। গ্লুটাথিয়ন এমন একটি শক্তিশালী ও গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের বিরুদ্ধে দেহকোষকে দেয় মজবুত সুরক্ষা। ঘোলে রয়েছে ভালো মানের পর্যাপ্ত প্রোটিন। যত ঘন ঘোল, তত বেশি প্রোটিন। তাই ঘোল বা মাঠা হতে পারে দিনের শুরুতে আপনার প্রাকৃতিক এনার্জি ড্রিংকস। তবে অন্য সব কিছুর মতো এটিও যেন না হয় অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া। তাতে পেটের গণ্ডগোল-সহ নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়া বিচিত্র কিছু নয়। আর অ্যামাইনো এসিড ও প্রোটিনের সমৃদ্ধ উৎস বলে কিডনি জটিলতায় কিংবা বাতজনিত সমস্যায় যারা ভুগছেন, তাদের বেলায় এটি গ্রহণে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া কর্তব্য।
মেডিকেল কাউন্সিলর অ্যান্ড মোটিভিয়ার, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন
ড. বিজন কুমার শীল বিস্তারিত
বিপরীত স্রোত প্রতিবেদন বিস্তারিত
ডা. আহমদ মরতুজা চৌধুরী বিস্তারিত
যারিন মালিয়াত অদ্রিতা বিস্তারিত
মোহাম্মদ মাহমুদুজ্জামান বিস্তারিত
সাংবাদিক শফিক রেহমানের পুরো বক.. বিস্তারিত
উৎপাদিত মাছের প্রায় ১২ শতাংশ আ.. বিস্তারিত
বাতিলযোগ্য সাইবার নিরাপত্তা আই.. বিস্তারিত
বাংলাদেশ তখনো বিশ্ব ক্রিকেট অঙ.. বিস্তারিত